Tuesday, August 19, 2025

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে কেবল সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিজদা করা কি শিরক হিসেবে গণ্য হবে

 প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে যেমন কবরের উপর, পীরকে, শিক্ষককে, অথবা কেবল সম্মান প্রদর্শনের জন্য কাউকে সিজদা করা কি শিরক হিসেবে গণ্য হবে?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর;আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা শিরক হবে কিনা বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে। আমরা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে আলোচনার মাধ্যমে উদঘাটন করার চেষ্টা করব।
.
শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তাভাবনা করলে রুকু-সিজদা প্রধানত দুই প্রকার:
.
প্রথমত: সিজদায়ে ইবাদত (عبادة السجود):এটি হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সামনে সর্বোচ্চ বিনয়, পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ইবাদতের নিয়তে করা সিজদা। এই সিজদা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই বৈধ ও শোভনীয়। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদতের নিয়তে সিজদা করবে, সে মহা শিরকের (শিরকে আকবরের) মধ্যে পতিত হবে।
.
দ্বিতীয়ত: সিজদায়ে তাহিয়্যা (التحية السجود): এটি করা হয় সম্মান, সম্ভাষণ বা কারো মর্যাদা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে। ইসলামের আগের কিছু শরিয়তে এটি বৈধ ছিল। কিন্তু ইসলাম আগমনের পর একে চূড়ান্তভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে কেবল সম্মানের জন্য সিজদা করে, তবে সে অবশ্যই হারাম কাজ করল, কিন্তু এতে তার ঈমান নষ্ট হবে না এবং সে শিরক বা কুফরে লিপ্ত হবে না।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:السُّجُودُ عَلَى ضَرْبَيْنِ : سُجُودُ عِبَادَةٍ مَحْضَةٍ ، وَسُجُودُ تَشْرِيفٍ ، فَأَمَّا الْأَوَّلُ فَلَا يَكُونُ إلَّا لِلَّهِ“সিজদা দুই প্রকার: (এক) ইবাদতের সিজদা, এবং (দুই) সম্মানসূচক সিজদা। ইবাদতের সিজদা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৬১) তিনি আরও বলেছেন:وَأَجْمَعَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى: أَنَّ السُّجُودَ لِغَيْرِ اللَّهِ مُحَرَّمٌ “. ا “মুসলিমগণ সর্বসম্মত যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সিজদা করা হারাম।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৫৮) তিনি (রাহিমাহুল্লাহ)
আরও বলেছেন:” فإن نصوص السنة ، وإجماع الأمة : تُحرِّم السجودَ لغير الله في شريعتنا ، تحيةً أو عبادةً ، كنهيه لمعاذ بن جبل أن يسجد لما قدمَ من الشام وسجدَ له سجود تحية”.
“হাদিসের স্পষ্ট দলিল এবং সমগ্র উম্মাহর ইজমা প্রমাণ করে যে, আমাদের শরিয়তে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সিজদা করা সম্পূর্ণরূপে হারাম; তা ইবাদতের উদ্দেশ্যে হোক কিংবা কেবল সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হোক। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়েমেন সফর থেকে ফেরার পর মু‘আয ইবনু জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে তাঁর জন্য সিজদা করা থেকে নিষেধ করেছিলেন; অথচ মু‘আয (রাঃ) তা করেছিলেন কেবল অভিবাদনের সিজদা হিসেবে।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ, জামিউল মাসায়েল; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫)
.
ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃوَهَذَا السُّجُودُ الْمَنْهِيُّ عَنْهُ : قَدِ اتَّخَذَهُ جُهَّالُ الْمُتَصَوِّفَةِ عَادَةً فِي سَمَاعِهِمْ، وَعِنْدَ دُخُولِهِمْ عَلَى مَشَايِخِهِمْ وَاسْتِغْفَارِهِمْ ، فَيُرَى الْوَاحِدُ مِنْهُمْ إِذَا أَخَذَهُ الْحَالُ ـ بِزَعْمِهِ ـ يَسْجُدُ لِلْأَقْدَامِ ، لِجَهْلِهِ ؛ سَوَاءٌ أَكَانَ لِلْقِبْلَةِ أَمْ غَيْرِهَا ، جَهَالَةً مِنْهُ ، ضَلَّ سَعْيُهُمْ وَخَابَ عَمَلُهُمْ”এই সিজদা, যা আমাদের শরিয়তে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত কিছু অজ্ঞ সুফী নিজেদের মধ্যে প্রচলিত করেছে। তারা তাদের ‘সামা‘’ (সঙ্গীতানুষ্ঠান)-এর সময়, অথবা শায়খদের সামনে প্রবেশকালে কিংবা তাদের কাছে ইস্তিগফার প্রার্থনার সময় একে অভ্যাসে পরিণত করেছে। দেখা যায়, তাদের মধ্যে কেউ যখন তথাকথিত ‘হাল’ (আধ্যাত্মিক আবেশ)-এ পড়ে, তখন সে শায়খের পায়ের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে তা সে কাবার দিকেই হোক বা অন্যদিকে। নিঃসন্দেহে এটি তার জাহিলি অজ্ঞতার ফল। তারা অজ্ঞতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে, যার পরিণতিতে তাদের সাধনা ব্যর্থ হলো এবং তাদের কর্ম ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো।”(তাফসির কুরতুবী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৯৪)
.
দ্বিতীয়তঃ যারা বলেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা সর্বাবস্থায় শিরক কারণ সিজদা মূলত ইবাদত, আর তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা যায় না” তাদের এই বক্তব্য দুর্বল। এর খণ্ডনে প্রমাণ হলো:
.
(১).ফেরেশতাদের আদমকে সিজদার নির্দেশ:
.
আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সিজদা করার জন্য। যদি সিজদা করা সর্বদাই শিরক হতো, তবে আল্লাহ কখনোই তাদেরকে এমন নির্দেশ দিতেন না। ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:“(فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ) অর্থাৎ—এটি ছিল সম্মান ও মর্যাদার সিজদা,ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়।”(তাফসীরে তাবারী,খণ্ড;১৪;পৃষ্ঠা;৬৫) ইবনুল আরাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:اتَّفَقَتْ الْأُمَّةُ عَلَى أَنَّ السُّجُودَ لِآدَمَ ، لَمْ يَكُنْ سُجُودَ عِبَادَةٍ“সমগ্র উম্মতের এ ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছে যে, আদমের প্রতি সিজদা ইবাদতের সিজদা ছিল না।”(আহকামুল কুরআন,খণ্ড;১;পৃষ্ঠা;২৭) ইবনে হাযম আয-যাহিরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:وَلَا خلاف بَين أحد من أهل الْإِسْلَام فِي أَن سجودهم لله تَعَالَى سُجُود عبَادَة ، ولآدم سُجُود تَحِيَّة وإكرام“মুসলিমদের মধ্যে এবিষয়ে কোনো মতভেদ নেই যে,ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সিজদা করেছিলেন ইবাদতের সিজদা হিসেবে, আর আদমের উদ্দেশ্যে করেছিলেন তা ছিল অভিবাদন ও সম্মান প্রদর্শনের সিজদা।”(আল-ফাসলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১২৯)
.
(২).ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সন্তানদের ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-কে সিজদা:
.
আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সন্তানরা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি সিজদা করেছিলেন। যদি সিজদা সর্বাবস্থায় শিরক হতো, তবে আল্লাহর মনোনীত নবীগণ কখনোই তা করতেন না। আর এটাও বলা যাবে না যে, এটি ছিল পূর্ববর্তী শরিয়তের কোনো বিশেষ বিধান; কারণ শিরক তো কোনো যুগের শরিয়তেই বৈধ ছিল না। তাওহীদ সর্বদাই অবিচল ও চিরস্থায়ী আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ পর্যন্ত সকল নবীর দাওয়াত ও শরিয়তে তাওহীদ-ই ছিল মূল ভিত্তি।
.
ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:قَالَ ابْنُ زَيْدٍ فِي قَوْلِهِ: ( وَخَرُّوا لَهُ سُجَّدًا): ذَلِكَ السُّجُودُ تَشْرِفَة ، كَمَا سَجَدَتِ الْمَلَائِكَةُ لِآدَمَ تَشْرِفَةً ، لَيْسَ بِسُجُودِ عِبَادَةٍ.وَإِنَّمَا عَنَى مَنْ ذَكَرَ بِقَوْلِهِ: إِنَّ السُّجُودَ كَانَ تَحِيَّةً بَيْنَهُمْ ، أَنَّ ذَلِكَ كَانَ مِنْهُمْ عَلَى الْخُلُقِ ، لَا عَلَى وَجْهِ الْعِبَادَةِ مِنْ بَعْضِهِمْ لِبَعْضٍ ، وَمِمَّا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ ذَلِكَ لَمْ يَزَلْ مِنْ أَخْلَاقِ النَّاسِ قَدِيمًا ، عَلَى غَيْرِ وَجْهِ الْعِبَادَةِ مِنْ بَعْضِهِمْ لِبَعْضٍ، قَوْلُ أَعْشَى بَنِي ثَعْلَبَةَ:فَلَمَّا أَتَانَا بُعَيْدَ الْكَرَى ** سَجَدْنَا لَهُ وَرَفَعْنَا الْعَمَارَا“ইবনে জায়েদ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন,এটি ছিল মর্যাদা প্রদর্শনের সিজদা,যেমন ফেরেশতারা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিজদা করেছিল; এটি আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়। এবং যে ব্যক্তি বলেছেন, ‘এটি ছিল তাদের মধ্যে অভিবাদনের জন্য,তাদের বক্তব্যের অর্থও এই যে, এটি ছিল ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের নিদর্শন, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়। এর প্রমাণ হলো, প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ এভাবে সিজদার মাধ্যমে পরস্পরকে সম্মান করতো, যা ইবাদতের জন্য নয়। যেমন কবি ‘আশা বানু সা‘লাবাহ’ বলেছেন:“যখন সে আমাদের কাছে নিদ্রার পর এলো, আমরা তাকে সিজদা করলাম এবং উঁচু আসনে বসালাম।”(তাফসীরে তাবারী, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩৫৬)
হাফিয ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:وَقَدْ كَانَ هَذَا سَائِغًا فِي شَرَائِعِهِمْ ؛ إِذَا سلَّموا عَلَى الْكَبِيرِ يَسْجُدُونَ لَهُ ، وَلَمْ يَزَلْ هَذَا جَائِزًا مِنْ لَدُنْ آدَمَ إِلَى شَرِيعَةِ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَحُرِّمَ هَذَا فِي هَذِهِ الْمِلَّةِ ، وجُعل السُّجُودُ مُخْتَصًّا بِجَنَابِ الرَّبِّ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى”তাদের শরিয়তে বৈধ ছিল যে, তারা বড়কে সালাম জানাতে সিজদা করতো। এই রীতি আদম (আ.)-এর যুগ থেকে ঈসা (আ.)-এর শরিয়ত পর্যন্ত চলমান ছিল। পরে আমাদের শরিয়তে তা হারাম করা হয়েছে, এবং সিজদাকে একমাত্র মহান রব্বুল আলামীন-এর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।”(তাফসীরুল কুরআনিল আযীম,খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪১২) কাসেমী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “নিঃসন্দেহে এটি ইবাদতের সিজদা বা দাসত্বের সিজদা ছিল না; বরং কেবল সম্মান প্রদর্শনের সিজদা ছিল এ ব্যাপারে কোনো দ্বিধা নেই।”(মাহাসিনুত-তাওয়ীল, ৬/২৫০
.
(৩).মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করেছিলেন। যদি এটা শিরক হত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতেন, কিন্তু এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল যে তিনি তাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে তাকে সিজদা করা জায়েজ নয়। দলিল হচ্ছে; আব্দুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রা.) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত”।(ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; সিলসিলা সহীহা হা/১২০৩)
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وَمَعْلُومٌ أَنَّهُ لَمْ يَقُلْ: لَوْ كُنْت آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَعْبُدَ”.
“এটা সর্বজনবিদিত যে তিনি বলেননি: “যদি আমি কাউকে ইবাদত করার আদেশ দিই।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৬০)
.
ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেন:
أَلا ترى الصحابة في فرط حبهم للنبي صلى الله عليه وسلم ، قالوا ألا نسجد لك ، فقال: لا ، فلو أذن لهم لسجدوا له سجود إجلال وتوقير ، لا سجود عبادة ، كما قد سجد إخوة يوسف عليه السلام ليوسف .وكذلك القول في سجود المسلم لقبر النبي صلى الله عليه وسلم على سبيل التعظيم والتبجيل : لا يكفر به أصلاً ، بل يكون عاصياً ، فليعرَّفْ أن هذا منهي عنه ، وكذلك الصلاة إلى القبر
“তুমি কি দেখো না যে সাহাবাগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন: ‘আমরা কি আপনাকে সিজদা করব না?’ তিনি বললেন, ‘না।’ যদি তিনি অনুমতি দিতেন, তবে তারা তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিজদা করত, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয় যেমন ইউসুফ আলাইহি সালাম-এর ভাইরা ইউসুফকে সিজদা করেছিল। অনুরূপভাবে, সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের প্রতি সিজদা করার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে: এর মাধ্যমে সে কুফরী করে না; বরং সে পাপ করছে। তাই তাকে বলা উচিত যে, এটি জায়েজ নয়। একই নিয়ম প্রযোজ্য কবরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও।”(মুজাম আল-শুয়ুখুল কাবীর; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭৩)
.
(৪).কিছু হাদিসে প্রমাণিত হয়েছে যে কিছু প্রাণী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিজদা করেছিল। যদি কেবল সিজদা করা শিরক হত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে এটি ঘটত না।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
أمَّا الْخُضُوعُ وَالْقُنُوتُ بِالْقُلُوبِ ، وَالِاعْتِرَافُ بِالرُّبُوبِيَّةِ وَالْعُبُودِيَّةِ : فَهَذَا لَا يَكُونُ عَلَى الْإِطْلَاقِ إلَّا لِلَّهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى وَحْدَهُ ، وَهُوَ فِي غَيْرِهِ مُمْتَنِعٌ بَاطِلٌ.وَأَمَّا السُّجُودُ : فَشَرِيعَةٌ مِنْ الشَّرَائِعِ ؛ إذْ أَمَرَنَا اللَّهُ تَعَالَى أَنْ نَسْجُدَ لَهُ ، وَلَوْ أَمَرَنَا أَنْ نَسْجُدَ لِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِ غَيْرِهِ : لَسَجَدْنَا لِذَلِكَ الْغَيْرِ ، طَاعَةً لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ، إذْ أَحَبَّ أَنْ نُعَظِّمَ مَنْ سَجَدْنَا لَهُ،. وَلَوْ لَمْ يَفْرِضْ عَلَيْنَا السُّجُودَ لَمْ يَجِبْ أَلْبَتَّةَ فِعْلُهُ .فَسُجُودُ الْمَلَائِكَةِ لِآدَمَ : عِبَادَةٌ لِلَّهِ ، وَطَاعَةٌ لَهُ وَقُرْبَةٌ يَتَقَرَّبُونَ بِهَا إلَيْهِ ، وَهُوَ لِآدَمَ تَشْرِيفٌ وَتَكْرِيمٌ وَتَعْظِيمٌ.
