Tuesday, August 19, 2025

বিয়ের প্রথম দিন স্বামী স্ত্রী সহবাস করতে পারবে না কারন বিয়ের প্রথম রাত কালরাত এই বক্তব্য কতটুকু সঠিক

 ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার পাশাপাশি তার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোও নির্ধারণ করেছেন এবং সেগুলো পূরণের সঠিক পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এসব চাহিদা পূরণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। ইসলামের প্রতিটি কাজে যেমন নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে, সহবাসও তার ব্যতিক্রম নয়। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে কিছু নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম ছাড়া দিনের যে কোনো সময় ও রাতের যে কোনো মুহূর্তে এবং শরীয়ত সম্মত যে কোনো স্থানে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।”(সূরা আল-বাক্বারাহ, ২:২২৩) এই আয়াতটিতে মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেননি। সুতরাং উভয়ের সুবিধা ও ইচ্ছানুযায়ী বিবাহের প্রথম দিন হোক বা পরবর্তী যে কোনো দিন শোয়ে, বসে, কাত হয়ে, যে ভঙ্গিতেই হোক তা জায়েয। শরীয়তে সহবাসের নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার কোনো দলিল নেই, কারণ এটি ব্যক্তির অবস্থা,শারীরিক সক্ষমতা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। যেহেতু সক্ষমতা ও প্রয়োজন ব্যক্তিভেদে আলাদা,তাই শরীয়তের স্বভাবও এ ধরনের বিষয়ে সংখ্যা নির্ধারণ নয়। তবে জানা উচিত সহবাস অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক মিলন স্ত্রীর একটি অধিকার এবং স্বামীর জন্য তা পূরণ করা একটি কর্তব্য। তবে মনে রাখা জরুরি, যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্যান্য স্থানে, যেমন পায়ুপথ বা মুখে, সহবাস করা শরীয়তে জায়েয নয়; বরং এটি বিকৃত প্রবৃত্তির কাজ, যা বিভিন্ন হাদীসে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন; والوطء واجب على الرجل – أي الزوج بأن يجامع زوجته – إذا لم يكن له عذر ، وبه قال مالك“স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব অর্থাৎ স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা যদি না কোনো ওযর (অজুহাত) থাকে। এ বিষয়ে ইমাম মালিকও একই মত প্রকাশ করেছেন।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩০)

.
হাদীসে এসেছে আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, হে ‘আবদুল্লাহ্‌! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ‘ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো না, বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর, রাত জেগে ‘ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে; তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক আছে।”(সহিহ বুখারী হা/৫১৯৯) স্বামীর উপর স্ত্রীর একটি অধিকার হলো, স্বামী তার সাথে রাত্রিযাপন করবে। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন;إذا كانت له امرأة لزمه المبيت عندها ليلة من كل أربع ليال ما لم يكن له عذر “যদি কারও স্ত্রী থাকে, তবে (শারঈ) কোনো ওযর না থাকলে তার জন্য প্রতি চার রাতের অন্তত এক রাত স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপন করা আবশ্যক।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনি; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২৮; কাশফুল ক্বিনা; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৪৪)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:ويجب على الزوج وطء امرأته بقدر كفايتها ما لم ينهك بدنه أو يشغله عن معيشته ، .. فإن تنازعا فينبغي أن يفرضه الحاكم كالنفقة وكوطئه إذا زاد“স্বামীর জন্য স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য যতটা প্রয়োজন তার সাথে সহবাস করা বাধ্যতামূলক, যতক্ষণ না এটি তাকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত না করে বা তাকে জীবিকা উপার্জন করা থেকে দূরে রাখে… যদি তারা এই বিষয়ে বিতর্ক করে তবে বিচারকের উচিত সহবাসের পদ্ধতিতে আরও বেশি লিখুন যেভাবে তিনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি লিখে দেন।”(আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যাহ মিন ফাতাওয়া শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, পৃষ্ঠা: ২৪৬)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একজন পুরুষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি সে তার স্ত্রীর সাথে এক মাস বা দুই মাস সহবাস না করে তাহলে তার কি কোন গুনাহ আছে কি না? স্বামীর কি তা করা উচিত?
