ইসলামের সৌন্দর্য
◈ শৈশব-কৈশোর:
মাত্র সাত বছর বয়সে তাঁর পিতা মৃত্যু বরণ করেন। পিতা মৃত্যুর কারণে এতিম হলেও তিনি যথেষ্ট সমাদর ও যত্নে প্রতিপালিত হন।
বাল্যকাল থেকে তিনি প্রখর মেধাবী এবং শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
◈ শিক্ষা জীবন:
পিতা মৃত্যুর পর তিনি কুরআন শিক্ষা শুরু করেন এবং এগারো বছর বয়েসে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ করার পাশাপাশি কুরআনের ক্ষেত্রে বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন।
অত:পর তিনি শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। নিজ এলাকার এবং বহির থেকে আসা বিজ্ঞ আলেমদের নিকট জ্ঞানার্জন করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিশ্রম করার ফলে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হন।
◈ যাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত:
তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মাঝে কয়েকজন হলেন:
◈ কর্ম জীবন:
২৩ বছর বয়সে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিজেও জ্ঞানার্জন করতেন। আর এ ক্ষেত্রেই তিনি অতিবাহিত করতেন পুরো সময়।
অবশেষে ১৩৫০ হিজরী সালে তাঁর নিজস্ব এলাকা (উনাইযা) এর শিক্ষার মূল দায়িত্ব তাঁর হাতেই অর্পিত হয়।
◈ ইলমের খেদমত:
তিনি ফিকাহ, উসূল ফিকাহ এবং এর শাখাগত বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতেন। তাছাড়া তাফসীরের জগতেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি ৮ খণ্ডে সমাপ্ত একটি বিশাল তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম: تَيْسِيْرُ الْكَرِيْمِ الْمَنَّانِ (তাইসীরুল কারীমিল মান্নান)। এটি ‘‘তাফসীরে বিন সাদী’’ নামে সুপরিচিত।
তাঁর হাতে গড়ে উঠেন অনেক বিখ্যাত বিদ্বান ও বড় বড় আলেমে দ্বীন। তাদের মধ্যে আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ. অন্যতম।
◈ অনন্তের পথে যাত্রা:
১৩৭৬ হিজরী সালের ২৩ জুমাদাল আখিরা মোতাবেক ১৯৫৬ খৃষ্টাব্দে আল কাসিমের উনাইযা শহরে এই জ্ঞান তাপস নশ্বর জগত ছেড়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৬ বছর।
◈ তাঁর রেখে যাওয়া অমর চিহ্ন:
তিনি তাফসীর, হাদীস, উসুল, আকীদা, ফিকাহ ও আদব সংক্রান্ত বিষয়ে বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।
➧ অনুবাদকের কথা
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالْصَّلاةُ وَالْسَّلامُ عَلَىَ خَيْرِ خَلْقِ الْلَّهِ وَعَلَىَ آَلِهِ وَصَحْبِهِ أَجَمَعِينَ
ইসলাম সকল দিক দিয়ে পরিপূর্ণ এক মহান জীবনাদর্শের নাম। মানব জীবনের এমন কোন দিক বা বিভাগ নেই যে ব্যাপারে ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা নেই। এই নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করলে মানব জাতি উন্নতি ও সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা, ইসলাম এসেছে সর্বময় প্রজ্ঞার অধিকারী মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে। আর তাঁর প্রেরিত দূত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে অনাগত বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে রেখে গেছেন। সর্বোপরি ইসলাম এমন এক উন্নত সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছে যার কাছে সমগ্র মানবজাতি চির ঋণী হয়ে থাকবে।
সুতরাং এই বিস্ময়কর মহানাদর্শ ও সভ্যতার মূল রহস্য, বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার চেষ্টা করা চিন্তাশীল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই চিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করার জন্য এগিয়ে এসেছেন সউদী আরবের এক বিস্ময়কর প্রতিভা জ্ঞান তাপস আল্লামা শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের সাদী রহ.। তিনি তাঁর الدُّرَّةُ الْمُخْتَصَرَةُ فِى مَحَاسِنِ الدِّيْنِ الْإِسْلاَمِيِّ শীর্ষক পুস্তিকাটিতে এ বিষয়টি ২১টি উদাহরণের মাধ্যমে অতি সংক্ষেপে চমৎকার ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। বইটি হাতে পাওয়ার পর বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার ইচ্ছা জাগ্রত হয় এবং আল হামদুলিল্লাহ তা সম্পন্ন করি।
পুস্তিকাটির বাংলা নাম দেয়া হয় ইসলামের সৌন্দর্য। এ অধমের জানা মতে বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে এটি প্রথম বই।
অত্র পুস্তিকাটি এক দিকে যেমন শিক্ষিত, সচেতন, সংস্কৃতিবান ও গবেষক মুসলিমদের গবেষণার খোরাক যোগাবে অন্য দিকে অমুসলিমদের নিকট ইসলামের প্রকৃত রূপ ও সৌন্দর্যময় দিকগুলো ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
إنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أمَّا بَعْدُ
সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর আল্লাহর নিকট নিজেদের মনের ও কর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সুপথ দেখায় তাকে কেউ বিপথে নিতে পারে না। আর যাকে তিনি বিপথে নিয়ে যান তাকে কেউ সুপথে আনতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। তিনি একক। তাঁর কোন অংশীদার নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দাস ও প্রেরিত দূত। অত:পর-
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে আগমন করেছেন তা অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, উন্নত ও পরিপূর্ণ।
আর ইসলামে যে সৌন্দর্য, পূর্ণতা, দয়া, ন্যায়নীতি এবং প্রজ্ঞা সন্নিহিত রয়েছে তা মূলত: মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং সর্বাঙ্গীণ পূর্ণাঙ্গতার সাক্ষ্য দেয়। আরও সাক্ষ্য দেয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য আল্লাহর রাসূল। যিনি ছিলেন পরম সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী ব্যতিরেকে কথা বলেন না। আল্লাহ বলেন,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
“আর তিনি ইচ্ছামত কোনও কথা বলেন না। তা তো একটি ওহী বা ঐশী বার্তা যা (তার নিকট) অবতীর্ণ হয়।”(সূরা নাজম: ৩-৪)
সুতরাং দ্বীন-ইসলামটাই এ কথার স্পষ্ট প্রমাণ এবং সবচেয়ে বড় সাক্ষী যে, মহান আল্লাহ একক-অদ্বিতীয় এবং তিনি সর্বাঙ্গীণভাবে পরিপূর্ণ। তৎসঙ্গে এটিও প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যবাদী এবং তাঁর নবুয়তও সত্য।
আমার এই প্রবন্ধটি লেখার উদ্দেশ্য হল, এই মহান দ্বীনের মৌলিক সৌন্দর্য বিষয়ে আমি যতটুকু বুঝেছি বা জেনেছি ততটুকু তুলে ধরা। অন্যথায় দ্বীনের মধ্যে যে পূর্ণাঙ্গতা, সৌন্দর্য ও মহিমা সন্নিহিত রয়েছে তা সবিস্তর আলোচনা করা তো দূরের কথা সংক্ষেপে তা যথার্থভাবে ফুটিয়ে তোলা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ, আমার জ্ঞান খুবই কম আর ভাষাও দুর্বল। কিন্তু মানব জ্ঞানের অক্ষমতা দরুন কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞানার্জন না করা গেলেও যতটুকু সম্ভব ততটুকু পরিত্যাগ করা তো সমীচীন নয়। কেননা, আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কারও উপর কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّـهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“অতএব, তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)
ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার মর্যাদা:
ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এতে যে সব উপকার লাভ হয় তন্মধ্যে:
যদি দ্বীন ইসলামের আসল সৌন্দর্য ও তাৎপর্য অল্প পরিমানেও যদি মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয় তবে এটি হবে (অমুসলিমদের জন্য) ইসলাম কবুলের এবং অন্য সব কিছুর উপর ইসলামকে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দাওয়াতের মাধ্যম।
জেনে রাখুন, ইসলামের সৌন্দর্যগুলো তার মূলনীতি, শাখা-প্রশাখা, দলীল-প্রমাণ, আইন-কানুন, বিধি-বিধান ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রেই বিরাজমান। এমনকি সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ইসলামের সৌন্দর্য বিকশিত। কিন্তু অত্র পুস্তিকায় এ সব কিছুর আলোচনা করা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। কারণ এতে আলোচনা ব্যাপক হয়ে যাবে। উদ্দেশ্য হল এর কতিপয় উদাহরণ পেশ করা। যেন এ উদাহরণগুলোকে অন্যান্য ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পেশ করা যায় আর এ বিষয়ে কেউ উচ্চতর গবেষণা করতে চাইলে তার জন্য গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়।
এ সকল উদাহরণ মূলত: ছড়িয়ে আছে ইসলামের মূলনীতি, শাখা-প্রশাখা, ইবাদত-বন্দেগী, সামাজিক আচার-আচরণ, লেনদেন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ।
❑ ১ম উদাহরণ: বিশ্বাসগতভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত কতিপয় মূলনীতির উপর
ইসলাম নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখিত ঈমান বা বিশ্বাসের মূলনীতি সমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত । আল্লাহ বলেন,
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّـهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
“তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্য কারী।” (সূরা বাকারা: ১৩৬)
আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে এ মূলনীতিগুলোমেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো এমন মূলনীতি যার উপরে সকল নবী-রাসূল একমত ছিলেন।
এই মূলনীতিগুলোতে আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যেভাবে নিজের পরিচয় পেশ করেছেন সেভাবে তাঁর প্রতি আমাদেরকে বিশ্বাস পোষণ করতে হবে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।
সুতরাং যে দ্বীনের মূলকথা হল এক আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস আর ফলাফল হল তাঁর পছন্দনীয় কাজটি বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ ভাবে সাধনা করা তার চেয়ে উন্নত, শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর দ্বীন কি আর দ্বিতীয়টি হতে পারে?
যে দ্বীন পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের আনিত জীবন-বিধানের উপর বিশ্বাস করতে নির্দেশ দেয়, সকল নবী-রাসূলকে স্বীকার করে, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করে না বরং বলে তারা সকলেই ছিলেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্যবাদী, নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত দূত সে দ্বীনের প্রতি অভিযোগ ও প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভব হতে পারে না।
যে দ্বীন সকল ন্যায়-সঙ্গত কাজের নির্দেশ দেয়, সকল সত্যকে সমর্থন করে, নবী-রাসূলদের নিকট প্রেরিত ওহী নির্ভর সকল ধর্মীয় তাৎপর্যকে স্বীকৃতি দেয়, যে দ্বীন কল্যাণমুখী, বিবেক সম্মত এবং বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যে দ্বীন কোন অবস্থাতেই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে না, মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেয় না এবং ভ্রান্ত কার্যক্রমের প্রচার ও প্রসার করে না সে দ্বীন অন্যান্য সকল ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে।
– দ্বীন ইসলাম সকল ভাল কাজ, উন্নত চরিত্র এবং সব ধরণের কল্যাণমুখী কাজের নির্দেশ দেয়। ন্যায় পরায়নতা, দয়া-মহানুভবতা ও সৎকর্মের প্রতি উৎসাহিত করার পাশাপাশি জুলুম, শোষণ,নিপীড়ন,বাড়াবাড়ি এবং খারাপ চরিত্র থেকে মানুষকে সতর্ক করে।
– পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে সব সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি দিয়েছেন ইসলাম তার সবগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে ও অক্ষুণ্ণ রেখেছে। অন্যান্য ধর্মে যে সকল ভাল কাজের দিকে আহ্বান জানানো হয়েছে-চাই সেটা ধর্মীয় ক্ষেত্রে হোক বা পার্থিব ক্ষেত্রে হোক- ইসলাম সেগুলোর প্রতি উৎসাহিত করেছে। অনুরূপভাবে অন্যান্য ধর্মে যে সমস্ত বিষয় মানবজাতির জন্য ক্ষতিকারক ও ধ্বংসাত্মক হিসেবে সতর্ক করা হয়েছে ইসলামও সেগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
মোটকথা, ইসলামের অকিদা-বিশ্বাস হল ঐ সকল বিষয় যেগুলো দ্বারা মানুষের অন্তর পবিত্র হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। সর্বপরি যেগুলোর উপর ভিত্তি করে মানুষ কর্ম ও নৈতিকতায় উন্নত হয়।
❑ ২য় উদাহরণ: ইসলামের রোকন বা মূল ভিত্তি সমূহ
ঈমানের পর শরীয়তের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রোযা রাখা এবং বাইতুল্লায় গিয়ে হজ্জ সম্পাদন করা।
শরীয়তের এ বিষয়গুলোর ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী কল্যাণকর দিকগুলো সম্পর্কে চিন্তা করে দেখুন তো! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এগুলো বাস্তবায়ন করতে কী পরিমাণ সাধনার প্রয়োজন হয়! আর এর ফলে ইহ ও পারলৌকিক জীবনে যে প্রতিদান ও সাফল্য লাভ করা যায় সে বিষয়টিও ভাবনার বিষয়।
ক. সালাত থেকে শিক্ষা: চিন্তা করে দেখুন, সালাতের মধ্যে আল্লাহর প্রতি কী পরিমাণ একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা, স্তুতি, প্রার্থনা, বিনয় ও নম্রতা রয়েছে!
ঈমান নামক বৃক্ষে সালাতের অবস্থান মূলত: বাগানে পরিচর্যা ও পানি সিঞ্চনের মতই। প্রত্যহ বারবার সালাত আদায় না করলে ঈমান নামক বৃক্ষটি শুকিয়ে যাবে এবং ঝিমিয়ে পড়বে তার ডাল-পালা। পক্ষান্তরে নিয়মিত সালাত আদায়ের ফলে তার সজীবতা বৃদ্ধি হতে থাকবে।
আরও লক্ষ্য করুন, সালাতরত অবস্থায় কীভাবে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকতে হয়! সালাত তো সবচেয়ে বড় কাজ। সালাতমানুষকে অশ্লীল ও অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখে।
খ. যাকাত থেকে শিক্ষা: যাকাতের হেমকত সম্পর্কে খেয়াল করুন। যাকাতের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করা যায়। যেমন, দানশীলতা, উদারতা, দয়া, মহানুভবতা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে এর মাধ্যমে মানুষের নানা চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি দূরীভূত হয়, আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা হয়। এছাড়াও যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র পীড়িত আর্ত মানবতার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়, অভাবের কষাঘাতে জর্জরিত হৃত- সর্বস্ব মানুষের অভাব পূরণ করা হয়। জিহাদ ও মুসলিম সমাজের জরুরি সমষ্টিগত স্বার্থে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা হয় ইত্যাদি। এ সবের পাশাপাশি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়া ও আখিরাতে বিশাল প্রতিদানের অঙ্গীকার তো রয়েছেই।
গ. সিয়াম থেকে শিক্ষা: সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও ভালবাসা অর্জনের স্বার্থে আত্মাকে নিত্য দিনের অভ্যাস এবং রিপুর কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করতে অনুশীলন করা হয়। ধৈর্য, দৃঢ়তা ও অটুট সিদ্ধান্ত নিতে মন ও মানসকে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা হয়। কাজে-কর্মে একনিষ্ঠতা আনয়ন এবং প্রবৃত্তির ভালবাসার উপর আল্লাহর ভালবাসার দাবী বাস্তবায়ন করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হল এ সিয়াম। আর এ কারণেই রোযা আল্লাহর জন্য। তিনি অন্যান্য আমলের মধ্যে রোযাকে নিজের জন্যে বিশেষভাবে নির্বাচন করেছেন।
ঘ. হজ্জ থেকে শিক্ষা: হজ্জের জন্য হাজীদেরকে কত অর্থ খরচ করতে হয়! কত কষ্ট সহ্য করতে হয়! কত বিপদাপদ সম্মুখীন হতে হয়! এত কিছু করতে হয় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে।
হজ্জ হল আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ এবং তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নিদর্শন। হজ্জের মাধ্যমে নবী-রাসূল ও অতীত কালের নিষ্ঠাবান, পরহেজগার মহাপুরুষদের জীবনের কথা স্মরণ হয়। এতে করে তাদের প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়। তাছাড়া এর মাধ্যমে মুসলিমের মাঝে পারস্পারিক পরিচয় ও যোগাযোগের সুযোগ হয় যা তাদেরকে মুসলিম জাতির সামষ্টিক ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
এগুলো সবই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অতি চমৎকার বৈশিষ্ট্য। বিশেষত: মুসলিম জাতিসত্তার জন্য এক বিশাল লাভজনক দিক।
উপরোক্ত আলোচনায় অতি সংক্ষেপে ইসলামের মূল স্তম্ভ সমূহের সৌন্দর্যগুলো তুলে ধরা হল।
❑ ৩য় উদাহরণ: একতাবদ্ধভাবে জীবন যাপনের নির্দেশ
ইসলাম ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন যাপন করতে নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি পারস্পারিক দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
ইসলামের এই মূলনীতির প্রমাণে যথেষ্ট কুরআন ও সুন্নাহর দলীল বিদ্যমান।
বিবেকবান মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম যে, উক্ত নির্দেশের ফলে মুসলিম জাতি বিরাট ধর্মীয় ও বৈষয়িক কল্যাণ অর্জন করেছে। সেই সাথে অনেক বিপদাপদ ও ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছে।
একথাও কারো অজানা নয় যে, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কোন শক্তির অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা এ মূলনীতির উপরই নির্ভরশীল ।
একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানগণ এ মূলনীতির যথার্থ বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন এবং তার প্রতি অবিচল ছিলেন। তাদের মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল যে, একতাই দ্বীনের প্রাণশক্তি। তাই তারা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকার পরেও নিজেদের সার্বিক উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় বরং তারা এমন সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন যে, অন্য কোন জাতি তাদের কাছাকাছিও পৌঁছতে সক্ষম হয় নি ।
এ বিষয়টি নিম্নের উদাহরণে আরও চমৎকার ভাবে ফুটে উঠবে।
❑ ৪র্থ উদাহরণ: দয়া, করুণা, সদাচার ও মানব কল্যাণের নির্দেশ দেয় ইসলাম
ইসলাম মানুষকে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন, সদাচার এবং মানুষের কল্যাণে অবদান রাখতে উৎসাহিত করে।
ইসলামের এই দয়া, সুন্দর আচার-ব্যবহার এবং মানব কল্যাণের আহবানের পাশাপাশি চরিত্র বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের মূলনীতির কারণেই ইসলাম সকল অন্যায়-অবিচার, উগ্রতা, অসদাচার, অধিকার হরণ ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিতসহ নানা অপকর্মের ঘোর অমানিশায় একমাত্র আশার আলো ও উজ্জল প্রদীপ রূপে বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে।
এ কারণেই ইসলাম জানার পূর্বে যারা তার কট্টর দুশমন ছিল, তারাও ইসলামের মহানুভবতা ও উদারতা দেখে অবশেষে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে জীবন ধন্য করেছে।
ইসলাম তার অনুসারীদের সাথে এমন দয়া ও মমতাপূর্ণ আচরণ করেছে যে, দয়া, ক্ষমা এবং মানব কল্যাণের অমিয় বাণী তাদের হৃদয় থেকে ঝরে পড়ে তাদের কথা ও কাজের সাথে মিশে গেছে। ফলে ইসলামের দুশমনরাও অবশেষ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। আর তাই তো দেখা গেছে, কোন কোন অমুসলিম ইসলামে প্রবেশ করেছে ইসলাম সম্পর্কে ভালভাবে জেনে বুঝে হৃদয়ের প্রবল আকর্ষণে। আবার কেউ কেউ ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে এবং নিজ ধর্মের নিয়ম-নীতির উপর ইসলামের নিয়ম-নীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে ইসলামের ন্যায়-পরায়নতা, দয়া ও করুণার মহান নীতি দেখে।
❑ ৫ম উদাহরণঃ ইসলামের বিধি-বিধানগুলো বিজ্ঞান ও যুক্তি সম্মত
এই মূলনীতির সত্যতা ফুটে উঠে এর মূল ও শাখা গত প্রতিটি বিধি-বিধানের মধ্যে। এগুলো যৌক্তিক, বিবেক সম্মত এবং খুব স্বাভাবিক। ইসলামের সব কিছুতেই রয়েছে সুশৃঙ্খলতার সুস্পষ্ট স্বাক্ষর। এটি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সর্বত্র সকলের জন্য প্রযোজ্য। ইসলাম প্রদত্ত যাবতীয় তথ্য নির্ভুল। অতীতের কোন গবেষণা ও বিশ্লেষণে তা মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হয় নি, ভবিষ্যতেও হবে না। হওয়া অসম্ভব। বরং সঠিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে সেগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
এটিও ইসলামের সত্যতার অন্যতম বড় প্রমাণ।
ন্যায় নিষ্ঠ গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন যে, যত উপকারী জ্ঞান-বিজ্ঞান রয়েছে –চাই তা ধর্মীয় বিষয় হোক বা পার্থিব বিষয় হোক বা রাজনৈতিক বিষয় হোক সবই কোরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।
মোটকথা, শরীয়তের এমন কোন বিধান বা আইন নেই যা বিবেক পরিপন্থী হতে পারে। বরং বিবেকবান ও বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মাত্রই শরীয়তের এ সব বিধানের কল্যাণকারীতা, সত্যতা এবং বিশুদ্ধতার সাক্ষ্য দেয়।
ইসলামের প্রতিটি আদেশ ও নিষেধ ইনসাফপূর্ণ। এখানে সামান্যতম জুলুম বা অবিচার নেই।
ইসলাম যত কিছুর নির্দেশ দিয়েছে সবই মানুষের জন্য কল্যাণকর। আর যে সকল ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা অবশ্যই মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক বা তাতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশী।
কোন সচেতন মানুষ ইসলামের হুকুম-আহকামগুলো ভালভাবে চিন্তা করলে অবশ্যই তার বিশ্বাস আরও মজবুত হবে এবং অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, ইসলাম প্রজ্ঞাময় মহীয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম।
❑ ৬ষ্ঠ উদাহরণ: জিহাদ ও আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার (সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ)
ইসলামে জিহাদ এবং ও আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার তথা সব ধরণের সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করা হয়েছে।
– জিহাদের যে নির্দেশ এসেছে তার উদ্দ্যেশ্য হল, দ্বীনের অধিকারে যারা হস্তক্ষেপ করতে চায় কিম্বা যারা এ অধিকার কেড়ে নেয়ার আহবান জানায় তাদেরকে প্রতিহত করা। এটাই হল সর্বোত্তম জিহাদ। এখানে জৈবিক লোভ-লালসা বা ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির কোন স্থান নেই।
কেউ যদি এ সক্রান্ত দলীলগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি শত্রুদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের আচরণ কেমন ছিল তা নিয়ে গবেষণা করে তবে সন্দেহাতীত ভাবে বুঝতে পারবে যে, জিহাদ আবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত এবং তা শত্রুদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
ঠিক তদ্রুপ ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ কারণে যে, মুসলিমগণ যদি ইসলামের মূলনীতি, আইন-কানুন এবং আদেশ-নিষেধগুলো মেনে না চলেন তবে এই দ্বীন ঠিক থাকবে না। আরও কারণ হল, কেউ যেন অবিচারী আত্মার ধোকায় পড়ে কোন নিষিদ্ধ কাজ করার এবং যথাসাধ্য আবশ্য পালনীয় কোন কাজ ছেড়ে দেয়ার সাহস না করে। আর এটি আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ ছাড়া সম্ভব নয়।
সুতরাং এ বিধানটি ইসলামের অন্যতম একটি সৌন্দর্য বরং এটি দ্বীন টিকে থাকার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
তদ্রূপ এ বিধানটি বাঁকা পথে পরিচালিত মানুষকে সঠিক পথে এনে পরিশুদ্ধ করার এবং অন্যায়-অপকর্ম থেকে সরিয়ে এনে মহৎ ও উন্নত কর্মে উৎসাহিত করার একটি মাধ্যম।
কিন্তু শরীয়তের বিধি-নিষেধ মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার পর আবার যদি মানুষকে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেয়া হয় তবে এটি যেমন তার নিজের ক্ষতি কারক তদ্রূপসমাজের জন্যও ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীয়ত ও বিবেকের অনিবার্য অধিকার সমুহের জন্য ক্ষতিকর।
❑ ৭ম উদাহরণ: ব্যবসা-বানিজ্য ও লেনদেন
ইসলামী শরীয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভাড়া, কোম্পানি প্রভৃতি যে সকল ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক লেনদেন হয় বা দেনা-পাওনা ও উপস্থিত পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরে লাভবান হয় সেগুলোকে বৈধ করা হয়েছে।
ইসলামে এসব বিষয়ের পূর্ণ সমাধান পেশ করা হয়েছে। কারণ এসবের মাধ্যমে মানব জীবনের জরুরী চাহিদা পূরণ হয়, অভাব দূর হয় এবং তাদের জীবন হয় আরও সমৃদ্ধ।
তবে এ ক্ষেত্রে ইসলাম শর্তারোপ করেছে যে, অর্থনৈতিক লেনদেনে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকা জরুরি। অনুরূপভাবে কোন বিষয়ে চুক্তি হলে চুক্তির বিষয়, চুক্তি কৃত বস্তু, চুক্তির শর্তাবলী ইত্যাদি ভালভাবে জেনে-বুঝে তা সম্পাদন করতে হবে ।
পক্ষান্তরে সুদ, জুয়া বা এ জাতীয় যে সব ক্ষেত্রে কোন এক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা এক পক্ষের জুলুমের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলাম সেগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে ।
তাহলে যে কেউ লেনদেন সম্পর্কিত ইসলামের বিধানগুলো সম্পর্কে চিন্তা করলে বুঝতে পারবে যে, এ বিধানগুলো দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টির কল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত। এসব নিয়ে চিন্তা করলে মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর সীমাহীন করুণা ও অনুকম্পার সাক্ষ্য প্রদান করতেই হবে। কারণ তিনি সর্ব প্রকার বৈধ উপার্জন, খাদ্য, পানীয় এবং মুনাফা হাসিলের সকল সুশৃঙ্খল পথ ও পদ্ধতিকে বৈধতা প্রদান করেছেন।
❑ ৮ম উদাহরণ: খাদ্য-পানীয় ও বিয়ে-শাদী
ইসলাম উত্তম খাদ্য দ্রব্য, পানীয়, পোশাক ও বিয়ে-শাদীকে বৈধ করেছে।
ইসলাম সর্ব প্রকার উপকারী ফল-ফলাদি, শস্য দানা এবং সাধারণভাবে সাগরে বসবাসকারী সব ধরণের প্রাণী মানুষের জন্য খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বৈধ করেছে। আর স্থলচর প্রাণীর মধ্যে কেবল সে সব প্রাণীকে নিষিদ্ধ করেছে যা মানুষের দ্বীন তথা নীতি-নৈতিকতা, মস্তিস্ক ও আর্থিক ক্ষতি সাধন করে।
সুতরাং যেগুলো বৈধ করা হয়েছে সেগুলো মহান আল্লাহ অনুগ্রহ এবং তার দ্বীনের সৌন্দর্য। আর যেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোও তাঁর অনুগ্রহ ও দ্বীনের সৌন্দর্য। কেননা, প্রকৃত সৌন্দর্য তো সেটাই যাতে থাকে হেকমত ও প্রজ্ঞা পূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং যেখানে উপকারের পাশাপাশি ক্ষতির দিকটিও বিবেচনায় রাখা হয়।
ইসলাম বিবাহ করাকে বৈধ করেছে। একজন পুরুষ স্বাধীনভাবে এক সাথে দু’জন,তিনজন বা চারজন নারীকে বিবাহ করতে পারে। এতে উভয় পক্ষেরই কল্যাণ সাধিত হয় এবং উভয় পক্ষই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচে। তবে একজন পুরুষের জন্য একসাথে চারের অধিক স্বাধীন নারীকে বিবাহ বন্ধনে রাখা বৈধ নয়। কেননা তাতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না বরং তাতে জুলুম সংঘটিত হয়।
তবে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীদের উপর স্বামীর পক্ষ থেকে অবিচারের আশংকা থাকলে কিংবা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান সমূহ বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হলে ইসলাম শুধু একজন স্ত্রী নিয়ে জীবন যাপন করতে উৎসাহিত করেছে। যাতে উপরোক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
বিবাহ ব্যবস্থা যেমন আল্লাহর একটি বিরাট নেয়ামত এবং জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় বিষয় তদ্রূপ মানুষ যেন তার জন্য উপযোগী নয় এমন স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টকর ও দুঃসহ জীবন-যাপনে বাধ্য না হয় সেজন্য বিবাহ বিচ্ছেদেরও বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وَإِن يَتَفَرَّقَا يُغْنِ اللَّـهُ كُلًّا مِّن سَعَتِهِ
“আর যদি উভয়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করে দিবেন।” (সূরা নিসা: ১৩০)
❑ ৯ম উদাহরণঃ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে পারস্পারিক অধিকার
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মানবজাতির জন্য যে সমস্ত অধিকার প্রণয়ন করেছেন সেগুলো সবই ন্যায়সঙ্গত ও কল্যাণকর। যেমন পিতা-পুত্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, শ্রমিক-মজুর এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক অধিকার।
এ অধিকারগুলোর মধ্যে কিছু আছে একান্তই জরুরি আর কিছু আছে সৌন্দর্য বর্ধক। এগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। এ সব অধিকারের উপর ভিত্তি করেই মানুষ পরস্পরের সাথে লেনদেন ও উঠবস করে এবং নিজেদের জন্য উপকারী বিষয়গুলো একে অপরের সাথে বিনিময় করে।
চিন্তা করলে দেখতে পাবেন, এর মাধ্যমে কিভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করা হয়েছে এবং তাদেরকে অনিষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে। আরও বুঝতে পাবেন, এগুলো থেকে মানুষ কিভাবে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে, কিভাবে পারষ্পারিক সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাধ্যমে তারা চমৎকারভাবে জীবন যাপন করছে।
এতেই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী শরীয়ত ইহ ও পারলৌকিক উভয় জগতে সুখ সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।
এ অধিকারগুলো স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সামাজিক রীতি-নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দেখতে পাবেন যে, এগুলোতে সর্বপ্রকার কল্যাণের সমন্বয় ঘটেছে। এর মাধ্যমে মানুষ দ্বীন-দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে একে অপরকে পরিপূর্ণভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে, তাদের অন্তরে ভাতৃত্ব ও ভালবাসা সৃষ্টি হয় আর দূরীভূত হয় পারষ্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও মনমালিন্য।
❑ ১০ম উদাহরণ: উত্তরাধিকার আইন ও সম্পদ বণ্টন
মানুষ মৃত্যু বরণ করার পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ অন্যের হস্তান্তর হওয়া এবং উত্তরাধিকারীদের মাঝে সেগুলো বণ্টনের পদ্ধতি।
আল্লাহ তাআলা এর হেমকত সম্পর্কে নিন্মোক্ত আয়াতটির মধ্যে ইঙ্গিত প্রদান করে বলেন:
لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا
“তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না।” (সূরা নিসা: ১১)
আর তাইতো আল্লাহ তায়ালা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কে বেশী উপকার করবে, সাধারণত মানুষ কার নিকট তার সম্পদ দিয়ে যেতে বেশী আগ্রহী, কে তার সদাচরণ পাওয়ার বেশী হকদার ইত্যাদি বিষয়ে তার অসীম জ্ঞানের আলোকে ধারাবাহিকতার সাথে সম্পদ বণ্টনের আইন প্রণয়ন করেছেন। প্রত্যেক বোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এই বণ্টন নীতির সুষ্ঠুতা ও সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দিবে। এই বণ্টন প্রক্রিয়াটি মানুষের উপর ছেড়ে দিলে এ ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাচারিতা, হট্টগোল ও দুর্নীতির সূত্রপাত হত।
শরীয়ত মানুষকে মৃত্যুর পূর্বে উত্তরাধিকারী ব্যতিরেকে সাধারণ জনকল্যাণ খাতে নিজস্ব সম্পদ ব্যয়ের ও সিয়ত করে যাওয়ার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু তার জন্য শর্তারোপ করেছে যে, তা অবশ্যই সম্পদের এক তৃতীয়াংশ বা তার কম হতে হবে। যাতে করে, মহান আল্লাহ যে সম্পদকে মানুষের জীবন-জীবিকার উপকরণ বানিয়েছেন তা যেন মৃত্যুর সময় নির্বোধ ও দুর্বল ধার্মিকতা সম্পন্ন মানুষেরা খেলা-তামাশার বস্তুতে পরিণত করতে না পারে। অথচ এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায় দরিদ্রতা বা নিঃস্ব হয়ে যাবার ভয়ে অর্থ খরচ করত না!
❑ ১১তম উদাহরণ: ফৌজদারি দণ্ডবিধি
ইসলাম প্রবর্তিত ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং অপরাধের ধরণ অনুসারে এর ভিন্নতা প্রসঙ্গে।
অপরাধ, দুষ্কৃতি এবং আল্লাহর কিংবা মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা মস্ত বড় অন্যায়। এর ফলে দ্বীন-দুনিয়া সর্ব ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই ইসলাম অপরাধে জড়িয়ে পড়া থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য বা অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করার লক্ষ্যে মৃত্যুদণ্ড, অঙ্গচ্ছেদ, বেত্রাঘাত, দেশান্তর, ইত্যাদি নানা ধরণের ফৌজদারি দণ্ডবিধি প্রণয়ন করেছে।
এ সকল আইন মূলত: সমাজ-সমষ্টি সকলের জন্যই কল্যাণকর। এর মাধ্যমেও বিবেকবান মানুষ ইসলামী শরীয়তের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে।
দেশ থেকে পরিপূর্ণভাবে অপরাধ নির্মূল করা বা প্রতিরোধ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয় যতক্ষণ না ইসলাম প্রণীত দণ্ডবিধি কার্যকর করা হবে-অপরাধের মাত্রানুযায়ী কখনো হালকা শাস্তি, কখনও কঠিন শাস্তি, কোনটায় লঘুদণ্ড, কোনটায় গুরুদণ্ড।
❑ ১২তম উদাহরণ: সম্পদ ব্যবহারের অযোগ্য ব্যক্তি
কোন মানুষ সম্পদ ব্যয় করতে গিয়ে নিজের বা অন্যের ক্ষতি করতে পারে এ সম্ভাবনা থাকলে ইসলাম তাকে ‘সম্পদ ব্যবহারের অযোগ্য’ বলে ঘোষণা করেছে। যেমন পাগল,নাবালক,বোধ-জ্ঞানহীন ব্যক্তি প্রমুখ। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি ঋণে ডুবে যায় তবে ঋণ দাতাদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে আদলত কর্তৃক তার স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ ব্যবহারে বাধা দেয়া এবং তার সেই সম্পদ বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করা।
এ সবই ইসলামের সৌন্দর্যগত দিক। কারণ, সাধারণত: একজন মানুষ স্বাধীনভাবে তার নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার রাখে। কিন্তু যখন দেখা যায় যে, সে ব্যক্তিকে এই স্বাধীনতা দেয়া হলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশ হবে তখন অর্থ খরচ করার ব্যাপারে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা এজন্যেই করা হয়েছে যে, যেন সম্পদের অপব্যবহার বন্ধ হয়, মানুষ লাভজনক ভাবে সম্পদ ব্যবহারের চেষ্টা করে এবং ক্ষতির হাত থেকে সম্পদকে হেফাজত করে।
❑ ১৩তম উদাহরণ: দলিল, চুক্তিপত্র ও সাক্ষী
ইসলামী শরীয়তে দলিল, চুক্তিপত্র ও সাক্ষী রাখার বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে যেন পাওনাদার ব্যক্তি এ সকল সাক্ষী, দলিল ও চুক্তিপত্র প্রয়োজনের সময় প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে, ঋণ নেয়ার পর অস্বীকৃতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কিংবা পরস্পরের সংশয়-সন্দেহ দূরীকরণে সাক্ষীর দরকার হয়।
অনুরূপভাবে উক্ত প্রয়োজনে পাওনাদারকে বন্ধক, নিরাপত্তা গ্যারান্টি, জামানত ইত্যাদি দলিল-প্রমাণের আশ্রয় নিতে হয়।
এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, এই বিধানের মধ্যে মানুষের অধিকার সংরক্ষণ, লেনদেনের পরিধি সম্প্রসারণ, ন্যায় বিচার এবং সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সহ বহু কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে।
এ সকল চুক্তিপত্র ও দলিল-প্রমাণের ব্যবস্থা না থাকলে সামাজিক লেনদেনের বিরাট একটি দিক সম্পূর্ণ অকেজো থেকে যেত। তাই এই বিধান মানুষের পারস্পারিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্যই বিভিন্ন দিক দিয়ে কল্যাণকর।
❑ ১৪তম উদাহরণ: অর্থ ঋণ দেয়া বা ব্যবহারিক জিনিস-পত্র ধার দেয়া
ইসলাম মানুষকে অন্যের উপকার করতে উৎসাহিত করেছে। এতে মানুষ আল্লাহ নিকট প্রতিদান পাওয়ার পাশাপাশি মানুষের নিকটও অর্জন করে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা। অবশেষে আবার তার কাছেই ফিরে আসে তার মূলধন বা এর বিনিময়।
এটি বিরাট অর্জন। কেননা, এখানে তাকে কোনরূপ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। যেমন, মানুষকে টাকা-পয়সা ঋণ দেয়া বা প্রয়োজনীয় ব্যবহার সামগ্রী ধার দেয়া ইত্যাদি। এতে মানুষের অনেক উপকার হয়, অভাব দূর হয়, কষ্ট লাঘব হয় এবং এর মাধ্যমে অর্জিত হয় অগণিত সওয়াব।
এতে সে ব্যক্তি মূলধন ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহর সীমাহীন প্রতিদান অর্জন করে। আর যে ব্যক্তি উপকৃত হল তার মনে দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হয়, সম্পদে বরকত আসে, মনের উদারতা এবং পারস্পারিক হৃদ্যতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।
সাধারণ দান-সদকা যা দানশীল সম্পূর্ণভাবে অন্যকে দান করে দেয়; মূলধন ফিরিয়ে নেয় না- এর হেকমত সম্পর্কে ইতোপূর্বে যাকাত ও দান-সদকা বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।
❑ ১৫তম উদাহরণ: মামলা-মোকদ্দমা ও বিবাদ মীমাংসা
বিবাদ মীমাংসা, সমস্যার সমাধান কিংবা বিবদমান কোন একপক্ষকে অগ্রাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম যে সমস্ত সূত্র ও মূলনীতি নির্ধারণ করেছে সেগুলো এক দিকে যেমন ন্যায় সঙ্গত ও সুস্পষ্ট প্রমাণ নির্ভর অন্যদিকে সামাজিক রীতি-নীতি ও স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ।
যেমন একটি মূলনীতি হল, বাদী তার দাবীর সমর্থনে যদি প্রমাণ হাজির করতে সক্ষম হয় তবেই তার পক্ষ অগ্রাধিকার পাবে এবং তার দাবীকৃত পাওনা লাভ করবে। কিন্তু বাদী যদি কেবল অভিযোগ পেশ করে কিন্তু কোন প্রমাণ হাজির করতে না পারে তবে বিবাদী তার বিরুদ্ধে দায়ের কৃত অভিযোগ অসত্য প্রমাণে কসম খাবে। এতে তার উপর বাদীর আর কোন দাবী-দাওয়া থাকবে না।
ইসলামী আইনে বস্তুর মান অনুসারে প্রমাণ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ইঙ্গিত, আলামত বা সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতিও দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। কেননা, সত্য উদ্ঘাটনে যা কিছু সাহায্য করে সবই প্রমাণের অন্তর্গত।
তবে যদি মামলাটি সন্দেহ পূর্ণ হয় কিংবা উভয় পক্ষই সমান সামান হয় তবে ইসলাম উভয় পক্ষের মাঝে সুষ্ঠু সমঝোতা করাকে বিবাদ ও সমস্যার সামাধানের উপায় হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
অনুরূপভাবে বিচারাচার ও বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে ইসলাম সেই পন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করেছে যাতে জুলুম ও আল্লাহর নাফরমানী নাই এবং সেটা মানুষের উপকারী।
ইসলামে অধিকার ও দেনাপাওনা সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্বল ও শক্তিশালী, রাজা ও প্রজা সবাইকে এক কাতারে রেখে বিচার প্রার্থীকে পরিতুষ্ট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে ইনসাফ পূর্ণ ও নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে।
❑ ১৬তম উদাহরণ: শুরা ব্যবস্থা
ইসলামী শরীয়তে ‘শুরা’ তথা পারস্পারিক পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং যে সকল ঈমানদার সকল ধর্মীয়, বৈষয়িক, আভ্যন্তরীণ কিংবা বহির্গত সমস্যায় পারস্পারিক পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের প্রশংসা করা হয়েছে ।
এটি একটি বড় মূলনীতি। সকল জ্ঞানী-গুণী ও বিজ্ঞ জনেরা এর উপযোগিতার ব্যাপারে একমত। সকলের মতে এটি এমন একটি বিষয় যা নির্ভুলভাবে অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম ও যথোপযুক্ত মাধ্যম।
যে জাতি এই মূলনীতির আলোকে কাজ করেছে তারাই সমৃদ্ধি ও উন্নতির শিখরে উপনীত হতে পেরেছে।
যতই মানুষের জ্ঞানের প্রসরতা ঘটেছে ও চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হচ্ছে ততই তারা পারস্পারিক আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা ও মূল্য উপলব্ধি করছে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ ধর্মীয় ও জাগতিক উভয় ক্ষেত্রে এই মূলনীতি বাস্তবায়িত করেছিলেন বলেই তাদের সব কিছু ঠিক ছিল। তাদের অবস্থা ছিল উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মুখী। পক্ষান্তরে যখনই তারা এই মূলনীতি থেকে সরে দাঁড়ালো তখনই তাদের পতন শুরু হল। ধর্মীয় এবং জাগতিক উভয় ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত সে পতন অব্যাহত রয়েছে! যার করুণ পরিণতি বর্তমানে আপনি দেখতেই পাচ্ছেন।
অবশ্য পুনরায় যদি তারা তাদের দ্বীনের এই মূলনীতির দিকে ফিরে আসে তবে তারা আবারও সফল হবে ।
❑ ১৭তম উদাহরণ: দ্বীন ও দুনিয়া, দেহ ও আত্মার সমন্বয়
ইসলামী শরীয়ত আগমন করেছে দ্বীন ও দুনিয়ার উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা এবং দেহ ও আত্মা উভয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করার জন্য।
এই মূলনীতির ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট প্রমাণপঞ্জি বিদ্যমান রয়েছে।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন-দুনিয়া উভয় ব্যাপারেই যত্নবান হওয়ার জন্য নিদের্শ দিয়েছেন। কারণ একটি অপরটির জন্য সহায়ক।
মহান আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, তারা যেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করে এবং তার হক বাস্তবায়ন করে।
তিনি তাদেরকে জীবিকা দান করেছেন, জীবিকা অর্জন ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতির ব্যবস্থা করেছেন যেন এগুলোর মাধ্যমে তারা তাঁর ইবাদত করতে শক্তি পায়, দৈহিক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে পারে।
ইসলাম মানুষকে দেহ বাদ দিয়ে শুধু আত্মার খোরাক জোগাতে বলে নি। অনুরূপভাবে ইসলাম মানুষকে কেবল চিত্ত বিনোদন ও মনের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার কাজে বিভোর হতে নিষেধ করেছে। আর নির্দেশ দিয়েছে ঐ সকল কাজের যেগুলোর মাধ্যমে হৃদয় ও আত্মার কল্যাণ সাধিত হয়।
❑ ১৮তম উদাহরণ: রাষ্ট্র ব্যবস্থা
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলম, দ্বীন এবং শাসন ক্ষমতা একটি অপরটির পরিপূরক ও সহায়ক। কেননা ইলম ও দ্বীন রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। এ দুয়ের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে শাসন কার্য, রাষ্ট্র ক্ষমতা। আবার রাষ্ট্রও নিয়ন্ত্রিত হবে দ্বীন ও ইলমের মাধ্যমে। কেননা, দ্বীনের অপর নাম হেকমত বা প্রজ্ঞা। এই দ্বীনকে অনুসরণ করলেই পাওয়া যাবে সঠিক পথের দিশা; আসবে অবারিত সাফল্য।
যেখানেই দ্বীন ও রাষ্ট্র পাশাপাশি চলবে সেখানেই পরিস্থিতির উন্নতি সাধিত হবে এবং সব কিছু সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালিত হবে। অপর পক্ষে যখনই রাষ্ট্রকে দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে তখনই নেমে আসবে বিশৃঙ্খলা। হারাবে সামাজিক স্থিতিশীলতা। সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হবে। মানুষের মনে দূরত্ব বাড়বে। শুরু হবে সকল ক্ষেত্রে অধঃপতন।
এ কথার সমর্থনে বলা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান যতই সম্প্রসারিত হোক না কেন, যতই নব নব আবিষ্কারের আগমন ঘটুক না কেন আল কোরআন প্রদত্ত কোন তথ্য বা শরীয়তের কোন বিষয়কে আদৌ খণ্ডন করতে সক্ষম হয় নি। কারণ শরীয়ত তো মানুষের বিবেক পরিপন্থী উদ্ভট কোন কিছু নিয়ে আসেনি। বরং সকল সুস্থ বিবেক শরীয়ত আনিত সকল বিষয়কেই অনুপম সুন্দর বলে সাক্ষ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তা হল-
❑ ১৯তম উদাহরণ: ইসলাম বিজ্ঞান সম্মত ও যৌক্তিক
শরীয়তের কোন কিছুই বিবেক বিরুদ্ধ বা সঠিকভাবে প্রমাণিত বিজ্ঞান বহির্ভূত নয়। এতেই প্রমাণিত হয়, মহান আল্লাহর বিধি-বিধান একমাত্র অলঙ্ঘনীয় সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত এবং স্থান-কাল ও পাত্র ভেদে প্রযোজ্য।
এই জগত সংসারে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ গবেষণা করে দেখলে এ বিষয়টির সত্যতা ধ্রুব তারার মত প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে।
এর মাধ্যমেও সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র ইসলাম ছোট-বড় কোন সমস্যারই সমাধান অপূর্ণ রাখেনি।
❑ ২০তম উদাহরণ: বাধার প্রাচীর মাড়িয়ে ইসলামের বিজয় অভিযাত্রা
মুসলমানদের অবিশ্বাস্য দিগন্ত প্রসারী বিজয় অভিযাত্রা, শত্রুদের কঠিন প্রতিরোধ ও সম্মিলিত আক্রমণের মুখেও মহা পরাক্রমে মর্যাদার জৌলুশ নিয়ে টিকে থাকা এবং শত্রুদের ব্যাপারে তাদের ইতিহাস খ্যাত ভূমিকা ও আচরণ বিধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত দৃষ্টিপাত।
ইসলামের ঊষালগ্নের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যায়, কিভাবে ইসলাম শত্রুতা ও বিদ্বেষপূর্ণ শতধা ছিন্ন আরব উপদ্বীপকে সংঘবদ্ধ করেছিল। হিংসা ও শত্রুতার বিষ বাষ্প বিদূরিত করে সেখানে ছড়িয়ে দিয়েছিল ঈমানী ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার স্নিগ্ধ পরশ।
তারপর তারা ধাবিত হল বিশ্বজয়ের দিকে। একটার পর একটা দেশ জয় করে সামনে এগিয়ে চলল আলোর মিছিল। বিশ্বজয়ের সূচনাতেই সামনে পড়ল রোম ও পারস্য জাতি। শক্তি-সামর্থ্য, শৌর্য-বীর্য, রসদ-সামগ্রী, লোক-জনবল সবদিক দিয়েই এরা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর সেরা জাতি। কিন্তু দ্বীন ইসলামের সৌজন্যে, ঈমানের বলে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যের ফলে তারা এ দুটি জাতিকে পদানত করল। এভাবে এক পর্যায়ে ইসলাম পৌঁছে গেল প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের সর্বত্র।
এ সকল বিজয় মহান আল্লাহ পাকের নিদর্শন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুজিযার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
এভাবে মানব জাতি দলে দলে-চাপ বা শক্তি প্রয়োগে নয়; নির্বিঘ্নে প্রশান্ত চিত্তে, জেনে বুঝে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হল।
এ বিষয় গুলোর উপর কেউ সাধারণভাবে দৃষ্টি ফেরালে তার সামনে প্রতিভাত হবে যে, একমাত্র দ্বীন ইসলামই সত্য। বাতিল শক্তির প্রভাব ও প্রতিপত্তি যত বৃহৎ ও ব্যাপকই হোক না কেন সত্যের সামনে তা আদৌ স্থির থাকতে সক্ষম নয়। এ বিষয়টি সাধারণ জ্ঞান দ্বারাও উপলব্ধি করা যায়। কোন ইনসাফদার মানুষ তাতে সন্দেহ করতে পারে না। বরং এটি অতি বাস্তব ও অপরিহার্য সত্য কথা।
তবে সমকালীন কতিপয় লেখকের কথা ভিন্ন। যারা চিন্তা চেতনায় ইসলামের শত্রুদের অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডার সামনে পরাভূত হয়েছে। এদের ধারণা, ইসলামের এই বিস্তৃতি ও অলৌকিক বিজয় সম্ভব হয়েছিল কেবল বৈষয়িক শক্তির উপর ভিত্তি করে! এরা নিজেদের কপোল-কল্পিত ভ্রান্ত ধারাণানুসারে এ সব বিজয়ের অপব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছে!
এ সব বিশ্লেষণের মূল বক্তব্য হল, তৎকালীন রোম ও পারস্য রাষ্ট্রদ্বয় আরবদের রসদ সামগ্রী ও সামরিক শক্তির তুলনায় দুর্বল ছিল। বিধায় তাদের উপর আরব মুসলমানদের বিজয় সম্ভব হয়েছিল!
কিন্তু একটু চিন্তা করলেই তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা বালুর বাঁধের মতই ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে। সে সময় আরবদের এমন কি বা শক্তি ছিল যাতে তারা একটা বৃহৎ রাষ্ট্র তো দুরে থাক সামান্য একটা ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মোকাবেলা করতে পারত? তৎকালীন সময়ের অস্ত্র জনবলে সমৃদ্ধ সর্বাধিক ক্ষমতাধর একই সাথে একাধিক রাষ্ট্রের প্রতিরোধ করা তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু দেখা গেছে, মুসলিমরা এসব কিছু ছিন্নভিন্ন করে, প্রতাপশালী রাজা-বাদশাহদের স্বেচ্ছাচার শাসনের স্থলে ইসলাম ও আল কুরআনের ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যে শাসন ব্যবস্থাকে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছিল প্রতিটি ন্যায়বান সত্য অনুসন্ধিৎসু মানুষ।
সুতরাং, কেবল জাগতিক শক্তি সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে এসব বিশ্বখ্যাত, দিগ্বিজয়ের ব্যাখ্যা প্রদান কি করে সম্ভব? এসব কথা তো কেবল তারাই বলতে পারে যারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মধ্যে আঘাত হানতে চায় কিংবা মূল রহস্য না জেনে শত্রুর পাতানো ফাঁদে পা রেখেছে।
তাছাড়া শত ঝড়-ঝঞ্ঝা, আঘাত-প্রতিঘাত, শত্রুদের সম্মিলিত আক্রমণ সব কিছুর মুখে ইসলামের অদ্যাবধি টিকে থাকাও ইসলামের সত্যতার অন্যতম একটি প্রমাণ।
শত্রুদের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি প্রতিরোধ করার শক্তি যদি মুসলিমদের থাকত তবে ধরা পৃষ্ঠে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের নাম ও নিশানা টিকে থাকত না এবং সমগ্র মানবকুল নির্ঝঞ্ঝাটে বিনা শক্তি প্রয়োগে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ পেত। কেননা ইসলাম সত্যের ধর্ম। প্রকৃতির ধর্ম। শুদ্ধি ও সংস্কারের ধর্ম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কাল পরিক্রমায় মুসলমানদের অলসতা, দুর্বলতা, অনৈক্য এবং শত্রুদের চক্রান্ত ও চাপের মুখে ইসলামের অগ্রযাত্রা অনেকাংশে স্তব্ধ হয়ে গেছে!
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
❑ ২১তম উদাহরণ: পূর্ণাঙ্গ জীবনার্দশের নাম ইসলাম
ইসলামের ভিত্তিমূলে রয়েছে বিশুদ্ধ ও কল্যাণকর বিশ্বাস, হৃদয় ও আত্মার পরিশুদ্ধতা মূলক মহৎ চরিত্র, সংস্কার মূলক কর্মকাণ্ড, মূল ও শাখা গত বিধিবিধানের দ্ব্যর্থ হীন প্রমাণ পঞ্জি, পৌত্তলিকতা কিংবা অন্যান্য সৃষ্টির দাসত্ব পরিহার করে করে নিরঙ্কুশ ভাবে আল্লাহর ইবাদত, কুসংস্কার, চিরাচরিত ভ্রান্ত ধারণা ও যুক্তিহীন বিশ্বাস পরিত্যাগ ও সার্বিক ক্ষেত্রে পরিশুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন।
এসবের পাশাপাশি আরও রয়েছে সকল প্রকার অন্যায়-অপকর্ম প্রতিহত করে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা, সব ধরণের জুলুম-নির্যাতন মূলোৎপাটিত করে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহ দান ইত্যাদি।
এ বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে গেলে আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাবে। তবে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য যার নুন্যতম আগ্রহ রয়েছে, একটু চেষ্টা করলে বিস্তারিত সব কিছু তার সামনে পরিস্কার হয়ে যাবে এবং দ্বিধা-সংশয়ের দোলা কেটে জ্ঞানের স্বচ্ছ আলোয় অবগাহন করবে।
➧ শেষকথা:
অতি সংক্ষিপ্ত হলেও এখানেই আলোচনা সমাপ্ত করতে চাই। কারণ অত্র পুস্তিকায় ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে মোটামুটি মৌলিক ও প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি এর মাধ্যমে ইসলামের মহত্ব, বিশালত্ব, ব্যাপকতা, পূর্ণতা, সংস্কার ও সংশোধন মূলক কর্মসূচীর স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
No comments:
Post a Comment