Monday, June 24, 2024

ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির পাঠ করার দলিল এবং বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত তাকবিরের শব্দাবলী

 প্রশ্ন: আমাদের দেশের এক বক্তা বলেছেন যে, ‘তাকবিরে তাশরিক হিসেবে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ” পাঠ করা যাবে না। কারণ এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো জাল। সুতরাং কেউ তা ঈদ বা তাশরিকের তাকবির হিসেবে পাঠ করলে বিদআত হবে। কিন্তু বিশেষ সময় নির্দিষ্ট না করে যে কোনও সময় তা পাঠ করা যায়।’ তার এ বক্তব্য কি সঠিক? আর তাকবিরের সঠিক শব্দাবলী কী কী?

উত্তর: উক্ত বক্তার এই বক্তব্যই জাল ও বাতিল। বরং উল্লেখিত তাকবির দু ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে উক্ত তাকবির পাঠের বিষয়টি একাধিক সাহাবির আমল থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। আর তাকবিরগুলো বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে।

নিম্নে অতি সংক্ষেপে দুই ঈদ ও ঈদুল আজহার পরে তাশরিকের দিনগুলো তথা জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে তাকবির পাঠের বিষয়ে আলোকপাত করা হলো:

❑ তাকবির পাঠের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশনা:

কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদেরকে অধিক পরিমাণে তাকবির পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ

“আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সে জন্য তাকবির পাঠ করো (আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দাও)।” [সূরা বাকারা: ১৮৫] মুফাসরিরগণের মতে এ আয়াতটি ঈদুল ফিতরের তাকবির পাঠের নির্দেশ করে। কেননা তা রমজান মাসের সিয়াম সংক্রান্ত বিধিবিধানের পরে আলোচিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ

“আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে।” ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, أيام التشريق “তাশরিকের দিন সমূহ।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, দুই ঈদ এবং ঈদুল আজহার পরে তাশরিকের দিনগুলোতে ( জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) তাকবির পাঠ করা শরিয়ত সম্মত।

❑ কীভাবে তাকবির পাঠ করতে হবে?

ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির পাঠ করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে কিছু বর্ণিত হয়নি। তাঁর থেকে এ বিষয়ে যে সব বর্ণনা আছে সেগুলো সহিহ নয়। তবে একাধিক সাহাবির আমল হিসেবে একাধিক শব্দে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। আর সাহাবিগণ অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিক্ষা পেয়েছেন। সুতরাং তাদের অনুসরণে আমরাও তা পাঠ করতে পারি।

নিম্নে একাধিক সাহাবি থেকে যে সব তাকবিরের শব্দাবলী বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

◈ ১. প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে,

أنهُ كان يُكبِّرُ أيامَ التشريقِ اللهُ أكبرُ اللهُ أكبرُ لا إلهَ إلا اللهُ واللهُ أكبرُ اللهُ أكبرُ وللهِ الحمدُ

“তিনি তাশরিকের দিনগুলোতে পড়তেন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”

– ইবনে আবি শায়বা, [হা/৫৬৫১], শাইখ আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: ইরওয়াউল গালীল, [৩/১২৫]

– হানাফি, হাম্বলি এবং শাফেয়ীর প্রাচীন মত এবং একদল সালাফের মতানুসারে ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে উক্ত শব্দাবলীর মাধ্যমে তাকবির পাঠ করা উত্তম।

◈ ২. আলি রা. হতে বর্ণিত,

أنهُ كان يُكبِّرُ بعدَ صلاةِ الفجرِ يومَ عرفةَ إلى صلاةِ العصرِ من آخرِ أيامِ التشريقِ ويُكبِّرُ بعدَ العصرِ

“তিনি আরাফা দিবসের ফজর সালাতের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। এবং আসরের পরে তাকবির পাঠ করতেন।”

– শাইখ আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। [দ্রষ্টব্য: ইরওয়াউল গালীল, ৩/১২৫]

– এ হাদিসটিকে আরও সহিহ বলেছেন, বিশিষ্ট মুহাদ্দিস শুয়াইব আরনাবুত। [দ্রষ্টব্য: তাখরিজু যাদিল মায়াদ, ১/৪৩৩ এবং ২/৩৬০]

◈ ৩. আরও বর্ণিত হয়েছে,

كان عَلِيٌّ يُكَبِّرُ بَعدَ صَلاةِ الفَجرِ غَداةَ عَرَفةَ، ثمَّ لا يَقطَعُ حتَّى يُصَلِّيَ الإمامُ من آخِرِ أيَّامِ التَّشريقِ، ثمَّ يُكَبِّرُ بعدَ العَصرِ

“আলি রা. আরাফা দিবসের ফজর পর থেকে তাকবির পড়া শুরু করতেন এবং ইমাম তাশরিকের শেষ দিনের নামাজ পড়া পর্যন্ত তা বন্ধ করতেন না। অতঃপর আসরের পরে তাকবির পাঠ করতেন।” [মুসতাদরাক হাকিম, হা/১১২৭]

◈ ৪. ইবনে আব্বাস রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত তাকবির হলো,

” الله أكبر ، الله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد ، الله أكبر وأجل ، الله أكبر على ما هدانا

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল্ল। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা।” [সুনানে বায়হাকি, ৩/৩১৫, ইরওয়াউল গালীল, ৩/১২৬-সহিহ]

◈ ৫. ইবনে হাজার রা. বলেন, তাকবিরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হলো সেটি যা আব্দুর রাজ্জাক সালমান রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তা হলো:

الله أكبر ، الله أكبر ، الله أكبر كبيراً

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবিরা।” [ফাতহুল বারি, ২/৪৬২]

– শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন, আইয়ামে তাশিরকে তা সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে দুর্বলতা আছে।

উল্লেখ্য যে,

الله أكبر كبيراً ، والحمد لله كثيراً ، وسبحان الله بكرة وأصيلاً

এ তাকবিরটি যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবিদের থেকে বর্ণিত হয়নি তাই না পড়াই উত্তম। বরং সাহাবিদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তার উপর আমল করার মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সব ধরণের ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate