Friday, January 10, 2025

শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরণের শিরক বিদআত ও পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন পুত্রবধূর করণীয়

 শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরণের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক ও হারাম কার্যক্রম এবং পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন পুত্রবধূর করণীয়।

প্রশ্ন: আমার শ্বশুর বাড়ির ফ্যামিলির সবাই শিরক-বিদআতে লিপ্ত। তারা পীর ভক্ত। মাজারে যায়‌। এমনকি মৃত পীরের ছবি ফ্রেমে বেধে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। তাবিজ-সুতা ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে। মিলাদ, কিয়াম, চল্লিশা সহ নানা রকম বিদআতি কাজ করে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চায় না‌। আমি এসব কাজে বাধা দিলে অনেক কথা শুনায় (আমার, আমার সন্তানদের ক্ষতি হবে এরকম বদ দুআর মতো কথা বলে)। নামাজ,পর্দার গুরুত্ব বুঝে না। আমার সামনে তারা এসব করলে আমি সইতে পারি না। কান্না আসে। এসব পরিবেশের কারণে মাঝে মাঝে নিজের ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমলে স্বাদ পাই না। অস্থির লাগে। কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে। আমার স্বামী ঢাকাতে ছোট্ট একটা জব করে। আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই। কিন্তু বাড়িতে আমার শাশুড়ি চান, আমার সন্তানদের নিয়ে আমি তার কাছে থাকি। কাজে একটু হেল্প করি। কাছে না থাকলে তার মনে কষ্ট। যেহেতু উনার বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন আমি কী করতে পারি?
উত্তর: আপনার শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরনের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক ও হারাম কার্যক্রম এবং পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে যথাসম্ভব দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়া আবশ্যক যদি তাদেরকে সংশোধন করা সম্ভব না হয় বা তাদের কাছে থাকার কারণে নিজের ঈমান, আমল ও আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আপনার মাধ্যমে যদি তাদের মধ্যে সংশোধনী ও পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় তাহলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে সেখানে থাকা উত্তম। কারণ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আপনার মাধ্যমে যদি একটি মানুষও সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় তাহলে তা হবে আপনার জন্য একটি লাল উট পাওয়ার থেকে উত্তম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” [সহিহ বুখারী]

যাহোক, আপনার স্বামী যেহেতু দূরে থাকেন সেহেতু সম্ভব হলে আপনি আপনার স্বামীর কাছে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আপনাকে এমন পাপ-পঙ্কিল পরিবেশ থেকে রক্ষা করা। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তা না করলে গুনাহগার হবে। কারণ মহান আল্লাহ তাকে তার স্ত্রী পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল বানিয়েছেন এবং কিয়ামতের দিন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّـهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ

“পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব শীল (দায়িত্ববান) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।” [সূরা নিসা: ৩৪]

◈ তাছাড়া আল্লাহ তাআলা পুরুষকে আদেশ করেছেন যেন, সে নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচার পাশাপাশি যেন তার স্ত্রী-পরিবারকেও বাঁচায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” [সূরা তাহরীম: ৬]

◈ মহান আল্লাহ কেবল দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি তাকে কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনে উমর রা.সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,

أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ : وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ”‏ ‏

“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। …একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সহিহ মুসলিম]

কিন্তু আপনার স্বামীর আর্থিক সংকট বা বিশেষ কোনও কারণে যদি আপনাকে তার সাথে রাখা সম্ভব না হয় তাহলে আপনার নিজের বাবার বাড়িতে অথবা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকার চেষ্টা করবেন।

উল্লেখ্য যে, আপনি সেখান থেকে চলে যাওয়ার কারণে আপনার স্বামীর বাবা-মা অসন্তুষ্ট হলেও এতে আপনি গুনাহগার হবেন না। কারণ সেখানে থাকা এবং তাদের সেবা করা আপনার জন্য ইসলাম আবশ্যক করেনি। উপরন্তু তাদের এমন পরিবেশে থাকার কারণে আপনার ঈমান-আকিদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যাহোক, এগুলোর কোনটাই সম্ভব না হলে তখন ধৈর্যের সাথে সেখানেই থাকবেন কিন্তু নিজেকে সর্বোচ্চ শিরক-বিদআত ও অন্যান্য পাপাচার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন।

এক্ষেত্রে আপনি নিরুপায়। আর لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا “আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপরে সাধ্যাতীত কোনও দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” [সূরা বাকারা ২৮৬ নম্বর আয়াত]
আল্লাহ সব ধরনের অকল্যাণ থেকে আপনাকে হেফাজত করুন এবং তার দ্বীনের উপরে মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন এই দোয়া করি। আমিন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate