প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে পিটি (PT) করা কি জায়েজ?
উত্তর: পিটি (PT) শব্দটি ফিজিক্যাল ট্রেনিং (Physical Training)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যার আরেক নাম, শরীর চর্চা (Physical Exercise)।
এটি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণত শিক্ষার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা, সুস্থতা, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশৃঙ্খলার অনুশীলন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র ক্লাস বা বিষয় হিসাবে গণ্য করা হয়। এই ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা এবং শারীরিক কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে তা নাজায়েজ নয়। তবে অবশ্যই কতিপয় শর্তসাপেক্ষে। যেমন:
১. প্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রী একসাথে ব্যায়াম, খেলাধুলা বা পিটি করা জায়েজ নেই। বরং ছাত্র ও ছাত্রীরা পৃথক পৃথক স্থানে তা করতে পারে।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক বা কিছুটা বড় বুঝমান ছাত্রীরা স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষিত স্থানে পোশাকের শালীনতা বজায় রেখে তা করতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনও পুরুষ শিক্ষার্থী, কর্মচারী, এমনকি পুরুষ প্রশিক্ষকও থাকতে পারবে না।
ইসলামি স্কলারগণ বলেছেন.
وممارسة الفتيات البالغات الرياضة، بحيث يراهن المعلم، أو الطلبة الذكور البالغون؛ قد تكون فيها مخالفة للشرع، الذي أمر النساء بالستر، ونهى عن كل ما يثير الفتنة، ويحرك الشهوة
“প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের খেলাধুলা বা পিটিতে অংশগ্রহণ—যেখানে তাদেরকে পুরুষ শিক্ষক কিংবা বয়ঃপ্রাপ্ত ছাত্ররা দেখে—এ ধরনের কর্মকাণ্ড শরিয়তের বিরোধী হতে পারে। কারণ শরিয়ত নারীদের পরিপূর্ণ পর্দা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে এবং যে কোনও ফিতনা ও কামনা-বাসনা উসকে দেয়—এমন বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলেছে।” [ইসলাম ওয়েব]
৩. পিটি করার সময় মিউজিক ব্যবহার করা জায়েজ নেই। কেননা ইসলামে মিউজিক সর্বাবস্থায় হারাম।
৪. শারীরিক কসরত, ভার উত্তোলন, দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলার ক্ষেত্রে এমন কিছু কার্যক্রম করা যাবে না যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক বা মানসিক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়।
৫. শিক্ষার্থীদের পোশাক-আশাক এত টাইট-ফিট হওয়া যাবে না যাতে তাদের শারীরিক অবকাঠামো ফুটে উঠে বা এত পাতলা ফিনফিনে পোশাক পরিধান করা যাবে না যাতে তার চামড়া দেখা যায়।
৬. এমন পোশাক পরিধান করা জায়েজ নাই যাতে সতর (শরীরের যে অঙ্গটা ঢেকে রাখা আবশ্যক) তা অনাবৃত হয়ে যায়।
৭. শারীরিক কসরতের ক্ষেত্রে কাফেরদের সাদৃশ্য হয় এমন কোন কিছু করা যাবে না। যেমন: প্রশিক্ষকের সামনে মাথা নত করে বাউ করা।
৮. সর্বাবস্থায় শরয়ি পর্দা লঙ্ঘন করা হারাম।
৯. প্রশিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করা জায়েজ নাই।
১০. পিটি বা শরীর চর্চা করতে গিয়ে যেন কোনোভাবেই সালাত ত্যাগ, ছেলেদের মসজিদে জামাত ত্যাগ, রোজা ভঙ্গ করার মত বিষয়গুলো না ঘটে।
১১. মুসলিমদের জন্য এমন কোন উৎসব বা উপলক্ষে প্যারেড বা কুচকাওয়াজ করা জায়েজ নাই যা ইসলামি শরিয়তে অনুমদতি নয়।
মোটকথা, শারীরিক সুস্থতার উদ্দেশ্যে শারীরিক কসরত, শরীর চর্চা, ব্যায়াম, পিটি, প্যারেড ইত্যাদি করা জায়েজ যদি ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে তা করা হয়। অন্যথায় তা হারাম।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment