প্রশ্ন: অবৈধ হিসাবে প্রবাসে বসবাসকারী অনেক ঋণগ্রস্ত ভাই রয়েছেন যাদের দেশে এসে জীবন ধারণের কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে প্রবাসে থেকে অর্থ উপার্জন করা কি হালাল হবে?
উত্তর: ইসলামে প্রবাসে বসবাস ও কাজ করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে অনেকেই বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে চলে যান। কিন্তু অনেকে সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করে ও অর্থ উপার্জন করে।
ইসলাম শরিয়ত এই বিষয়ে কী নির্দেশনা দেয় তা জানা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
❑ অবৈধ পন্থায় প্রবাস: ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি
অবৈধ পন্থায় প্রবাস বলতে সাধারণত বোঝায়, কোনও দেশের আইন-কানুন ভঙ্গ করে বা অনুমতি ছাড়া সেখানে বসবাস করা এবং কাজ করা।
মনে রাখা কর্তব্য যে, একজন মানুষ যখন প্রবাসে যাওয়ার জন্য ভিসা গ্রহণ করে তখন সে দেশে গিয়ে সেখানকার আইন-কানুন মেনে চলার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে পরিগণিত হয়। অতএব সে আইন ও শরিয়ত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলতে বাধ্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা অঙ্গীকার (ও চুক্তিসমূহ) পূর্ণ কর।” [সূরা মায়েদা: ১]
আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
المسلمونَ على شروطِهم
“মুসলিমগণ তাদের শর্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” [সহীহ আবু দাউদ, হা/৩৫৯৫] অর্থাৎ মুসলিমগণ তাদের সাথে কৃত শর্ত লঙ্ঘন করবে না।
সুতরাং প্রবাসীদের জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে সে দেশের কোনও আইন লঙ্ঘন করা জায়েজ নেই। (যদি শরিয়ত বিরোধী কোন আইন না হয়। শরিয়ত বিরোধী হলে তা মানা জায়েজ নয়)।
অতএব কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে অবৈধ ভাবে প্রবাসে বসবাস করে তাহলে সে দেশের আইনের দৃষ্টিতে যেমন অপরাধী বলে গণ্য হবে তেমনি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতেও সে গুনাহগার হবে। তবে সে যদি হালাল কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তাহলে হারাম নয়।
অন্য দেশে যাওয়া মুসলমানদের উচিত, সেই দেশের আইন-কানুন মেনে চলা-সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সময় যেগুলো মেনে চলার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিলো যদি না সেগুলো ইসলাম বিরোধী হয়। কেননা মুসলিমগণ চুক্তি রক্ষা করে, ওয়াদা পালনে সত্যবাদি হয় এবং আমানত যথাযথভাবে পালন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤولًا
❑ অবৈধ পন্থায় বিদেশে থাকার ক্ষতিকর দিক সমূহ:
প্রকৃতপক্ষে অবৈধ পন্থায় প্রবাসে বসবাসকারীগণ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার কারণে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেমন:
❑ কেউ যদি পরিস্থিতির শিকার হয়ে কিংবা অনিচ্ছা বশতঃ প্রবাসে অবৈধ হয়ে যায় তাহলে তার করণীয়:
কোন ব্যক্তি যদি তার ইচ্ছার বাইরে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ছ প্রবাসে ‘অবৈধ’ হয়ে যায় তাহলে সে নিজ দেশে ফিরে আসার জন্য সে উক্ত দেশে নিয়োজিত দূতাবাস/কনস্যুলেটের মাধ্যমে আইনানুগ পন্থায় চেষ্টা করবে। এ সময় তার জীবন ধারণ এবং দেশে ফেরত আসার খরচ যোগানের জন্য সে সতর্কতার সাথে যেকোনো হালাল কাজ করতে পারে। কেননা এটা অপারগ অবস্থা। অপারগ অবস্থায় শরিয়তের ছাড় রয়েছে। ইসলামি ফিকাহের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল,
الضرورة تبيح المحظورات
“জরুরত নিষিদ্ধ জিনিসকে বৈধ করে দেয়।” যেমন প্রচণ্ড ক্ষুধায় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য শূকর বা মরা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সে দেশে অবৈধ পন্থায় জীবন-যাপন করা ও অর্থ উপার্জন অব্যাহত রাখা জায়েজ নাই।
No comments:
Post a Comment