Monday, June 24, 2024

আমরা চেষ্টা করেছি বাকি আল্লাহ ভরসা এ কথার মধ্যে শিরক আছে কি

 ❑ প্রশ্ন-১: আমরা প্রায়শই বলি, “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথার মধ্যে শিরক আছে কি?

উত্তর:
এ কথা সঠিক। এতে কোনও শিরক নেই। কারণ ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, আল্লাহর নামে আগে কাজ করতে হবে, চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে অতঃপর সফলতার জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। চেষ্টা-পরিশ্রম না করে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়।
আনাস রা. হতে বর্ণিত,

قال رجلٌ يا رسولَ اللهِ أعقِلُها وأتوكَّلُ أو أُطلقُها وأتوكَّلُ قال اعقِلها وتوكَّلْ

“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, নাকি তা ছেড়ে রেখে? তিনি বললেন, “উট বাঁধ, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সহিহ তিরমিজি, হা/২৫১৭, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

– উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

لو أنَّكم تَوَكَّلُونَ علَى اللهِ تعالَى حَقَّ تَوَكُلِهِ ، لَرَزَقَكُمْ كمَا يَرْزُقُ الطيرَ ، تغدُو خِماصًا ، وتروحُ بِطانًا

“তোমরা যদি সত্যিকার ভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা বেলা ভরা পেটে ফিরে আসে।” [তিরমিজি, সহিহুল জামে, হা/৫২৫৪] এখানে

লক্ষণীয় বিষয় হলো, পাখিরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় বসে থাকে না। তারা খুব ভোরে তাদের বাসা ছেড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রিজিকের সন্ধানে যায়। সেখানে ওঁত পেতে থাকা শিকারির জালে ধরা পড়ার কিংবা সাপ-বিচ্ছু ও হিংস্র পশুর আক্রমণে জীবননাশের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রিজিক অনুসন্ধান করে। ফলে আল্লাহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। এবং তারা সন্ধ্যায় পেট পুরে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরেতে পারে।

তাহলে বুঝা গেল, ঘরে বসে খাবারের অপেক্ষা করার নাম তাওয়াক্কুল বা ভরসা নয়। বরং হালাল উপার্জনের জন্য দৌড়-ঝাঁপ ও চেষ্টা-পরিশ্রম করা, বিভিন্ন ঝুঁকি মাথায় নিতে কাজ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উভয়টির প্রয়োজন আছে। তাহলেই আল্লাহ সাহায্য করবেন।

সুতরাং “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথা বলায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।

তবে মনে রাখতে হবে যে, আমরা চেষ্টা-পরিশ্রম বা কোন কাজ করতে পারবো না যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমতা না দেন। আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কোন কিছুতে করতে সক্ষম নই। এটাই “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-এর অর্থ।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো:

بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله

(বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ।)

অর্থ: “আল্লাহর নামে (বের হলাম)। আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। কোনও অবলম্বন নেই এবং কোনও শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।”

[সুনানুত তিরমিজি, ৫/৪৯০, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/৮৫৯, হাদিসটি হাসান।]

তাই আমাদেরকে আল্লাহর নামে কাজ শুরু করতে হবে, তার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে, অতঃপর তার উপর ভরসা করতে হবে।
নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। আর আমরা অতিশয় দুর্বল দুর্বল এবং তার করুণার মুখাপেক্ষী। তার দেওয়া শক্তি-সামর্থ্য ছাড়া ছাড়া আমাদের নিজস্ব কোনও শক্তি, সামর্থ্য বা যোগ্যতা নেই।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি-

❑ প্রশ্ন-২: “আমার যতটুকু করার তা আমি করেছি- বাকিটা আল্লাহর উপর।” এ কথা বলার হুকুম কী?
উত্তর:
الحمد لله، رب العالمين والصلاة السلام على رسول الله، وبعد:
فمن يقول هذا العبارة مراده أني فعلت السبب الذي أقدر عليه في الأمر الذي أريد تحقيقه، وأما حصول المقصود، وتحقيق النتائج فذلك إلى الله، وهذا المعنى حق، فإن العبد لا يملك تحقيق مقاصده، وبلوغ آماله إلا بتوفيق الله وتيسيره، فمعنى هذه العبارة يرجع إلى ما جاء في الحديث “اعقلها وتوكل”. أخرجه الترمذي (2517)، وابن حبان (731). وهذا هو الذي يليق بالمسلم أن يفعل السبب المشروع ويعتمد في حصول المطلوب على ربه، فيجتهد في فعل الأسباب المشروعة، ويستعين بربه في حصول مطلوبه كما قال صلى الله عليه وسلم “احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجِز”. صحيح مسلم (2664).
ولكن ينبغي أن يقول المتكلم بهذه العبارة (والباقي إلى الله)، بدل (على الله)، والله أعلم

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুলের উপর। অত:পর-

যে ব্যক্তি এই বাক্যটি বলে তার কথার মানে হল যে, আমি যে বিষয়টি অর্জন করতে চাই তার জন্য আমি সাধ্যানুযায়ী উপায় অবলম্বন করেছি (অর্থাৎ আমার যা করণীয় আমি তা করেছি)। কিন্তু লক্ষ্য হাসিল বা ফলাফল অর্জনের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করছি।
আর এ অর্থটি সত্য। কারণ আল্লাহর রহমত ও তৌফিক ছাড়া বান্দা তার লক্ষ্য অর্জন এবং প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।

সুতরাং উক্ত বাক্যটির অর্থ সেটাই, যা এ হাদিসে এসেছে:

اعقِلْها وتوكَّلْ

“আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (অর্থাৎ উটকে না বেঁধে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থেকো না। অন্যথায় উট পালিয়ে যাবে)। এটি তিরমিজি (২৫১৭) এবং ইবনে হিব্বান (৭৩১) বর্ণনা করেছেন।

একজন মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো, সে যা চায় তা অর্জনের জন্য তার প্রতিপালকের উপর ভরসা করবে। ফলে সে বৈধ উপায় অবলম্বন করার করার পাশাপাশি তার প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করবে। যেন সে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অর্জন করতে পারে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

احْرِصْ علَى ما يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ باللَّهِ وَلَا تَعْجِزْ

“যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা গুরুত্ব সহকারে করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ো না।” [সহীহ মুসলিম, ২৬৬৪]
তবে যে এমন কথা বলবে, তার “বাকিটা আল্লাহর উপর” না বলে উচিৎ, “বাকিটা আল্লাহর নিকটে।” আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।”
– শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক। (লেকচারার, ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

হজ্জ থেকে ফিরে এসে ৪০ দিন বাড়ি থেকে বের না হওয়া প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে

 প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি হজ্জ থেকে ফিরে আসবে সে ৪০ দিন বাড়ি থেকে বের হবে না” ইসলামে এ কথার কোনও ভিত্তি আছে কি?

উত্তর: “যে ব্যক্তি হজ্জ থেকে ফিরে আসবে সে ৪০ দিন বাড়ি থেকে বের হবে না” এমন কোন কথা কুরআন ও হাদিসে নেই। সুতরাং তা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত কথা। যুক্তির নিরিখেও তা অগ্রহণযোগ্য। কারণ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব গণ্ডীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে হজ্জের দীর্ঘ সফর শেষে।
যেমন—
হজ্জ সফর থেকে ফিরে এসে একজন নারী শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে তার পিতা-মাতার বাড়িতে যাবেন, তার প্রতিবেশী, নিকটাত্মীয় ও প্রিয়জনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করবেন, তাদের তাদের খোঁজ-খবর নিবেন
আর পুরুষ মানুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা মতান্তরে ওয়াজিব), জুমার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া ফরজ, কোন মুসলিম মারা গেলে তার জানাজা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করা ফরজে কেফায়া, রোগী দেখতে যাওয়া, কেউ দাওয়াত দিলে তাতে অংশগ্রহণ ইত্যাদি মুসলিমের হক, অর্থ উপার্জনের জন্য চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ইত্যাদি মানুষের মৌলিক প্রয়োজন, নিজের অথবা পরিবারের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে আলেমের বক্তৃতা শোনা বা পড়াশোনা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, হজের শিক্ষা ও ইসলামের সৌন্দর্য মণ্ডিত বিভিন্ন দিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আল্লাহ পথে মানুষকে আহ্বান করার জন্য বাইরে যাওয়া দরকার। এ ছাড়াও সমাজ ও দেশের বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে ন্যস্ত থাকতে পারে সে জন্য তাকে বাইরে যেতে হতে পারে। কিন্তু এত কিছু দায়-দায়িত্ব ও প্রয়োজন বাদ দিয়ে দীর্ঘ ৪০ দিন ঘরে বসে থাকা কিভাবে শরিয়ত সম্মত হতে পারে? তবে হজ্জের পরে মানুষের আরও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা উচিত। যথাসম্ভব চেষ্টা করবে, তার দ্বারা যেন কোনও ধরণের গুনাহ সংঘটিত না হয়, কারো হক নষ্ট না হয়, কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়, অনর্থক কাজে সময়, শ্রম ও অর্থ অপচয় না করা হয়। বরং আরও অধিক পরিমাণে আল্লাহ মুখী হওয়ার এবং ঈমান ও তাকওয়া ভিত্তিক জীবন পরিচালনার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে মানুষের সাথে কথাবার্তা, লেনদেন ও আচার-আচরণ আরও সুন্দর করতে হবে।
সতর্ক হতে হবে যেন, হজ্জের আগের জীবন এবং পরের জীবন এক না হয়ে যায়। বরং হজ্জের পরের জীবন যেন আরও সুন্দর, শৃঙ্খল, নিয়ন্ত্রিত, আল্লাহর পথে নিবেদিত এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখা সহ অনুকরণীয় আদর্শ জীবন গঠিত হয়-সে চেষ্টা করতে হবে।
মোটকথা, একজন হাজি সাহেব হজ্জ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দ্বীনের পথে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

◈◈ বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ডক্টর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-কে NTV-এর “আপনার জিজ্ঞাসা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয় যে, হজ্জ করে আসার পর, বিশেষ করে মহিলা হাজিরা নাকি ৪০ দিন বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না?
তিনি উত্তরে বলেন,
“না, এ ধরনের কোনও বিধান ইসলামের মধ্যে নেই। মহিলা হোক বা পুরুষ হাজি হোক, হজ্জ করে আসার পর ৪০ দিন পর্যন্ত ঘরেই থাকতে হবে, বাইরে যেতে পারবেন না—এ বক্তব্য সঠিক নয়। কুসংস্কারের মতো আমরা নিজেরা এটি আবিষ্কার করেছি। যিনি হজ্জ করে ফিরেছেন, তিনি তো হজের বার্তা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কথা বলবেন, যা শিখেছেন সেটি ভাগাভাগি করবেন এবং ইসলামের সৌন্দর্যের বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরবেন। যদি জ্ঞানের বিষয় থাকে, তাহলে মানুষকেও সে বিষয়ে জানাবেন।” [উৎস: NTVBD] মহান আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

হজ্জ ও উমরা সফরে মৃত্যুবরণকারীদের মর্যাদা

 প্রশ্ন: লোকমুখে বলতে শোনা যায় যে, “যারা হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে মারা যায় তারা জান্নাতি।” এ কথাটা কি সঠিক?

উত্তর: হজ্জ ও উমরা সফর নি:সন্দেহে বরকতপূর্ণ সফর। এ সফরে কেউ মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য হাদিসে বিশেষ কতিপয় ফজিলত (মর্যাদা) বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ সংক্রান্ত হাদিসগুলো সহিহ নয়।

নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপাস্থাপন করা হল:

✪ ১. কেউ যদি হজ্জ বা উমরা আদায়ের জন্য দৃঢ়ভাবে নিয়ত করে বা এই নিয়তে যাত্রা করে কিন্তু সে হজ্জ বা উমরা আদায় করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণ হজ্জ ও উমরার পূর্ণ সওয়াব দান করবেন। কেননা কোন ব্যক্তি সৎ আমলের দৃঢ় নিয়ত করার পরে মারা গেলে আল্লাহ তাকে সে কাজটির পূর্ণ সওয়াব দান করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّـهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّـهِ ۗ

“যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসুলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়।” [সূরা নিসা: ১০০] এ মর্মে একাধিক হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।

✪ ২. কেউ যদি হজ্জ-উমরা করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার সওয়াব লিপিবদ্ধ করতেই থাকেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রf. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«من خرج حاجًا فمات؛ كتب الله له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرًا فمات، كتب الله له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيًا فمات، كتب الله له أجر الغازي إلى يوم القيامة» (صحيح لغيره).

“যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর মারা যাবে সে ব্যক্তির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজ্জ সওয়াব লেখা হতে থাকবে। আবার যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মারা যাবে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ওমরার সওয়াব লেখা হতে থাকবে।” [আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব-সহিহ লিগাইরিহ]

✪ ৩. যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে কিয়ামতের দিন সে লাব্বাইক পাঠ করতে করতে উঠবে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। এক ইহরাম ধারী ব্যক্তিকে তার বাহনটি ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে সে মারা যায়। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ وَلاَ تُخَمِّرُوا وَجْهَهُ وَلاَ رَأْسَهُ فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا

“তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার পরনের বস্ত্রদ্বয় দিয়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মুখমণ্ডল ও মাথা ঢেকো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া (লাব্বাইক) পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।”
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “তাকে সুগন্ধি মাখিও না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।” [বুখারি ও মুসলিম]

❒ “হজ্জ ও উমরা আদায় করতে এসে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতি” এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ নয়:

হজ্জ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো একটিও সহিহ নয়।

❂ এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে “যে ব্যক্তি হজ্জ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে তার হিসেব নেওয়া হবে না, এমনকি হিসেবের জন্য তাকে উপস্থাপনও করা হবে না এবং বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর।”

– এ হাদিসটিকে খতীব বাগদাদী জইফ (দূর্বল) বলেছেন।
– ইমাম শাওকানী বলেন, এর সনদে ইসহাক বিন বিশর আল কাহেলী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে মিথ্যুক।
– আলবানী এটিকে ‘মুনকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

❂ অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে “হজ্জ ও উমরা আদায়কারী এবং গাজি বা আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী ব্যক্তি আল্লাহর বাহিনী। তারা সবাই আল্লাহর জিম্মায় থাকে। মারা গেলে তাদেকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে আর ফিরে আসলে ক্ষমা করা হবে।” এটিও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে জইফ বা দুর্বল। কেননা এর সনদে একাধিক সমস্যা আছে। যেমন: এর বর্ণনা সূত্রে উসমান ইবনে আমর ইবনে সাজ নামক বর্ণনাকারীর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি রয়েছে। আরেক বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর পরিচয় অজ্ঞাত। (উক্ত হাদিসদ্বয় ইমাম আল ফাকেহী তার আখবারে মক্কা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।)

উক্ত হাদিসদ্বয়ের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য নিম্নরূপ: (আরবি)
” الْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَالْغَازِي وَفْدُ اللهِ، ضَمَانُهُمْ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يُدْخِلَهُمُ الْجَنَّةَ إِنْ تَوَفَّاهُمْ، أَوْ يُرْجِعَهُمْ وَقَدْ غُفِرَ لَهُمْ ”
قل : هذا إسناد ضعيف ، عثمان هو ابن عمرو بن ساج قال أبو حاتم : ( يكتب حديثه ولا يحتج به ) .
ومحمد بن عبد الله هذا لم أعرفه ، لم أجد في ترجمة عثمان بن ساج أنه روى عن أحد اسمه محمد بن عبد الله ؛ أخشى أن يكون تحرف من محمد بن السائب الكلبي ، فإنه كثير الرواية عنه . والله أعلم .
مَن مات في هذا الوجهِ من حاجٍّ أو مُعْتَمِرٍ ، لم يُعْرَضْ ولم يُحَاسَبْ ، وقيل له : ادْخُلِ الجنةَ
الراوي:عائشة أم المؤمنين المحدث:الألباني المصدر:السلسلة الضعيفة الجزء أو الصفحة:2187 حكم المحدث:منكر
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কুরবানি দাতার জন্য ঈদের দিন কোন কিছু না খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া তারপর সর্বপ্রথম কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত

  প্রশ্ন: কুরবানির দিন কুরবানির পশু জবাই করার আগ পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কি কোনও নিয়ম আছে?

উত্তর: কুরবানি দাতার জন্য কুরবানির দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া সুন্নত। বরং ঈদের সালাত শেষে খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে যদি ঈদের সালাত শেষে কুরবানির গোশত খাওয়া হয় তাহলে তা অধিক উত্তম।

– প্রখ্যাত সাহাবি বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত,

كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع فيأكل من أضحيته

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন।” [শাইখ আলবানী রচিত, সহীহ ইবনে মাজাহ]

– অন্য বর্ণনায় এসেছে, বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّبِيُّ صلَّى الله عليه وسلَّم لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতে না। আর ঈদুল আজহার দিন খেতেন না সালাত শেষ করার আগে।” [সহিহ মিশকাতুল মাসাবীহ,‌ হা/১৪৪০]

– অন্য বর্ণনায় এসেছে,

وَكَانَ لَا يَأْكُلُ يَوْمَ النَّحْرِ حَتَّى يَرْجِعَ

“তিনি কোন কিছু খেতেন না (ঈদগাহ থেকে) থেকে ফিরে আসার পূর্বে।” [সহিহ ইবনে মাজাহ]

➤ “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন” মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়:

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের মাঠ থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন-মর্মে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে তা সনদগত ভাবে দুর্বল। যেমনটি শাইখ আলবানি সহ অনেক মুহাদ্দিস বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।

وَكَانَ إِذَا رَجَعَ أَكَلَ مِنْ كَبِدِ أُضْحِيَتِهِ
ضعَّف الألبانيُّ هذه الزيادةَ كما في «سُبُل السلام» بتعليقاته عليه (٢/ ٢٠٠) حيث قال: «هذه الزيادةُ ضعيفةٌ؛ لأنها مِنْ رواية عقبة بنِ الأصمِّ عن ابنِ بريدة؛ وهو عقبة بنُ عبد الله الأصمِّ: ضعيفٌ، كما في «التقريب»».

তবে তা খেতে কোনও আপত্তি নেই। মানুষের মাঝে ঈদের সালাতের পর কুরবানির কলিজা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কেননা তা সহজে কুরবানির শরীর থেকে আলাদা করা যায়, দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং দ্রুত হজম হয়।

❐ ঈদের মাঠ থেকে ফিরে আসার পর কুরবানি গোশত খাওয়ার হেকমত কী?

বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন, এর একটি কারণ হতে পারে, গরিব-অসহায় মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশ। কারণ অনেক গরিব মানুষের বাড়িতে কোন খাবার থাকে না। অতঃপর ঈদের সালাতের পরে মানুষ তাদেরকে কিছু কুরবানির গোশত দান করলে তারা সেখান থেকে খেতে পারে। পক্ষান্তরে ঈদুল ফিতরের বিষয়টি ভিন্ন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের আগেই তারা জাকাতুল ফিতর হিসেবে প্রাপ্ত খাদ্যদ্রব্য থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারত।
অথবা এর কারণ, আল্লাহ তাআলা যেহেতু কুরবানি করার তৌফিক দান করেছেন তার শুকরিয়া হিসেবে এবং আল্লাহ কুরবানির গোশত খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম কুরবানির গোশত খেতেন। যেমন: আল্লাহ বলেন,

فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ

“অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।” [সূরা হজ ২৮] (আল্লামা ফারকুস-এর রচনা থেকে)

❐ প্রশ্ন: যে কুরবানি দিবে তার জন্য নাকি পরিবারের সবার জন্য এটা সুন্নত?
উত্তর:

যে ব্যক্তি কুরবানি করবে তার জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে। হাদিসের ভাষা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়। যেমন: বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يطعم، ويوم النحر لا يأكل حتى يرجع فيأكل من نسيكته. رواه أحمد والترمذي. قال النووي: وأسانيدهم حسنة فهو حديث حسن، وقال الحاكم: هو حديث صحيح.

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন আহার না করে (ঈদের মাঠে) রওয়ানা হতেন না এবং কুরবানির দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আহার করতেন না।” [তিরমিযী ৫৪২, আহমদ ২২৪৭৪, ২২৫৩৩, দারেমী ১৬০০, মিশকাত ১৪৪০। তাহকিক আলবানি: সহীহ]

যে কুরবানি করবে তার জন্য এটি মুস্তাহাব। কিন্তু যে ব্যক্তি কুরবানি করবে না তার জন্য সুন্নত নয়। এ মর্মে বিজ্ঞ আলেমগণ মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন:

✪ ইমাম যায়লায়ী হানাফি রাহ. তাবঈনুল হাকায়েক গ্রন্থে বলেন,

هذا في حق من يضحي ليأكل من أضحيته، أما في حق غيره فلا

“এটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে, কুরবানি দিবে, যেন সে তার কুরবানির গোশত খায়। অন্যদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।”

✪ কাশকুফ কিনা-এর গ্রন্থকার আল্লামা মনসুর বিন ইউনুস আল ভূতি হাম্বলি রাহ. বলেন,

وكان لا يأكل يوم النحر حتى يرجع، فيأكل من أضحيته، وإذا لم يكن له ذبح لم يبال أن يأكل.

“আর তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানির দিন আহার করতেন না যতক্ষণ না ফিরে আসতেন। ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন। কিন্তু যখন তিনি কুরবানির পশু জবাই করতেন না তখন আহার করতে পরোয়া করতেন না।”

✪ বিখ্যাত তিরমিযির ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযি-এর গ্রন্থকার আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান মোবারক পূরী বলেন,

وقد خصص أحمد بن حنبل استحباب تأخير الأكل في عيد الأضحى بمن له ذبح.

“ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ঈদুল আজহার দিন খাওয়া বিলম্ব করাকে ঐ ব্যক্তির সাথে খাস করেছেন যার কুরবানি রয়েছে।” [course: islam web]
এই খাওয়া থেকে বিরত থাকা সুন্নত বা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। সুতরাং কেউ কুরবানি করলেও যদি ঈদের মাঠে যাওয়া পূর্বে অতিরিক্ত ক্ষুধার কারণে খাওয়া জরুরি হয় তাহলে খেতে কোনও বাধা নেই। অর্থাৎ খেলেও গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

ঈদের রাতের ফজিলত এবং এই রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার বিধান

 প্রশ্ন: ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে ইসলামে কী দিকনির্দেশনা রয়েছে বা এ রাতের ফজিলত কী?

