Monday, November 24, 2025

মৃত ব্যক্তির পোশাক-আশাক ফেলে দেওয়া কিংবা ব্যবহার করা কিংবা স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করার বিধান

 মানুষ মারা গেলে তার পরিধেয় বস্ত্র বা জামাকাপড় বাইরে ফেলে দেওয়া হিন্দু সংস্কৃতি; মুসলিমদের নয়। যার ভিত্তি হচ্ছে, কুসংস্কার। ইসলাম এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না।

বরং তার পরিধেয় বস্ত্র বা পোশাক-আশাক ব্যবহার উপযোগী হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই। একই কথা তার ব্যবহৃত বিছানা এবং অন্যান্য আসবাবপত্রের ক্ষেত্রেও।
সুতরাং এগুলো ফেলে না দিয়ে বা নষ্ট না করে প্রয়োজনে তার পরিবারের লোকজন ব্যবহার করতে পারে অথবা তারা কোন গরিবকে দান করতে পারে কিংবা চাইলে বিক্রয়ও করতে পারে। এ ব্যাপারে তার ওয়ারিশগণ সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বা বাইরে ফেলে দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা তা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। আর ইসলামে অপচয় হারাম। অনুরূপভাবে সেগুলো স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা জায়েজ নাই। এসব ব্যাপারে নিম্নে বিজ্ঞ আলেমদের কয়েকটি ফতওয়া উল্লেখ করা হল:
❑ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.-এর ফতওয়া:
সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়━ (প্রশ্নকারী বলেন), আমার বাবার ব্যবহৃত পোশাক-আশাক যেগুলো তিনি তার জীবদ্দশায় পরিধান করতেন সেগুলো আমার জন্য পরিধান কি জায়েজ হবে? উল্লেখ্য যে, কিছু পোশাক এখনো নতুন রয়ে গেছে।
উত্তরে শাইখ বলেন,
ك أن تلبسها إذا كنت وحدك، أما إن كان معك شركاء فاستأذنهم إن سمحوا لك وإلا تباع مع التركة كلها، أما إذا كنت وحدك ما ورثه إلا أنت فلك أن تلبسها ولك أن تتصدق بها، ولك أن تبيعها، أما إذا كان معك ورثة فلا بد من استئذانهم إذا سمحوا لك فلا بأس وإلا تباع مع التركة
“যদি আপনি একমাত্র উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ) হন তবে আপনার জন্য সেগুলো পরিধান করা জায়েজ। কিন্তু যদি আপনার সাথে অন্যান্য অংশীদার (অন্যান্য ওয়ারিশ) থাকে তবে আপনাকে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। যদি তারা আপনাকে অনুমতি দেয় তবে কোনও অসুবিধা নেই। অন্যথায় সেই পোশাকগুলো অন্যান্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির সাথে বিক্রি করে দিতে হবে। যদি আপনি একমাত্র উত্তরাধিকারী হন অর্থাৎ শুধুমাত্র আপনিই তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হন তাহলে আপনার জন্য সেগুলো পরিধান করা অথবা দান করে দেওয়া অথবা বিক্রি করে দেওয়া—সবই জায়েজ। কিন্তু যদি আপনার সাথে অন্যান্য ওয়ারিশ থাকে তবে অবশ্যই তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। যদি তারা আপনাকে অনুমতি দেয় তবে কোনও অসুবিধা নেই। অন্যথায় তা অন্যান্য পরিত্যক্ত সম্পদের সাথে বিক্রি করে দিতে হবে। মোটকথা মৃত ব্যক্তির পোশাকের ব্যবহার নির্ভর করে ওয়ারিশদের সংখ্যা ও তাদের সম্মতির উপর। যদি আপনি একমাত্র ওয়ারিশ হন তবে আপনি স্বাধীনভাবে তা ব্যবহার করতে পারেন। একাধিক ওয়ারিশ থাকলে সকলের অনুমতি আবশ্যক।
❑ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ.-এর ফতোয়া
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমিন রাহ-কে প্রশ্ন করা হয়—”মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের জন্য কি মৃত ব্যক্তির পোশাক-আশাক ব্যবহার করা জায়েজ?”