وَسُجُودُ إخْوَةِ يُوسُفَ لَهُ : تَحِيَّةٌ وَسَلَامٌ ؛ أَلَا تَرَى أَنَّ يُوسُفَ لَوْ سَجَدَ لِأَبَوَيْهِ تَحِيَّةً ، لَمْ يُكْرَهْ لَهُ”
“অন্তরে বিনয় ও ভক্তি, প্রভুত্ব স্বীকার এবং দাসত্বের স্বীকৃতি—এগুলো কখনো একমাত্র আল্লাহর বাইরে অন্য কারও জন্য হতে পারে না। তিনি মহান এবং মহিমাময়। যদি এটি আল্লাহর ব্যতীত অন্য কারো প্রতি প্রকাশিত হয়, তবে তা নিষিদ্ধ এবং অবৈধ। সিজদার বিষয়টি বিশেষত শারঈ আইন এবং হুকুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন কেবল তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদা করতে। যদি তিনি আমাদেরকে তাঁর সৃষ্টির অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতেন, তাহলে আমরা তার আনুগত্যে সেই অন্যকে সিজদা করতাম, কারণ সিজদা হল সম্মান প্রদর্শনের একটি মাধ্যম,এবং যদি তিনি চাইতেন যে আমরা যার প্রতি সিজদা করেছি তাকে সম্মান করি। যদি আল্লাহ সিজদা করার আদেশ না দিতেন, তবে এটি কখনোই বাধ্যতামূলক হতো না। আদম (আ.) কে ফেরেশতাদের দ্বারা সিজদা করা আল্লাহর ইবাদতের অংশ ছিল, তার প্রতি আনুগত্য এবং নৈকট্য লাভের জন্য। এটি আদমের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধার নিদর্শন।ইউসুফ (আ.)-এর ভাইদের তাকে সিজদা করা ছিল কেবল একটি অভিবাদনের রূপ। তুমি কি দেখো না, যদি ইউসুফ তার পিতামাতাকে সালামের মাধ্যমে সিজদা করত, তাহলে তা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) হত না।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৬০)
.
(৬)। বিভিন্ন মাযহাবের অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী, সিজদা এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা সিজদার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফখরুদ্দীন আয-জায়লা’ই (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:وَمَا يَفْعَلُونَ مِنْ تَقْبِيلِ الْأَرْضِ بَيْنَ يَدَيْ الْعُلَمَاءِ : فَحَرَامٌ ، وَالْفَاعِلُ وَالرَّاضِي بِهِ : آثِمَانِ ؛ لِأَنَّهُ يُشْبِهُ عِبَادَةَ الْوَثَنِ .وَذَكَرَ الصَّدْرُ الشَّهِيدُ : أَنَّهُ لَا يَكْفُرُ بِهَذَا السُّجُودِ ؛ لِأَنَّهُ يُرِيدُ بِهِ التَّحِيَّةَ “যা তারা করে থাকে অর্থাৎ আলেমদের সামনে গিয়ে মাটিতে চুমু খাওয়া এটি হারাম। যে এটা করে এবং যে এতে সন্তুষ্ট হয়, উভয়েই গুনাহগার; কারণ এর মধ্যে মূর্তিপূজার সাদৃশ্য রয়েছে।আর সাদরুশ শহীদ উল্লেখ করেছেন: এ ধরনের সিজদার মাধ্যমে সে কাফের হবে না; কারণ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় কেবল সম্ভাষণ (অভিবাদন), ইবাদত নয়।”(যাইলায়ী,‘তাবইনুল হাকায়েক; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৫) ইবনে নুজাইম হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:وَالسُّجُودُ لِلْجَبَابِرَةِ : كُفْرٌ ، إنْ أَرَادَ بِهِ الْعِبَادَةَ ؛ لَا إِنْ أَرَادَ بِهِ التَّحِيَّةَ ، عَلَى قَوْلِ الْأَكْثَرِ“জালিম শাসকদের উদ্দেশ্যে সিজদা করা কুফর,যদি সে এর দ্বারা ইবাদত উদ্দেশ্য করে। কিন্তু যদি এর দ্বারা কেবল অভিবাদন (সম্মান প্রদর্শন) উদ্দেশ্য করে, তবে অধিকাংশ আলিমদের মতে তা কুফর নয়।”(আল-বাহরুর রায়েক খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩৪)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:مَا يَفْعَلُهُ كَثِيرٌ مِنْ الْجَهَلَةِ مِنْ السُّجُودِ بَيْنَ يَدَيْ الْمَشَايِخِ .. ذَلِكَ حَرَامٌ قَطْعًا ، بِكُلِّ حَالٍ ، سَوَاءٌ كَانَ إلَى الْقِبْلَةِ أَوْ غَيْرِهَا ، وَسَوَاءٌ قَصَدَ السُّجُودَ لِلَّهِ تَعَالَى ، أَوْ غَفَلَ ، وَفِي بَعْضِ صُوَرِهِ مَا يَقْتَضِي الْكُفْرَ ، أَوْ يُقَارِبُهُ ، عَافَانَا اللَّهُ الْكَرِيمُ “অনেক জাহেল লোক শাইখদের সামনে সিজদা করার মাধ্যমে যেসব কাজ করে থাকে এটি অবশ্যই হারাম, কোন অবস্থাতেই তা জায়েয নয়। কিবলামুখী হয়ে হোক কিংবা অন্যদিকে হয়ে হোক, উদ্দেশ্য যদি আল্লাহ তাআলার জন্য সিজদা করাও হয়, অথবা অসাবধানতাবশত হয় সব ক্ষেত্রেই তা নিষিদ্ধ। বরং এর কিছু কিছু রূপ এমন আছে যা কুফরের দাবি রাখে বা কুফরের কাছাকাছি নিয়ে যায়। আল্লাহ মহান আমাদের হেফাযত করুন।”(ইমাম নববী আল-মাজমু‘ খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৬৯)। শিহাবুদ্দীন আর-রামলি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:مُجَرَّد السُّجُودِ بَيْنَ يَدَيْ الْمَشَايِخِ : لَا يَقْتَضِي تَعْظِيمَ الشَّيْخِ كَتَعْظِيمِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ، بِحَيْثُ يَكُونُ مَعْبُودًا، وَالْكُفْرُ إنَّمَا يَكُونُ إذَا قَصَدَ ذَلِكَ “শায়খদের সামনে কেবল সিজদা করা মানে এই নয় যে শায়খকে এমনভাবে সম্মান করা যাক যেন আল্লাহকে করা হয় যিনি মহিমান্বিত ও প্রশংসার যোগ্য। যদি উদ্দেশ্য হয় যে শায়খকে সেইরকম উপাসনার মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে, তখনই এটি কুফরী হিসেবে গণ্য হবে।(নিহায়াতুল মুহতাজ ইলা শারহুল মিনহাজ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১২২)
আর-রুহাইবানি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:السُّجُودُ لِلْحُكَّامِ وَالْمَوْتَى بِقَصْدِ الْعِبَادَةِ : كَفْرٌ ، قَوْلًا وَاحِدًا ، بِاتِّفَاقِ الْمُسْلِمِينَ .
وَالتَّحِيَّةُ لِمَخْلُوقٍ بِالسُّجُودِ لَهُ : كَبِيرَةٌ مِنْ الْكَبَائِرِ الْعِظَامِ
ইবাদতের উদ্দেশ্যে শাসক বা মৃতদের সিজদা করা কুফর, এবং এই বিষয়ে মুসলিমরা সর্বসম্মতভাবে একমত।আর কোনো সৃষ্ট জীবকে অভিবাদন (সালাম) জানানোর উদ্দেশ্যে তাকে সিজদা করা এটি গুরুতর বড় বড় কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।”(মাতালিব উলি নুহা; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৭৮)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি.] বলেছেন:
فلا بد من تقييده بأن يكون سجوده هذا قاصدا لربوبية من سجد له ، فإنه بهذا السجود قد أشرك بالله عز وجل ، وأثبت معه إلهًا آخر .وأما إذا لم يقصد إلا مجرد التعظيم ، كما يقع كثيرا لمن دخل على ملوك الأعاجم : أنه يقبل الأرض تعظيما له ، فليس هذا من الكفر في شيء ، وقد علم كل من كان من الأعلام ، أن التكفير بالإلزام ، من أعظم مزالق الأقدام ؛ فمن أراد المخاطرة بدينه ، فعلى نفسه تَجَنَّى”.
