Monday, June 24, 2024

কুরবানি দাতার জন্য ঈদের দিন কোন কিছু না খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া তারপর সর্বপ্রথম কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত

  প্রশ্ন: কুরবানির দিন কুরবানির পশু জবাই করার আগ পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কি কোনও নিয়ম আছে?

উত্তর: কুরবানি দাতার জন্য কুরবানির দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া সুন্নত। বরং ঈদের সালাত শেষে খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে যদি ঈদের সালাত শেষে কুরবানির গোশত খাওয়া হয় তাহলে তা অধিক উত্তম।

– প্রখ্যাত সাহাবি বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত,

كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع فيأكل من أضحيته

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন।” [শাইখ আলবানী রচিত, সহীহ ইবনে মাজাহ]

– অন্য বর্ণনায় এসেছে, বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صلَّى الله عليه وسلَّم لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতে না। আর ঈদুল আজহার দিন খেতেন না সালাত শেষ করার আগে।” [সহিহ মিশকাতুল মাসাবীহ,‌ হা/১৪৪০]

– অন্য বর্ণনায় এসেছে,

وَكَانَ لَا يَأْكُلُ يَوْمَ النَّحْرِ حَتَّى يَرْجِعَ

“তিনি কোন কিছু খেতেন না (ঈদগাহ থেকে) থেকে ফিরে আসার পূর্বে।” [সহিহ ইবনে মাজাহ]

➤ “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন” মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়:

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের মাঠ থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন-মর্মে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে তা সনদগত ভাবে দুর্বল। যেমনটি শাইখ আলবানি সহ অনেক মুহাদ্দিস বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।

وَكَانَ إِذَا رَجَعَ أَكَلَ مِنْ كَبِدِ أُضْحِيَتِهِ
ضعَّف الألبانيُّ هذه الزيادةَ كما في «سُبُل السلام» بتعليقاته عليه (٢/ ٢٠٠) حيث قال: «هذه الزيادةُ ضعيفةٌ؛ لأنها مِنْ رواية عقبة بنِ الأصمِّ عن ابنِ بريدة؛ وهو عقبة بنُ عبد الله الأصمِّ: ضعيفٌ، كما في «التقريب»».

তবে তা খেতে কোনও আপত্তি নেই। মানুষের মাঝে ঈদের সালাতের পর কুরবানির কলিজা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কেননা তা সহজে কুরবানির শরীর থেকে আলাদা করা যায়, দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং দ্রুত হজম হয়।

❐ ঈদের মাঠ থেকে ফিরে আসার পর কুরবানি গোশত খাওয়ার হেকমত কী?

বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন, এর একটি কারণ হতে পারে, গরিব-অসহায় মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশ। কারণ অনেক গরিব মানুষের বাড়িতে কোন খাবার থাকে না। অতঃপর ঈদের সালাতের পরে মানুষ তাদেরকে কিছু কুরবানির গোশত দান করলে তারা সেখান থেকে খেতে পারে। পক্ষান্তরে ঈদুল ফিতরের বিষয়টি ভিন্ন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের আগেই তারা জাকাতুল ফিতর হিসেবে প্রাপ্ত খাদ্যদ্রব্য থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারত।
অথবা এর কারণ, আল্লাহ তাআলা যেহেতু কুরবানি করার তৌফিক দান করেছেন তার শুকরিয়া হিসেবে এবং আল্লাহ কুরবানির গোশত খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম কুরবানির গোশত খেতেন। যেমন: আল্লাহ বলেন,

فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ

“অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।” [সূরা হজ ২৮] (আল্লামা ফারকুস-এর রচনা থেকে)

❐ প্রশ্ন: যে কুরবানি দিবে তার জন্য নাকি পরিবারের সবার জন্য এটা সুন্নত?
উত্তর:

যে ব্যক্তি কুরবানি করবে তার জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে। হাদিসের ভাষা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়। যেমন: বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يطعم، ويوم النحر لا يأكل حتى يرجع فيأكل من نسيكته. رواه أحمد والترمذي. قال النووي: وأسانيدهم حسنة فهو حديث حسن، وقال الحاكم: هو حديث صحيح.

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন আহার না করে (ঈদের মাঠে) রওয়ানা হতেন না এবং কুরবানির দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আহার করতেন না।” [তিরমিযী ৫৪২, আহমদ ২২৪৭৪, ২২৫৩৩, দারেমী ১৬০০, মিশকাত ১৪৪০। তাহকিক আলবানি: সহীহ]

যে কুরবানি করবে তার জন্য এটি মুস্তাহাব। কিন্তু যে ব্যক্তি কুরবানি করবে না তার জন্য সুন্নত নয়। এ মর্মে বিজ্ঞ আলেমগণ মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন:

✪ ইমাম যায়লায়ী হানাফি রাহ. তাবঈনুল হাকায়েক গ্রন্থে বলেন,

هذا في حق من يضحي ليأكل من أضحيته، أما في حق غيره فلا

“এটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে, কুরবানি দিবে, যেন সে তার কুরবানির গোশত খায়। অন্যদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।”

✪ কাশকুফ কিনা-এর গ্রন্থকার আল্লামা মনসুর বিন ইউনুস আল ভূতি হাম্বলি রাহ. বলেন,

وكان لا يأكل يوم النحر حتى يرجع، فيأكل من أضحيته، وإذا لم يكن له ذبح لم يبال أن يأكل.

“আর তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানির দিন আহার করতেন না যতক্ষণ না ফিরে আসতেন। ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন। কিন্তু যখন তিনি কুরবানির পশু জবাই করতেন না তখন আহার করতে পরোয়া করতেন না।”

✪ বিখ্যাত তিরমিযির ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযি-এর গ্রন্থকার আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান মোবারক পূরী বলেন,

وقد خصص أحمد بن حنبل استحباب تأخير الأكل في عيد الأضحى بمن له ذبح.

“ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ঈদুল আজহার দিন খাওয়া বিলম্ব করাকে ঐ ব্যক্তির সাথে খাস করেছেন যার কুরবানি রয়েছে।” [course: islam web]
এই খাওয়া থেকে বিরত থাকা সুন্নত বা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। সুতরাং কেউ কুরবানি করলেও যদি ঈদের মাঠে যাওয়া পূর্বে অতিরিক্ত ক্ষুধার কারণে খাওয়া জরুরি হয় তাহলে খেতে কোনও বাধা নেই। অর্থাৎ খেলেও গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate