নারী-পুরুষ সকলের জানা জরুরি!
বিশেষ করে ওযুর কোনও অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
▪যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:
তিনি দু বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারী পর্ব ৩: /৩ হা/ ৯৬, মুসলিম ২/৯ হাঃ ২৪১)
ব্যাখ্যা: যদি তাড়াহুড়া করে ওযু করার কারণে পায়ের গোড়ালির নিম্নাংশ (সাধারণত: মানুষ এ স্থানের ব্যাপারে অসেচতন থাকে) শুকনো থেকে যায় তাহলে উক্ত স্থানকে (উক্ত ব্যক্তিকে) জাহান্নামের আগুন দ্বারা শাস্তি প্রদান করা হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সচেতন হওয়ার তওফিক দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
▪অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে:
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَجَعْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ حَتّى إِذَا كُنَّا بِمَاءٍ بِالطَّرِيقِ تَعَجَّلَ قَوْمٌ عِنْدَ الْعَصْرِ فَتَوَضَّئُوا وَهُمْ عِجَالٌ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ وَأَعْقَابُهُمْ تَلُوْحُ لَمْ يَمَسَّهَا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মক্কা হতে মদিনায় ফিরে যাবার পথে একটি পানির কূপের কাছে পৌঁছলাম। আমাদের কেউ কেউ আসরের সলাতের সময় ওযু করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করে ওযু করলেন।
আমরা তাদের কাছে দেখি, তাদের পায়ের গোড়ালির নিম্নাংশগুলো চকচক করছে-সেখানে পানি পৌঁছেনি। এটা দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “সর্বনাশ! গোড়ালির নিম্নাংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আজাব রয়েছে; তোমরা পরিপূর্ণভাবে ওযু কর।” [ সহীহ : মুসলিম ২৪১, বুখারী ৯৬।]
অথচ বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, আমরা ওযু-গোসলের ক্ষেত্রে অনেক সময় উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকি-বিশেষ করে শীত মৌসুমে। ফলে এ ক্ষেত্রে শরীরের কিছু স্থান শুকনা থেকে যায়। অনেকে আবার অজ্ঞতা বশত: শরীরে এমন বস্তু লাগানো অবস্থায় ওযু-গোসল করে যাতে করে শরীরের সে স্থানগুলোতে ভালোভাবে পানি পৌঁছে না।
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ওযুতে ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গোসলে শরীরের কোনো অংশ শুকনো থেকে গেলে পবিত্রতা অর্জিত হবে না।
🔶🔹 গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি:
♦🔹 ওযু ও গোসলের পূর্বে শরীর থেকে কোন বস্তুটি তুলে ফেলা আবশ্যক আর কোন বস্তুটি তুলে ফেলা আবশ্যক নয়:
▪ ক. শরীরে সরিষা, নারিকলে, তিল, কালোজিরা ইত্যাদির তৈল, অলিভ ওয়েল, বডি লোশন, ক্রিম, লিকুইড ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করার পর ওযু বা গোসল করার সময় সাধারণত: চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হয় না। কারণ এগুলো দ্বারা চামড়ার উপর প্রলেপ পড়ে না বা আবরণ তৈরি হয় না। তবে এ অবস্থায় ওযু বা গোসলের সময় যথাসম্ভব হাত দিয়ে ওযুর স্থানগুলো ও শরীরের বিভিন্ন স্থান হাত দ্বারা ডলে দেয়া উচিৎ, যেন যথাস্থানে পানি পৌঁছতে সন্দেহ না থাকে। যেমন ঠাণ্ডার সময় ওযু বা গোসল করলে ওযুর অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ভালোভাবে ডলে নিতে হয়।
▪খ. অনুরূপভাবে মহিলারা যদি হাতে বা শরীরের কোন অঙ্গে মেহদি, রং, সাধারণ পাউডার, চোখের সুরমা, আতর-সেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে তাহলেও ওযু-গোসলে সমস্যা নেই। কারণে এগুলো ব্যবহার করলেও অনায়াসে চামড়ায় পানি পৌঁছে যায়।
▪ গ. বর্তমানে বাজারে একপ্রকার কেমিক্যাল যুক্ত কৃত্রিম টিউব মেহদি পাওয়া যায় যা ব্যবহার করলে চামড়ার উপর একটা পাতলা আবরণ পড়ে। অনুরূপভাবে নেইল পালিশ, কিছু লিপস্টিক ব্যবহার করলেও চামড়ার উপর প্রলেপ পড়ে-যার কারণে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হয়।
এ সব ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের জন্য এগুলো অবশ্যই সাবান, শ্যাম্পু, ক্যামিক্যাল বা অন্য কোন উপায়ে তুলে ফেলতে হবে।
▪ ঙ. সাধারণ রং শরীরে পানি পৌঁছতে বাধা না দিলেও দেয়ালে লাগানোর পেইন্ট, মোবিল, আঠা জাতীয় বস্তু ইত্যাদি শরীরে লাগলে তা জমাটবদ্ধ হয়ে শরীরে আবরণ সৃষ্টি করে। সুতরাং ওযু-গোসলের পূর্বে এগুলো তুলে ফেলতে হবে। (চেষ্টা করার পর কোন কারণে তুলে ফেলা সম্ভব না হলে ভিন্ন কথা। এ ক্ষেত্রে ঐ অবস্থায় ওযু করে সালাত আদায় করতে হবে)।
▪ চ. যে সকল ক্রিম, চর্বি জাতীয় ও তৈলাক্ত বস্তু শরীরে লাগানোর ফলে চামড়ার উপর প্রলেব বা আবরণ পড়ে-যার ফলে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হয় পবিত্রতা অর্জনের জন্য সেগুলো পরিষ্কার করা জরুরি। অন্যথায় চামড়ায় পানি না পৌঁছার কারণে পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ হবে না।
মোটকথা, ওযু শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওযুর অঙ্-প্রতঙ্গগুলো এবং গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীরের সর্বস্থানে পানি পৌঁছানো আবশ্যক। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না। আর পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাত এবং যে সকল ইবাদতের জন্য পবিত্রতা পূর্বশর্ত সেগুলো আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না।
সুতরাং যে সকল বস্তু চামড়া ভেজার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেগুলো ওযু বা গোসলের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু চেষ্টা করার পরও তা তুলতে সক্ষম না হলে ভিন্ন কথা। তখন সে নিরুপায় হিসেবে গণ্য হবে এবং ঐ অবস্থায়ই ওযু বা গোসল সম্পন্ন করে সালাত আদায় করবে।
No comments:
Post a Comment