“এটি স্পষ্টভাবে বলা অত্যন্ত জরুরি যে, যদি কোনো সিজদা সেই প্রভুর প্রতি উৎসর্গিত হয় যাঁকে সিজদা করা হচ্ছে, অর্থাৎ তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করে,তাহলে এইভাবে সিজদা করার মাধ্যমে সে আল্লাহর সাথে একজনকে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে, এবং নিশ্চিত করেছে যে তাঁর সাথে অন্য একজন উপাস্য আছে।কিন্তু যদি তার উদ্দেশ্য কেবল সম্মান প্রদর্শন করা হয়, যেমনটি প্রায়শই ঘটে থাকে যারা বিদেশী (অ-আরব) রাজাদের কাছে প্রবেশ করে, যেখানে তারা রাজার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাটি চুম্বন করে, তাহলে এটি মোটেও কুফরী নয়। সমস্ত আলেম একমত যে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের হিসাবে চিহ্নিত করা একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এবং এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।”(ইমাম শাওকানী; আস-সাইলুল জাররার; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৮০)
সৌদি আরবের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:الانحناء عند السلام حرام ، إذا قصد به التحية ، وأَما إن قصد به العبادة فكفر”অভিবাদন জানাতে গিয়ে রুকু করা হারাম, যদি এটি শুধুমাত্র অভিবাদনের উদ্দেশ্যে করা হয়। আর যদি এটি ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে তা কুফরী হিসেবে গণ্য হবে।” (ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল,ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৯)
.
শায়খ আব্দুল আজিজ আব্দুল লতিফ বলেছেন:فمن المعلوم أن سجود العبادة ، القائم على الخضوع والذل والتسليم والإجلال لله وحده : هو من التوحيد الذي اتفقت عليه دعوة الرسل، وإن صرف لغيره فهو شرك وتنديد .ولكن لو سجد أحدهم لأب أو عالم ونحوهما ، وقصده التحية والإكرام : فهذه من المحرمات التي دون الشرك ، أما إن قصد الخضوع والقربة والذل له فهذا من الشرك”এটা সর্বজনবিদিত যে,একমাত্র আল্লাহর প্রতি বিনয়, আত্মসমর্পণ ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা করা তাওহীদের (আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতির) অন্তর্ভুক্ত; আর সকল রাসূল এ দিকেই মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। অতএব, যদি এ সিজদা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা হয়, তবে তা হবে শিরক এবং আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বীদের শরীক করা। কিন্তু কেউ যদি তার পিতা বা আলেম প্রমুখের জন্য সিজদা করে এবং উদ্দেশ্য হয় কেবল সালাম প্রদান ও সম্মান প্রদর্শন, তবে এটি এমন এক নিষিদ্ধ কাজ যা শিরকের চেয়ে নিচু পর্যায়ের। তবে যদি উদ্দেশ্য হয় আত্মসমর্পণ ও বিনয় প্রদর্শন, তবে নিঃসন্দেহে তা শিরক।”(নাওয়াকিদুল ঈমান আল-কাওলিয়্যাহ ওয়াল আমালিয়্যাহ” পৃষ্ঠা: ২৭৮)
.
পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তি থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহ্‌ তাআলার ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে যেমন কবর, পীর, শিক্ষক বা কেবল সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিজদা করা এই উম্মতের জন্য সরাসরি হারাম এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি নিয়তে গরমিল থাকে, যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা করা হয় তবে এটি শিরক হবে। সুতরাং কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা শিরক সম্পর্কিত হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ দলিল উপস্থাপন এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রয়োজন, যেমনটি আমরা উপরের আলোচনায় করেছি। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate