অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যায় কি?
অমুসলিমের ঘরে পানাহার বৈধ কি ?
আমরা ইসলামি শরিয়ার আলোকে সুস্পষ্টভাবে জানতে চাই মুসলমানেরা অমুসলমানের প্রতি কোন দৃষ্টিতে তাকাবে এবং অমুসলমানদের সাথে কী ধরনের আচরণ করবে?
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
ফুটনোটঃhttp://islamqa.info/bn/26721
আমি ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি
ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দেয়া
ইহুদী, খ্রীষ্টান ও কাফেররা মুমিনদের বন্ধু হতে পারে কী?
ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার ১০টি কারণ
অজুহাত দেওয়া যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন (৮) কুফরী করা (৯) মারিয়ামের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া (১০) ঈসাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যার মিথ্যা দাবী করা।
একত্রে মুসলিম অমুসলিম উভয়ই থাকলে কোন শব্দে সালাম দেওয়া যাবে? এ ক্ষেত্রে কি ‘আস- সালামু আলা মানিত্তাবাআলা হুদা’ বলে সালাম দিতে হবে?
এ ক্ষেত্রে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলেই সালাম দিতে হবে। প্রশ্নে উক্ত বাক্য অমুসলিমদেরকে চিঠি লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। (ইবনে উসাইমিন)
কাফিরদের সাথে যে কোনভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখার বিধান কি?
‘‘কারোর দু’টি কাপড় থাকলে সে যেন উভয়টি পরেই নামায পড়ে। আর যদি কারোর একটি মাত্র কাপড় থাকে তা হলে সে যেন কাপড়টিকে নিম্ন বসন হিসেবেই পরিধান করে। ইহুদিদের মতো সে যেন কাপড়টিকে পুরো শরীর পেঁচিয়ে না পওে’’। (আবূ দাউদ ৬৩৫)
‘‘ইহুদী ও খ্রিস্টানরা (মাথার চুল বা দাঁড়ি) কালার করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে তথা কালার করবে’’। (আবূ দাউদ ৪২০৩)
কাফেরের সাথে বসবাস করলে যে বিষয়গুলো অবশ্য খেয়াল রাখা উচিত!
لَا تُسَاكِنُوا المُشْرِكِينَ، وَلَا تُجَامِعُوهُمْ، فَمَنْ سَاكَنَهُمْ أَوْ جَامَعَهُمْ فَهُوَ مِثْلُهُمْ
‘‘তোমরা মুশরিকদের সাথে বসবাস করো না এবং তাদের সাথে সহাবস্থান করো না। সুতরাং যে তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা সহাবস্থান করবে, সে তাদেরই মত।’’[2]
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
৯। কাফেরদের বাতিল মা’বূদকে গালি দেওয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَسُبُّواْ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ فَيَسُبُّواْ اللّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
وَلاَ تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلاَ تُنكِحُواْ الْمُشِرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُواْ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُوْلَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللّهُ يَدْعُوَ إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
১৮। অবশ্য সঙ্গত কারণে বিশেষ করে মহান উদ্দেশ্য সাধন করার মানসে আপনি কোন ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান সতী নারীকে মোহর দিয়ে বিবাহ করতে পারেন।
ফুটনোটঃ[1]. সহীহুল জা’মে হা/২৭১৮
[2]. তিরমিযী হা/১৬০৫
[3]. ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৫৩৬
[4]. সূরা মুমতাহিনাহ ৮
[5]. তিরমিযী, সহীহ আবু দাঊদ ৪১৩২
[6]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬০১৩, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৩১৯ , তিরমিযী
[7]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২৪৬৬ , মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২২৪৪
[8]. আবূ দাঊদ হা/৩০৫২
[9]. সূরা আনআম-৬:১০৮
[10]. সহীহুল জা’মে হা/৭০৬৮
[11]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৫৯৯
[12]. তিরমিযী হা/২৬৯৫
[13]. আবূ দাউদ, ত্বাবারানীর আউসাত্ব, সহীহুল জা’মে হা/৬১৪৯
[14]. বুখারী ৭/১২৫
[15]. সূরা বাকারাহ-২:২২১
[16]. সূরা মুমতাহিনাহ ১০ আয়াত
কাফেরদের কোন ধরনের সাদৃশ্য গ্রহণে দোষ আছে?
কাফেরদের বাহ্যিক বেশভূষা, পোশাক পরিচ্ছদ, চাল চলন ও পানাহারে যে কোন ধরনের সাদৃশ্য গ্রহণে দোষ আছে। যেহেতু শরীয়তের নির্দেশ এ ব্যাপক। নবী (সঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।” ( আবু দাউদ, ত্বাবারানীর আউসাত্ব , সহিহুল জামে ৬১৪৯ নং)অবশ্য লক্ষণীয় যে,যে জিনিস বিজাতির প্রতীক, যে জিনিস দেখলে তাদেরকে বিজাতি বলে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কেবল সেই জিনিসেই সাদৃশ্য অবলম্বন নিষেধ। তাছাড়া যে জিনিস মুসলিম অমুসলিম এর মাঝে কোন পার্থক্য নির্ধারণ করে না, বরং সকলের মাঝে ব্যাপক, তাতে সাদৃশ্য অবলম্বন প্রশ্নই থাকে না। যদিও সে জিনিস মুলতঃ কাফেরদের নিকট থেকে আগত সভ্যতা কিন্তু ইসলামে তা হারাম নয় এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সর্ব সাধারণের মাঝে প্রচলিত হয়ে গেছে। (ইবনে উসাইমিন)
বর্তমানে মেয়েদের সিঁদুর ও ছেলেদের টাই ব্যবহারে সাদৃশ্য গ্রহণের দোষ আছে। কিন্তু মেয়েদের শাড়ী ও ছেলেদের প্যান্ট ব্যবহারে সেই দোষ নেই। যদিও তা মুসলিমদের পোশাক নয়।আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যে, বিজাতির অনুকরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন ৩ শ্রেণির কর্ম হতে পারে। প্রথমঃ ইবাদতে বা দ্বীনী বিষয়ে। দ্বিতীয়তঃ আচার আচরণে। তৃতীয়ঃ পার্থিব আবিষ্কার ও শিল্প বিষয়ে।ইবাদতে বিজাতির অনুকরণ করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। কার তাতে অনেক সময় মুসলিম ইসলাম থেকে খারিজ ও হয়ে যেতে পারে।আচার আচরণ ও লেবাস পোশাকেও বিজাতির অনুকরণ বৈধ নয়। কারণ তাতে তাদের প্রতি মুগ্ধতা ও আন্তরিক আকর্ষণ প্রকাশ পায়।আবিষ্কার ও শিল্প ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করে পার্থিব উন্নয়ন সাধন করা দোষাবহ নয়। এ অনুকরণ নিষিদ্ধ অনুকরণের পর্যায়ভুক্ত নয়।শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি
যে জিনিস বিজাতির প্রতীক, যে জিনিস দেখলে তাদেরকে বিজাতি বলে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কেবল সেই জিনিসেই সাদৃশ্য অবলম্বন নিষেধ। তাছাড়া যে জিনিস মুসলিম অমুসলিম এর মাঝে কোন পার্থক্য নির্ধারণ করে না, বরং সকলের মাঝে ব্যাপক, তাতে সাদৃশ্য অবলম্বন প্রশ্নই থাকে না। যদিও সে জিনিস মুলতঃ কাফেরদের নিকট থেকে আগত সভ্যতা কিন্তু ইসলামে তা হারাম নয় এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সর্ব সাধারণের মাঝে প্রচলিত হয়ে গেছে। (ইবনে উসাইমিন)
কোন অমুসলিম ইফতারি পার্টি দিলে তা খাওয়া বৈধ কি?
হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতারি করালে এবং সেখানে কোন আপত্তিকর জিনিস (গান-বাজনা, ছবি ইত্যাদি) না থাকলে তা খেয়ে ইফতারি করা বৈধ।তবে যেন তা কেবল বন্ধুত্বের খাতিরে না হয়। বরং তাতে যেন তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার নিয়ত থাকে, ইসলামী শিষ্টাচার প্রকাশের মাধ্যমে ইসলামকে উচ্চ করার উদ্দেশ্য থাকে,মহান আল্লাহ বলেছেন,“ দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।।” (মুমতাহিনাহঃ ৮)শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযী
কোন অমুসলিমকে অনুদিত কুরআন অথবা যাতে কুরআনী আয়াত আছে এমন বই পড়তে দেওয়া বৈধ কি?
আসল আরবি কুরআন অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা বৈধ নয়। অনূদিত কুরআন বা কুরআনী আয়াত সম্বলিত কোন বই পুস্তক অপবিত্র অবস্থায় পড়া অবৈধ নয়। সুতরাং অমুসলিমকে তা দিতে বাধা নেই। (লাজনাহে দায়েমাহ)
কার্যক্ষেত্রে কোন অমুসলিমের অফিস বা বাড়িতে নামাজ পড়া শুদ্ধ কি?
স্থান পবিত্র হলে এবং সামনে মূর্তি ইত্যাদি না থাকলে নামাজ শুদ্ধ। (লাজনাহে দায়েমাহ)সশাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি
কোন কাফের দাওয়াত দিলে খাওয়া এবং তাদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য খাওয়া বৈধও কি?
কোন কাফের দাওয়াত দিলে খাওয়া বৈধ কি?
কোন কাফেরের দাওয়াতে হালাল খাদ্য খাওয়া অবৈধ না। আল্লাহর ওয়াস্তে তার মনকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য খাওয়া যায়। আমাদের আদর্শ নবী কাফেরদের দাওয়াতে তাদের তৈরি হালাল খাদ্য খেয়েছেন। অবশ্য তাদের পূজা (তদনুরূপ মাজারিদের উরস) উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, মূর্তি বা মাজারে উৎসর্গকৃত খাদ্য, ঠাকুরের প্রসাদ, মাজারের তবরুক ইত্যাদি খাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তাতে শিরকে মৌন সম্মতি ও সমর্থন প্রকাশ পায়।
(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্য্যাহ ২৬/১০৯,২৮/৮২, ৮৪)
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য খাওয়া বৈধও কি?
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য ও পানীয় খাওয়া আবৈধ নয়। যেমন তাদের প্রস্তুত, সেলাই ও ধৌত করা কাপড় ব্যবহার করা বৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/২০০)
কোন কাফের দাওয়াত দিলে খাওয়া বৈধ কি?
কোন কাফেরের দাওয়াতে হালাল খাদ্য খাওয়া অবৈধ না। আল্লাহর ওয়াস্তে তার মনকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য খাওয়া যায়। আমাদের আদর্শ নবী কাফেরদের দাওয়াতে তাদের তৈরি হালাল খাদ্য খেয়েছেন। অবশ্য তাদের পূজা (তদনুরূপ মাজারিদের উরস) উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, মূর্তি বা মাজারে উৎসর্গকৃত খাদ্য, ঠাকুরের প্রসাদ, মাজারের তবরুক ইত্যাদি খাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তাতে শিরকে মৌন সম্মতি ও সমর্থন প্রকাশ পায়।
(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্য্যাহ ২৬/১০৯,২৮/৮২, ৮৪)
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য খাওয়া বৈধও কি?
কাফেরদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য ও পানীয় খাওয়া আবৈধ নয়। যেমন তাদের প্রস্তুত, সেলাই ও ধৌত করা কাপড় ব্যবহার করা বৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/২০০)
কোন কাফেরকে ইসলামে নিষিদ্ধ খাবার খেতে দেয়া বৈধ কি?
কোন কাফেরকে ইসলামে নিষিদ্ধ খাবার খেতে দেয়া বৈধ কি?
সহকর্মী বা কার্যক্ষেত্রে কোন অমুসলিমকে এমন জিনিস উপহার বা পানাহার করতে দেয়া বৈধ নয়, যা তাদের ধর্মে বৈধ হলেও ইসলামে অবৈধ। যেমন কোন কাজ করার সময় লেবার কে মদ বা বিড়ি সিগারেট পেশ করাও অবৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/১১০
শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি
কোন কাফেরকে ইসলামে নিষিদ্ধ খাবার খেতে দেয়া বৈধ কি?
সহকর্মী বা কার্যক্ষেত্রে কোন অমুসলিমকে এমন জিনিস উপহার বা পানাহার করতে দেয়া বৈধ নয়, যা তাদের ধর্মে বৈধ হলেও ইসলামে অবৈধ। যেমন কোন কাজ করার সময় লেবার কে মদ বা বিড়ি সিগারেট পেশ করাও অবৈধ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/১১০
শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি
নও মুসলিমের কাহিনীঃ ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজীর একটি সাক্ষাৎকার
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন নারহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার“অজ্ঞানতার দুনিয়ায় আমি ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত ছিলাম, আলোকিত বিশ্বে আমি নিজকে মানুষ হিসেবে খুঁজে পেয়েছি।” ডঃ স্বরূপজীডঃ স্বরূপজী ইসলামে মুক্তির স্বাদ পেলেন গত ১০ই মে (১৯৮৬) ভারতের সাম্প্রতিক কালের এক মহাত্মা ধর্মগুরু যিনি সেদিন পর্যন্ত সেদেশের সর্বত্র ‘ভগবান’ নামে পরিচিত ও পূজিত ছিলেন সেই ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজী মহারাজ উদাসেন নিজ স্ত্রী ও কন্যাসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাহার নতুন নাম রাখা হয় ইসলামুল হক,পত্নীর নাম খোদেজা হক আর কন্যা নাম রাখা হয় আয়েশা হক। গুজরাটের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘শাহীন’ এর তরফ হতে সম্প্রতি ডঃ ইসলামুল হকের এক সাক্ষাৎকর গ্রহণ করা হয়। ১ মার্চ ৮৭ তারিখে সাপ্তাহিক ‘শাহীন] এর প্রকাশিত উক্ত সাক্ষাৎকরটি ইত্তেফাকের পাঠক-পাঠিকা বর্গের নিকট প্রেরণ করেছেন মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, পোষ্ট বক্স নং-২৫, জেদ্দা-২১৪১, সৌদি আরব হতে।
প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণের পর আপনি কি অনুভব করছেন?উত্তরঃ আল্লাহর হাজার শোকর যে, তিনি আমাকে ঈমানের অমূল্য সম্পদ প্রদান করেছেন। আমি নিজকে পৃথিবীর এক ভাগ্যবান ও বিজয়ী পুরুষ বলে মনে করি। অজ্ঞানতার দুনিয়ায় আমি ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত ছিলাম, আলোকিত বিশ্বে আমি নিজকে মানুষ হিসেবে খুঁজে পেয়েছি।প্রশ্নঃ আপনাকে ধন্যবাদ। এখন আপনি মেহেরবানী করে আপনার আগের নাম ও পরিচয় সম্বন্ধে কিছু বলুন?উত্তরঃ আমার নাম মহানত, ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজী মহারাজ উদাসেন, ধর্মচারিয়া, আদ্যশক্তিপীঠ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আমার পেশা মহানতগিরি। বৃন্দাবনে ‘অনাখন্ড আশ্রম’ নামে আমার বড় আশ্রম ছিল। দ্বিতীয় আশ্রম ছিল বোম্বাইয়ের মুলুনডে। আর তৃতীয় দেবালেইনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই আশ্রমটির নির্মাণ কাজ প্রায় ৫০ একর জমির উপর চলছিল। ‘খালাপ পথে’ চলা মানুষের সুপথে আনার উদ্দেশ্যে শিক্ষাদান’ পথ প্রদর্শন ও শিষ্য তৈরী করা ছিল আমার প্রাত্যাহিক কাজ।প্রশ্ন: আপনার পান্ডিত্যের খ্যাতি সর্বত্র। আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে, নিজের শিক্ষা জীবন ও ধর্মজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।উত্তরঃ আশ্রমেই আমার শিক্ষার সূচনা হয়। পরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওরিয়েন্টালিজমে এম.এ। গুরুকুল কাংডি থেকে ‘আচারিয়া’ (আচার্য) পদবী লাভ। বৃটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বের দশটি প্রধানতম ধর্মের উপর ডক্টর অব ডিভাইনিটি এবং সেই সাথে ওরিয়েন্টালিজমে আরেক পি.এইচ.ডি। পোপ পল-৬ এর আহবানে ইতালী যাই। সেখানে সাতটি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ দান করি। আমাকে এক মহাসম্মান ভাটিকানের নাগরিত্ব দান করা হয়। এবং খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান হয়। আমি তদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ভারতে এসে বিধিমত মুকুট ধারণ করে আশ্রমের গদিতে বসে পড়ি। আমার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী। জন্মস্থান মথুরা, বৃন্দাবন। আমি প্রায় ১২টি ভাষা জানি, এর মধ্যে ইংরেজী, সংস্কৃত, গ্রীক, হিন্দি, পালি, গোরমুখী, মারাঠী, গুজরাতি, উর্দু ও আরবী আমার ভাল লাগে। … আগেই বলেছি, আমি দুনিয়ার দশটি প্রধানতম ধর্মের উপর তুলনামূলক পড়াশুনা ও গবেষণা করেছি। সে জন্য সত্য স্বীকারে আমার কোন সংকোচ ছিল না। আমার সমকালীনদের মধ্যে হিন্দু জগতের বড় বড় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব ও পন্ডিত রয়েছেন। যেমন জগৎগুরু শংকরাচার্য, রামগোপাল শারওয়ালে, পুরীর শংকরাচার্য, মহামন্ডেলশ্বর স্বামী অখন্ডানন্দজী, গুরু গোলওয়ালকার বাবা সাহেব দেশমুখ, বালঠাকুরে, অটলবিহারী বাজপায়ী, নানা সাহেব, দেশমুখ, বিনোবা ভাবে এবং অন্যান্য। একবার তিনি তার “পরমধাম” আশ্রমে আমাকে বক্তৃতাদানের বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। সেখানে উপস্থিত লোকজনের সামনে দাদা ধর্মাধীকারী আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসেনঃ “আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে পড়াশুনা করেছেন, মানুষের জন্য কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়? আমি জবাবে বলেছিলাম,‘ইসলাম’ আমার জওয়াবে দাদা খুশী হন নাই। তিনি বলেন, উঠেন, “ইসলাম নানা বাধা-বন্ধন আরো করে।” আমি জবাব দিলাম, “যে বন্ধন বাঁধে, সেই বন্ধনই মুক্তি দিতে পারে। আর যে প্রথম থেকে স্বাধীন, তার সারা জীবনের জন্য বন্ধন সৃষ্টি প্রবণতা থেকে যাবে। এ ধরনীতে মানুষকে এক সাথে বেঁধ রাখার জন্য বন্ধনকারী ধর্মের প্রয়োজন রয়েছে, যা তাদের পৃথিবীতে ভাল করে বেঁধে রাখবে এবং পরলোকে মুক্ত করে দেবে। আর এ রকম ধর্ম আমার মতে একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলাম ছাড়া এরকম ধর্ম আমি আর দেখি না।”প্রশ্নঃ নিজের ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করুন।উত্তরঃ ১৯৮৪’র জানুয়ারীর কথা। এক রাত্রে আমি স্বপ্ন দেখলাম। একদল লোক আমাকে ধাওয়া করছে। আমি দৌড়াচ্ছি তারাও দৌড়াচ্ছে। আমি দাঁড়াই, তারাও দাঁড়ায়। হঠাৎ আমি ধাক্কা খেলাম এবং মাটিতে পড়ে গেলাম। দু’টি অজানা হাত আমাকে ধরে দাঁড় করালো। দাঁড়িয়ে এক নূরানী চেহারার দিকে অবাক হয়ে থাকিয়ে রইলাম। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ইনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল। নবীজী বললেন, ‘‘কলমা পড়।” আমি কলমা পড়লাম। তিনি আমার ডান হাত নিজের পবিত্র হাতের মধ্যে রেখে যা যা পড়াতে লাগলেন, আমি তা পড়তে লাগলাম। এমনি করে পড়া শেষ হলো। তার পর তিনি আমাকে আলিঙ্গন করলেনঃ আর বললেন, “এ দেশকে কলমা পড়াও।” আমি কতক্ষণ ধরে এ স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা আমার মনে নেই। যখন চোখ খুললাম, দেখলাম রাত তিনটা বাজে। একই রাতে, একই সময়ে আমার স্ত্রীও এ ধরনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। … আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নিজেদের প্রথম শতাব্দীর মুসলমান বলে ভাবতে লাগলাম। আমি বিধিসম্মতভাবে মুসলমান হবার উপায় খুঁজতে লাগলাম, এখানে সেখানে ঘুরি, আর মুসলমানদের সাথে সম্পক বাড়াই। চুপিসরে নামায পড়ি। এবাদত বন্দেগী করি। পরিশেষে ভাগ্যক্রমে আলেমদের শহর ভুপাল পৌঁছি। ১৯৮৬-এর ১০ই মে, রমজান মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে আমি আমার স্ত্রী আর আমার যুবতী কন্যা প্রকাশ্যভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আলহামদুলিল্লাহপ্রশ্নঃ আপনি বহু ধর্ম অধ্যায়ন করেছেন। ইসলামের পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ, কুরআন, মোহাম্মদ (সাঃ) অথবা ইসলাম সম্পর্কে কোন বর্ণনা দেখতে পেয়েছেন?উত্তরঃ বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ ছাড়া বাকী সব ধর্ম গ্রন্থে আল্লাহ, মোহাম্মদ (সাঃ) অথবা আহমদ নাম পাওয়া যায়। বেদে খুবই স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।প্রশ্নঃ আপনি লাখ লাখ টাকার সম্পদের মোহ ছেড়ে দিয়ে ইসলাম কবুল করেছেন। বর্তমানে আপনি কিভাবে জীবন নির্বাহ করছেন?উত্তরঃ আমি সমগ্র বিশ্বের রাজত্বও ইসলামের এই মহান উপহারের বদলে ত্যাগ করতে দ্বিধা বা কুন্ঠাবোধ করতাম না। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে যে তৃপ্তি আমি পেয়েছি সাতরাজ্যের ধন সম্পদ লাভ করেও তা পাওয়া সম্ভব নয়। আমি আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করি। আল্লাহ তায়ালার কৃপায় প্যারা মাইক্রো পন্থায় দুরারোগ্য ব্যাধির উপশম ঘটাই। এতেই আমার, আমার পরিবারের ডাল রুটির ব্যবস্থা হয়ে যায়।প্রশ্নঃ সারওয়ারে কায়েনাত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?উত্তরঃ আমি আল্লাহ তায়ালাকে চিনতাম না। আল্লাহর কসম, তিনি আমাকে রাব্বে জুলজালালকে চিনিয়ে দিয়ছেন…..।প্রশ্নঃ ইসলামের সিপাহী হিসেবে আপনি দুনিয়ার মুসলমানদের উদ্দেশ্যে কি বাণী রাখতে চান। …. আপনার মতে মুসলমানদের কেমন হওয়া উচিত?উত্তর : এ ব্যাপারে নবীজি যা বলেছেন তার চেয়ে ভাল কিছু আর কে বলতে পারে? তিনি মুসলামনদেরকে এমন সোনার টুকরার সাথে তুলনা করেছেন কোন অবস্থায়ই যার ঔজ্জ্বল্য কমে না। আরেক জায়গায় তিনি মুসলমানদের তুলনা করেছেন মধুমক্কীকার সাথে, যা ফুলের উপর গিয়ে বসে, নোংরা জায়গায় বসে না। ফুল থেকে রস চুষে মধু বানায়, বিষ তৈরী করে না। আর তা সে নিজের জন্য নয়, অপরের জন্য তৈরী করে। সে ডালে বসে, সে ডালের কোন ক্ষতি করে না। অন্যত্র তিনি বলেছেন, মুসলমান সেই, যার হাত ও কথা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।প্রশ্নঃ আপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু বলুন।উত্তর : স্বার্থপরতার জাল হঠাতে হবে। মুসলিম মুজাহিদদের নতুন শপথ নিয়ে মঠে নামতে হবে। সাহস, নিঃস্বার্থ ঈমান, আর মন-প্রাণ ঢেলে কাজে নামতে হবে। আমার নিজের তরফ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টায় আছি। সমগ্র মুসলিম সমাজকে এক দেহ আর এক প্রাণে পরিণত করতে হবে। এ বিষয়ে আমার কার্যক্রম নিম্নরূপ :(১) ইসলামের সুরক্ষা (২) মুসলমানদের দ্বীন-দুনিয়ার মূল্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা (৩) সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তারে ভাষায় ইসলামের দাওয়াত পৌছান।(দৈনিক ইত্তেফাক, বৃহস্পতিবার, ২৩ বৈশাখ ১৩৯৪)তিনি সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন, উর্দুতে। তার নাম দিয়েছেন “লিজিয়ে আপভি সোঁচে” এর বাংলা অর্থ- নিন আপনিও চিন্তা করুন। আশা করি হিন্দু ভাইয়েরা সত্যই চিন্তা করবেন।
পত্নীর নাম খোদেজা হক আর কন্যা নাম রাখা হয় আয়েশা হক। গুজরাটের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘শাহীন’ এর তরফ হতে সম্প্রতি ডঃ ইসলামুল হকের এক সাক্ষাৎকর গ্রহণ করা হয়। ১ মার্চ ৮৭ তারিখে সাপ্তাহিক ‘শাহীন] এর প্রকাশিত উক্ত সাক্ষাৎকরটি ইত্তেফাকের পাঠক-পাঠিকা বর্গের নিকট প্রেরণ করেছেন মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, পোষ্ট বক্স নং-২৫, জেদ্দা-২১৪১, সৌদি আরব হতে।
No comments:
Post a Comment