السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
???আমরা অনেকেই জানি, সালাতের সিজদাতে ও সালাম ফিরানোর আগে দো‘আ করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সালাতে মোট কতগুলো জায়গায় দো‘আ করা যায়? সেইগুলো কি কি????
??নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে মোট ৭টি স্থানে দো’আ করতেন। সালাতে যেই ৭টি স্থানে দো’আ করা যায়ঃ??
দো‘আটি হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَدِ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বাইয়ি’দ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।”
?বুখারীঃ ৭৪৪, মুসলিমঃ ৫৯৮।
২?. দুয়া কুনুতঃ কিরাত শেষ করে রুকুতে যাবার আগে দুয়া কুনুত পড়া সুন্নত। বিতির সালাতে ও সাময়িকভাবে ফজরের ফরয সালাতেও (মুসলিমদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য, অত্যাচারী কাফেরদের বদদুয়া করার জন্য অথবা উম্মাহর বিশেষ প্রয়োজন এমন সময়ে) দুয়া কুনুত পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। সবচাইতে সহীহ ও অর্থের দিক থেকে বেশি সুন্দর যে দুয়া কুনুত সেটা হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ؛ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، [وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ]، تَبارَكْتَ رَبَّنا وَتَعَالَيْتَ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
৫?. সিজদাতে দুয়া করাঃ
৬?. দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দো‘আ করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দো‘আ আরবীতেই করতে হবে।
?ছোট্ট এই দো’আ কি মুখস্থ করা যায়না?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দো’আটি করতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
⭕উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর।
?আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দো’আটা সহীহ।
এই ছোট্ট দো‘আ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দো’আ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তাওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা করা)।
এছাড়া আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي
?উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।
হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন।
? আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।
?তিরমিযী ৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যেকোনো সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দো’আ পড়তে বলেছেন।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আ’যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া ওয়াল্ মামাতি, ওয়ামিন সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহি’দ্-দাজ্জাল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো।
?বুখারী ২১০২, মুসলিম ১/৪১২, হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা – ৯০।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো‘আ মাসুরা হিসেবে এই দুয়াটা পড়তে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। এছাড়া আরো অনেক দুয়া মাসুরা আছে অথবা আরবীতে অন্য দুয়াগুলো এইখানে পড়তে পারবেন ইন শা আল্লাহ। এছাড়া কুরআন অথবা হাদীসে বর্ণিত অন্য দো’আগুলো, রাব্বানা আতিনা…রাব্বির হামহুমা কামা…আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতে…এইরকম নিজের জন্য, মাতাপিতার জন্য, যেকোনো মুসলিমের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোন হালাল ও কল্যানকর কিছু চাওয়া যাবে।
??নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে এই ৭টি স্থানে নিজে দো‘আ করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও দো‘আ করতে বলেছেন।??
No comments:
Post a Comment