Friday, January 10, 2025

মসজিদুল হারামের সম্মুখে একজন বিধর্মী ফুটবল খেলোয়াড়ের ফেইক ছবি জায়েজ নাকি নাজায়েজ

 মক্কার মসজিদুল হারামের সম্মুখে একজন কা*ফের ফুটবল খেলোয়াড়ের ফেইক ছবি। জায়েজ নাকি নাজায়েজ? কা*ফের খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা ইত্যাদিকে ভালোবাসার বিধান।

প্রশ্ন: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কিছু মুসলিম একজন অমুসলিম ফুটবল খেলোয়াড়কে ইহরামের পোশাক পরিয়ে মসজিদুল হারামের সামনে দাঁড়িয়ে মুনাজাত রত অবস্থার একটি ফেইক ছবি পোস্ট ও শেয়ার করছে। এটা কি জায়েজ নাকি হারাম? যেহেতু আমরা জানি যে, অমুসলিমদের জন্য মক্কার হারামে প্রবেশ নিষেধ। অমুসলিমদেরকে‌ ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
উত্তর: আমাদের কিছু আবেগী নামধারী মুসলিমের কার্যক্রম অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতা সুলভ। এরা আবেগের বশবর্তী হয়ে ইসলামের নামে এমন কিছু কাজ করে যা আদতে ইসলামে নিষিদ্ধ।

যাহোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারকৃত ছবিগুলো মূলত বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এবং তার স্ত্রীর। এ ছবিগুলো পুরোটাই এডিট কৃত বা আর্টিফিশ্যাল ইনটেলিজেন্ট (AI) দ্বারা তৈরি। অর্থাৎ এগুলো ফেইক বা মিথ্যাচার। এটি উক্ত ব্যক্তিদের প্রতি যেমন মিথ্যাচার তেমনি সাধারণ মানুষের সাথেও মিথ্যাচার। আর ইসলামে মিথ্যাচার করা সাধারণ কোনও গুনাহ নয় বরং কবিরা গুনাহ।

◈ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ

“তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। মিথ্যা পাপাচারের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়।” [বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ১০৫-(২৬০৭)]

সুতরাং এসব ফেইক ছবি তৈরি করা ও প্রচার করা, শেয়ার বা লাইক করা সবই হারাম।

যারা এসব করাকে ইসলাম প্রচার করা মনে করছে তারা মূলত মূর্খ। এসব বকধার্মিক মূর্খরা সোশাল মিডিয়ায় কিছু লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার ধান্ধায় এ ধরণের নিম্নমানের কাজ করে থাকে।

– অন্য দিকে একজন কাফে**রকে ইহরামের পোশাক পরিধান করিয়ে কাবার সম্মুখে মুনাজাত রত অবস্থায় তার মুখ খোলা স্ত্রীর সাথে কিংবা এককভাবে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শুধু হারাম নয় বরং অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কেননা একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কা**ফেরদের জন্য জন্য ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মক্কার হারাম সীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَٰذَا
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে।” [সূরা তওবা: ২৮]

সুতরাং এসব ছবি আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে তুচ্ছ করার শামিল এবং মুসলিম জাতির কিবলা ও দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত ঘর কাবাতুল মুশাররাফার জন্য মর্যাদাহানিকর।

❑ কা**ফের নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড় ইত্যাদিকে ভালোবাসা হারাম:

আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, যে খৃষ্টান আল্লাহর নবী ইসা আ. (তাদের ভাষায় যিশুখ্রিস্ট) কে ‘আল্লাহর পুত্র ও গড’ বলে বিশ্বাস করে, যে হিন্দু মাটির তৈরি মূর্তিকে উপাস্য মনে করে (যেগুলো বড় শিরক বা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভয়ানক ও জঘন্য পাপ) কিংবা যে নাস্তিক ইসলামকেই অস্বীকার করে বা যারা ইসলাম বিদ্বেষ ও আল্লাহদ্রোহীতায় লিপ্ত তাকে তার প্রতি কোনও মুসলিমের ভালোবাসা প্রকাশ করা বা তার সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলা জায়েজ নয়।
আর এসব অমুসলিম খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেলেব্রিটি ইত্যাদির ছবি সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা, প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা, ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা, শোকেসে তাদের মূর্তি সাজিয়ে রাখা, তাদের ছবি বিশিষ্ট টি-শার্ট-জামা ইত্যাদি ব্যবহার করা ইত্যাদি তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের নামান্তর-যা সুস্পষ্ট হারাম।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ

“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।” [সূরা মুজাদালা: ২২]

◈ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়িদা: ৫১]

ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, কাউকে ভালোবাসতে হলে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালবাসতে হবে এবং কাউকে ঘৃণা করতে হলে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। এটিই ইমানের দাবী ও সবচেয়ে শক্তিশালী শাখা। যেমন হাদিসে এসেছে,

◈ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর রা. কে বললেন, হে আবু যর, ইমানের কোন শাখাটি সর্বাধিক মজবুত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই অধিক অবগত। তিনি বললেন,

«الْمُوَالَاةُ فِي اللَّهِ وَالْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ»

“একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর সখ্যতা স্থাপন করা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করা। [বায়হাকি-এর শুআবুল ঈমান। হাসান]

◈ হাদিসে আরও বলা হয়েছে,

‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏

“যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে (কিয়ামত দিবসে) সে তার সাথেই অবস্থান করবে।” [সুনান আত তিরমিজি, অধ্যায়: ৩৪/ দুনিয়াবি ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি, পরিচ্ছেদ: ৫০. যে যাকে ভালোবাসে (কিয়ামত দিবসে) সে তার সাথী হবে]

আর এটা নিশ্চিত যে, কা**ফেররা পরকালে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের বাসিন্দা হবে। সুতরাং যে সকল নামধারী মুসলিম এসব কা**ফেরদেকে অকুণ্ঠ ভালোবাসে তাদের কী পরিণতি হবে তা সহজে অনুমেয় যদি না তারা জীবদ্দশায় লজ্জিত অন্তরে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

◈ এছাড়া কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা পোষণ করা ইমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ এবং কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে অবস্থানের সুযোগ লাভের কারণ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

কা**ফেদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা প্রকাশ একজন মুমিনের ইমানকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি ইমান থেকেও দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তবে আমরা সর্বদা অমুসলিমদের জন্য দুআ করব, আল্লাহ যেন, তাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমরা মহান আল্লাহ নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সব ধরণের হারাম ও নির্বুদ্ধিতা সুলভ কার্যক্রম থেকে হেফাজত করেন। আমিন।

-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি-

No comments:

Post a Comment

Translate