Sunday, March 2, 2025

আল্লামা বিন বায কর্তৃক প্রদত্ব ছোট ছোট প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ উত্তর

 আল্লামা বিন বায রাহ. কর্তৃক প্রদত্ব ছোট ছোট প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ উত্তর (৫৪টি)

আল্লামা ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. রমজান, সিয়াম, তারাবিহ, কিয়ামুল্লায়, ইতিকাফ, সফর, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, উমরা ইত্যা বিষয়ে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত চমৎকার কিছু প্রশ্নোত্তর যেগুলো তিনি ‘ওয়াযায়েফে রমজান’ শীর্ষক কিতাবের ব্যাখ্যা কালীন তাঁর ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রদত্ব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন।

নিম্নে পাঠকদের উপকার হবে এ আশায় মূল ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে সেখান থেকে কেবল সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরগুলোর অনুবাদ পেশ করা হলো। আল্লাহ তওফিক দাতা।

মোট ৭টি পর্বে ৫৪টি প্রশ্নোত্তর পেশ করা হয়েছে।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-১

১. প্রশ্ন: যে ব্যক্তি রমজান মাসে সুদ খায় তার রোজা গ্রহণযোগ্য হবে কি?
শাইখ: সুদ হারাম, তা রমজান হোক বা অন্য সময়। রমজানসহ সব সময় সুদ খাওয়া নিষিদ্ধ।

২. প্রশ্ন: তাহলে তার রোজা কবুল হবে?
শাইখ: তার রোজা কবুল হওয়ার আশা করা যায়। তবে সে গুনাহের ঝুঁকিতে থাকবে।

৩. প্রশ্ন: ইউরোপের কিছু দোকানে মুসলিম মালিকরা রমজানে মদ ও শুকরের মাংস বিক্রি করে। এ ব্যাপারে কী বলা যাবে?
শাইখ: তাদের সতর্ক করা উচিত এবং বোঝানো দরকার যে, এটি হারাম ও নিন্দনীয় কাজ যেন তারা শিখে ও সংশোধন হয়ে যায় এবং এসব কাজ ছেড়ে দেয়।

৪. প্রশ্ন: কিন্তু এতে কি তাদের রোজার কোনও প্রভাব পড়ে?
শাইখ: না, রোজা নষ্ট হয় না। তবে এতে দাগ পড়ে। রোজা শুধু তার ভঙ্গকারী বিষয়গুলো দ্বারা বাতিল হয়। কিন্তু গুনাহ করলে রোজার পূর্ণতা কমে যায়-সওয়াব ও প্রতিদান হ্রাস পায়।

৫. প্রশ্ন: কোনও নারী যদি মসজিদের কাছাকাছি বাস করে তাহলে কি সে ইমামের সাথে নামাজ পড়তে পারবে যদি সে ইমামের কণ্ঠ শুনতে পায়?
শাইখ: না, সে মসজিদে গিয়ে পড়বে অথবা একা বাসায় পড়বে। যদি সে মসজিদে না থাকে বা ইমাম ও জামাতকে না দেখে তাহলে সে তাদের অনুসরণ করতে পারবে না। তবে যদি সে মসজিদের ভেতরে থাকে বা ইমাম ও জামাতকে দেখতে পায় তাহলে কোনও সমস্যা নেই।

৬. প্রশ্ন: যদি বাড়িটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত হয় যেমন মুয়াজ্জিন বা ইমামের বাসা?
শাইখ: তবুও, যদি সে ইমাম বা জামাতকে না দেখে তাহলে সে অনুসরণ করতে পারবে না। বরং একা নামাজ পড়বে।

৭. প্রশ্ন: নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই কি উত্তম?
শাইখ: হ্যাঁ, নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম।

৮. প্রশ্ন: যদি কিছু নারীরা একসাথে বাড়িতে থাকে তাহলে তারা জামাতে নামাজ পড়বে নাকি একা একা?
শাইখ: উভয়টাই করা যায়। যদি তারা একত্রে নামাজ আদায় করে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন ইমামতি করে তাহলে এটি ভালো। এতে তারা শিক্ষা পাবে, কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তবে যদি প্রত্যেকে একা একা পড়ে তাতেও কোনও সমস্যা নেই।

