Thursday, September 12, 2024

শুকরিয়ার জন্য বিশেষ কোনও সালাত নেই আছে সেজদা

 যে কোনও সফলতা, বিজয়, অনন্ত দায়ক ঘটনা, সুসংবাদ লাভ কিংবা যে কোন দুশ্চিন্তা বা বিপদাপদ কেটে যাওয়ার কারণে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া হিসেবে একটি সেজদায়ে শোকর দেওয়া সুন্নত। এটি বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা সু প্রমাণিত। কিন্তু শুকরিয়া হিসেবে দুই বা ততোধিক রাকাত সালাত পড়ার ব্যাপারে ওলামাদের মাঝে কিছুটা দ্বিমত থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ মতে তা সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।

এ বিষয়ে দু-একটি জয়িফ বা দুর্বল হাদিস পাওয়া যায়। উক্ত হাদিসগুলোর তাহকিক বা সনদ বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:

1-ما رواه الحاكم عن كعب بن عجرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر كعب بن مالك حين تيب عليه وعلى أصحابه أن يصلي ركعتين أو سجدتين . رواه الحاكم في “المستدرك على الصحيحين” (5/148).
إلا أن هذا الحديث لا يصح ؛ لأن في إسناده : يحيى بن المثنى .
قال العقيلي : “حديثه غير محفوظ ، ولا يعرف بالنقل” انتهى من “الضعفاء الكبير” (4/ 432).
2- ما رواه ابن ماجه (1391) من طريق سَلَمَة بْن رَجَاءٍ حَدَّثَتْنِي شَعْثَاءُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رضي الله عنه (أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى يَوْمَ بُشِّرَ بِرَأْسِ أَبِي جَهْلٍ رَكْعَتَيْنِ) .
وهذا الحديث حسنه بعض العلماء كابن حجر وابن الملقن . ينظر : “البدر المنير” (9 /106) ، تلخيص الحبير (4 /107) .
ولكن قال البوصيري : ” هذا إسنادٌ فيه مقال ، شَعْثَاء بنتُ عبد الله ، لَمْ أَرَ مَنْ تَكَلَّمَ فِيهَا لَا بِجُرْحٍ وَلَا بِتَوْثِيقٍ.
وَسَلَمَة بْن رَجَاء لَيَّنَهُ اِبْن مُعِين ، وَقَالَ اِبْن عَدِّي : حَدَّثَ بِأَحَادِيث لَا يُتَابَع عَلَيْهَا ، وَقَالَ النَّسَائِيُّ : ضَعِيف ، وَقَالَ الدَّارَقُطْنِيُّ : يَنْفَرِد عَنْ الثِّقَات بِأَحَادِيث ، وَقَالَ أَبُو زُرْعَة : صَدُوق ، وَقَالَ أَبُو حَاتِم : مَا بِحَدِيثِهِ بَأْس “. انتهى من “مصباح الزجاجة ” (1 / 211) .
وكذلك ضعفه الشيخ الألباني في ضعيف سنن ابن ماجه

আর মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানি রা. এর ঘরে ৮ রাকাত নফল সালাত পড়েছিলেন। অনেক মুহাদ্দিসের মতে তা ছিল তার নিয়মিত সালাতুয যুহা বা চাশতের সালাত। কেননা সহিহ মুসলিমের বর্ণায় আছে,

ثُمَّ صَلَّى ثَمَانَ رَكَعَاتٍ سُبْحَةَ الضُّحَى

“তারপর তিনি আট রাকআত চাশতের সালাত আদায় করলেন।”

আবার অনেকের মতে, তা ছিল শুকরিয়ার সালাত। কিন্তু তারা বলেন, তা কাফেরদের থেকে দেশ জয়ের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ যখন কোনও কাফের অধ্যুষিত দেশ মুসলিমদের করতলগত হবে তখন আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে দু বা ততোধিক রাকাত সালাত পড়া জায়েজ আছে। সাধারণভাবে যে কোনও সুসংবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এ কারণে মুহাক্কিক আলেমগণ বলেন, অধিক বিশুদ্ধ মতে সাধারণ আনন্দদায়ক সংবাদে শুকরিয়ার সালাত পড়া শরিয়ত সম্মত নয়।

❑ এ বিষয়ে নিম্নে কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য আলেমের মতামত উপস্থাপন করা হলো:

✪ রামলি (শিহাব উদ্দিন মোহাম্মদ আর রামলি, মৃত্যু ১০০৪ হি.) বলেন,

لَيْسَ لَنَا صَلَاةٌ تُسَمَّى صَلَاةَ الشُّكْرِ ” . انتهى من ” تحفة المحتاج ” (3 / 208).

“আমাদের জানামতে, সালাতুশ‌ শোকর ‌(কৃতজ্ঞতার সালাত) নামে কোন সালাত নেই।” [তুহফাতুল মুহতাজ, ৩/২০৮]

✪ শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. বলেন,

” لا أعلم أنه ورد شيء في صلاة الشكر ، وإنما الوارد في سجود الشكر “. انتهى “مجموع الفتاوى ” (11 /424)

“সালাতুস শোকর বা কৃতজ্ঞতার সালাত-এর ব্যাপারে কোন হাদিস এসেছে বলে জানা নেই। তবে সেজদায়ে শোকর বা কৃতজ্ঞতার সেজদার ব্যাপারে হাদিস এসেছে।” [মাজমুল ফাতাওয়া, ১/৪২৪]

✪ আল্লামা শাইখ উসাইমিন বলেন,

” لا أعلم في السنة صلاة تسمى : صلاة الشكر ، ولكن فيها سجوداً يسمى : سجود الشكر”. انتهى ” فتاوى نور على الدرب” (6 / 17)

“সুন্নায় (হাদিসে) বর্ণিত হয়েছে এমন কোন সালাতের কথা জানা নাই যাকে ‘সালাতুল শোকর বা কৃতজ্ঞতার’ সালাত বলা হয়। তবে এ জন্য সেজদা রয়েছে যাকে ‘সেজদায়ে শোকর’ বলা হয়।” [ফাতাওয়া নুরন আলাদ দারব, ৬/১৭]

✪ তিনি আরও বলেন,

” الشكر ليس له صلاة ذات ركوع وقيام ، وإنما له سجود فقط “. انتهى “فتاوى نور على الدرب” (6 / 18)

“শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতার জন্য কিয়াম ও‌ রুকু সম্বলিত কোন সালাত নেই। শুধু রয়েছে সেজদা।” [ফাতাওয়া নুরন আলাদ দারব, ৬/১৮] (sauce: islamqa-সংক্ষেপেয়িত)
আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate