মূলঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু
মূল গ্রন্থঃ
ব্যাখ্যা সংকলনঃ
ইসলামের স্তম্ভ সমূহ শাইখ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু উল্লেখ করেছেন হাদিস জিবরীল হতে। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন: “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”
তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতের উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”
সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করবে”।
তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।” (মুসলিম ৮)
الإسلام (আল ইসলাম)
সংজ্ঞাঃ
শাব্দিক অর্থঃ ইসলাম শব্দটি أسلم (আসলামা) শব্দের مصدر (মাসদার, ক্রিয়ার বিশেষ্য)। أسلم শব্দের অর্থ “সে আত্মসমর্পণ করেছিল”। আর ইসলাম শব্দের অর্থ আত্ম সমর্পন।
ইস্তিলাহি বা শারিয়াগত অর্থঃ শাইখ ইবনু বায বলেন,
الإسلام هو الاستسلام لله والخضوع له بفعل أوامره وترك نواهيه، هذا هو الإسلام، إن الدين عند الله الإسلام، الإسلام يعني الانقياد والذل لله في توحيده والإخلاص له وطاعة أوامره وترك نواهيه، هذا هو الإسلا
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্ম সমর্পন, তাঁর কাছে নতি স্বীকার করা তাঁর আদেশ পালন করবার মাধ্যমে এবং তাঁর নিষেধ করা বিষয় হতে বিরত থাকবার মাধ্যমে। এই হচ্ছে ইসলাম। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন এবং নম্রতা প্রদর্শন তাঁর তাওহীদে, তাঁর জন্যে ইখলাস পোষণ করা এবং তাঁর আদেশ সমূহকে মান্য করা এবং তাঁর নিষেধ করা বিষয় সমূহকে তরক করা। (http://www.binbaz.org.sa/node/10519)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহহাব বলেন, ইসলাম হচ্ছেঃ
الإستسلام لله بااتوحيد والإنقياد له بالطاعة والبراءة من الشرك وأهله
আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা তাঁর তাওহীদের সাথে, বাধ্যতার সাথে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা, শিরক এবং তার গোত্রের সাথে (অর্থাৎ শিরককারীর সাথে) সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা।
শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
الإنقياد له بالطاعة (বাধ্যতার সাথে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা): আর সেটা তাঁর, অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালন করবার মাধ্যমে এবং তাঁর নিষেধ করা কাজসমূহ হতে বিরত থাকবার মাধ্যমে। কেননা বাধ্যতার অর্থ হচ্ছে (এরূপ), তাঁর আদেশ পালন করবার মাধ্যমে বাধ্য হওয়া এবং তাঁর নিষেধকৃত কাজসমূহ পরিহার করবার মাধ্যমে বাধ্য হওয়া।
(সংকলকঃ আল্লাহ বলেন,
البراءة من الشرك وأهله (শিরক এবং তার গোত্রের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা): শিরক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ নিজেকে শিরক থেকে বিচ্ছিন করা এবং তা অপরিহার্য করে এর গোত্র থেকেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
প্রকারভেদঃ
الإسلام بمعنى العام (ইসলাম সাধারণ অর্থে)ঃ শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন এ বিষয়ে আরো উল্লেখ করেনঃ
ইসলাম সাধারণ অর্থে যখন থেকে আল্লাহ রাসুলগণ পাঠিয়েছেন তখন থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রহর (কিয়ামাত) স্থাপিত হবার সময় পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদাত করা ঠিক সেভাবে যেভাবে শরিয়াহ পাঠানো হয়েছে। ঠিক যেভাবে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন তাঁর অনেক (কুরআনের) আয়াতে যেখানে এটিই সাব্যস্ত হয় যে বিগত সকল শরীয়াসমূহও (অর্থাৎ প্রেরিত রাসুলগণের মাধ্যমে) আল্লাহর নিকট ইসলাম বলেই গণ্য। আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম ﷺ এর উদাহরণ দিয়েছেনঃ
(বইসূত্রঃ شرح ثلاثة أصول শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ২০-২১ , দার থারয়া লিল নাশর)
الإسلام بمعنى الخاص(ইসলাম বিশেষ অর্থে)ঃ শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন বলেনঃ
ইসলাম বিশেষ অর্থে নবী ﷺ কে প্রেরন করবার পর তাঁকে ﷺ যা দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। কেননা যা দিয়ে নবী ﷺ কে প্রেরণ করা হয়েছিল তা অন্যান্য সকল প্রাক্তন দীন সমূহকে منسوخ (মানসুখ, অর্থ কোন জারী থাকা আইনকে বাতিল ঘোষনা করা) করে দিয়েছে। সুতরাং এর ফলশ্রুতিতে যে কেউ তাঁকে ﷺ অনুসরণ করবে সে গণ্য হবে মুসলিম হিসেবে, আর যে তাঁর ﷺ বিরুদ্ধাচরন করবে, সে গণ্য হবে অমুসলিম হিসেবে। সুতরাং যে যুগে যে রাসুলকে প্রেরণ করা হয়েছে, সে যুগে তাঁকে অনুসরণ করাই হচ্ছে মুসলিম হওয়া। সুতরাং ইহুদীরা মূসা ﷺ এর যুগে মুসলিম এবং তেমনিভাবে খৃষ্টানেরা ঈসা ﷺ এর যুগে মুসলিম। কিন্তু যখন নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে প্রেরণ করা হল তারা তাঁকে ﷺ অবিশ্বাস করল, অতএব তারা মুসলিম নয়।
আর দীন ইসলামই হচ্ছে আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দীন, যা এর পালনকারীর জন্যে কল্যাণকর। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
আর এই ইসলাম হচ্ছে সেই ইসলাম যা আল্লাহ দান করেছেন নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর উম্মতকে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
(বইসূত্রঃ شرح ثلاثة أصول শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ২০-২১ , দার থারয়া লিল নাশর)
—– । —–
স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।
No comments:
Post a Comment