উত্তর: ঈদ মানেই প্রাণে প্রাণে আনন্দের হিল্লোল। ঈদ মানেই ঘরে ঘরে খুশির আমেজ। ঈদের আগমনে মুমিন হৃদয়গুলো আনন্দে উদ্বেলিত হয়। ঈমানদারগণ আল্লাহর প্রতি প্রফুল্ল চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাকবির ধ্বনির মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে ঈদের রাত থেকেই শুরু হয় আগামীকাল একটি সুন্দর সকালে ঈদকে বরণ করার প্রস্তুতি। কিন্তু ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে কোন হাদিস বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং এই রাতে বিশেষভাবে কিয়ামুল লাইল করা সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসকে অনেক আলেম বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলেছেন। অনুরূপভাবে দুই ঈদের রাতে দুআ কবুল হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদিসটিও বানোয়াট।

তাই এ রাতে তাকবির পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।

শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, “দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”

◍ ঈদের রাতের ফজিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:

ঈদের রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে যেসব হাদিস পেশ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করবে তার হৃদয় মারা যাবে না যেদিন সব হৃদয় মারা যাবে।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮২]

এ হাদিসটি সহিহ নয়।

● নওবী রহ. এ হাদিসটিকে মারফু ও মাওকুফ উভয় সূত্রে জইফ বলেছেন।

● হাফেজ ইরাকি, ইবনে হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিসগণও এটিকে জইফ বলেছেন।
وقال الحافظ ابن حجر : هذا حديث غريب مضطرب الإِسناد . انظر : “الفتوحات الربانية” (4/235) .
● আলবানি এটিকে মাউযু (বানোয়াট) হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। [জইফ ইবনে মাজাহ]

◈ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেন,
” الأَحَادِيثُ الَّتِي تُذْكَرُ فِي لَيْلَةِ الْعِيدَيْنِ كَذِبٌ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم” انتهى .
“দু ঈদের রাতের ব্যাপারে যে সব হাদিস পেশ করা সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার।”

মোটকথা, দুই ঈদে সারা রাত জেগে বিশেষ কোনও সালাত, জিকির-আজকার, মিলাদ, কবর জিয়ারত ইত্যাদি করার ব্যাপার শরিয়তে বিশুদ্ধ সূত্রে কোনও নির্দেশনা আসে নি। তবে অন্যান্য সময় যেমন ইবাদত-বন্দেগি, দুআ-জিকির, কবর জিয়ারত, কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় ইত্যাদি করা জায়েজ তেমনি এ দুই রাতেও সেগুলো জায়েজ। কিন্তু তা এ রাতের বিশেষ ফজিলত মনে করে করা শরিয়ত সম্মত নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

কুরবানি এবং ঈদের বিধিবিধান ও আদব

 মূল: শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ.

অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله. أما بعد

❑ কুরবানির বিধি-বিধান:

কুরবানি মূলত: জীবিত মানুষের জন্য। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের পক্ষ থেকে এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করতেন। কিন্তু কিছু মানুষ মনে করে কুরবানি কেবল মৃতদের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর আদৌ কোন ভিত্তি নাই।

মৃত মানুষের পক্ষ থেকে কুরবানি করা তিনভাগে বিভক্ত। যথা:

▪ ১) জীবিতদের সাথে মৃতদেরকেও শরীক করা। যেমন, নিজের এবং নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানিতে মৃতদেরও নিয়ত করা। এর দলীল হল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পক্ষ থেকে এবং তাঁর পরিবারের জীবিত ও মৃত সবার পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন।

▪ ২) মৃত মানুষের ওসিয়ত মোতাবেক কুরবানি করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَمَن بَدَّلَهُ بَعْدَ مَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ

“যদি কেউ ওসিয়ত শোনার পর তাতে কোন রকম পরিবর্তন করে, তবে যারা পরিবর্তন করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে।” [সূরা বাকারা: ১৮১]

▪ ৩) জীবিতদের থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্রভাবে কেবল মৃতদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা। এটা জায়েজ। হাম্বলি ফকিহগণ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিগণ লাভ করবে। এটা তারা মৃতের পক্ষ থেকে দান করার উপর কিয়াস করে ফতোয়া দিয়েছেন।

কিন্তু কেবল মৃতদের উদ্দেশ্য করে কুরবানি করাকে আমরা সুন্নত মনে করি না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন মৃতকে উদ্দেশ্য করে আলাদাভাবে কুরবানি করেন নি। তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়জন চাচা হামজা রা. কিংবা তাঁর যে সকল সন্তান তাঁর জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন যেমন তিন বিবাহিত কন্যা ও তিন শিশু পুত্র-তিনি এঁদের কারো পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কুরবানি করেননি। অনুরূপভাবে সব চেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা রা. এর পক্ষ থেকেও কুরবানি করেননি।

কোন সাহাবি থেকেও এমন কোন তথ্য বর্ণিত হয় নি যে, তাদের কেউ মৃতের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কুরবানি করেছেন।

আরেকটি ভুল প্রথা দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বছরের শুরুতে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে আলাদা একটা কুরবানি করা হয়। তাদের ধারণা, এর সওয়াবে অন্য কারো অংশীদার হওয়া জায়েজ নয়। আরও দেখা যায়, কিছু মানুষ মৃতের পক্ষ থেকে দান হিসেবে বা মৃতের ওসিয়ত মোতাবেক কুরবানি করে কিন্তু নিজের বা নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানি করে না।

এ মানুষগুলো যদি জানত যে, কোন ব্যক্তি যদি নিজস্ব সম্পদ দ্বারা নিজের এবং নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানি করে তবে তা তার পরিবারের জীবিত-মৃত সকলের জন্য যথেষ্ট হবে, তবে তারা এই আমল বাদ দিয়ে অন্য কিছু করত না।

 যে কুরবানি করতে চায় সে কোন কাজ থেকে বিরত থাকবে?

◆ যে ব্যক্তি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে বা জিলকদ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জিলহজ মাসে প্রবেশ করল এবং কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করল তার জন্য কুরবানির পশু জবাই করা পর্যন্ত নখ, চুল বা শরীর থেকে চামড়া উঠানো হারাম। উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِذَا دَخَلَ عَشْرُ ذِى الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّىَ فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعَرِهِ وَأَظْفَارِهِ

“জিলহজ মাস শুরু হওয়ার পর যে ব্যক্তি কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করল সে যেন তার নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকে।” [আহমদ ও মুসলিম] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, “সে যেন কুরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও চামড়া স্পর্শ না করে অর্থাৎ না কাটে।”

◆ জিলহজের দশ দিন শুরু হওয়ার পর যদি নিয়ত করে তবে নিয়ত করার সময় থেকেই নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে। নিয়ত করার আগে কেটে থাকলে তাতে গুনাহ হবে না।

◆ এর পেছনে হেকমত হল, হাজীদের সাথে কুরবানি কারীর কিছু ক্ষেত্রে বৈশিষ্টগত মিল থাকা। অর্থাৎ হাজীগণ যেমন কুরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে থাকে তেমনি কুরবানি কারীও কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে থাকে। ঠিক তদ্রূপ হাজী সাহেবগণ যেমন এহরাম অবস্থায় নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকে কুরবানি কারীগণও নখ-চুল ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থেকে তাদের এই অবস্থার সাথে শামিল হয়।

◆ এই ভিত্তিতে মাসয়ালা হল, কুরবানি কারীর পরিবারের জন্য নখ-চুল ইত্যাদি কাটা জায়েজ। নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার হুকুম কেবল কুরবানি কারীর জন্য প্রযোজ্য। যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তাদের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কারণ, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কুরবানি করতে ইচ্ছুক…” তিনি বলেন নি যে, যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তারাও বিরত থাকবে। তাছাড়া তিনি তাঁর পরিবারের কাউকে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন এমন কিছু বর্ণিত হয়নি।

◆ কেউ যদি নখ-চুল, চামড়া ইত্যাদি কাটে তার জন্য আবশ্যক হল, আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং এ কাজ আর না করা। তবে এ জন্য কোন কাফফারা দিতে হবে না এবং এতে কুরবানি করতেও কোন বাঁধা নাই।

◆ ভুল বা অজ্ঞতা বশত: যদি কেউ নখ, চুল, চামড়া ইত্যাদি কেটে ফেলে বা অনিচ্ছা বশত: শরীর থেক চুল পড়ে যায় তাতে কোন গুনাহ হবে না। অনুরূপভাবে বিশেষ প্রয়োজনে যদি কারো এসব কাটতে হয় তবে তাতেও কোন সমস্যা নাই। যেমন, নখ উঠে কষ্ট পেলে তা তুলে ফেলা যাবে, চোখের মধ্যে যদি চুল প্রবেশ করে তা উঠানো যাবে অথবা চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার করার কারণে চুল তোলার প্রয়োজন হলে তা তোলা যাব…ইত্যাদি।

❑ ঈদের বিধি-বিধান ও আদব:

▪ ১) তাকবির: আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরিকের দিনের শেষ পর্যন্ত, তথা জিলহজ মাসের তেরো তারিখের আসর পর্যন্ত তাকবির বলা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ
“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিন সমূহে।” [সূরা বাকারা: ২০৩]

তাকবির বলার পদ্ধতি:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহর মহাত্মের ঘোষণা এবং তাঁর ইবাদত ও কৃতজ্ঞতার বর্হি:প্রকাশের উদ্দেশ্যে পুরুষদের জন্য মসজিদে, বাজারে, বাড়িতে ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে উচ্চ স্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত।

▪ ২) কুরবানি করা: ঈদের দিন ঈদের সালাতের পর কুরবানি করা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদের আগে জবেহ করল, তার উচিত তদস্থলে আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করেনি, তার উচিত এখন কুরবানি করা।” (বুখারী ও মুসলিম) কুরবানি করার সময় চার দিন। যথা: নহরের দিন এবং তার পরবর্তী তাশরীকের তিন দিন। যেহেতু রসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তাশরিকের প্রতিটি দিনই হল কুরবানির দিন।” [সিলসিলা সহীহাহ-২৪৬৭]

▪ ৩) গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা ও পুরুষদের জন্য সুগন্ধি মাখা: তবে অপচয় করা হারাম। অনুরূপভাবে পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান ও দাঁড়ি মুণ্ডন করা হারাম। নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করা আবশ্যক। মুসলিম নারীর জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, সে আল্লাহর ইবাদত ও সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পর পুরুষের সামনে বেহায়াপনা প্রদর্শনী ও সুগন্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হবে।

▪ ৪) কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করা: ঈদুল আজহার দিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহ থেকে ফিরে আসার আগে খাবার গ্রহণ করতেন না। বরং তিনি কুরবানি করার পর তার গোস্ত খেতেন। [যাদুল মায়াদ: ১/৪৪১]

▪ ৫) সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া: ঈদগাহে সালাত আদায় করা সুন্নত। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে পড়েছেন। তবে বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে মসজিদে পড়া বৈধ।

▪ ৬) জামায়াতের সাথে ঈদের সালাত আদায় করা এবং খুতবা শোনা: ইবনে তায়মিয়া প্রমুখ গবেষক আলেমগণের মতে অগ্রাধিকার যোগ্য কথা হল, ঈদের সালাত ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন: “অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং কুরবানি কর।” (সূরা কাউসার: ২) সুতরাং ওজর ছাড়া তা রহিত হবে না।
পুরুষদের সাথে নারীরাও ঈদের সালাতে হাজির হবে। এমনকি ঋতুমতী ও কুমারী মেয়েরাও। তবে ঋতুমতী নারীর ঈদের সালাত থেকে বিরত থাকবে।

▪ ৭) রাস্তা পরিবর্তন করা: এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাবর্তন মোস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন।
▪ ৮) ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা: পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত।

❑ কতিপয় ভুল-ভ্রান্তি:

প্রিয় মুসলিম ভাই, অনেক মানুষ ঈদে নানা ধরণের ভুল-ভ্রান্তিতে পতিত হয়। এগুলো থেকে আমাদেরকে সতর্ক থাকা আবশ্যক। তন্মধ্যে:

১. সম্মিলিত তাকবির: একজন তাকবির পাঠ করবে আর অন্যরাও সমস্বরে তাকবির পাঠ করবে-এটা ঠিক নয়। (বরং প্রত্যেকেই নিজে নিজে উঁচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করবে-এটাই সুন্নত)
২. ঈদ আনন্দের নামে ঈদের দিনগুলোতে গান-বাজনা শোনা, ফ্লিম দেখা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়া।
৩. কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি কুরবানি করার আগে নখ-চুল ইত্যাদি কর্তন করা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি নিষেধ করেছেন।
৪. বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত খরচ করা বা অপচয় করা: এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
“তোমরা খাও এবং পান করো তবে অপচয় করো না। তিনি অপচয় কারীদের ভালোবাসেন না।” [সূরা আরাফ: ৩১]

পরিশেষে, প্রিয় মুসলিম ভাইদের প্রতি আহবান, আপনারা উপরে বর্ণিত নেক আমল ছাড়াও অন্যান্য নেক আমল করতে যেন ভুলে না যান। যেমন আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, পারষ্পারিক রাগ-গোস্বা, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা পরিহার করা। এ সব থেকে অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করা। এতীম, গরীব-অসহায় মানুষের প্রতি দয়া করা, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে এমন আমল করার তাওফিক দান করেন যাতে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। তিনি যেন আমাদেরকে দীনের জ্ঞান দান করেন এবং ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা এই দিনগুলো তথা জিল হজের দশ দিনে-কেবল তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেক আমল সম্পাদন করে।
و صلى الله علي نبينا محمد و علي آله وصحبه أجمعين

ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির পাঠ করার দলিল এবং বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত তাকবিরের শব্দাবলী

 প্রশ্ন: আমাদের দেশের এক বক্তা বলেছেন যে, ‘তাকবিরে তাশরিক হিসেবে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ” পাঠ করা যাবে না। কারণ এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো জাল। সুতরাং কেউ তা ঈদ বা তাশরিকের তাকবির হিসেবে পাঠ করলে বিদআত হবে। কিন্তু বিশেষ সময় নির্দিষ্ট না করে যে কোনও সময় তা পাঠ করা যায়।’ তার এ বক্তব্য কি সঠিক? আর তাকবিরের সঠিক শব্দাবলী কী কী?

উত্তর: উক্ত বক্তার এই বক্তব্যই জাল ও বাতিল। বরং উল্লেখিত তাকবির দু ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে উক্ত তাকবির পাঠের বিষয়টি একাধিক সাহাবির আমল থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। আর তাকবিরগুলো বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে।

নিম্নে অতি সংক্ষেপে দুই ঈদ ও ঈদুল আজহার পরে তাশরিকের দিনগুলো তথা জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে তাকবির পাঠের বিষয়ে আলোকপাত করা হলো:

❑ তাকবির পাঠের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশনা:

কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদেরকে অধিক পরিমাণে তাকবির পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ

“আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সে জন্য তাকবির পাঠ করো (আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দাও)।” [সূরা বাকারা: ১৮৫] মুফাসরিরগণের মতে এ আয়াতটি ঈদুল ফিতরের তাকবির পাঠের নির্দেশ করে। কেননা তা রমজান মাসের সিয়াম সংক্রান্ত বিধিবিধানের পরে আলোচিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ

“আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে।” ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, أيام التشريق “তাশরিকের দিন সমূহ।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, দুই ঈদ এবং ঈদুল আজহার পরে তাশরিকের দিনগুলোতে ( জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) তাকবির পাঠ করা শরিয়ত সম্মত।

❑ কীভাবে তাকবির পাঠ করতে হবে?

ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির পাঠ করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে কিছু বর্ণিত হয়নি। তাঁর থেকে এ বিষয়ে যে সব বর্ণনা আছে সেগুলো সহিহ নয়। তবে একাধিক সাহাবির আমল হিসেবে একাধিক শব্দে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। আর সাহাবিগণ অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিক্ষা পেয়েছেন। সুতরাং তাদের অনুসরণে আমরাও তা পাঠ করতে পারি।

নিম্নে একাধিক সাহাবি থেকে যে সব তাকবিরের শব্দাবলী বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

◈ ১. প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে,

أنهُ كان يُكبِّرُ أيامَ التشريقِ اللهُ أكبرُ اللهُ أكبرُ لا إلهَ إلا اللهُ واللهُ أكبرُ اللهُ أكبرُ وللهِ الحمدُ

“তিনি তাশরিকের দিনগুলোতে পড়তেন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”

– ইবনে আবি শায়বা, [হা/৫৬৫১], শাইখ আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: ইরওয়াউল গালীল, [৩/১২৫]

– হানাফি, হাম্বলি এবং শাফেয়ীর প্রাচীন মত এবং একদল সালাফের মতানুসারে ঈদ ও তাশরিকের দিনগুলোতে উক্ত শব্দাবলীর মাধ্যমে তাকবির পাঠ করা উত্তম।

◈ ২. আলি রা. হতে বর্ণিত,

أنهُ كان يُكبِّرُ بعدَ صلاةِ الفجرِ يومَ عرفةَ إلى صلاةِ العصرِ من آخرِ أيامِ التشريقِ ويُكبِّرُ بعدَ العصرِ

“তিনি আরাফা দিবসের ফজর সালাতের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। এবং আসরের পরে তাকবির পাঠ করতেন।”

– শাইখ আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। [দ্রষ্টব্য: ইরওয়াউল গালীল, ৩/১২৫]

– এ হাদিসটিকে আরও সহিহ বলেছেন, বিশিষ্ট মুহাদ্দিস শুয়াইব আরনাবুত। [দ্রষ্টব্য: তাখরিজু যাদিল মায়াদ, ১/৪৩৩ এবং ২/৩৬০]

◈ ৩. আরও বর্ণিত হয়েছে,

كان عَلِيٌّ يُكَبِّرُ بَعدَ صَلاةِ الفَجرِ غَداةَ عَرَفةَ، ثمَّ لا يَقطَعُ حتَّى يُصَلِّيَ الإمامُ من آخِرِ أيَّامِ التَّشريقِ، ثمَّ يُكَبِّرُ بعدَ العَصرِ

“আলি রা. আরাফা দিবসের ফজর পর থেকে তাকবির পড়া শুরু করতেন এবং ইমাম তাশরিকের শেষ দিনের নামাজ পড়া পর্যন্ত তা বন্ধ করতেন না। অতঃপর আসরের পরে তাকবির পাঠ করতেন।” [মুসতাদরাক হাকিম, হা/১১২৭]

◈ ৪. ইবনে আব্বাস রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত তাকবির হলো,

” الله أكبر ، الله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد ، الله أكبر وأجل ، الله أكبر على ما هدانا

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল্ল। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা।” [সুনানে বায়হাকি, ৩/৩১৫, ইরওয়াউল গালীল, ৩/১২৬-সহিহ]

◈ ৫. ইবনে হাজার রা. বলেন, তাকবিরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হলো সেটি যা আব্দুর রাজ্জাক সালমান রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তা হলো:

الله أكبر ، الله أكبر ، الله أكبر كبيراً

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবিরা।” [ফাতহুল বারি, ২/৪৬২]

– শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন, আইয়ামে তাশিরকে তা সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে দুর্বলতা আছে।

উল্লেখ্য যে,

الله أكبر كبيراً ، والحمد لله كثيراً ، وسبحان الله بكرة وأصيلاً

এ তাকবিরটি যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবিদের থেকে বর্ণিত হয়নি তাই না পড়াই উত্তম। বরং সাহাবিদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তার উপর আমল করার মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সব ধরণের ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

আরাফা দিবস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ অফার

 নিঃসন্দেহে আরাফাত দিবস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির প্রতি বছরের শ্রেষ্ঠ অফার। অধিকাংশ আলেমের মতে, এটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। হাজিগণ এ দিন ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকবেন-যা হজের একটি রোকন। এ দিন আল্লাহ নিচের আসমানে নেমে এসে আরাফায় উপস্থিত হাজিদেরকে নিয়ে গর্ব করবেন এবং এত বিশাল পরিমাণ হাজিকে জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি ঘোষণা করবেন যা বছরের আর কখনো করেন না।

◈ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ

“আরাফা দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা নিকটবতী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন এবং বলেন, তারা কী চায়?” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১৬। হজ, পরিচ্ছেদ: ৭৯. হজ, উমরা ও আরাফা দিবসের ফজিলত]

হাজিগণ সে দিন রোজা রাখবেন না। কিন্তু যার হজে যাবে না তাদের করণীয় সে দিন রোজা রাখবেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের পেছনের এবং সামনের মোট দু বছরের গুনাহ মোচন করেন। সুবহানাল্লাহ!

তাই আমাদের কর্তব্য, এ দিনে রোজা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যেমন: হাদিসে এসেছে:

◈ আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالَّتِي بَعْدَهُ

“আমি আল্লাহর নিকট আরাফাত দিবসের রোযার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তাঁর বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” [সহীহ ইবনে মাজাহ হা/১৭৩০]

◈ আরাফা দিবসে দ্বীন ইসলামকে পূর্ণতা দান করা হয়েছে:

মহান আল্লাহ বলেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [মায়িদা: ৩]

ব্যাখ্যা:

তারিক ইবনু শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ইহুদি ব্যক্তি উমর রা. এর নিকট এসে বললো, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবের মধ্যে এমন একটি আয়াত আপনারা পাঠ করে থাকেন। যদি তা আমাদের ইহুদি সম্প্রদায় সম্পর্কে নাজিল হত তাহলে ঐ দিনটিকে আমরা উৎসব দিবস হিসাবে গ্রহণ করতাম। উমার রা. জিজ্ঞেস করলেন, আয়াতটি কী? সে বলল, আয়াতটি হল,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং পূর্ণ করে দিলাম তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে।”

এ কথা শুনে উমার রা. বললেন, যে দিন, যে স্থানে আয়াতটি নাজিল হয়েছে অবশ্যই আমি তা জানি। আয়াতটি জুমার দিন আরাফাতের ময়দানে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৭/ তাফসির]

সুতরাং আল্লাহ তাআলা আল্লাহর মেহমানদেরকে সব ধরণের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন, তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন এবং দুনিয়ার সকল মুসলিমের জীবনের সকল গুনাহ মোচন করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

Translate