তিনি জবাবে বলেন:
يجب على الرجل أن يطأ زوجته بالمعروف ، وهو من أوكد حقها عليه ، أعظم من إطعامها ، والوطء الواجب ، قيل : إنه واجب في كل أربعة أشهر مرة ، وقيل : بقدَر حاجتها وقُدْرته ، كما يطعمها بقدَر حاجتها وقُدْرته ، وهذا أصح القولين “
“স্বামীকে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত বিষয়ের ভিত্তিতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে হবে; কেননা এটি তার উপর তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারগুলির একটি; এটা তাকে খাওয়ানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ওয়াজিব এ ব্যাপারে, ইমামগনের দুটি মতের মধ্যে এক মত অনুসারে, এটি প্রতি চার মাসে কমপক্ষে একবার ওয়াজিব; অন্য একটি মত অনুসারে, এটি তার প্রয়োজন এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী হওয়া উচিত, যেমন তাকে তার প্রয়োজন এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়ানো উচিত।দুই মতের মধ্যে দ্বিতীয়টি মতটি অধিকতর সঠিক।(মাজমু’আল-ফাতাওয়া, খন্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৭১)
.
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,জাহেলি যুগের মতোই আজকের সমাজেও বহু কুসংস্কার বিদ্যমান। এর মধ্যে প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয়টিও অন্যতম। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে, নির্দিষ্ট কিছু দিন ও সময়ে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা নিষিদ্ধ—যেমন: বিবাহের প্রথম দিন, ঈদের রাত ও দিন, অথবা সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত ইত্যাদি। অথচ এসব বিশ্বাস নিছক কুসংস্কার, যার পক্ষে শরয়ি কোনো প্রমাণ নেই।বরং এসব হল বিদাআতি ও পথভ্রষ্টদের বক্তব্য যা ব্যাপক প্রচারণা ও প্রজন্মান্তরে প্রচলনের ফলে অনেকের নিকট দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে, এবং তারা এসব থেকে বিরত হতে চায় না। অথচ মহান আল্লাহ তাআলা সকলস্থান ও সময়ে স্ত্রী সহবাস করা হালাল করেছেন; কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।ইসলামি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
.
(১).রমযানের দিনের বেলায় সহবাস করা: আল্লাহ তাআলা বলেন: “সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীসহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছেদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছেদ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে খেয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তা অনুসন্ধান কর। [সূরা বাকারা,আয়াত: ১৮৭] রমজান মাসে দিনের বেলায় যে ব্যক্তি যৌনমিলন করে তিনি মুকীম (নিজ অঞ্চলে অবস্থানকারী) রোযাদার হলে তার উপর বড় কাফ্‌ফারা (আল কাফ্‌ফারাতুল মুগাল্লাযাহ) ওয়াজিব হয়। আর তা হল একজন দাস মুক্ত করা। যদি তা না পায় তাহলে একাধারে দুইমাস সিয়াম পালন করা। আর যদি তাও না পারে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়ানো।যদি নারী সন্তুষ্টচিত্তে যৌনমিলনে সাড়া দেয় তাহলে একই বিধান নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর যদি জোরপূর্বক নারীর সাথে সহবাস করা হয় তাহলে তার উপর কোন জরিমানা ওয়াজিব হবে না। আর যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মুসাফির হয় তবে সহবাসের কারণে তাদের কোন গুনাহ হবে না, তাদের উপর কোন কাফ্‌ফারাও ওয়াজিব হবে না এবং দিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব হবে না। শুধু তাদের উভয়কে ঐদিনের রোযা কাযা করতে হবে। যেহেতু মুসাফির অবস্থায় রোযা পালন করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
.
(২).হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা: আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর তারা আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, তা কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।[সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,”যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে কিংবা তার পায়ুপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল’ (ইবনু মাজাহ, হা/৬৩৯; তিরমিযী, হা/১৩৫; মিশকাত, হা/৫৫১, হাদীসটি সহীহ)।উল্লেখ্য, ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস ব্যতীত অন্যান্য সবকিছু বৈধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,”তোমরা তাদের সাথে (তাদের হায়েয অবস্থায়) একই ঘরে অবস্থান ও অন্যান্য কাজ করতে পার শুধু সহবাস ছাড়া” (আবূ দাঊদ, হা/২৫৮, ২১৬৫, সনদ ছহীহ)।তাই কেউ যদি এই অবস্থায় সঙ্গম করে, তাহলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।তবে স্ত্রী হায়েয থেকে পবিত্র হলে তার সাথে সহবাস করা বৈধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর যখন তারা ভালভাবে পবিত্র হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশ মতে তোমরা তাদের নিকট গমন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২২২)
.
(৩).মসজিদে সহবাস করা: আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না।[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
.
(৪).এগুলো ছাড়াও আরও কিছু অবস্থায় যেমন মুহরিম তথা হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়ও স্ত্রী সহবাস হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,“সুবিদিত মাসে (যথা: শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।”(সূরা বাকারাহ: ১৯৭)
.
প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত কারণগুলি ব্যতীত অন্যান্য যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক পরামর্শ ও সম্মতির ভিত্তিতে দিনের যেকোনো সময় বা রাতে একবার কিংবা একাধিকবার স্ত্রীর সাথে সহবাস করা বৈধ। এমনকি যখন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে, তখন শরীয়তসম্মত কোনো বাধা বা ওজর না থাকলে স্ত্রীর জন্য সেই ডাকে সাড়া দেওয়া ওয়াজিব। দলিল হচ্ছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এ আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর সে আসতে অস্বীকার করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ মহিলার উপর অভিসম্পাত বা লা‘নত বর্ষণ করতে থাকে”।(সহীহ বুখারী হা/৩২৩৭, ৫১৯৩,৫১৯৪;সহীহ মুসলিম হা/১৪৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৭৭)। সহীহ মুসলিমের এক এসেছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহবান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি না হয়, ততক্ষন আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে।(সহীহ মুসলিম হা/৩৪৩২; ই.ফা. ৩৪০৫, ই.সে. ৩৪০৪)
.
সুতরাং স্ত্রী যদি কোন বৈধ অজুহাত ছাড়াই স্বামীর আহবান প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সে অবাধ্য,পাপী হিসেবে হবেন। তার ভরণপোষণ ও পোশাক বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে।এক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া, আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা। তাকে বিছানা থেকে আলাদা করে দেয়া। আর প্রয়োজনে সে তাকে মৃদুভাবে প্রহার করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,”আর তোমরা যে নারীদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান’ (সূরা আন-নিসা:৩৪)। উক্ত আয়াতে যেসব স্ত্রীলোক স্বামীদের আনুগত্য করে না কিংবা যারা এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। আল্লাহ তা‘আলা সংশোধনের জন্য পুরুষদেরকে যথাক্রমে তিনটি উপায় বলে দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে চাকর-বাকরদের মত না মারে, পরে সে দিনের শেষে তার সাথে আবার সহবাস করবে”।(সহীহ বুখারী, হা/৫২০৪)।শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,لا يحل لها النشوز عنه، ولا تمنع نفسها منه ، بل إذا امتنعت منه وأصرت على ذلك فله أن يضربها ضربا غير مبرح ، ولا تستحق نفقة ولا قسما “স্ত্রীর জন্য স্বামীর অবাধ্য হওয়া এবং নিজেকে তার থেকে বিরত রাখা জায়েয নয়। বরং স্ত্রী যদি তার থেকে বিরত থাকে এবং তার উপর অটল থাকে, তাহলে তাকে মৃদুভাবে প্রহার করতে পারে এবং সে খোরপোষ বা ভাগের যোগ্য নয়”।(মাজমূঊল ফাতাওয়া খণ্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৭৮-২৭৯)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন:
” يجب عليها أن تطيعه إذا طلبها إلى الفراش وذلك فرض واجب عليها .. .. فمتى امتنعت عن إجابته إلى الفراش كانت عاصية ناشزة … ، كما قال تعالى : (وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً)”
“যখনি স্বামী স্ত্রীকে বিছানায় ডাকবে তখনি ডাকে সাড়া দেয়া স্ত্রীর উপর ফরজ। যদি ডাকে সাড়া না দেয় তাহলে স্ত্রী গুনাহগার ও অবাধ্য হবে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।”(ইবনু তাইমিয়া,আল-ফাতাওয়া আল কুবরা, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৪৫-১৪৬) ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, আলাউদ্দীন আল-মিরদাবী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইবনু আবেদীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, শারঈ কোন কারণ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে সহবাসে রাজি না হলে ক্ষতি করা ব্যতীত জোরপূর্বক সঙ্গম করা জায়েয।(ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৩৮২১৩২)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate