Thursday, September 12, 2024

যেসব টি-শার্ট বা জামা-কাপড়ে কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নাম ইত্যাদি লেখা আছে সেগুলো পরিধান করা জায়েজ নাই

 প্রশ্ন: যে সব T-shirt-এর উপর আরবিতে আল্লাহর নাম, দুআ, জিকির ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামিক শব্দ গুলো লেখা আছে (যেমন: সুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ ইত্যাদি) সেগুলো কি ব্যবহার করা জায়েজ? কারণ মানুষ এগুলো পরে তো বাথরুমেও যায়।

উত্তর: নিঃসন্দেহে মুসলিমদের নিকট আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআ-জিকির ইত্যাদি অত্যন্ত মর্যাদার পাত্র। সর্বাবস্থায় এগুলোর যথাযোগ্য সম্মান বজায় রাখা আবশ্যক। তাই তা এমন কোনও ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বৈধ নয় যাতে তার সম্মানহানি ঘটে। আর তাই যে সব টি-শার্ট বা জামা-কাপড়ে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, তাসবিহ, জিকির-যেমন: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাই-লা-হা ইল্লাহ ইত্যাদি লেখা আছে সেগুলো পরিধান করা জায়েজ নয়। চাই আরবিতে লেখা থাক কিংবা বাংলা অথবা অন্য কোনও ভাষায় লেখা থাক। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর নামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়। যেহেতু এই কাপড়গুলো নোংরা হতে পারে, বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বা অন্য কোনও অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হতে পারে।
➤ একই কারণে টয়লেটের মধ্যে মুখে উচ্চারণ করে কুরআন তিলাওয়াত করা, আজানের জবাব দেওয়া, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা বা অন্য কোনও দুআ-জিকির ইত্যাদি পাঠ করা জায়েজ নয়।
➤ মহিলাদের লকেট বা চেইনে যদি এমন কিছু লেখা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।
➤ তবে সেগুলোতে যদি সাধারণ ইসলামি শব্দাবলী লেখা থাকে তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই-চাই তা আরবিতে হোক অথবা অন্য কোনও ভাষায় হোক। যেমন: সবর, ইসলাম, ইমান, ইহসান, মুমিন, মুসলিম, মুসাফির, ইনসাফ, সালাত, সালাম, আসসালামু আলাইকুম ইত্যাদি।

❑ বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া:

নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে দু জন বিজ্ঞ আলেমের ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:

✪ ১. আল্লামা শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায (রাহ.)

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ও বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

الثياب التي يكون فيها أسماء الله أو آيات لا يجوز لبسها؛ لأنها وسيلة إلى أن تمتهن أو يصيبها النجاسة من حيض أو غيره، أو تلقى فيطأ عليها الناس أو يجلس عليها الناس؛ فلهذا حرم لبسها وحرم جعلها وسائد أو بسط؛ لأن هذا يفضي إلى امتهانها بالقعود عليها والوطء عليها ونحو ذلك

“যেসব কাপড়ে আল্লাহর নাম বা কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, সেগুলো পরিধান করা বা বালিশ, চাদর ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহার করা জায়েজ নয়। কারণ, এতে আল্লাহর নাম ও আল্লাহর কালামের অবমাননা হতে পারে কিংবা হায়েজের রক্ত বা অন্যান্য নাপাক জিনিস লাগতে পারে। অথবা এগুলো এমন জায়গায় পড়ে থাকতে পারে যেখানে মানুষ এগুলোর উপরে বসবে বা সেগুলোকে পদদলিত করবে…ইত্যাদি।” [binbaz]

✪ ২. আল্লামা শাইখ সালেহ আল ফাউজান (হাফিযাহুল্লাহ)

বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আল্লামা শাইখ সালেহ আল ফাউজান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়, “যেসব কাপড়ে আল্লাহর নাম বা ‘আল্লাহু আকবার’ লেখা থাকে সেগুলো পরা জায়েজ কিনা?

উত্তরে তিনি বলেন,

هذا لا يجوز؛ لأن فيه امتهانا لذكر الله عز وجل، فكتابة اسم الله ولفظِ الجلالة على الملابس لا يجوز لما فيه من الاستهانة باسم الله سبحانه وتعالى ؛ لأن هذه الملابس تكون على الأطفال الذين لا يتحرزون من النجاسة وتكون على الإنسان وهو يدخل بيت الخلاء وقضاء الحاجة وقد يخلع هذا الثوب ويداس أو يمتهن، وأسماء الله جل وعلا تعظم وذكره يعظم من الامتهان

“এ ধরনের কাপড় পরা জায়েজ নয়। কারণ এতে আল্লাহর নামের অবমাননা হয়। আল্লাহর নাম বা ‘আল্লাহু আকবার’ লেখা কাপড় পরা মানে আল্লাহর নামের প্রতি অবহেলা করা। কারণ এই কাপড়গুলো শিশুরা পরতে পারে, যারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে না। মানুষ এই কাপড় পরেই বাথরুমে যেতে পারে। এই কাপড়গুলো খুলে ফেলা হতে পারে এবং পদদলিত হতে পারে। আল্লাহর নাম অত্যন্ত মহান এবং এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি।” [শাইখের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল-العلامة الدكتور صالح الفوزان]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate