জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
✔ মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জনগণের কাছে এ ধরণের স্বীকারোক্তি নেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। তবে মানুষ নিজেদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় যা বলবে সেটাই মৃত ব্যক্তির জন্য গৃহীত হবে। খারাপ মন্তব্য হোক বা ভাল হোক।[1] ফেরেশতাগণ এর প্রতি আমীন বলেন।[2] তবে মৃত ব্যক্তির গুণ উল্লেখ করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। জানাযায় সূরা ফাতিহা না
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اذْكُرُوْا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ وَكُفُّوْا عَنْ مَسَاوِيْهِمْ.
‘তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের উত্তম কার্যসমূহ উল্লেখ করবে এবং তাদের মন্দকর্ম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকবে’।[3]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ ও মুনকার। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, هَذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ سَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُوْلُ عِمْرَانُ بْنُ أَنَسٍ الْمَكِّىُّ مُنْكَرُ الْحَدِيْثِ ‘এই হাদীছটি গরীব। আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, ইমরান ইবনে আনাস আল-মাক্কী পরিত্যক্ত রাবী’।[4] সুতরাং উক্ত অভ্যাস সত্বর পরিত্যাজ্য।
✔ (১২) জানাযার স্বলাতে ছানা পড়া :
অধিকাংশ মানুষ জানাযার স্বলাতে ছানা পড়ে থাকে। অথচ ছানা পড়ার পক্ষে কোন দলীল নেই।
✔ (১৩) জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা না পড়া :
অন্যান্য স্বলাতের ন্যায় জানাযার স্বলাতেও সূরা ফাতিহা পড়া রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অব্যাহত আমল। সূরা ফাতিহা ছাড়া কোন স্বলাতই হবে না মর্মে অনেক সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। অথচ রাসূল (ﷺ) থেকে এর বিপক্ষে কোন সহিহ হাদীছ নেই। যে সমস্ত বর্ণনা বাজারে প্রচলিত আছে, সেগুলো বিভিন্ন ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈদের নামে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْرَأُ فِى الصَّلَاةِ عَلَى الْجَنَازَةِ.
নাফে’ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জানাযার স্বলাতে ক্বিরাআত পড়তেন না।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে,قَالَ سَالِمٌ لاَ قِرَاءَةَ عَلَى الْجِنَازَةِ সালেম বলেন, জানাযার স্বলাতে কোন ক্বিরাআত নেই।[2] ইমাম মালেক (রহঃ)-কে সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,لَيْسَ ذَلِكَ بِمَعْمُوْلٍ بِهِ بِبَلَدِنَا إنَّمَا هُوَ الدُّعَاءُ أَدْرَكْتُ أَهْلَ بَلَدِنَا عَلَى ذَلِكَ ‘আমাদের শহরে এর প্রতি আমল নেই। এটা মূলতঃ দু‘আ। আমাদের শহরবাসীকে এর উপরই পেয়েছি’।[3]
জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাবীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে উক্ত বর্ণনাকে পরিবর্তন করে নিম্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে- قراءة الفاتحة ليس معمولا بها فى بلدنا فى صلاة الجنازة। অতঃপর মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। অথচ উক্ত শব্দে কোন বর্ণনাই নেই এবং মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যেও নেই।[4] হাদীছ পরিবর্তনের সাহস থাকার কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।
✔ عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْجَنَازَةِ هَلْ يُقْرَأُ فِيْهَ؟ فَقَالَ لَمْ يُوَقِّتْ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ قَوْلًا وَلَا قِرَاءَةً وَفِىْ رِوَايَةٍ دُعَاءً وَلَا قِرَاءَةً كَبِّرْ مَا كَبَّرَ الْإِمَامُ وَاخْتَرْ مِنْ أَطْيَبِ الْكَلَامِ مَا شِئْت وَفِىْ رِوَايَةٍ وَاخْتَرْ مِنْ الدُّعَاءِ أَطْيَبَهُ وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَابْنِ عُمَرَ أَنَّهُمَا قَالَا لَيْسَ فِيْهَا قِرَاءَةُ شَيْءٍ مِنْ الْقُرْآنِ وَلِأَنَّهَا شُرِعَتْ لِلدُّعَاءِ.
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে একদা জানাযার স্বলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যে, উহাতে ক্বিরাআত করতে হবে কি? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য কোন কথা ও ক্বিরাআত নির্দিষ্ট করেননি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দু‘আ ও ক্বিরাআত নির্দিষ্ট করেননি। সুতরাং ইমাম যেমন ক্বিরাআত করেন তেমন তুমি ক্বিরাআত করবে এবং তোমার ইচ্ছানুযায়ী উত্তম কথা বলবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উত্তম দু‘আ বলবে। আব্দুর রহমান বিন আওফ ও ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বলেছেন, জানাযার স্বলাতে কুরআন হতে কোন ক্বিরাআত নেই। কারণ উহা দু‘আর জন্য বিধিবদ্ধ।[5]
তাহক্বীক্ব : উক্ত মর্মে আরো অনেক বর্ণনা বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যে। কিন্তু কোন বর্ণনা রাসূল (ﷺ) থেকে আসেনি। এগুলো সহিহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়।
জ্ঞাতব্য : মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যে সূরা ফাতিহা পড়ার বিপক্ষে বর্ণনা পেশ করার পূর্বে সূরা ফাতিহা পড়ার পক্ষে ১১টি বর্ণনা পেশ করা হয়েছে।[6] কিন্তু ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে শুধু বিপক্ষের বর্ণনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।[7] অতঃপর লেখা হয়েছে, ‘এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস এবং সাহাবী ও তাবেয়ীদের আছার বর্ণিত আছে যা, এই ছোট্ট কলেবরে উল্লেখ করা সম্ভব না। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় জানাযায় সূরা ফাতিহা না পড়াই সুন্নত। এবং পড়া সুন্নতের পরিপন্থি যা গায়রে মুকাল্লিদগণ করে থাকেন। সম্মানিত পাঠক! আপনারাই ফয়সালা করুন এটা কি হাদীসের উপর আমল? না হাদীসের বিরোধীতা’।[8]
সুধী পাঠক! তথ্য গোপন করে শরী‘আতের নামে এভাবে যদি মিথ্যাচার করা হয়, তাহলে সরলপ্রাণ সাধারণ মুসলিমরা কোথায় যাবে? উদ্ভট বর্ণনাগুলো পেশ করে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি মুসলিমকে এভাবেই ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। নিম্নে বর্ণিত হাদীছ ও আছারগুলো লক্ষ্য করলেই আশা করি তাদের ধোঁকাবাজি আরো প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
✔ জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়ার সহিহ হাদীছ সমূহ :
রাসূল (ﷺ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়তেন। এর পক্ষে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
✔ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَرَأَ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়েছেন।[1]
উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছটি সনদগতভাবে দুর্বল। তবে এর পক্ষে সহিহ বুখারীতে হাদীছ থাকার কারণে শায়খ আলবানী (রহঃ) এই সনদকে সহিহ বলেছেন এবং সহিহ তিরমিযী ও সহিহ ইবনে মাজার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।[2] ইমাম তিরমিযীও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন,
حَدِيْثُ ابْنِ عَبَّاسٍ حَدِيْثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَلِكَ الْقَوِيِّ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ عُثْمَانَ هُوَ أَبُو شَيْبَةَ الْوَاسِطِيُّ مُنْكَرُ الْحَدِيْثِ وَالصَّحِيْحُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَوْلُهُ مِنْ السُّنَّةِ الْقِرَاءَةُ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.
‘ইবনু আববাসের হাদীছের সনদ নির্ভরযোগ্য নয়। এর মাঝে ইবরাহীম বিন ওছমান আছে। আর সে হল আবু শায়বাহ আল-ওয়াসেত্বী। অস্বীকৃত রাবী’। সহিহ হল, ইবনু আববাস বর্ণিত হাদীছ। তার বক্তব্য হল- ‘জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত’। অতঃপর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) নিম্নের হাদীছটি উল্লেখ করেন,
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ إِنَّهُ مِنْ السُّنَّةِ أَوْ مِنْ تَمَامِ السُّنَّة.
ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আউফ হতে বর্ণিত, ইবনু আববাস (রাঃ) একদা জানাযার স্বলাত পড়ালেন। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েন। আমি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা সুন্নাত অথবা সুন্নাতের পূর্ণতা।[3] নিম্নের হাদীছটি সহিহ বুখারীতে এসেছে,
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ لِيَعْلَمُوْا أَنَّهَا سُنَّةٌ.
ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার স্বলাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, তারা যেন জানতে পারে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত।[4] অন্য হাদীছে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পাঠ করার কথা এসেছে,
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ وَجَهَرَ حَتَّى أَسْمَعَنَا فَلَمَّا فَرَغَ أَخَذْتُ بِيَدِهِ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ سُنَّةٌ وَحَقٌّ.
ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার স্বলাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করলেন। তিনি ক্বিরাআত জোরে পড়ে আমাদের শুনালেন। তিনি যখন স্বলাত শেষ করলেন তখন আমি তাকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা সুন্নাত এবং হক্ব। [5]
عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ أَنَّ السُّنَّةَ فِى الصَّلاَةِ عَلَى الْجَنَازَةِ أَنْ يُكَبِّرَ الإِمَامُ ثُمَّ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الأُولَى سِرًّا فِىْ نَفْسِهِ ثُمَّ يُصَلِّى عَلَى النَّبِىِّ وَيُخْلِصُ الدُّعَاءَ لِلْجَنَازَةِ فِى التَّكْبِيْرَاتِ لاَ يَقْرَأُ فِىْ شَىْءٍ مِنْهُنَّ ثُمَّ يُسَلِّمُ سِرًّا فِىْ نَفْسِهِ. وَزَادَ الْأَثْرَمُ السُّنَّةُ يَفْعَلُ مَنْ وَرَاءَ الْإِمَامِ مِثْلَ مَا يَفْعَلُ إِمَامُهُمْ.
রাসূল (ﷺ)-এর জনৈক ছাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় সুন্নাত হল-জানাযার স্বলাতে ইমাম তাকবীর দিবেন এবং প্রথম তাকবীরের পর নীরবে মনে মনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। অতঃপর বাকী তাকবীরগুলোতে রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরূদ পড়বেন। তারপর মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্টভাবে দু‘আ করবেন। সেই তাকবীরগুলোতে কোন কিছু পাঠ করবে না। অতঃপর নীরবে সালাম ফিরাবেন। আছরাম অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম যা করবেন মুক্তাদীরাও তা-ই করবে।[6]
عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ يُحَدِّثُ سَعِيْدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ قَالَ مِنَ السُّنَّةِ فِي الصَّلاَةِ عَلَى الْجِنَازَةِ أَنْ تَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ثُمَّ تُصَلِّيَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ثُمَّ يُخْلِصَ الدُّعَاءَ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَفْرُغَ وَلاَ تَقْرَأَ إِلاَّ مَرَّةً وَاحِدَةً ثُمَّ تُسَلِّمَ فِيْ نَفْسِكِ.
যুহরী বলেন, আবু উমাম (রাঃ)-কে সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব-এর নিকট হাদীছ বর্ণনা করতে শুনেছি যে, জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। তারপর মাইয়েতের জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দু‘আ করবে। প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময়ে কিছু পাঠ করবে না। তারপর তুমি সালাম ফিরাবে।[7]
জ্ঞাতব্য : সূরা ফাতিহা না পড়ার আমল মূলতঃ ইরাকের কূফায় আবিষ্কার হয়েছে। সহিহ সুন্নাহ্র সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। যেমনটি ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেছেন।[8] উল্লেখ্য যে, জানাযার স্বলাতে সূরা ফাতেহা পাঠ করার বিরুদ্ধে একশ্রেণীর আলেম বিরাট প্রতারণা ও ধোঁকাবাজিরও আশ্রয় নিয়েছেন। যেমন মাওলানা আব্দুল মতিন প্রণীত ‘দলিলসহ স্বলাতের মাসায়েল’ বইয়ে কিছু যঈফ, জাল ও মিথ্যা বর্ণনা পেশ করে পাঠক সমাজকে ধোঁকা দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু উক্ত সহিহ হাদীছগুলো তার চোখে পড়েনি। তিনি গোপন করেছেন।[9] চোখ থেকেও তিনি অন্ধত্বের পরিচয় দিয়েছেন (সূরা আ‘রাফ ১৭৯)। আল্লাহ হেদায়াত দান করুন- আমীন!!
✔ (১৪) মৃত ব্যক্তিকে কবরে চিত করে শোয়ানো :
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় চিত করে শোয়ানো এবং বুকের উপর হাত জোড় করে রাখার যে রেওয়াজ প্রচলিত আছে, তার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। বরং তাকে ডান কাতে রাখতে হবে এবং হাত স্বাভাবিকভাবে থাকবে। সাময়িক মৃত্যু বা ঘুমানোর সময় ডান কাতে ঘুমাতে হয়।[1] চিত হয়ে ঘুমানোর কোন বিধান নেই। অথচ চির দিনের জন্য কবরে শোয়ানোর সময় মৃত ব্যক্তিকে কেন চিত করে শোয়ানো হয়? নিম্নের হাদীছটি লক্ষণীয়-
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَأَلْتُ الشَّعْبِيَّ عَنِ الْمَيِّتِ يُوَجَّهُ لِلْقِبْلَةِ قَالَ إِنْ شِئْتَ فَوَجِّهْ وَإِنْ شِئْتَ فَلاَ تُوَجِّهْ لَكِنِ اجْعَلِ الْقَبْرَ إِلَى الْقِبْلَةِ قَبْرُ رَسُوْلِ اللهِ وَقَبْرُ عُمَرَ وَقَبْرُ أَبِيْ بَكْرٍ إِلَى الْقِبْلَةِ.
জাবের বলেন, আমি শা‘বী (রহঃ)-কে মৃত ব্যক্তিকে ক্বিবলামুখী করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম? তিনি বললেন, চাইলে ক্বিবলামুখী কর, না হয় না কর। তবে কবরে ক্বিবলামুখী করে রাখো। কারণ রাসূল (ﷺ), আবুবকর, ওমর (রাঃ)-কে কবরে ক্বিবলামুখী করে রাখা হয়েছে।[2] ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হিঃ) বলেন,
وَيُجْعَلُ الْمَيِّتُ فِىْ قَبْرِهِ عَلَى جَنْبِهِ الْيَمِيْنِ وَوَجْهُهُ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ … عَلَى هَذَا جَرَى عَمَلُ أَهْلِ الإِسْلاَمِ مِنْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ إِلَى يَوْمِنَا هَذَا وَهَكَذَا كُلُّ مَقْبَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ.
‘মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান পাশে রাখবে। আর মুখটাকে ক্বিবলার দিকে করে রাখবে।.. রাসূল (ﷺ)-এর যুগ থেকে আমাদের এই যুগ পর্যন্ত মুসলিমদের এই আমল জারি আছে। পৃথিবীর বুকে প্রত্যেক কবর এমনই হয়’।[3] শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুললাহ বিন বায (রহঃ) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,
إِنَّ الْمَيِّتَ يُوْضَعُ مِنْ جِهَةِ رِجْلَىَ الْقَبْرِ ثُمَّ يُسَلُّ إِلَى جِهَةِ رَأْسِهِ عَلَى جَنْبِهِ الْأَيْمَنِ مُسْتَقْبِلاَ الْقِبْلَةِ هَذَا هُوَ الْأَفْضَلُ وَالسُّنَّةُ.
‘মাইয়েতকে কবরের দুই পায়ের দিক থেকে রাখবে। অতঃপর ক্বিবলামুখী করে ডান পাশে রাখবে। এটাই উত্তম এবং সুন্নাত।[4] কবরে মৃত ব্যক্তির হাত কোথায় থাকবে মর্মে ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, পার্শ্বে থাকবে।[5]
✔ (১৫) মাটি দেয়ার সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম… দু‘আ পড়া :
✔ মাটি দেওয়ার সময় সাধারণ দু‘আ হিসাবে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।[1] এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’.. দু‘আ পড়ার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। তবে কবরে লাশ রাখার সময় উক্ত দু‘আ পড়া সম্পর্কে মুসনাদে আহমাদে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা নিতান্তই যঈফ; বরং কেউ জাল বলেছেন।
(أ) عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُوْمٍ ابْنَةُ رَسُوْلِ اللهِ فِى الْقَبْرِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ( مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى) قَالَ ثُمَّ لاَ أَدْرِىْ أَقَالَ بِسْمِ اللهِ وَفِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ أَمْ لاَ..
(ক) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর কন্যা উম্মু কুলছূমকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন রাসূল (ﷺ) বলেছিলেন, ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ফী সাবীলিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হি’ বললেন কি-না আমি জানি না।[2]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ কিংবা জাল। এর সনদে আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জুদ‘আন ও উবায়দুল্লাহ বিন যাহ্র নামে দুইজন পরিত্যক্ত রাবী আছে।[3]
✔ (ب) عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ حَضَرْتُ ابْنَ عُمَرَ فِىْ جِنَازَةٍ فَلَمَّا وَضَعَهَا فِى اللَّحْدِ قَالَ بِسْمِ اللهِ وَفِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمَّا أُخِذَ فِىْ تَسْوِيَةِ اللَّبِنِ عَلَى اللَّحْدِ قَالَ اللَّهُمَّ أَجِرْهَا مِنَ الشَّيْطَانِ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ جَافِ الأَرْضَ عَنْ جَنْبَيْهَا وَصَعِّدْ رُوْحَهَا وَلَقِّهَا مِنْكَ رِضْوَانًا قُلْتُ يَا ابْنَ عُمَرَ أَشَىْءٌ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ أَمْ قُلْتَهُ بِرَأْيِكَ قَالَ إِنِّىْ إِذًا لَقَادِرٌ عَلَى الْقَوْلِ بَلْ شَىْءٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ .
(খ) সাঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু ওমর (রাঃ)-এর সাথে এক জানাযায় উপস্থিত হয়েছিলাম। যখন জানাযাকে লাহাদে রাখা হল তখন তিনি বললেন, ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ফী সাবীলিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হি’। অতঃপর যখন লাহাদে ইট দেয়া শুরু হল তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্ব-নির রজীম ওয়া মিন আযাবিল কবরি। আল্লা-হুম্মা জাফিল আরযা আন জানবাইহা ওয়া ছাই‘য়িদ রূহাহা ওয়া লাক্কিহা মিনকা রিযওয়ানা’। আমি বললাম, হে ইবনু ওমর (রাঃ)! আপনি কি এটা রাসূল (ﷺ) থেকে শুনেছেন না নিজে থেকেই বললেন? তিনি বললেন, আমি কি কোন কথা বলার সাধ্য রাখি? বরং আমি এটি রাসূল (ﷺ)-এর কাছে শুনেছি। [4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে হাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে প্রসিদ্ধ যঈফ রাবী আছে।[5]
জ্ঞাতব্য : প্রচলিত আছে যে, প্রথম মুষ্টিতে বলতে হবে ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’ দ্বিতীয় মুষ্টিতে বলতে হবে ‘ওয়া ফীহা নুঈদুকুম’ এবং তৃতীয় মুষ্টিতে বলতে হবে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। উক্ত দাবীর পক্ষে কোন দলীল নেই।
>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<
No comments:
Post a Comment