Wednesday, September 17, 2025

কাফের মুশরিক নাস্তিক মুরতাদ ইত্যাদির মৃত্যুতে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া কি জায়েয

 প্রশ্ন: কাফের-মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদ ইত্যাদির মৃত্যুতে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়া কি জায়েয?

▬▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি। অতঃপর আহলুল আলেমগনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অমুসলিম কারো মৃত্যু হলে তার প্রসঙ্গে “إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ”—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলা শরিয়তসম্মত এবং এতে কোনো দোষ নেই। কেননা এই আয়াতের অর্থ হলো: “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।”(সূরা বাকারাহ: ১৫৬) মুসলিমদের সাথে সাথে অমুসলিমদের জন্যও এ কথাটা প্রযোজ্য।কেননা অমুসলিমরাও আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তার কাছে ফিরে যেতে হবে। তাছাড়া এই বাক্যটি মূলত আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ, দুনিয়ার সব কিছুই তাঁর মালিকানাধীন এবং সব কিছুর শেষ পরিণতি তাঁর কাছেই এ বিশ্বাসের বহি:প্রকাশ।
.
প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত:৯৪ হি:] বলেন,“উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) -এর জুতা ছিঁড়ে গেল (জুতার ফিতা বাঁধার জায়গা ছিঁড়ে যায়), তখন তিনি বললেন:إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ، فَقَالُوا : يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، أَفِي قُبَالِ نَعْلِكَ ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، كُلُّ شَيْءٍ أَصَابَ الْمُؤْمِنَ يَكْرَهُهُ , فَهُوَ مُصِيبَةٌ”ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। লোকেরা বলল:”হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আপনার জুতার জন্যও ইন্না লিল্লাহ বললেন? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ, মুমিনের ওপর যা কিছু আপত্তিকর ঘটনা ঘটে,সেটাই মুসীবত (বিপদ)।”(মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৬৬৫২; সনদ সহীহ)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]–কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আপনি তাযিয়া (সান্ত্বনাদান) সম্পর্কে বলেছেন যে, এটি কেবল মৃত ব্যক্তির জন্য সীমাবদ্ধ নয়; তাহলে কি মৃত ব্যতীত অন্য কষ্টে পড়লেও (সান্ত্বনাদান) তাযিয়া দেওয়া সুন্নত? আর তাযিয়ার ধরন কেমন হওয়া উচিত?
উত্তরে বলেন:التعزية هي تقوية المصاب على تحمل الصبر، وانتظار الثواب سواء كان في ميت أو غيره، مثل أن يصاب بفقد مال كبير له، أو ما أشبه ذلك، فتأتي إليه وتعزيه وتحمله على الصبر حتى لا يتأثر تأثراً بالغاً ” ا“তাযিয়া বলতে বোঝায়— বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য ধারণে সহযোগিতা করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের প্রত্যাশায় তাকে উৎসাহিত করা। এটি হোক মৃতের কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে—যেমন, কেউ যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ হারিয়ে ফেলে অথবা অন্য কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তখন আপনি তার কাছে যান, তাকে সান্ত্বনা দেন, ধৈর্য ধারণে উৎসাহিত করেন, যাতে সে অতিমাত্রায় দুঃখ-কষ্টে ভেঙে না পড়ে।”(ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৩৮৪)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোনো পুরুষ বা মহিলা কা/ফির (অমুসলিম-মুশরিক) অবস্থায় মারা গেলে, আমরা কি বলতে পারি “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” নাকি এটা জায়েয নয়? আমরা কি এটাও বলতে পারি “ইয়া আইয়্যাতুহান নাফসুল মুতমাইন্নাহ, ইরজি‘ঈ ইলা রাব্বিকি রাদিয়াতাম মারদিয়্যাহ… শেষ পর্যন্ত”?
এ প্রশ্নের জবাবে শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
الكافر إذا مات لا بأس أن تقول: إنا لله وإنا إليه راجعون، الحمد لله، من أقربائك لا بأس، كل الناس إلى الله راجعون، كل الناس ملك لله سبحانه وتعالى، لا بأس بهذا، ولكن لا يدعى له، ما دام كافر لا يدعى له، ولا يقال: يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ۝ ارْجِعِي لأن النفس ما هي مطمئنة، نفس فاجرة، ما يقال لها، وإنما يقال هذا في المؤمن. فالحاصل أن الكافر إذا مات لا بأس أن تقول: إنا لله وإنا إليه راجعون ولا بأس أن يقول لك غيرك: أعظم الله أجرك فيه، وأحسن عزاءك فيه، ما في بأس، قد يكون لك مصلحة في حياته، قد يكون في حياته يحسن إليك، ينفعك فلا بأس، لكن لا يدعى له ولا يستغفر له، ولا يتصدق عنه إذا مات كافراً. نعم
“কা/ফির মারা গেলে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলাতে কোনো অসুবিধা নেই। যদি সে তোমার ঘনিষ্ঠজনদের (সবচেয়ে প্রিয় সন্তান,নাতি-নাতনি) কেউ হয়,তাহলে “আলহামদুলিল্লাহ” বলাতেও কোনো অসুবিধা নেই। সকল মানুষই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী,সকল মানুষই মহান আল্লাহর মালিকানাধীন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে তার জন্য দু‘আ করা যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে কা/ফির অবস্থায় রয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করা যাবে না,ক্ষমাপ্রার্থনা করা যাবে না। এবং “ইয়া আইয়্যাতুহান নাফসুল মুতমাইন্নাহ, ইরজি‘ঈ” এধরনের আয়াত তার ব্যাপারে পড়া যাবে না। কারণ ঐ আত্মা প্রশান্ত নয়, বরং পাপাচারী আত্মা। তাকে এটা বলা যাবে না। বরং এটা মুমিনদের ক্ষেত্রে বলা হয়। সুতরাং,সারকথা হলো,কা/ফির মারা গেলে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলাতে কোনো অসুবিধা নেই। অন্য কেউ আপনাকে “আ‘জামাল্লাহু আজরাকা ফীহি” (আল্লাহ আপনাকে এতে মহান প্রতিদান দিন) এবং “আহসানাল্লাহু আযাআকা ফীহি” (আল্লাহ আপনাকে এতে উত্তম সান্ত্বনা দিন) বললে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। তার জীবনে আপনার কোনো উপকার থাকতে পারে, তার জীবনে সে আপনার প্রতি ভালো ব্যবহার করতে পারে, আপনার উপকার করতে পারে, তাই এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে তার জন্য দু’আ করা যাবে না, তার জন্য ক্ষমা চাওয়া যাবে না এবং কা/ফির (অমুসলিম/মুশরিক) অবস্থায় মারা গেলে তার পক্ষ থেকে সদাকাহ করা যাবে না।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট;ফাতাওয়া নং ৪৮৯২)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল আল মাদানী।
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate