Friday, January 10, 2025

যুদ্ধ কামনা করা নিষেধ তবে যুদ্ধ বেধে গেলে শত্রুর মোকাবেলায় অবিচল থাকা আবশ্যক

 ◈ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَيُّهَا النَّاسُ، لاَ تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَسَلُوا اللَّهَ العَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ

‘‘হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর দুশমনের সাথে যুদ্ধ কামনা করো না। বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তবে যদি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে যাও তবে ধৈর্য ধারণ করবে (অবিচল থাকবে।) আর জেনে রাখবে, জান্নাত হলো, তরবারির ছায়াতলে।’’
[সহীহ বুখারী/২৯৬৬,মাকতাবা শামেলা]

◈ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَسَلُوْا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِيَ السَّحَابِ وَهَازِمَ الأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ

‘’তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না। বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। আর যদি তাদের সম্মুখীন হয়ে যাও, তাহলে ধৈর্যধারণ করবে (অবিচল থাকবে।) জেনে রেখো, তরবারির ছায়ার নিচে রয়েছে জান্নাত। এরপর তিনি বলেন, হে আল্লাহ, কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, শত্রুদলকে পরাভূত কারী, আপনি শত্রুদের পরাভূত করে আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।”[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৫৬/১১২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের প্রথমাংশে যুদ্ধ শুরু না করলে সূর্য ঢলা পর্যন্ত বিলম্ব করতেন]

❑ হাদিসটির ব্যাখ্যা:

❂ সহিহ বুখারির ভাষ্যকার ইবনে বাত্তাল বলেছেন,

حكمة النهي أن المرء لا يعلم ما يئول إليه الأمر، وهو نظير سؤال العافية من الفتن.

“এই নিষেধের পিছনে যে হেকমত বা জ্ঞানগত কারণ রয়েছে তা হল, মানুষ জানে না যে, কোন বিষয়ের পরিণতি কী হবে। এটি এমন, যেমন কেউ ফিতনা বা বিপদ থেকে নিরাপত্তা কামনা করে।”
অর্থাৎ শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে নিষেধ করার কারণ হল, যুদ্ধের ফলাফল ভালো হবে নাকি মন্দ হবে, এতে বিজয় অর্জিত হবে নাকি পরাজয় ঘটবে সে সম্পর্কে তার ভবিষ্যৎ জ্ঞান নেই। এটা এটা ঠিক তেমন যেমন কেউ চায় যে, সে ফিতনা বা বিপদ থেকে নিরাপদ থাকুক।

❂ আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেন,

لأن أعافى فأشكر أحب إلي من أن أبتلى فأصبر

“আমি সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব-এটা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয় অসুস্থ বা বিপদের সম্মুখীন হওয়ার পর ধৈর্য ধরার চেয়ে।”

❂ কোনো কোনো মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

إنما نهى عن تمني لقاء العدو لما فيه من صورة الإعجاب والاتكال على النفوس والوثوق بالقوة وقلة الاهتمام بالعدو ، وكل ذلك يباين الاحتياط والأخذ بالحزم.

“শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এজন্য যে, এতে আত্মতুষ্টি, নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীলতা, শত্রুকে হালকা করে দেখা ইত্যাদি মনোভাব গোপন থাকে। আর এ সব কিছু সতর্কতা অবলম্বন ও ঝুঁকি এড়ানোর বিপরীত।” [islamweb]

❂ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায কে “তোমরা আল্লাহর দুশমনের সাথে যুদ্ধ কামনা করো না” হাদিসটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,

حمله العلماءُ على أنَّ المراد: على سبيل العجب بالنَّفس، على سبيل الثِّقة بالنفس، ونحو ذلك.

أما إذا تمنى لقاء العدو؛ رغبةً في الجهاد، أو رغبةً في الشَّهادة في سبيل الله، فهو يبدأ بالجهاد؛ لأنَّ الرسول حثَّ على الجهاد ورغَّب فيه: مَن مات ولم يغزُ، ولم يُحدِّث نفسه بالغزو؛ مات على شُعبةٍ من النِّفاق.

فالنَّهي عن التَّمني ليس على إطلاقه، وإنما المراد التَّمني الذي يصحبه فخر وخُيلاء، أو ثقة بالنفس، أما مَن يتمنى أن يحضر الجهاد، ويُجاهد في سبيل الله، وأن يلقى عدو الله؛ فلا بأس به، وليس داخلًا في النَّهي هذا

আলেমগণ বলেন যে, এ হাদিসের মূল অর্থ হল, আত্মতুষ্টি ও (আল্লাহর শক্তি এবং সাহায্যের পরিবর্তে) নিজের প্রতি আস্থা রাখা হলে শত্রুর সাথে যুদ্ধ কামনা করা নিষেধ। কিন্তু যদি কেউ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করে, জিহাদ করার জন্য বা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়ার জন্য তাহলে সে জিহাদ শুরু করতে পারে। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন,

مَن مات ولم يغزُ، ولم يُحدِّث نفسه بالغزو؛ مات على شُعبةٍ من النِّفاق

“যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ (জীবদ্দশায়) জি**হাদে অংশগ্রহণ করেনি বা জিহাদ করার ইচ্ছা পোষণও করেনি সে নিফাকের (মুনাফেকির) একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।”
সুতরাং যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করা সাধারণভাবে নিষিদ্ধ নয়। বরং যে আকাঙ্ক্ষার সাথে অহংকার, দাম্ভিকতা বা আত্মতুষ্টি মিশে থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা নিষিদ্ধ। কিন্তু যে ব্যক্তি এ আকাঙ্ক্ষা করবে যে, সে জি**হাদে অংশগ্রহণ করবে, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহর শত্রুর মুখোমুখি হবে তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। এটা এই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়।” [binbaz]

❑ কা**ফেরদের সাথে যুদ্ধ বেধে গেলে শত্রুর মোকাবেলায় সর্বশক্তি দিয়ে অবিচল থাকতে হবে। যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ:

হাদিসে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে তারা যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে হবে। প্রাণ ভয়ে পালানো হারাম ও কবিরা গুনাহ। (বিশেষ কিছু শর্ত ছাড়া)। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানোকে ৭টি ধ্বংসাত্মক কাজের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেন,

আবু হুরাইরা রা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ‏”‏‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ ‏”‏ الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‏”‏‏.‏

“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে বেঁচে থাক। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসুল, সেগুলো কী কী? তিনি বললেন,
১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা,
২. জাদু করা
৩. যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করেছেন,
৪. সুদ খাওয়া,
৫. এতিম শিশুর অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা
৬. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
৭ সাধ্বী-সাধ্বী সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ দেওয়া।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৮৬/ দণ্ডবিধি, পরিচ্ছেদ: ৮৬/৪৫. সাধ্বী নারীদের প্রতি অপবাদ দেওয়া]

মোটকথা, আল্লাহর দুশমনদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ শুরু হলে স্পাত-কঠিন দৃঢ়তা এবং পরম ধৈর্যের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করত হবে। মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকবেন-এটা তার প্রতিশ্রুতি। ‘হয় বিজয় না হয় শাহাদাত’-এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুসলিম রাষ্ট্রকে শত্রু আগ্রাসন হাত থেকে রক্ষা, আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজত বা বিজয়ী করার জন্য যুদ্ধ করার এবং এ পথে শহিদ হওয়ার মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহু আলাম।

মহান আল্লাহ মুসলিম জাতিকে জি*হাদি বলে বলিয়ান হওয়ার তওফিক দান করুন, তাদেরকে বিজয় দান করুন, শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দিন এবং তাদেরকে পরাভূত করুন। আমিন। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী ও সাহায্যকারী।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate