খারেজিদের সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।
খারেজি কী? কারা এবং কীভাবে খারেজিদের চেনা যাবে? সে সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ’র উলামা-মাশায়েখ এবং স্কলারগণ বেশ কাজ করে গিয়েছেন। বলে রাখা ভালো, রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে তাঁর উম্মত ৭৩ টা দল বা ফিরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। ইসলামের ইতিহাসে এই ৭৩ টা দলের সূচনা হয় এই খারেজিদের মাধ্যমেই। অর্থাৎ তারাই প্রথম ফিরকা যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ’র বিপরীতে গিয়ে নিজস্ব মত এবং বুঝ অনুযায়ী ইসলামকে ব্যাখ্যা করেছে। আল-কুরআনের একটি মাত্র আয়াতকে কেন্দ্র করে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। এই খারেজিরাই খলিফাত্বুল মুসিলিমিন আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুর) সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলো। তাঁকে তাকফির করেছিলো এবং হত্যার হুমকিও দিয়েছিলো। এদের সাথে ইবন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুর)-ও বিতর্ক হয়েছিলো। মোদ্দাকথা, এরা ইসলামকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পথভ্রষ্ট ফিরকায় পরিণত হয়। এরা যখন-তখন, যাকে-তাকে তাকফির করে বসে। এরা মুসলিম শাসকদের তাকফির করে। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে জায়েয মনে করে। কথিত জিহাদের উদ্দেশ্যে তারা মুসলিম হত্যাকেও জায়েজ মনে করে।
.
ইমাম ইবন কাসীর (রাহিমাহুল্লাহু) তাঁর ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে বলেন, “যদি তারা (খারেজিরা) কখনো শক্তিমত্তা অর্জন করতে পারে, তাহলে তারা জমিনজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়াবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ইরাক এবং শামেও (সিরিয়া)। তারা কোন শিশুকেও ছাড় দিবে না, না কোন মহিলাকে ছাড় দিবে, না কোন পুরুষকে। কারণ হচ্ছে, তারা ধরেই নিয়েছে মানুষের ভুল-ভ্রান্তির জন্য হত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই”। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দশম খন্ড, ৪৮৪-৪৮৫ পৃষ্ঠা]
আবু উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তারা (খারেজিরা) হচ্ছে যমীনের নিচে থাকা সবচেয়ে নিকৃষ্ট হত্যাকারী। আর, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তারাই যারা এদের (খারেজিদের) হাতে নিহত হয়। তারা (খারেজিরা) হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর। তারা দাবি করে তারা মুসলিম কিন্তু এরা আদতে কাফের”। আবু গালিব তাঁকে (আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে) জিজ্ঞেস করলেন, “হে আবু উমামা, এই অভিমত কি আপনার নিজের?তিনি বললেন, ‘নাহ, বরং আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরকম বলতে শুনেছি’। [ ইবন মাজাহ, হাদীস নম্বর ১৮১, হাদীসের মান- হাসান]
আমি (আবু গালিব) আবু উমামাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি এটা রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে শুনেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি যদি এটা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছ থেকে একবার, দু’বার, তিনবার (এভাবে তিনি সাতবার পর্যন্ত গুনলেন) না শুনতাম, তাহলে আমি কখনোই এটা তোমাকে বলতাম না’। [ আত-তিরমিজি, হাদীস নাম্বার ৩২৭০। হাদীসের মান- হাসান]
তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে। তারা ভাববে, এটা বুঝি তাদের পক্ষেই। অথচ এটা তাদের বিপক্ষে। যায়ীদ বিন ওহাব যুহানী (যিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে খারেজিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন) বলেন, আমি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছিঃ“হে লোকসকল! আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ও্য়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে এমন একদলের আবির্ভাব হবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং তাদের তিলাওয়াতের কাছে তোমাদের তিলাওয়াতকে নগন্য মনে হবে। তাদের ইবাদাতের সামনে তোমাদের ইবাদাতকে তুচ্ছ মনে হবে। তাদের সিয়ামের সামনে তোমাদের সিয়ামকে কিছুই মনে হবে না। তারা কুরআন পাঠ করবে, ভাববে এটা বুঝি তাদের পক্ষেই। অথচ এটা তাদের বিপক্ষেই। তাদের ইবাদাতসমূহ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে সেভাবেই বের হয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়’।
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘খারেজিরা হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর’। [ইবন মাজাহ, হাদীস নাম্বার ১৭৩]
তিনি আরো বলেন, ‘যেভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়, সেভাবে তারাও দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে এবং তারা আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা হচ্ছে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি’। [সহীহ মুসলিম, ১০৬৭]
তিনি (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, ‘তারা মুসলমানদের হত্যা করবে কিন্তু মুশরিকদের ব্যাপারে মৌন থাকবে। আমি যদি তাদের সময়ে (যখন তাদের উদ্ভব হবে) বেঁচে থাকতাম, তাহলে আমি তাদের সেভাবেই হত্যা করতাম যেভাবে আল্লাহ তা’য়ালা আদ জাতিকে নির্মূল করেছেন’।
.
ইবন আমর (রা:) বলেন, আমি সাহল ইবন হুনাইফকে বললাম, ‘আপনি কি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খারেজিদের ব্যাপারে কোনোকিছু বলতে শুনেছেন?’তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, (তিনি ইরাকের দিকে হাত দেখিয়ে বললেন) এই অঞ্চল থেকে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু সে তিলাওয়াত তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রান্ত করবে না। তারা দ্বীন থেকে ঠিক সেভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়’। [বুখারী ৬৯৩৪, মুসলিম ১০৬৮]
No comments:
Post a Comment