ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো কবি বলেন: “ইনসানকে ইনসান (ভুলকারী) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে ভুলে যায়। আর কলব (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে পরিবর্তিত হয়”। আর নিঃসন্দেহে কুরআন অধ্যয়ন করা, তেলাওয়াত করা ও মুখস্থ করা উত্তম নেকীর কাজ। কুরআন ভুলে যাওয়ার আশংকা রোধ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত কুরআন পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। অর্থাৎ মুখস্থকৃত অংশ নিয়মিত পুনঃপাঠ করা ও বারবার তেলাওয়াত করা। অন্যদিকে কুরআন ভুলে যাওয়া গর্হিত কাজ। কারণ এতে আল্লাহর কিতাব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও এ কিতাবকে পরিহার করার আলামত পাওয়া যায়।তাছাড়া কুরআন ভুলে যাওয়ার আশঙ্কায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার পাঠ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,”যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবেই উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বাঁধন খুলে দেয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়”।(সহীহ বুখারী হা/৫০৩১; সহীহ মুসলিম হা/৭৮৯)। অন্যত্র তিনি বলেছেন,”যদি কেউ এভাবে বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি, তাহলে তা তার জন্য খুবই খারাপ। বরং তাকে তো ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কুরআনকে স্মরণ রাখ। কারণ কুরআন মানুষের হৃদয় থেকে পা বাঁধা পলায়নপর চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও অধিক পলায়নপর। ছাড়া পেলেই পালিয়ে যায়ে অর্থাৎ স্মরণ রাখার চেষ্টা না করলেই ভুলে যায়”।(সহীহ বুখারী, হা/৫০৩২; সহীহ মুসলিম, হা/৭৯০; মিশকাত, হা/২১৮৮)।
Saturday, November 15, 2025
কুরআন হিফয করার পর ভুলে যাওয়ার শাস্তি কী
.
.
কুরআন ভুলে যাওয়ার হুকুম কি এ ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন: কেউ বলেন: কুরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ। কোন কোন মতে এটি গুনাহর কাজ; তবে কবিরা গুনাহর পর্যায়ে পৌঁছবে না। আবার কারো কারো মতে এটি এমন একটি মুসিবত যা বান্দার অন্তর ও দ্বীনদারিকে আক্রান্ত করে। এর ফলে বান্দার কোন কোন আমলের উপর আল্লাহর শাস্তি নামতে পারে। যদিও এটি কবিরা গুনাহ নয় বা পাপ নয়;অনেকের মতে এ মাসয়ালায় এটি তৃতীয়টি সর্বাধিক অগ্রগণ্য অভিমত। তবে আমি এই বিষয়ে আহালুল আলেমগনের মতামত গুলো পর্যালোচনা করে যেটা বুঝতে পারলাম সেটা হল কুরআন হিফয করার পর ভুলে যাওয়া দুইটি অবস্থা হতে পারে যথা: (১).স্বভাবগত ভুলে যাওয়া– অর্থাৎ,মানুষের প্রকৃতিগত দুর্বলতা ও স্মৃতিশক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে ভুলে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে বান্দার জন্য কোনো গুনাহ নেই, এবং এর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না। (২).গাফলতির কারণে ভুলে যাওয়া–অর্থাৎ, কুরআনের প্রতি উদাসীনতা, অবহেলা, কিংবা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে ভুলে যাওয়া।এটি এক ধরনের আত্মিক বিপর্যয় বা মুসিবত, যা বান্দার অন্তর ও ঈমানি শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে বান্দার কোন কোন আমলের উপর আল্লাহর শাস্তি নামতে পারে।আবুল ‘আলিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”আমরা কোন ব্যক্তির কুরআন শিক্ষার পর তা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখার কারণে ভুলে যাওয়াকে বড় পাপ হিসাবে গণ্য করতাম”।ইবনু সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”কেউ কুরআন ভুলে গেলে লোকেরা তাকে কঠিন ভাষায় ভৎর্সনা করত”।(ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী হা/৫০৩৮-এর আলোচনা)। তবে জেনে রাখা ভালো'”যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ভুলে যাবে সে ক্বিয়ামতের দিন অঙ্গহানী অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আবু দাঊদ হা/১৪৭৪; মিশকাত হা/২২০০; যঈফুল জামে‘ হা/৫১৩৬, ৫১৫৩)। এছাড়া ‘কুরআন বা কুরআনের কোন আয়াত ভুলে যাওয়া সবচেয়ে বড় গোনাহ‘ মর্মে বর্ণিত হাদীছটিও যঈফ”।(তিরমিযী, মিশকাত হা/৭২০, যঈফুল জামে‘ হা/৩৭০০)।অতএব আমরা বলব—একজন হাফেযে কুরআন,নারী হোক বা পুরুষ—তার জন্য কুরআন মুখস্থ করার পর এর তেলাওয়াতে গাফলতি করা বা নিয়মিত তেলাওয়াতের প্রতি উদাসীন থাকা মোটেই সমীচীন নয়। বরং একজন হাফেযের উচিত সওয়াবের আশায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াত করা; যাতে তার মুখস্থ কুরআন অক্ষুণ্ণ থাকে, ভুলে না যায় এবং সে কুরআনের নির্দেশনা ও হুকুম-আহকাম দ্বারা নিজেকে উপকৃত করতে পারে।
.
.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন—فإن نسيان القرآن من الذنوب “নিশ্চয়ই কুরআন ভুলে যাওয়া হলো গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।”(মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া (১৩/৪২৩)
.
শাইখ যাকারিয়া আল-আনসারী আল-শাফেয়ি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:( ونسيانه كبيرة ) , وكذا نسيان شيء منه ؛ لخبر ( عُرضت عليَّ ذنوب أمتي فلم أر ذنبا أعظم من سورة من القرآن أو آية أوتيها رجل ثم نسيها ) ، وخبر ( من قرأ القرآن ثم نسيه لقي الله عز وجل يوم القيامة أجذم ) رواهما أبو داود ) “(কুরআন ভুলে যাওয়া) একটি কবিরা গুনাহ। এমনকি কুরআনের কিছু অংশ ভুলে যাওয়াও একই রকম। কারণ হাদীসে এসেছে—‘আমার উম্মতের গুনাহসমূহ আমাকে দেখানো হলো। আমি এমন কোনো গুনাহ দেখিনি যা এর চেয়ে বড়, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি সূরা বা আয়াত মুখস্থ করেছিল, তারপর তা ভুলে গেছে।’ এবং অন্য হাদীসে এসেছে—‘যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে তারপর তা ভুলে যায়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে কাটা হাতওয়ালা অবস্থায় উপস্থিত হবে।’এই দুই হাদীস আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন।”(আসনাল মাত্বালিব; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬৪) আর-রামলী ‘নিহায়াতুল মুহতাজ’ গ্রন্থে এর ব্যাখ্যায় বলেন—قوله : ( ونسيانه كبيرة موضعه إذا كان نسيانه تهاوناً وتكاسل“তিনি বলেছেন, (কুরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ)—এর অর্থ হলো,যখন ভুলে যাওয়াটা হবে অবহেলা ও অলসতার কারণে।”(হাশিয়াতুর রামলী; আসনাল মাত্বালিব; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬৪) এই আলোচনা থেকে বুঝা যায় কুরআন ভুলে যাওয়া কবিরা গুনাহ নয়; বরং এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক ধরনের পরীক্ষা বা শাস্তি। সাধারণত এমনটি তখনই ঘটে, যখন কেউ কুরআন তিলাওয়াত ও তার ওপর আমল করা থেকে গাফেল হয়ে যায়, এবং নিয়মিত পুনরাবৃত্তি করে মুখস্থ অংশকে সতেজ রাখে না। অথচ তাকে উভয় বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—কুরআনের ওপর আমল করা এবং নিয়মিত পাঠ করা।যখন সে এসব অবহেলা করে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে সেই মহান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন—এটাই এক প্রকার শাস্তি।তবে যদি কেউ দুর্বল স্মৃতিশক্তির কারণে ভুলে যায়, তাহলে তার ওপর কোনো গুনাহ নেই; বরং তার উচিত নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মুখস্থ অংশকে দৃঢ় রাখা। কেননা এটাই কুরআন মুখস্থ রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
.
যারা বলেছেন যে এটি “মুসীবাহ” (বিপদ বা দুর্ভাগ্য): হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:وأخرج أبو عبيد من طريق الضحاك بن مزاحم موقوفاً قال : ” ما مِن أحد تعلم القرآن ثم نسيه إلا بذنب أحدثه ؛ لأن الله يقول : ( وما أصابكم من مصيبة فبما كسبت أيديكم ) ، ونسيان القرآن من أعظم المصائب “আবু উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) দাহহাক ইবনু মুযাহিম থেকে বর্ণনা করেছেন:“যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছে,তারপর তা ভুলে গেছে, সে কোনো না কোনো গুনাহ করেছে। কারণ আল্লাহ বলেন:”আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল।”(সূরা আশ-শূরা: ৩০) আর কুরআন ভুলে যাওয়া হলো সবচেয়ে বড় বিপদগুলোর একটি।”(ইবনু হাজার; ফাতহুল বারী; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
আবার যারা বলেছেন এটি এক ধরনের “শাস্তি” তাদের বক্তব্য উল্লেখ করে হাফিজ ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:قال أبو العباس القرطبي – رحمه الله – :مَن جمع القرآن : فقد علت رتبته ، ومرتبته ، وشرف في نفسه ، وقومه شرفاً عظيماً ، وكيف لا يكون ذلك و ” من حفظ القرآن فكأنما أدرجت النبوة بين كتفيه ” [ قاله عبد الله بن عمرو بن العاص ، وانظر ” السلسلة الضعيفة ” ( 5118 ) ]، وقد صار ممن يقال فيه : ” هو مِن أهلِ الله تعالى وخاصته ” [ رواه ابن ماجه ( 215) وهو صحيح ] ، وإذا كان كذلك : فمِن المناسب تغليظ العقوبة على من أخلَّ بمزيته الدينية ، ومؤاخذته بما لا يؤاخذ به غيره ، كما قال تعالى : ( يا نساء النبي من يأتِ منكن بفاحشة مبينة يضاعف لها العذاب ضعفين ) ؛ لاسيما إذا كان ذلك الذنب مما يحط تلك المزية ويسقطها ؛ لترك معاهدة القرآن المؤدي به إلى الرجوع إلى الجهالة”আবুল আব্বাস আল-কুরতুবি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:”যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করেছে, তার মর্যাদা ও অবস্থান উঁচু হয়েছে, এবং সে তার নিজের ও জাতির মাঝে মহান সম্মান অর্জন করেছে। আর কেনই বা এমনটা হবে না,যখন (হাদীসে) বলা হয়েছে,”যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে, তার দুই কাঁধের মাঝে যেন নবুয়্যাত গুঁজে দেওয়া হয়েছে।”[এটি আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) বলেছেন, এবং ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটি দুর্বল বলেছেন ‘আস-সিলসিলাতুদ-দ্বা’ঈফাহ’ হা/৫১১৬)] এবং সে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যাদের সম্পর্কে বলা হয়: ‘সে আল্লাহ তা’আলার আপনজন ও বিশেষ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।”(ইবনু মাজাহ হা/২১৫ সনদ সহীহ) কাজেই, যখন কুরআনে হাফিজ হওয়া এমন উচ্চ মর্যাদা,তখন যদি কেউ তা অবহেলা করে, তার বিরুদ্ধে শাস্তি কঠোর হওয়া যুক্তিযুক্ত, যেমন নবীদের স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন—“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীলতা করলে,তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে।”(সূরা আহযাব: ৩০) বিশেষ করে যদি সেই পাপ এমন হয় যা ঐ বিশেষ মর্যাদাকে হ্রাস করে দেয় ও বিলুপ্ত করে ফেলে যেমন কুরআনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা, যা তাকে আবার অজ্ঞতার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।”(আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসে কিতাবে মুসলিম, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪১৯)
.
এ জন্য কুরআন হিফয করার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ধরে রাখার। এ ব্যাপারে সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,فلا يليق بالحافظ له أن يغفل عن تلاوته ، ولا أن يفرط في تعاهده ، بل ينبغي أن يتخذ لنفسه منه ورداً يوميّاً يساعده على ضبطه ، ويحول دون نسيانه ؛ رجاء الأجر ، والاستفادة من أحكامه ، عقيدة ، وعملاً ، ولكن مَن حفظ شيئاً مِن القرآن ثم نسيه عن شغل ، أو غفلة : ليس بآثم ، وما ورد من الوعيد في نسيان ما قد حفظ : لم يصح عن النبي صلى الله عليه وسلم “অতএব,যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে,তার উচিত নয় এর তেলাওয়াত থেকে বিমুখ হওয়া, বা এর প্রতি যত্ন নেওয়া থেকে অবহেলা করা। বরং, তার উচিত প্রতিদিন কুরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ (ওয়ার্দ) নির্ধারণ করে নেওয়া—যা তাকে মুখস্থ অংশ দৃঢ়ভাবে সংরক্ষণে সহায়তা করবে এবং ভুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।সে এটি করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রতিদানের আশায়, এবং কুরআনের শিক্ষা ও বিধান থেকে আকীদা ও আমল উভয় দিক থেকেই উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে। আর কেউ যদি কুরআন মুখস্থ করার পর ব্যস্ততা ও উদাসীনতার কারণে ভুলে যায়, তাহলে সে গুনাহগার হবে না। কেননা কুরআন ভুলে যাওয়ার শাস্তি সম্পর্কে যে দলীল পেশ করা হয়, তা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহসূত্রে প্রমাণিত নয়”।(ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৪র্থ খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৯৯)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আমরা ইলম অন্বেষণকারী ছাত্ররা দলিল-প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনেক আয়াত মুখস্থ করি। কিন্তু বছরের শেষে তার অনেক কিছুই ভুলে যাই। এতে কি আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হব, যাদেরকে মুখস্থকৃত বিষয় ভুলে যাওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে? জবাবে শাইখ বলেন:
نسيان القرآن له سببان :
الأول : ما تقتضيه الطبيعة .
والثاني : الإعراض عن القرآن ، وعدم المبالاة به .
فالأول : لا يأثم به الإنسان ، ولا يعاقب عليه ، فقد وقع من رسول الله صلى الله عليه وسلم حين صلى بالناس ، ونسي آية ، فلما انصرف ذكَّره بها أبيّ بن كعب ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : ( هلا كنت ذكرتنيها ) ، وسمع رسول الله قارئاً يقرأ ، فقال : ( يرحم الله فلاناً فقد ذكرني آية كنت أنسيتها ) .
وهذا يدل على أن النسيان الذي يكون بمقتضى الطبيعة : ليس فيه لوم على الإنسان .أما ما سببه الإعراض ، وعدم المبالاة : فهذا قد يأثم به ، وبعض الناس يكيد له الشيطان ، ويوسوس له أن لا يحفظ القرآن لئلا ينساه ويقع في الإثم ! والله سبحانه وتعالى يقول : ( فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفاً ) النساء/ 76 ، فليحفظ الإنسان القرآن ؛ لأنه خير ، وليؤمل عدم النسيان ، والله سبحانه عند ظن عبده به
“কুরআন ভুলে যাওয়ার দু’টি কারণ আছে: প্রথম: স্বভাবগত কারণ। দ্বিতীয়: কুরআন থেকে বিমুখ হওয়া এবং ভ্রুক্ষেপ না করা। প্রথম কারণে কোন গুনাহ হবে না এবং শাস্তি ধার্য হবে না। এমনকি এটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ক্ষেত্রেও ঘটেছিল, রাসূল (ﷺ) যখন সালাতের ইমামতি করেছিলেন, তখন তিনি একটি আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন। অতঃপর নামাজ শেষ করার পর উবাই ইবনু কা‘ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে সেই আয়াতটির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। তখন নবী ﷺ বললেন: “তুমি আমাকে তা স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন?”(আবূ দাঊদ হা/৯০৭) আর একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ক্বারীর তিলাওয়াত শুনলেন এবং বললেন: “আল্লাহ তাকে রহম করুন! আমাকে এমন আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।”(সহীহ মুসলিম হা/১৭১১) এটা প্রমাণিত হয় যে, স্বভাবগত কারণে মানুষ ভুলে যেতে পারে এতে তিরস্কারের কিছু নেই। অপরদিকে কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও ভ্রুক্ষেপ না করার কারণে গুনাহ হবে। কতিপয় মানুষকে শয়তান আয়ত্বাধীন করে নেয় এবং এভাবে কুমন্ত্রনা দেয় যে, কুরআন মুখস্থ করো না, তা ভুলে যাবে। এতে গুনাহ হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“অতএব তোমরা শয়তানের বন্ধুদের সঙ্গে যুদ্ধ করো;নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল দুর্বল।”(সূরা নিসা: ৭৬) সুতরাং,মানুষের উচিত কুরআন মুখস্থ করা, কারণ এটি সর্বতোভাবে কল্যাণকর। এবং তার উচিত এই আশা পোষণ করা যে, সে তা ভুলে যাবে না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দার তাঁর সম্পর্কে ধারণার উপরই আচরণ করেন।”(ইবনু উসাইমীন, কিতাবুল ইলম,পৃষ্ঠা: ৯৬–৯৭)
.
পরিশেষে আল্লাহ আমাদেরকে এবং আপনাকে এমন কাজ করার তৌফিক দান করুন যা তিনি পছন্দ করেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট থাকেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment