সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির উলামাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
“আমরা কি বলতে পারি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ (খাইরুল বাশার), নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি (খাইরুল খালক)? এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এমন কোনো দলিল আছে কি, যেমনটা অনেক মানুষ বলে থাকে?”
তাঁরা উত্তরে বলেছেন:
“কুরআন ও সুন্নাহর বহু প্রমাণ রয়েছে, যা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা ও আল্লাহর কাছে তাঁর উচ্চ মাকাম প্রমাণ করে। মহান আল্লাহ তাঁকে অনেক মহান গুণাবলি ও সম্মানে ভূষিত করেছেন, যা ইঙ্গিত করে যে তিনি সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত এবং সর্বাধিক মর্যাদাবান।”
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
“আর আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তুমি জানতে না। আর তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ তো অতীব মহান।” [সূরা নিসা: ১১৩]
আল্লাহ তাঁকে যে সম্মান দিয়েছেন, তা গণনা করা কঠিন। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
– আল্লাহ তাঁকে খলিল (প্রিয়তম বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
– তাঁকে খাতামুন নাবিয়্যীন (শেষ নবী) বানিয়েছেন।
– তাঁর ওপর আফজালুল কুতুব (সর্বোত্তম কিতাব–আল কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন।
– তাঁর রিসালাহ (বার্তা) কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ ও জিন জাতির জন্য সর্বজনীন করেছেন।
– তাঁর সমস্ত গুনাহ (আগের ও পরের) ক্ষমা করে দিয়েছেন।
– তাঁর মাধ্যমে এমন মুজিজাহ (নির্দেশনামূলক নিদর্শন) প্রকাশ করেছেন, যা পূর্ববর্তী সকল নবীদের চেয়ে বেশি।
– তিনি সাইয়িদু ওয়ালাদে আদাম (আদম সন্তানের নেতা)।
– তাঁর হাতেই লিওয়াউল হামদ (প্রশংসার পতাকা) থাকবে।
– তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সিরাত (পুলসিরাত) অতিক্রম করবেন।
– তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়বেন ও প্রবেশ করবেন।
এছাড়াও কুরআন ও সুন্নাহতে উল্লিখিত অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে।
এজন্যই সমস্ত ইসলামি উলামাগণ একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
“মুসলিম উম্মাহ একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তাঁর মর্যাদার চেয়ে অধিক মর্যাদা আর কোনো মাখলুকের নেই এবং তাঁর সুপারিশের চেয়ে বড় সুপারিশ আর কারও নেই।”
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল নবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বরং সকল সৃষ্টির মধ্যেই শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান।
তবে এত বড় মর্যাদা ও সম্মান থাকার পরও তিনি মানবধর্ম থেকে উপরে ওঠে যাননি। তিনি আল্লাহর একজন বান্দা ও রসুল। তাই তাঁর নিকট দোয়া করা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা কিংবা তাঁকে আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
“বলুন, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহি হয় যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।” [সূরা কাহফ: ১১০]
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফিকের মাধ্যমেই আমরা সঠিক পথ পাই। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের ওপর দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন। [ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫]
এ ফতোয়ার উপর স্বাক্ষরকারী সম্মানিত উলামাগণ হলেন:
No comments:
Post a Comment