প্রশ্ন: সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়ে যে কোন দু’আ করলে তা কবুল হয়-এ কথাটি কতটুকু সঠিক?
ফেসবুকে এমন একটা পোস্ট দেখা যাচ্ছে যেখানে বলা এভাবে বলা হয়েছে: দুআ কবুল হচ্ছে না? তাহলে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে দুআ করুন আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আপনি যা কিছু প্রার্থনা করবেন তা প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।” এটা কতটুকু সত্য? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: এখানে হাদিসটির যেভাবে অর্থ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। নিম্নে মূল হাদিসটি এবং তার সঠিক অনুবাদ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হল। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
❑ মূল হাদিসটি নিম্নরূপ:
সহিহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন:
بَيْنَمَا جِبْرِيلُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، سَمِعَ نَقِيضًا مِنْ فَوْقِهِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ، فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ، فَقَالَ: هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ، فَسَلَّمَ وَقَالَ: أَبْشِرْ بِنُورَيْنِ أُوتِيتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ: فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيمُ سُورَةِ الْبَقَرَةِ، لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيتَهُ
“একদা জিবরিল আলাইহিস সালাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। হঠাৎ তিনি ওপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি মাথা তুলে বললেন, ‘এটা আকাশের একটি দরজা যা আজই খোলা হল। এর আগে আর কখনো খোলা হয়নি।”
ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নিচে নেমে এলেন। তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, “এই ফেরেশতা আজই প্রথম পৃথিবীতে এলেন। এর আগে তিনি কখনো আসেননি।” উক্ত ফেরেশতা সালাম দিয়ে বললেন, “আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন যা আপনার আগে কোনও নবীকে দেওয়া হয়নি। এর একটি হল সূরা ফাতিহা এবং অন্যটি হল, সূরা বাকারা-এর শেষাংশ। এই দুটি থেকে আপনি যা-ই তেলাওয়াত করবেন তার প্রতিটি হরফ পাঠ করলে আপনাকে তা দেওয়া হবে।” [সহিহ মুসলিম]
❑ “…তার প্রতিটি হরফ পাঠ করলে আপনাকে তা দেওয়া হবে।’” কথাটির ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ আলেমদের মতামত:
হাদিসের এই অংশটির ব্যাখ্যায় উলামাগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিচে সম্মানিত আলেমদের মত তুলে ধরা হল:
✪ সিন্দি তার তাঁর সুনানে নাসাঈ-এর ওপর লেখা টীকায় (হাশিয়ায়ে সিন্দি) বলেন:
أي مما فيه من الدعاء إلا أعطيته أي أعطيت مقتضاه
“এর অর্থ হল, এই আয়াতগুলোর মধ্যে যে দুআগুলো রয়েছে তা পড়লে আপনাকে সেই দুআর ফল দেওয়া হবে।”
✪ মোল্লা আলি কারী মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ব্যাখ্যা ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’ গ্রন্থে বলেন:
أي أعطيت ما اشتملت عليه تلك الجملة من المسألة كقوله: اهدنا الصراط المستقيم ـ وكقوله: غفرانك ربنا ـ ونظائر ذلك، وفي غير المسألة فيما هو حمد وثناء أعطيت ثوابه.
“এর মানে হল, এই বাক্যগুলোর মধ্যে যে প্রার্থনা রয়েছে, তা আপনাকে দেওয়া হবে। যেমন: اهدنا الصراط المستقيم ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখান’ এবং غفرانك ربنا ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের ক্ষমা করুন’—এর মতো অন্যান্য দুআ। আর যেখানে কোনও দুআ নেই বরং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান রয়েছে সেখানে তার সওয়াব বা প্রতিদান দেওয়া হবে।”
✪ ইবনুল আল্লান তাঁর ‘দালিলুল ফালিহিন শারহু রিয়াদিস সালিহিন’ গ্রন্থে বলেছেন:
والمراد ثوابه الأعظم من ثواب نظيره في غير هذين، أو المراد بالحرف معناه اللغوي وهو الطرف، وكنى به كل جملة مستقلة بنفسها: أي أعطيت ما تضمنته إن كانت دعائية ـ كاهدنا ـ وغفرانك ـ الآيتين، وثوابهما إن لم يتضمن ذلك كالمشتملة على الثناء والتمجيد.
“এর উদ্দেশ্য হল, এই দুটি সূরার সওয়াব অন্য সূরার তুলনায় অনেক বেশি। অথবা ‘হরফ’ বলতে প্রতিটি স্বতন্ত্র বাক্যকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আয়াতগুলোতে যদি দুআ থাকে (যেমন: اهدنا ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখান’ এবং وغفرانك ”হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার ক্ষমা চাই”) তাহলে আপনি যা চেয়েছেন তা আপনাকে দেওয়া হবে। আর যদি তাতে আল্লাহর প্রশংসা বা মহিমা থাকে তবে তার সওয়াব দেওয়া হবে।” [সোর্স: ইসলাম ওয়েব]
❑ সারসংক্ষেপ: হাদিসের এই অংশের মূল মর্মার্থ হল, আল্লাহ তাআলা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমন দুটি বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন, যা তাঁর আগে আর কোনও নবীকে দেওয়া হয়নি। এই দুটি অনুগ্রহ হল সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারা-এর শেষাংশ।
যখন কোনও মুসলিম এই সূরাটি ও আয়াতদ্বয় পাঠ করে তখন আল্লাহ তাকে বিশেষ প্রতিদান দেন। এই প্রতিদান দুই ধরনের:
◆ ১. আয়াতের মধ্যে যে সব দুআ রয়েছে, (যেমন: ”আমাদেরকে সরল পথ দেখান”, আমাদেরকে ক্ষমা করুন ইত্যাদি) আল্লাহ সেগুলো কবুল করেন। (যে কোনও দুআ কবুল করা হয় মর্মে প্রচলিত ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়।)
◆ ২. উক্ত সূরা ও আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর যেসব প্রশংসা ও গুণগান আছে সেগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সূরার তুলনায় অনেক বেশি সওয়াব বা প্রতিদান দান করেন। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই মর্যাদাপূর্ণ সহজ আমলটি বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment