য় হিজরির রমাযান মাসের সতের তারিখে মদিনার প্রায় ১৩০ কি:মি: দূরে অবস্থিতি ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার জানবাজ সাহসী সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এক যুগান্তকারী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল অস্ত্র সম্ভার এবং জনবলে এক অসম যুদ্ধ। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নেতৃত্বে মুসলিমগণ অতি নগণ্য সংখ্যক জনবল আর খুব সামান্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সুদূর মক্কা থেকে ছুটে আসা একদল রক্ত পিপাষু হিংস্র কাফেরদের বিশাল অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর প্রতিরোধ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা সে দিন অলৌকিকভাবে মুসলমানদেরকে বিশাল সম্মানজনক বিজয় দান করেছিলেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার মাঝে চূড়ান্ত পার্থক্য সূচিত হয়েছিল।
এ এক ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু তাই বলে কি প্রতি বছর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে ‘বদর দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার অনুমতি ইসলামে রয়েছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের অনুসারী তাবেঈনগণ কি এমন কিছু করেছেন? উত্তর, কখনো নয়। তাহলে কেন দ্বীনের নামে এই বিদআতের আয়োজন?
যদিও আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটির প্রচলন তেমন নেই। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের বিদআতের পৃষ্ঠপোষকতা কারী কতিপয় প্রতিষ্ঠান, খানকা, দরবার এবং ইসলামী সংগঠন প্রতি বছর বেশ জাঁকজমক ভাবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে থাকে! এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়, আলোচনা সভা, দুআ অনুষ্ঠান, মিলাদ ও কিয়াম মাহফিল,আজিমুশান নূরানি মাহফিল ইত্যাদি।
💠 অথচ উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার সর্বোত্তম আদর্শ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং সালাফে সালেহীন থেকে এ জাতীয় অনুষ্ঠান পালনের কোন ভিত্তি নাই।
💠 শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়ত জীবনে রয়েছে অনেক বক্তৃতা, সন্ধি-চুক্তি এবং বিভিন্ন বড় বড় ঘটনা, যেমন, বদর, হুনাইন, খন্দক, মক্কা বিজয়, হিজরত মূহুর্ত, মদিনায় প্রবেশ, বিভিন্ন বক্তৃতা যেখানে তিনি দ্বীনের মূল ভিত্তিগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি তো এ দিনগুলোকে উৎসব/দিবস হিসেবে পালন করা আবশ্যক করেন নি। বরং এ জাতীয় কাজ করে খৃষ্টানরা। তারা ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে ইহুদীরাও এমনটি করে। ঈদ-উৎসব হল শরীয়তের একটি বিধান। আল্লাহ তায়ালা শরীয়ত হিসেবে যা দিয়েছেন তা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করা যাবে না যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়।”[ ইকতিযাউয সিরাতিল মুস্তাকীম। (২/৬১৪ ও ৬১৫)]
💠 মূলত: এ জাতীয় কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের শরীয়ত থেকে দূরে রাখার একটি অন্যতম মাধ্যম। শরীয়ত যে কাজ করতে আদেশ করে নি তা হতে দূরে অবস্থান করে রমাযান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামায আদায় করা, জিকির-আযকার এবং অন্যান্য এবাদত-বন্দেগি বেশি বেশি করা দরকার। কিন্তু মুসলিমদের একটি বড় অংশের অন্যতম সমস্যা হল, শরিয়ত অনুমোদিত ইবাদত বাদ দিয়ে নব আবিষ্কৃত বিদআতি আমল নিয়ে ব্যস্ত থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
💠 পরিশেষে বলব, ঘটা করে ১৭ রমাযান ‘বদর দিবস’ পালন নয় বরং বছরের যে কোন সময় এ বিষয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও আলোচনা সভা ইত্যাদি করা করা যেতে পারে। শুধু বদরকে কেন্দ্র করে নয় রবং ইসলামের প্রতিটি ঘটনাকে নিয়েই এ সব শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বর্তমানে মুসলিমগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন ও ইসলামের সোনালী ইতিহাস নিয়ে খুব কমই আলোচনা-পর্যালোচনা করে! অথচ এসব ঘটনা আমাদের হৃদয় কন্দরে সীমাহীন প্রেরণা ও এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়।
No comments:
Post a Comment