Monday, November 24, 2025

সুদ সম্পর্কে বিস্তারিত

 প্রশ্ন: সুদের সংজ্ঞা কি? সুদ কত প্রকার ও কী কী? ইসলামে সুদ (রিবা) আদান-প্রদানের শরয়ী হুকুম কী? যদি কেউ সুদকে হালাল মনে করে, তবে তার ইসলামী বিধান কী?

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর সূদের আরবী হচ্ছে ‘রিবা’। আর ‘রিবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- বৃদ্ধি, অতিরিক্ত, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সূদ বলে। কুরআন মাজীদেও উক্ত শব্দ ‘বৃদ্ধি’র অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:﴿يَمْحَقُ اللهُ الرِّبا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ﴾অর্থাৎ, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাহকে বৃদ্ধি করে দেন।”(সূরা বাক্বারাহ: ২৭৬) শরী‘আতের পরিভাষায়-كل قرض جر نفعا فهو ربوا ‘প্রত্যেক ঋণ যা লাভ আনয়ন করে, সেটাই রিবা’।ফিক্বহের পরিভাষায়, الزيادة في أشياء مخصوصة “নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের মধ্যে অতিরিক্ত গ্রহণ করাকে রিবা বলা হয়”(তাহযীবুল লুগাহ, খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ১৯৫)। প্রখ্যাত ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক ‘উমর চাপড়া’র মতে- শরী‘আতে ‘রিবা’ বলতে ঐ অর্থকে বোঝায়, যা ঋণের শর্ত হিসাবে মেয়াদ শেষে ঋণগ্রহীতা মূল অর্থসহ অতিরিক্ত অর্থ ঋণদাতাকে পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।
হাদীসেও সূদের প্রকৃতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, مَا زَادَ فَهُوَ رِبَا ‘যা (প্রদত্ত অর্থ বা পণ্যের চেয়ে) অতিরিক্ত (নেয়া হয়) তাই সূদ”। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে প্রদেয় অতিরিক্ত পণ্য বা অর্থই হল রিবা।
.
পারিভাষিক অর্থে রিবা হল: রিবায়ী (সূদ-সম্পর্কিত) বস্তুকে একই জাতীয় বস্তুর বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করা অথবা রিবায়ী বস্তুর লেনদেনে যে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বিনিময় (কাবয) আবশ্যক, সেখানে বিনিময় বিলম্বিত করা। অথবা এটি কিছু নির্দিষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্রহণকেও বলা হয় (মুনতাহাল ইরাদাত,খণ্ড;২;পৃষ্ঠা;৩৪৭; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৩/৫৭৫; আল-মুগনী, ৪/৩; আশ-শারহুল কাবীর আলা মাতনিল মুক্বনি, ৪/১২২ পৃ.)।বুঝা এই গেল যে, মূল থেকে যে পরিমাণ অংশ বেশী নেওয়া বা দেওয়া হবে সেটাকেই সুদ বলা হবে। সুতরাং সুদের সংজ্ঞা হল এইরূপ; ‘‘ঋণ দেওয়া মূল অর্থের চেয়ে সময়ের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ শর্ত ও নির্দিষ্টরূপে নেওয়া হয় তার নাম হল সুদ।’’
.
হাদিসে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) আব্দুল্লাহ্‌ বিন সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন:إِذَا كَانَ لَكَ عَلَى رَجُلٍ حَقٌّ فَأَهْدَى إِلَيْكَ حِمْلَ تِبْنٍ أَوْ حِمْلَ شَعِيرٍ أَوْ حِمْلَ قَتٍّ فَلا تَأْخُذْهُ فَإِنَّهُ رِبًا“যদি কোন লোকের কাছে তোমার কোন পাওনা থাকে এবং সে তোমাকে এক বাহন ঘাস, বা এক বাহন যব বা এক বাহন খড় উপহার দেয় তবে তুমি তা গ্রহণ করবে না, কেননা সেটা সুদ।”।(সহীহ বুখারী হা/৩৮১৪)হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন:وَكُلُّ قَرْضٍ شَرَطَ فِيهِ أَنْ يَزِيدَهُ ، فَهُوَ حَرَامٌ بِغَيْرِ خِلَافٍ ، قَالَ ابْنُ الْمُنْذِرِ : أَجْمَعُوا عَلَى أَنَّ الْمُسَلِّفَ إذَا شَرَطَ عَلَى الْمُسْتَسْلِفِ زِيَادَةً أَوْ هَدِيَّةً ، فَأَسْلَفَ عَلَى ذَلِكَ : أَنَّ أَخْذَ الزِّيَادَةِ عَلَى ذَلِكَ رَبًّا .وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، وَابْنِ عَبَّاسٍ ، وَابْنِ مَسْعُودٍ ، أَنَّهُمْ نَهَوْا عَنْ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً “যে ঋণের মধ্যে ঋণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করার শর্তারোপ করা হয় কোন মতভেদ ছাড়া সেটা সুদ। ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, ধারদাতা যদি ধারগ্রহীতার কাছে অতিরিক্ত বা উপহারের শর্ত করে এবং সেটার উপর ভিত্তি করে ধার দেয়; তাহলে অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ করা সুদ বলে গণ্য হবে। উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা এমন ঋণ থেকে নিষেধ করেছেন যেটা কোন প্রকার উপকার দেয়।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী; খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৪০)
.
সুদ কত প্রকার ও কী কী?
ইসলামে সূদ মূলত দুই প্রকার। যথা: (১) রিবাল ফাযল (رِبا الفَضلِ) ও রিবান নাসীআহ (رِبا النَّسيئةِ)।
.
রিবাল ফাযল বলতে বুঝায় নগদে বেশী নেয়া। যেমন বলা হয়,وهو الزِّيادةُ في أحَدِ العِوَضَينِ في النَّوعِ الواحِدِ مُتَّحِدِ الجِنسِ، كالذَّهبِ بالذَّهبِ”এটি হল- একই জাতের এবং একই ধরণের বস্তুর এক পক্ষে অতিরিক্ত প্রদান, যেমন স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ। শাব্দিক অর্থে ফাযল (অতিরিক্ত) শব্দটি কমতির বিপরীত। যেমন ১ কিলোগ্রাম সোনার বিনিময়ে দেড় কিলোগ্রাম সোনা বিক্রয় করা, অথবা গমের এক সা‘-এর বিনিময়ে দেড় সা গম বিক্রয় করার মত লেনদেন (ফাৎহুল আযীয, ৮/১৬২; আল-ইতকান ওয়াল ইহকাম ফী শারহি তুহফাতিল হুক্কাম, ১/২৯৪; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮/৩৯২ পৃ.)। এছাড়া হস্তগত রিবা (রিবাল ইয়াদ) নিষিদ্ধ। হস্তগত রিবার অর্থ হল- নগদ-বিনিময়ে একটি বস্তু বিক্রয় করা, কিন্তু লেনদেনের সময় এক পক্ষ তার প্রাপ্য গ্রহণ করবে, অন্যপক্ষ তার প্রাপ্য গ্রহণ করবে না (কিফায়াতুন নাবীহ; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১২৫)।
.
অপরদিকে নাসিয়াহ” শব্দের অর্থ হলো “বিলম্ব” বা “স্থগিত করা”, তাই এই সুদের ক্ষেত্রে মূলত সময়ের বিপরীতে অতিরিক্ত মূল্য বা অর্থ ধার্য করা হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট মেয়াদের বিপরীতে শরী‘আত সম্মত কোন বিনিময় ছাড়া চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যে অতিরিক্ত অর্থ বা মাল আদায় করা হয় তাকে ‘রিবান-নাসিয়াহ’ তথা মেয়াদি ঋনের সূদ বলে। রিবান নাসিয়া’ হল মূলত বর্তমান সমাজে বহুল প্রচলিত সূদ। পুরো ব্যাংকিং সিস্টেম টিকে আছে এই সূদী ব্যবস্থার উপর।সাধারণ মানুষেরা এ সূদেই ঋণ দিয়ে থাকে। মোটকথা রিবান নাসীআহ বলতে বুঝায়: বাকীতে বেশী নেয়া। যেমন বলা হয়,وهو تأْخيرُ القَبضِ فيما يَجْري فيه الرِّبا”এটি হল- রিবা (সূদ) সম্পর্কিত লেনদেনে বিলম্বিত গ্রহণ’। নাসী’আহ শব্দের অর্থ বাকী ও বিলম্বের সূদ। সূদসহ ঋণ ফেরত দিতে বিলম্বের বিনিময়ে ঋণের সূদের উপর অতিরিক্ত সূদ গ্রহণ করা। যেমন গমের এক সা‘ পরিমাণের বিনিময়ে চাল বা যবের এক সা‘ বিক্রি করা এবং ক্রয়-বিক্রয়ের মাজলিস থেকে বিলম্বে গ্রহণ করা।( বিস্তারিত জানতে দেখুন; তুহ্ফাতুল মুহতাজ, ৪/২৭৩; আল-ইকনা‘, ২/১২০; আশ-শারহুল মুমতি‘, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৩৯২)।
.
ইসলামে এই দুই প্রকার সূদই নিষিদ্ধ। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘সূদ হল বাকীতে’ (সহীহ বুখারী, হা/২১৭৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৬)। তবে নগদে হলে সেটা সূদ হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘হাতে হাতে নগদ লেনদেনে কোন সূদ নেই’ (সহীহ বুখারী, হা/২১৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৬)। অনুরূপভাবে বিনিময়ের ক্ষেত্রে পণ্যের ভিন্নতা থাকলেও সেটা সূদ হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যখন দ্রব্য ভিন্ন হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশী ক্রয়-বিক্রয় কর, যখন তা হাতে হাতে নগদে হবে’ (সহীহ মুসলিম হা/১৫৮৭; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৫০)। একই জাতীয় পণ্য বিনিময়ে কম-বেশী যেহেতু বৈধ নয়, সুতরাং কেউ নিজের কাছে থাকা নিম্ন মানের জিনিস পরিবর্তন করে উন্নত মানের জিনিস নিতে চাইলে কী করবে এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) খায়বার এলাকায় এক ব্যক্তিকে চাকুরী দিলেন। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বেশ ভালো খেজুর নিয়ে আসল। রাসূল (ﷺ) তা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুর-ই কি এমন ভালো হয়? ঐ ব্যক্তি বলল, জি-না, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা এক সা‘ এরূপ খেজুর দুই সা‘ (খারাপ) খেজুরের বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। অথবা ভালো দুই সা‘ খারাপ তিন সা‘র বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এভাবে বিনিময় করো না। বরং খারাপ খেজুর (দুই বা তিন সা‘) মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ঐ মুদ্রা দিয়ে ভালো খেজুর কিনে নাও’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৪)। উপরিউক্ত সব প্রকারের সূদ আল্লাহ্ তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ কেনাবেচা হালাল করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৭৫)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, ‘ওরা সবাই সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৩৩; তিরমিযী, হা/১২০৬; ইবনে মাজাহ, হা/২২৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৬৩)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘ঋণদাতার জন্য ঋণগ্রহীতার নিকট ঋণ প্রদানের বিনিময়ে লাভবান হওয়ার শর্তারোপ করা জায়েয নয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.)।
.
প্রশ্ন: ইসলামে সুদ (রিবা) আদান-প্রদানের শরয়ী হুকুম:
.
ইসলামে সুদ (রিবা) আদান-প্রদান করা হারাম ও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এই বিষয়টি জানার পরেও মানুষ সূদ খায়। সূদী লেনদেন করে। দুনিয়া ও আখিরাতে এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন,
أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا“আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।”(সূরা বাকারা: ২৭৫)
আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: یَمۡحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیۡمٍ“আল্লাহ্‌ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্‌ কোন পাপিষ্ঠ কাফেরকে পছন্দ করেন না।”[সূরা বাকারা: ২৭৬] উক্ত আয়াতের তাফসিরে বিশিষ্ট তাফসিরকারক শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:قوله تعالى: ( يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا )، صرح في هذه الآية الكريمة بأنه يمحق الربا أي: يذهبه بالكلية من يد صاحبه، أو يحرمه بركة ماله ، فلا ينتفع به كما قاله ابن كثير وغيره”আল্লাহ্‌র বাণী: “আল্লাহ্‌ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন” এ আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ্‌ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সুদকে সুদী কারবারকারীর হাত চূড়ান্তভাবে নিঃশেষ করবেন কিংবা তাকে তার সম্পদের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন; ফলে সে এ সম্পদ দিয়ে উপকৃত হতে পারবে না- যেমনটি বলেছেন ইবনে কাছির ও অন্যান্য আলেমগণ।”(আযওয়াউল বায়ান; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭০)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:اَلَّذِیۡنَ یَاۡكُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا كَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ“যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।”(সূরা বাকারা: ২৭৫) আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ – فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ فَأۡذَنُواْ بِحَرۡبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَإِن تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوسُ أَمۡوَٰلِكُمۡ لَا تَظۡلِمُونَ وَلَا تُظۡلَمُونَ“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” [সূরা আল-বাকারা: ২৭৮-২৭৯]
.
প্রখ্যাত সাহাবী জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন:لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ” রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে লানত করেছেন এবং বলেছেন: তারা সবাই সমান।”(সহিহ মুসলিম: ১৫৯৮) এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যে কোনোভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। হাদিসটির ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,”هذا تصريح بتحريم كتابة المبايعة بين المترابيين والشهادة عليهما وفيه تحريم الإعانة على الباطل “সুদী কারবারকারী দুই পক্ষের চুক্তি লিপিবদ্ধ করা ও দুই পক্ষের সাক্ষী হওয়া হারাম— এ ব্যাপারে এ হাদিস সুস্পষ্ট। এ হাদিসে বাতিল কাজে সহযোগিতা করা হারাম হওয়ার দলিলও রয়েছে।”(ইমাম নববী; শারহু মুসলিম; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ২৬) ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘সূদ খাওয়া যিনার চেয়ে বড় অপরাধ। কারণ সূদের শাস্তি আল্লাহর দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছে এবং যিনার শাস্তি মানুষের হাতে” (সহীহ মুসলিম, হা/১৬২)। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”সূদ খাওয়া অত্যন্ত কঠিন অপরাধ, যেরকম যিনা। উভয়েরই শাস্তি অত্যন্ত কঠিন”।(ইবন কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৮০)। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيرُ إِلَى قَلّ“সূদের দ্বারা সম্পদ যতোই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”।(মুস্তাদরাকে হাকিম হা/২২৬২) সূদের হার কমই হোক আর বেশিই হোক সবই হারাম। সুতরাং মুসলিমের জন্য কোনভাবেই সুদি কারবারে জড়িত হওয়ার সুযোগ নাই। চাই ব্যাংকিং খাতে হোক বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হোক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি

No comments:

Post a Comment

Translate