উত্তরে তিনি বলেন:
نعم إذا مات الميت فجميع ما يملكه ملك للورثة من ثياب وفرش وكتب وأدوات كتابة وماصة ( منضدة ) وكرسي كل شيء حتى شماغه وغترته التي عليه ، تنتقل إلى الورثة ، وإذا انتقلت إلى الورثة فهم يتصرفون فيها كما يتصرفون بأموالهم ، فلو قالوا – أي الورثة – وهم مرشدون : ثياب الميت لواحد منهم ، ولبسها ، فلا بأس . ولو اتفقوا على أن يتصدقوا بها فلا بأس ، ولو اتفقوا على أن يبيعوها فلا بأس ، هي ملكهم يتصرفون فيها تصرف الملاك في أملاكهم “
“হ্যাঁ, যখন কোনও ব্যক্তি মারা যায় তখন তার মালিকানাধীন সবকিছু—তার পোশাক, বিছানাপত্র, বই-পুস্তক, লেখার সরঞ্জাম, টেবিল-ডেক্স, চেয়ার, তার মাথার রুমাল (শিমাগ/গুতরা)—সবই ওয়ারিশদের মালিকানায় চলে যায়। যখন তা ওয়ারিশদের মালিকানায় স্থানান্তরিত হয় তখন তারা তাদের নিজেদের সম্পদের মতোই এর ব্যবহার বা ব্যবস্থাপনা করতে পারে। সুতরাং যদি প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন ওয়ারিশগণ যদি বলে যে, মৃতের পোশাক-আশাক তাদের মধ্যে কোনও একজন ব্যবহার করবে এবং সে তা পরিধান করে তাহলে কোনও অসুবিধা নেই। আর যদি তারা ঐকমত্যে পৌঁছায় যে, তারা পোশাকগুলো দান করে দেবে তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। আর যদি তারা ঐকমত্যে পৌঁছায় যে তারা পোশাকগুলো বিক্রি করে দেবে তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। এটি তাদের সম্পদ। সুতরাং তারা মালিক হিসেবে তাদের সম্পদে যেভাবে ব্যবহার করতে চায় সেভাবে ব্যবহার করতে পারে।”
❑ শাইখ সালেহ আল ফাওজান (হাফিযাহুল্লাহ)-এর ফতোয়া:
সৌদি আরবের নবনিযুক্ত প্রধান মুফতি এবং ফতওয়া ও গবেষণা কমিটির প্রধান আল্লামা ডক্টর শাইখ সালেহ আল ফাওজান (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়━মৃত ব্যক্তির পোশাক সংরক্ষণ করে রাখা কি জায়েজ? আর যদি তা জায়েজ না হয় তবে এর দ্বারা কী করা উত্তম?
উত্তরে তিনি বলেন:
يجوز الانتفاع بملابس الميت لمن يلبسها من أسرته ، أو أن تعطى لمن يلبسها من المحتاجين ولا تهدر ، وعلى كل حال هي من التركة إذا كانت ذات قيمة فإنها تصبح من التركة تلحق بتركته وتكون للورثة . والاحتفاظ بها للذكرى لا يجوز ولا ينبغي ، وقد يحرم إذا كان القصد منها التبرك بهذه الثياب ، وما أشبه ذلك ، ثم أيضًا هذا إهدار للمال ، لأن المال ينتفع به ، ولا يجعل محبوسًا لا ينتفع به
“মৃত ব্যক্তির পোশাক-আশাক তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যার জন্য উপযুক্ত তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েজ। অথবা যাদের প্রয়োজন আছে তাদের মধ্য থেকে যার জন্য উপযুক্ত তাকে দিয়ে দেওয়া যায়। এগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে যদি পোশাকগুলোর কোনও মূল্য থাকে তবে তা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশ বলে গণ্য হবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। আর স্মৃতি হিসেবে এই পোশাকগুলো সংরক্ষণ করে রাখা জায়েজ নয় এবং তা করা উচিতও নয়। যদি এই পোশাকগুলো থেকে বরকত লাভের উদ্দেশ্যে বা এই জাতীয় অন্য কোনও উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে তা হারামও হতে পারে। এছাড়া এটি সম্পদের অপচয়ও বটে। কারণ সম্পদকে ব্যবহার করা উচিত। এগুলোকে জমা রেখে ব্যবহার থেকে বিরত রাখা উচিত নয়।” [আল-মুনতাকা, ২/২৭১]। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate