ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ দেখা না গেলে গ্রহণের সালাত আদায় করা বৈধ নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ، وَلَكِنَّهُمَا آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَقُومُوا فَصَلُّوا “কোন লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখবে, তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং সালাত আদায় করবে।”(সহিহ বুখারী হা/১০৪১; সহীহ মুসলিম হা/১৫২১)। এই হাদীসে আলোকে সূর্যগ্রহণের সালাত শুরু হবে তখনই, যখন তা দেখা যাবে কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ‘তোমরা যখন এটি দেখবে, তখন নামাযের জন্য দ্রুত দাঁড়াও।’ সুতরাং কেবল জ্যোতির্বিদদের সংবাদে সালাত পড়া বৈধ নয়।”
Wednesday, September 10, 2025
যদি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ সরাসরি চোখে দেখা না যায় তবে কেবল সংবাদপত্রের খবর বা কিছু জ্যোতির্বিদের তথ্যের ওপর নির্ভর করে কি গ্রহণের সালাত আদায় করা যাবে
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যদি সূর্য মেঘে আচ্ছন্ন থাকে, অথচ এর আগে গণমাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয় যে অমুক সময়ে আল্লাহর ইচ্ছায় সূর্যগ্রহণ হবে এ অবস্থায় কি গ্রহণের নামায আদায় করতে হবে, যদিও বাস্তবে গ্রহণ দেখা যায়নি?
উত্তরে শাইখ বলেন:
لا يجوز أن يصلي اعتماداً على ما ينشر في الجرائد، أو يذكر بعض الفلكيين، إذا كانت السماء غيماً ولم ير الكسوف ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم علق الحكم بالرؤية ، فقال عليه الصلاة والسلام : (فإذا رأيتموهما فافزعوا إلى الصلاة) ، ومن الجائز أن الله تعالى يخفي هذا الكسوف عن قوم دون آخرين لحكمة يريدها
“গ্রহণের সালাত আদায় করা বৈধ নয় যদি তা কেবল সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর বা কিছু জ্যোতির্বিদদের কথার ওপর নির্ভর করে হয় যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে গ্রহণ দেখা যায় না। কারণ নবী (ﷺ) গ্রহণের সালাতকে প্রত্যক্ষ দেখা’র সাথে শর্তযুক্ত করেছেন। তিনি ﷺ বলেছেন: “তোমরা যখন এ দু’টিকে (সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে, তখন সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ো।” এছাড়াও এটা সম্ভব যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর হিকমত ও প্রজ্ঞার কারণে কোনো এক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে গ্রহণকে আড়াল করে রাখেন, আবার অন্য কোনো সম্প্রদায়ের কাছে তা প্রকাশ করে দেন।”(ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ৩০৯)
.
ইবন উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) অন্য স্থানে আরও বলেছেন:
ثم إن الإعلان عنه [يعني : الكسوف] أوجد مشكلة أخرى، يعلنون عن الكسوف ويكون كسوفا جزئيا صغيرا لا يتبين، فبعض الناس يتعجل ويصلي، كما حدث قبل سنة أو سنتين أعلن عن الكسوف لكنه ما بان، وإذا أعلن عنه ولكنه لم يبن فإنها لا تجوز الصلاة؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ( إذا رأيتموه فصلوا ).والكسوف عند أهل الفلك أحياناً يراد به الظل بمعنى: أن النور يخف لكنه يتبين” .
তাছাড়া গ্রহণের ঘোষণা আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি করে। তারা কখনও কখনও গ্রহণের ঘোষণা দেয়, অথচ সেটি আংশিক এবং এত ক্ষুদ্র হয় যে চোখে দৃশ্যমানই হয় না। তবুও কিছু মানুষ তাড়াহুড়ো করে সালাত পড়ে ফেলে। যেমনটি এক-দুই বছর আগে ঘটেছিল ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে গ্রহণ দেখা যায়নি। সুতরাং যদি গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয় অথচ তা চোখে স্পষ্টভাবে দেখা না যায়, তবে গ্রহণের সালাত আদায় করা জায়েয নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“যখন তোমরা তা দেখবে, তখন সালাতের দিকে ধাবিত হও।”জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, কখনও কখনও যে গ্রহণ বলা হয় তা আসলে উপচ্ছায়া (Penumbra-আংশিক ছায়া), যার ফলে আলো কিছুটা ক্ষীণ হয়, কিন্তু প্রকৃত গ্রহণ চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১৬/৩১)।
.
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যদি আমরা এমন একটি শহরে থাকি যেখানে মেঘ চাঁদ দেখতে বাধা দেয় এবং আমরা চন্দ্রগ্রহণ না দেখি, তাহলে কি সালাত পড়া হবে?
উত্তরে শাইখ বলেন: والجواب صلاة الخسوف منوطة برؤيته لا بالمعرفة الفلكية ، فإذا لم ير الخسوف في المدينة بالكلية فلا تصلى صلاة الخسوف”চন্দ্রগ্রহণের সালাত কেবল তখনই আদায় করা হবে যখন তা চোখে দেখা যাবে; জ্যোতির্বিজ্ঞান বা ফ্যালকিক হিসাব অনুযায়ী জানলেই যথেষ্ট নয়। যদি শহরে মোটেই চন্দ্রগ্রহণ দেখা না যায়, তাহলে চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করা হবে না।”(শাইখের অফিসিয়াল আইডি থেকে)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment