প্রচণ্ড গরম ও ঠাণ্ডার উৎস কী? এ সময় কি বিশেষ কোন দুআ পাঠ করা যায়? (সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচলিত একটি দুর্বল হাদিস সম্পর্কে পর্যালোচনা)।
প্রচলিত হাদিসটি নিম্নরূপ:
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“إذا كانَ يومٌ حارٌّ ألقى اللهُ تعالى سمعَه وبصرَه إلى أهلِ السماءِ وأهل الأرضِ فإذا قال العبدُ فقالَ الرَّجلُ لا إلَه إلَّا اللَّهُ ما أشدَّ حرَّ هذا اليومِ اللَّهمَّ أجرني من حرِّ جَهنَّمَ، قالَ اللَّهُ عزَّ وجلَّ لجَهنَّمَ إنَّ عبدًا من عبادي استجارني منك وإنِّي اشهدِك أنِّي قد أجرتُه، فإذا كانَ يومٌ شديدُ البردِ ألقى الله تعالى سمعَه وبصرَه إلى أهلِ السماء والأرض، فإذا قالَ العبدُ لا إلَه إلَّا اللَّهُ ما أشدَّ بردَ هذا اليومِ اللَّهمَّ أجرني من زمهريرِ جَهنَّمَ، قالَ اللَّهُ عزَّ وجلَّ لجَهنَّم، إنَّ عبدًا من عبادي استجارني من زمهريرِك وإنِّي أشهدُك أنِّي قد أجرتُه، فقالوا وما زمهريرُ جَهنَّمَ، قالَ بيتٌ يلقى فيهِ الكافرُ فيتميَّزُ من شدَّةِ بردِها بعضُه من بعضٍ”
“গরমের সময় যখন কঠিন গরম পড়ে তখন আল্লাহ জমিনবাসীর প্রতি কর্ণ ও দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। যখন কোনো বান্দা বলে যে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! আজ কত গরম পড়েছে!! اللَّهمَّ أجرني من حرِّ جَهنَّمَ (আল্লাহুম্মা আজিরনী মিন হাররি জাহান্নাম) “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।” তখন আল্লাহ জাহান্নামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দা আমার নিকট তোমার শাস্তি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মুক্তি দিলাম।
সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে রসুল, জাহান্নামের যামহারির কী?
❑ উক্ত হাদিসটির মান:
বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়। যেমন:
❑ প্রচণ্ড গরম ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডার উৎস কী?
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী গ্রীষ্মের দাবদাহ এবং শীতের হিমশীতল ঠাণ্ডা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে উৎসারিত। যেমন: হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا . فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الزَّمْهَرِيرِ
“জাহান্নামের আগুন তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলল, হে রব, আমার একাংশ আরেকাংশকে খেয়ে ফেলল। তখন তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে এবং আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। এ কারণেই তোমরা গ্রীষ্মের প্রখরতা ও ঠাণ্ডার তীব্রতা (যামহারির) অনুভব করে থাক।” [ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫/ মসজিদ ও সালাতের স্থান, পরিচ্ছেদ: ৩২. তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ কমে আসলে জোহর আদায় করা মোস্তাহাব]
❑ প্রচণ্ড উত্তাপ বা ঠাণ্ডার সময় কি বিশেষ কোন দুআ পাঠ করা যায়?
সাধারণভাবে প্রচণ্ড গরম কিংবা আগুনের উত্তাপ দেখে জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করত: তা থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে দুআ করা শরিয়ত সম্মত। কেননা কুরআন ও হাদিসে জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে পর্যাপ্ত আয়াত-হাদিস রয়েছে। বিশেষভাবে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিকে দূরে সরিয়ে দিন। কারণ এর শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক। বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা!” [সূরা ফুরকান: ৬৫-৬৬]
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتْ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ اسْتَجَارَ مِنْ النَّارِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتْ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنْ النَّارِ
“যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত বলে, হে আল্লাহ, আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চায়, জাহান্নাম বলে, হে আল্লাহ, আপনি তাকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দিন।” [সুনানে নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫১/ আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করা, পরিচ্ছেদ: ৫৫. জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা-সহিহ]
সুতরাং কেউ যদি প্রচণ্ড গরমের সময় কিংবা আগুনের উত্তাপ দেখে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে উপরোক্ত হাদিসে বর্ণিত দুআ দুটি পাঠ করে তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই-যদিও হাদিসটি সনদগতভাবে দুর্বল। তবে হাদিসে তার যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ সনদগতভাবে বিশুদ্ধ সূত্রে তা প্রমাণিত নয়।
দুআ দুটি হলো:
● ১. প্রচণ্ড গরমের সময়:
● ২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময়:
জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য এ দুআগুলো কেবল গরম বা ঠাণ্ডার মওসুম নয় বরং যে কোনও সময় পাঠ করা যায়।
উল্লেখ্য যে, উক্ত দুআগুলো গরম ও ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নয় বরং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণের দুআ।
➤ বি. দ্র. যামহারির শব্দের অর্থ: প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,
مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ۖ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا
“তারা (জান্নাতবাসীগণ) সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।” [সূরা দাহার: ১৩]
روي عن ابن مسعود قال: الزمهرير: لون من العذاب . وعن عكرمة ، قال: هو البرد الشديد
No comments:
Post a Comment