❑ প্রশ্ন-১: আমরা প্রায়শই বলি, “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথার মধ্যে শিরক আছে কি?
قال رجلٌ يا رسولَ اللهِ أعقِلُها وأتوكَّلُ أو أُطلقُها وأتوكَّلُ قال اعقِلها وتوكَّلْ
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, নাকি তা ছেড়ে রেখে? তিনি বললেন, “উট বাঁধ, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সহিহ তিরমিজি, হা/২৫১৭, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
– উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
لو أنَّكم تَوَكَّلُونَ علَى اللهِ تعالَى حَقَّ تَوَكُلِهِ ، لَرَزَقَكُمْ كمَا يَرْزُقُ الطيرَ ، تغدُو خِماصًا ، وتروحُ بِطانًا
“তোমরা যদি সত্যিকার ভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা বেলা ভরা পেটে ফিরে আসে।” [তিরমিজি, সহিহুল জামে, হা/৫২৫৪] এখানে
লক্ষণীয় বিষয় হলো, পাখিরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় বসে থাকে না। তারা খুব ভোরে তাদের বাসা ছেড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রিজিকের সন্ধানে যায়। সেখানে ওঁত পেতে থাকা শিকারির জালে ধরা পড়ার কিংবা সাপ-বিচ্ছু ও হিংস্র পশুর আক্রমণে জীবননাশের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রিজিক অনুসন্ধান করে। ফলে আল্লাহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। এবং তারা সন্ধ্যায় পেট পুরে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরেতে পারে।
তাহলে বুঝা গেল, ঘরে বসে খাবারের অপেক্ষা করার নাম তাওয়াক্কুল বা ভরসা নয়। বরং হালাল উপার্জনের জন্য দৌড়-ঝাঁপ ও চেষ্টা-পরিশ্রম করা, বিভিন্ন ঝুঁকি মাথায় নিতে কাজ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উভয়টির প্রয়োজন আছে। তাহলেই আল্লাহ সাহায্য করবেন।
সুতরাং “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথা বলায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে মনে রাখতে হবে যে, আমরা চেষ্টা-পরিশ্রম বা কোন কাজ করতে পারবো না যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমতা না দেন। আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কোন কিছুতে করতে সক্ষম নই। এটাই “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-এর অর্থ।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো:
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله
(বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ।)
অর্থ: “আল্লাহর নামে (বের হলাম)। আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। কোনও অবলম্বন নেই এবং কোনও শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।”
[সুনানুত তিরমিজি, ৫/৪৯০, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/৮৫৯, হাদিসটি হাসান।]
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুলের উপর। অত:পর-
সুতরাং উক্ত বাক্যটির অর্থ সেটাই, যা এ হাদিসে এসেছে:
اعقِلْها وتوكَّلْ
“আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (অর্থাৎ উটকে না বেঁধে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থেকো না। অন্যথায় উট পালিয়ে যাবে)। এটি তিরমিজি (২৫১৭) এবং ইবনে হিব্বান (৭৩১) বর্ণনা করেছেন।
একজন মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো, সে যা চায় তা অর্জনের জন্য তার প্রতিপালকের উপর ভরসা করবে। ফলে সে বৈধ উপায় অবলম্বন করার করার পাশাপাশি তার প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করবে। যেন সে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অর্জন করতে পারে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
احْرِصْ علَى ما يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ باللَّهِ وَلَا تَعْجِزْ
No comments:
Post a Comment