মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বিদআত ও কুসংস্কার, এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
✔ (১) মৃত্যুর আগে কিংবা পরে বিশাল খানার আয়োজন করা✔ (২) মৃত ব্যক্তির নামে দেয়া ছাদাক্বা সবাই খাওয়া✔ (৩) জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তার পিছনে পিছনে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দেয়া ও বিভিন্ন যিকির করা✔ (৪) কবরে গোলাপ জল ছিটানো✔ (৫) যে কাপড় দ্বারা খাটলি ঢেকে রাখা হয় সেই কাপড়ে ‘আয়াতুল কুরসী’, বিভিন্ন সূরা ও দু‘আ লেখা বিদআত ও কুসংস্কার✔ (৬) খাটলি নিয়ে যাওয়ার সময় দুইবার রাখা✔ (৭) শোক দিবস পালন করা✔ (৮) চার কুল পড়ে কবরের চার কোণায় খেজুরের ডাল পোঁতা✔ (৯) কবর যিয়ারত করতে গিয়ে সাতবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাছ, সাতবার দরূদ ইত্যাদি নিয়ম পালন করা
[1]. বিস্তারিত দ্রঃ স্বলাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ২৩৮-২৪১
✔ এক নযরে মৃতের গোসল, কাফন ও দাফন :
মাইয়েতকে দ্রুত গোসল করানো ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা সুন্নাত।[7] গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ আদবের সাথে বরইপাতা দেওয়া পানি এবং সাবান দিয়ে গোসল করাবে।[8] সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন।[9] স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাবেন।[10] জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না।[11] উল্লেখ্য, পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে।[12]
প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাইয়েতের ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করবে।[13] ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় পানি ঢালা যাবে। গোসল শেষ করার পর সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হলে চুলের তিনটি বেণী করে পিছনে ছড়িয়ে দেবে।[14]
✔ কাফন :
সাদা পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মাইয়েতকে কাফন পরাবে।[15] তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে।[16] পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি লেফাফা বা বড় চাদর, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে যাবে। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা।[17] বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে।[18] শহীদকে তার পরিহিত পোশাকে কাফন দিবে। অনুরূপ মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কিন্তু সুগন্ধি লাগাবে না।[19] কাফনের কাপড়ের অভাব হলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে।[20]
✔ দাফন :
কবর গভীর ও প্রশস্ত করে ভালভাবে খনন করতে হবে।[21] ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবরই জায়েয। মাইয়েতকে পুরুষ লোকেরা কবরে নামাবে। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তী যারা ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন।[22] কবরের পায়ের দিক দিয়ে মোর্দাকে কবরে নামাবে।[23] মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে।[24] কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ দু‘আ পড়বে।[25] কবর বন্ধ করার পরে সকলে সাধারণ দু‘আ হিসাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে[26] তিন মুষ্ঠি মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দিবে।[27] কবরের মাটি সমান করে দিবে।[28] কবর সাধারণ মাটি থেকে বিঘত খানেক উঁচু করবে।[29] বেশী উঁচু করা বা সৌধ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ।[30]
উপসংহার :
স্বলাত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম (আনকাবূত ৪৫)। কিন্তু এই স্বলাত বিশুদ্ধ না হলে কোন আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ ফরয স্বলাতসহ আমাদের প্রত্যেকটি স্বলাতই জাল-যঈফ ও বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনী দ্বারা ভরপুর, যা লেখনীতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তাই সকল মুছল্লী ভাই ও বোনদের প্রতি আকুল আবেদন থাকবে- তারা যেন যাবতীয় সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দেন এবং রাসূল (ﷺ)-এর পদ্ধতি নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করেন। মনে রাখা আবশ্যক যে, বিভিন্ন মাযহাব, মতবাদ ও ত্বরীক্বা সৃষ্টির বহু পূর্বেই ছাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী স্বর্ণযুগের মানুষগুলো রাসূল (ﷺ)-এর যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমেই সফলকাম হয়েছেন। এমনকি অনেকে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদও পেয়েছেন। অতএব আসুন! আমরা একমাত্র সেই রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ করি এবং তাঁরই দেখানো পদ্ধতিতে স্বলাত আদায় করি। তিনি ছাড়া কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আমাদেরকে উদ্ধার করার কেউ থাকবে না। আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (ﷺ)-এর অনুপম আদর্শের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করুন! আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করে নেয়ার তাওফীক্ব দান করুন! আমাদেরকে সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং জান্নাত লাভে ধন্য করুন! আমীন!!
>>>কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Hadithonlinebd.com<<<
No comments:
Post a Comment