৯. প্রশ্ন: যদি নারীরা মসজিদের ভেতরে থাকে কিন্তু তাদের ও পুরুষদের মাঝে পর্দা থাকে তাহলে কি তাদের জামাতে নামাজ পড়া বৈধ?
শাইখ: হ্যাঁ, যদি তারা মসজিদের ভেতরে থাকে তাহলে কোনও সমস্যা নেই। মসজিদুল হারামের মতো স্থানেও তারা ইমামের কণ্ঠ শুনে নামাজ আদায় করতে পারে।

১০. প্রশ্ন: হারাম শরিফের সম্প্রসারিত অংশে কি জামাতে নামাজ আদায় করা যাবে?
শাইখ: হ্যাঁ, তারা ইমামের অনুসরণে সেখানে নামাজ আদায় করতে পারে। এতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ এটি মসজিদের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১১. প্রশ্ন: আমি রোজা রেখেছি। কিন্তু সেহরি খেতে পারিনি। আমার রোজা কি সহিহ হবে?
শাইখ: হ্যাঁ, কোনও সমস্যা নেই। সেহরি সুন্নত; তা আবশ্যক নয়। আপনার রোজা শুদ্ধ হবে।

১২. প্রশ্ন: পুরো রমজানের জন্য একবারই কি নিয়ত করা যথেষ্ট নাকি প্রতিদিন আলাদা নিয়ত করতে হবে?
শাইখ: প্রতিদিনের জন্য আলাদা নিয়ত করতে হবে। (এ ক্ষেত্রে আল্লামা উসাইমিন রহ. বলেন, মাসের শুরুতে সারা মাসের রোজার রাখার নিয়ত করাই যথেষ্ট। তবে প্রতিটি রোজার জন্য আলাদা নিয়ত করা উত্তম)

১৩. প্রশ্ন: প্রতি রাতে কি মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়?
শাইখ: হ্যাঁ, আল্লাহ যাকে মুক্তি দিতে চান তাঁর জন্য প্রতি রাতে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৪. প্রশ্ন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি রমজানে জামাতে নামাজ পড়ানোর সময় কুনুত করেছেন?
শাইখ: আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে তিনি সংকট কালীন সময় কুনুত করেছেন।

১৫. প্রশ্ন: আমি রমজানের বিতির নামাজে কুনুতের কথা জানতে চাচ্ছি।
শাইখ: হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু কুনুতের শিক্ষা দিয়েছেন এবং এটি একটি শিক্ষা বিষয়ক আমল।

১৬. প্রশ্ন: কেউ যদি মক্কা ও রিয়াদের মধ্যে সফর করে তাহলে তার জন্য কোথায় ইফতার করা উত্তম?
শাইখ: সে যেকোনো স্থানে ইফতার করতে পারে। ইফতারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বেঁধে দেওয়া হয়নি।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-২

১৭. প্রশ্ন: রোজাদারকে ইফতার করানোর অর্থ কি তাকে পরিপূর্ণভাবে খাওয়ানো?
শাইখ: এটি নির্ভর করে আল্লাহ যে সুবিধা দেন তার উপর। কারণ এটি নির্দিষ্ট কোনও শর্তসাপেক্ষ নয়।

১৮. প্রশ্ন: ছোটদের রোজার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তাদের অভিভাবক কি এতে সওয়াব পাবেন? এবং তারাও কি সওয়াব পাবে?
শাইখ: হ্যাঁ, ঠিক যেমন নামাজ শেখানোর দায়িত্ব আছে, তেমনি রোজার ক্ষেত্রেও আছে। অভিভাবকের দায়িত্ব হলো, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং যত্ন নেওয়া—যাতে তারা রোজার অভ্যাস গড়ে তোলে, যদি তারা শারীরিকভাবে সক্ষম হয়। যেমন: দশ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে।

১৯. প্রশ্ন: যদি তাদের বয়স দশ বছরের কম হয়?
শাইখ: তারা হয়তো রোজা রাখতে পারবে না। তবে দশ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সীরা পারার সম্ভাবনা থাকে। তবে এটি নামাজের মতো নয়। নামাজের ক্ষেত্রে বিষয়টি তুলনামূলক সহজ।

২০. প্রশ্ন: ইউরোপে অনেক মানুষ রমজানে রোজা রাখে। কিন্তু তারা নামাজ পড়ে না। আসলে তারা নামাজ না পড়তে চায় না। বরং তারা নামাজ সম্পর্কে জানেই না। এ অবস্থায় কী করণীয়?

শাইখ: অভিযোগ শুধু আল্লাহর দরবারে! তাদের অবশ্যই শিখতে হবে। কারণ নামাজ সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে নামাজ পড়ে না সে কাফির হয়ে যায়—আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তাদের অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। দাঈদের (দাওয়াত প্রদানকারীদের) উচিত, তাদের সঠিক জ্ঞান দেওয়া এবং সত্যের পথে আহ্বান করা।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-৩

২১. প্রশ্ন: রমজানের শুরুতে মানুষ মসজিদে উপস্থিত হতে খুব আগ্রহী থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই এই আগ্রহ কমে যায়। এর প্রতিকার কী?
শাইখ: এর প্রতিকার হলো, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা এবং তাঁর ভয় হৃদয়ে রাখা। আল্লাহ তাআলাকে শুধু রমজানে নয়; সবসময়ই সম্মান করা ও ইবাদত করা আবশ্যক। একজন মুমিনের জন্য সর্বদা ফরজ আদায় করা এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। তবে বিশেষ ফজিলত পূর্ণ সময়গুলোতে আরও যত্নবান হওয়া উচিত, যেমন রমজান, জিলহজের প্রথম দশদিন, হজের দিনগুলো। এই মহান সময়গুলোতে নেক আমলে অগ্রসর হওয়া জরুরি। তবে সব সময়েই আল্লাহর ফরজ আদায় করতে হবে, তাঁর হারাম কৃত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থাকতে হবে। একজন মুমিনকে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, সে আল্লাহর একজন দাস, এবং আল্লাহ তাকে সবসময় দেখছেন ও পর্যবেক্ষণ করছেন। আল্লাহ পরম দয়ালু ও দাতা, যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর সাহায্যই কাম্য।

২২ প্রশ্ন: হারিস আল-আওয়ার রহ. বর্ণিত চাঁদ দেখা সম্পর্কিত হাদিসের বিষয়ে কী বলা যায়?
শাইখ: হারিস আল-আওয়ারের হাদিসটি দুর্বল। তবে এসব বর্ণনা মূলত ভালো কাজে উৎসাহিত করার জন্য উল্লেখ করা হয়।

২৩. প্রশ্ন: কুনুতের দোয়া দীর্ঘ করা সম্পর্কে কী বলা যায়?
শাইখ: সুন্নত হলো, কুনুতের দোয়া ও কুরআন খতমের দোয়া দীর্ঘ না করা। ইমামের উচিত মুসল্লিদের কষ্ট না দেওয়া বরং তাদের জন্য সহজ করা।

২৪. প্রশ্ন: কুরআন খতমের সময় দোয়া করলে তা কবুল হয় কি?
শাইখ: এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সহিহ প্রমাণ নেই। তবে সালাফগণ এটি করতেন এবং এতে কল্যাণের আশা করা হয়।

২৫. প্রশ্ন: কুরআন খতমের সময় কি সবাই একত্রিত হয়ে দোয়া করতে পারে?
শাইখ: যদি কেউ দোয়া করে এবং অন্যরা আমিন বলে তাহলে এতে কোনও সমস্যা নেই। এটি কুনুতের মতো, যেমন—নাজিলাহ বা সংকট কালীন কুনুত বা ইস্তিসকা বা বৃষ্টির জন্য দুআর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। ইমাম দুআ করে আর অন্যরা আমিন আমিন বলে।

২৬. প্রশ্ন: কিছু লোক কুরআন খতমের দিনে একত্রিত হয়, খাবারের আয়োজন করে এবং একজন দোয়া করে বাকিরা আমিন বলে। এটি কি জায়েজ?
শাইখ: যদি তারা নিজেদের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করে, শেখে এবং খতম করে তাহলে ইনশাআল্লাহ এতে কল্যাণ রয়েছে। এতে কোনও সমস্যা নেই।

২৭. প্রশ্ন: কিন্তু যদি তারা এটি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিয়ম করে নেয়, যেমন—নির্দিষ্ট সময় পরপর একে অপরের ঘরে একত্রিত হয়, একজন দোয়া করে এবং অন্যরা আমিন বলে?
শাইখ: এ বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা জানা নেই। সালাফগণ বলেছেন, কুরআন খতমের সময় দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা হয়।

২৮. প্রশ্ন: দোয়া কি নামাজের ভেতরে করা উত্তম নাকি নামাজের বাইরে?
শাইখ: উভয়ভাবেই করা জায়েজ।

২৯. প্রশ্ন: কুরআন মুখস্থ করা উত্তম, নাকি বেশি বেশি তিলাওয়াত করা?
শাইখ: রমজানের মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করাই উত্তম। তবে কেউ যদি তিলাওয়াতের পাশাপাশি কিছু সময় মুখস্থ করার জন্য নির্ধারণ করে তাহলে সেটিও কল্যাণকর।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-৪

৩০. প্রশ্ন: যদি কেউ হারামে (মক্কায়) অবস্থান করে তার জন্য বেশি সওয়াব কোন কাজে—কুরআন তিলাওয়াত নাকি সাত চক্কর তওয়াফ করা?
শাইখ: তার উচিত, বেশি বেশি তওয়াফ করা। কারণ তওয়াফ শুধু মক্কাতেই করা যায়। এটি এমন একটি ইবাদত যা মক্কার জন্যই নির্দিষ্ট। তাই যত বেশি সম্ভব তওয়াফ করা উচিত। মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তওয়াফ সর্বোত্তম আমল। তবে যারা মক্কায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাদের জন্য বেশি বেশি নামাজ পড়াই উত্তম। কারণ তারা সর্বদা তওয়াফ করতে সক্ষম। তেমনি মক্কায় দান-সদকা করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করাও বিশেষ ফজিলত পূর্ণ। কারণ এখানে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

টিকা:
শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “কেউ যদি প্রশ্ন করে: অন্যান্য সৎকর্মগুলোর প্রতিদানও কি এভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়?
উত্তর হলো: নির্দিষ্ট কোনও সংখ্যার ভিত্তিতে আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি পাওয়া একটি শরিয়ত-নির্ধারিত বিষয়, যা নির্দিষ্ট প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল এবং এতে কিয়াস (যুক্তিসিদ্ধ অনুমান) করার সুযোগ নেই। যদি কোনও সহিহ প্রমাণ পাওয়া যায় যে অন্যান্য আমলগুলোর প্রতিদানও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা গ্রহণ করা হবে। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ফজিলতপূর্ণ স্থান ও সময়ের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে সওয়াব বৃদ্ধিতে। যেমন আলেমগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, সৎকর্মের প্রতিদান বিশেষ স্থান ও সময়ে বৃদ্ধি পায়। তবে নির্দিষ্ট কোনও সংখ্যার ভিত্তিতে এ বৃদ্ধির দাবি করতে হলে তার জন্য নির্দিষ্ট দলিল থাকা আবশ্যক।”(সমাপ্ত)
উল্লেখ্য যে, একটি হাদিস এসেছে, لكلِّ حسنةٍ مِائَةُ ألفِ حسنةٍ হারামে “প্রত্যেক সৎকর্মের জন্য এক লক্ষ সওয়াব রয়েছে।” এ হাদিসটিকে ইমাম জাহাবি, নাওয়াবি, সহ সকল মুহাদ্দিস জইফ বলেছেন। শাইখ আলবানি বলেন, অত্যাধিক জইফ। (অনুবাদক)

৩১. প্রশ্ন: কেউ যদি রমজান মাসের বাইরে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখে এবং কোনও বন্ধু তাকে চা পান করার আমন্ত্রণ জানায় তাহলে কি সে বলে দেবে যে, সে রোজা আছে?
শাইখ: উত্তম হলো, সে তার রোজা পূর্ণ করবে এবং বলবে: “আমি রোজা আছি, আমাকে মাফ করবেন।” যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إلى طَعَامٍ، وَهو صَائِمٌ، فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ

“যখন তোমাদের কেউ আহারে আমন্ত্রিত হয় এবং সে রোজাদার থাকে, সে যেন বলে: ‘আমি রোজাদার।'” [সহিহু মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১১৫০] এতে কোনও সমস্যা নেই।

৩২. প্রশ্ন: কেউ যদি মক্কায় থেকে রমজানে কোনও শরিয়ত বিরোধী কাজ করে তাহলে কি তার গুনাহ দ্বিগুণ হবে?
শাইখ: গুনাহের সংখ্যা বাড়বে না। তবে গুনাহের গুরুত্ব ও শাস্তি কঠিন হবে। মক্কায় গুনাহ করা মক্কার বাইরে গুনাহ করার চেয়ে গুরুতর। যেমন: মক্কায় কোনও পাপ করা তায়েফ বা রিয়াদে একই পাপ করার তুলনায় অধিক ভয়ানক।

৩৩. প্রশ্ন: রমজানে গুনাহ করলে কি তা আরও ভয়াবহ হয়?
শাইখ: হ্যাঁ, রমজানে গুনাহ করলে তার শাস্তি আরও গুরুতর হয়। কারণ এটি একটি মহান ও ফজিলত পূর্ণ মাস। তবে গুনাহের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে না বরং শাস্তি কঠোর হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

“যে ব্যক্তি একটি নেক আমল করে, সে দশগুণ প্রতিদান পাবে। আর যে পাপ করে তাকে কেবল তার সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হবে না।” [সূরা আনআম: ১৬০]

৩৩. প্রশ্ন: রমজানে কেউ যদি বলে “আমি রোজা আছি” তাহলে সে কি এটি প্রকাশ্যে বলবে, নাকি গোপনে?
শাইখ: যদি সে কাউকে তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার কারণ বোঝাতে চায়, তাহলে প্রকাশ্যে বলতে পারে, যাতে অন্য ব্যক্তি মনে না করে যে, সে তার নিমন্ত্রণ অপছন্দ করছে বা অসম্মান করছে। তবে রমজানে সাধারণত সবাই জানে যে, মুসলিমরা রোজা রাখে। তাই সে যদি বলে “আমি রোজা আছি”, এতে কোনও সমস্যা নেই।

৩৪. প্রশ্ন: কেউ যদি মদিনায় কোনও শরিয়ত বিরোধী কাজ করে তাহলে কি তার গুনাহও বেশি হবে?
শাইখ: হ্যাঁ, তা-ই হবে। সৎকর্ম ও পাপ—উভয়ই বৃদ্ধি পায়। একইভাবে জিলহজের প্রথম দশ দিনেও।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-৫

৩৬. প্রশ্ন: হারামের নিকটবর্তী মসজিদে নামাজ পড়লে কি হারামের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?
শাইখ: মক্কার সব মসজিদেই সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। কারণ পুরো হারাম এলাকা বরকতময়। তবে কাবার কাছাকাছি নামাজ পড়া এবং বৃহৎ জামাতে অংশগ্রহণ করা আরও উত্তম ও ফজিলত পূর্ণ।

৩৭. প্রশ্ন: রোজাদারের জন্য দোয়ার উত্তম সময় কখন ইফতারের সময়, মাগরিবের পর নাকি আজানের আগে?
শাইখ: রোজাদারকে ইফতারের আগে, পরে এবং সারা দিনই দোয়া করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রোজা অবস্থায়, ইফতারের মুহূর্তে ও সেহরির সময় দোয়া করা সুন্নত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩৮. প্রশ্ন: ইতেকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা কত?
শাইখ: এর কোনও নির্দিষ্ট সীমা নেই—না এক দিন, না এক রাত, না এক ঘণ্টা। যে যতটুকু পারবে, সে ততটুকু ইতেকাফ করতে পারে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা কুরআনেও এর কোনও নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি।

৩৯. প্রশ্ন: যদি কোনও নারী সফরে থাকা অবস্থায় ফরজ নামাজ গাড়িতে পড়ে। কারণ তার স্বামী গাড়ি থামাতে রাজি হয়নি তাহলে কি তার নামাজ শুদ্ধ হবে?
শাইখ: যদি সে সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করতে না পারে এবং তার স্বামী তাকে গাড়ি থামানোর অনুমতি না দেয় তাহলে সে গাড়িতেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে পারে। সে কোনোভাবেই নামাজ কাজা করবে না।

৪০. প্রশ্ন: তাহলে কি সে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে?
শাইখ: যদি সে সফরে থাকে তাহলে ফরজ নামাজের জন্য অবশ্যই গাড়ি থেকে নেমে মাটিতে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে ফরজ নামাজের জন্য বাহন থামিয়ে নামাজ আদায় করতেন। বাহনের ওপর কেবল নফল নামাজই আদায় করা যায়।

৪১. প্রশ্ন: তাহলে তার নামাজ কি শুদ্ধ হয়নি?
শাইখ: ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে সে শুদ্ধভাবে আদায় করেনি যদি না সময় পার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। (অর্থাৎ সালাতের সময় পার হওয়ার আশঙ্কা থাকলে গাড়িতেই পড়বে। তা নাহলে গাড়িতে ফরজ সালাত পড়া ঠিক নয়)।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-৬

৪২. প্রশ্ন: রমজানে ঠাট্টা-মশকরা করার ক্ষেত্রে সীমা কী?
শাইখ: মজার ক্ষেত্রেও বৈধ ও নিষিদ্ধ বিষয় রয়েছে। “রাফাস” বলতে স্ত্রী সহবাস এবং অশ্লীল কথা বোঝায়, আর “ফুসুক” হলো যাবতীয় পাপাচার। তাই ঠাট্টা-মশকরার নামে এসব করলে তা হারাম হবে।

৪৩. প্রশ্ন: ‘অনর্থক কথা বলা’র বিষয়ে কী বিধান?
শাইখ: এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। যদি হালকা কথা হয় এবং তা সত্য হয় তবে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বেশি হাসিঠাট্টা ও অনর্থক কথা বলা অপছন্দনীয়।

৪৪. প্রশ্ন: দোয়ায় বাড়াবাড়ির সংজ্ঞা কী?
শাইখ: দোয়ায় এমন কিছু চাওয়া যা হারাম বা অন্যায় সেটাই বাড়াবাড়ি। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ما من مسلمٍ يدعو بدعوةٍ ليس فيها إثمٌ ، ولا قطيعةُ رَحِمٍ
“যদি কোনও মুসলিম দোয়া করে, যাতে গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কিছু না থাকে তবে আল্লাহ তা কবুল করেন।” [সহিহুত তারগিব, হা/১৬৩৩] যদি দোয়ায় হারাম বা আত্মীয় বিচ্ছেদের কোনও বিষয় থাকে তাহলে তা বাড়াবাড়ির মধ্যে পড়ে।

৪৪. প্রশ্ন: রমজানে মিসওয়াক করার বিধান কী?
শাইখ: এতে কোনও সমস্যা নেই বরং এটি সুন্নত।

৪৬. প্রশ্ন: মিসওয়াক দিনের যে কোনও সময়ে করা যাবে?
শাইখ: হ্যাঁ, দিনের শুরুতে বা শেষে যখনই হোক। এতে সমস্যা নেই। কেননা, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لَوْلَا أنْ أشُقَّ علَى أُمَّتي أوْ علَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بالسِّوَاكِ مع كُلِّ صَلَاةٍ

“আমার উম্মতের ওপর কষ্ট না হলে, আমি তাদের প্রতিটি নামাজের আগে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]

৪৭. প্রশ্ন: তাহলে ফজর, আসর, মাগরিব ও এশার সময়ও মিসওয়াক করা যাবে?
শাইখ: হ্যাঁ, রমজান হোক বা অন্য যে কোনও সময়, দিনের সব নামাজের জন্য এটি প্রযোজ্য।

৪৮. প্রশ্ন: কেউ যদি এক বছর ছয় মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে ওমরাহ করতে চায় তাহলে শিশুর জন্য ইহরাম বাঁধতে হবে?
শাইখ: না, এটি আবশ্যক নয়। তবে কেউ চাইলে তার পক্ষ থেকে নিয়ত করতে পারে। যদি ইহরাম বাঁধায় তাহলে তার জন্য সেলাইবিহীন পোশাক পরানো হবে, মাথা খোলা রাখা হবে (যদি ছেলে হয়), আর মেয়ে হলে সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত রাখা হবে। তবে কেউ না করলেও কোনও সমস্যা নেই। কারণ এটি আবশ্যক নয়। কিছু মানুষ শিশুর জন্য ওমরাহর নিয়ম সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, তাই তাদের জন্য এটি না করাই উত্তম।

প্রশ্নোত্তর: পর্ব-৭

৪৯. প্রশ্ন: “ذهب الظمأ، وابتلت العروق، وثبت الأجر إن شاء الله” (“যাহাবায যামাউ….” দোয়াটি ইফতারের সময় পড়তে হবে নাকি ইফতার শেষ হওয়ার পর?
শাইখ: যখন ইফতার করবে তখনই এই দোয়াটি পড়বে, যেন এটি বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়।

৫০. প্রশ্ন: অর্থাৎ ইফতার করা মাত্রই পড়তে হবে?
শাইখ: হ্যাঁ। এটি সুন্নত।

প্রশ্ন: যে হাদিসে দুই নারীর গিবতের কারণে তাদের রোজা ভঙ্গ হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সেটি কি সহিহ?
শাইখ: এ হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ আছে। এতে নাকারাহ (অস্বাভাবিকতা) রয়েছে এবং সনদ যাচাই করা প্রয়োজন।

৫১. প্রশ্ন: ইবনে রজব রহ. তাঁর হাশিয়াতে একে দুর্বল বলেছেন, তাই কি?
শাইখ: হ্যাঁ, এটি অগ্রহণযোগ্য এবং সম্ভবত এটি সহিহ নয়।

৫২. প্রশ্ন: তারাবির নামাজে ইমাম যখন ফাতিহা পড়ে শেষ করেন তখন কি মুক্তাদিদেরও ফাতিহা পড়তে হবে। নাকি শুধু শুনবে?
শাইখ: মুক্তাদিদের সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لعلَّكم تَقْرَءُون خلف إِمَامِكُم
“তোমরা কি তোমাদের ইমামের পেছনে কুরআন পাঠ করো?”
আমরা বললাম: হ্যাঁ।
তিনি বললেন:
لا تفعلوا إلا بفاتحة الكتاب فإنه لا صلاة لِمَنْ لم يَقْرَأ بها

“তোমরা এটা করো না শুধুমাত্র ফাতিহাতুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত। কারণ যে এটি পড়ে না তার নামাজ হয় না।” [আহমদ, আবুদাউদ, তিরমিজি-হাসান]
সুতরাং মু্ক্তাদি ফাতিহা পড়বে। তারপর চুপ থাকবে।

৫৩. প্রশ্ন: মুক্তাদি কি সূরা ফাতিহা পড়বে যদিও ইমাম তখন অন্য সূরা পড়ছেন?
শাইখ: হ্যাঁ, ফাতিহা পড়ে নিবে। তারপর ইমামের কিরাত শুনবে। এটা আগে হোক বা পরে তাতে কোনও সমস্যা নেই।

৫৪. প্রশ্ন: যদি আইয়ামে বীয-এর দিনগুলো (১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) জুমা বা শনিবারের দিনে পড়ে তখন কি সেগুলো রাখা অপছন্দনীয় হবে?
শাইখ: না, এতে কোনও সমস্যা নেই। তবে এককভাবে শুক্রবার রোজা রাখা উচিত নয়। বরং তার সঙ্গে বৃহস্পতিবার বা শনিবার যুক্ত করে রাখতে হবে। আর যে হাদিসে শনিবারে রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটি দুর্বল হাদিস। সুতরাং যদি কেউ শুক্রবারের সঙ্গে শনিবার সংযুক্ত করে রাখে তবে কোনও সমস্যা নেই।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬

অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate