মৃত স্বামী বা স্ত্রীকে দেখতে ও গোসল করাতে না দেয়া ও মৃত্যু সংবাদ প্রচার
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
কুধারণা চালু আছে যে, স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলে অপরের জন্য তালাক হয়ে যায়। তাই তাকে গোসল দেয়া কিংবা দেখতে দেয়া নাজায়েয। সমাজে উক্ত অভ্যাস ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কথিত আলেমরাও এ ফৎওয়া জারি করে রেখেছেন। অথচ এটা মূর্খতা ও সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ। কারণ উক্ত মর্মে স্পষ্ট সহিহ হাদীছ এসেছে। মৃত স্বামী বা স্ত্রীকে
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنَ الْبَقِيْعِ فَوَجَدَنِىْ وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِىْ رَأْسِىْ وَأَنَا أَقُوْلُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ ثُمَّ قَالَ مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِىْ فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বাক্বীউল গারক্বাদ থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, হ্যায় আমার মাথা ব্যথা! তখন রাসূল (ﷺ) বলছিলেন, আয়েশা! বরং আমার মাথায় ব্যথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার স্বলাত আদায় করব।[1]
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ قَالَتْ غَسَّلْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-এর কন্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।[2] অন্য দিকে আয়েশা (রাঃ) বলেন, لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ ‘পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতাম, তবে রাসূল (ﷺ)-কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না’।[3]
অতএব স্বামী আগে মারা গেলে স্ত্রী, কিংবা স্ত্রী আগে মারা গেলে স্বামী উভয় উভয়কে গোসল দেয়ার বেশী হকদার। এর বিরুদ্ধাচরণ করার অর্থই হল শরী‘আতের মর্যাদা নষ্ট করা। মৃত্যুর পর সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অথচ তাকে দেখতে পারবে না, গোসল দিতে পারবে না কেন? এগুলো স্রেফ মূর্খতা।
✔ (৪) মারা যাওয়ার পর চুল, নখ ইত্যাদি কাটা :
✔ মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির চুল-নখ কাটা উচিত নয়। এটি বহুল প্রচলিত বিদ‘আত। ঐভাবেই দাফন করতে হবে। এর পক্ষে যে বর্ণনাটি রয়েছে তা যঈফ।
عَنْ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ إِنَّهُ غَسَّلَ مَيْتًا فَدَعَا بِالْمُوْسَى فَحَلَقَ عَانَتَهُ.
সা‘দ বিন মালেক (রাঃ) বলেন, তিনি একদা এক মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিচ্ছিলেন, তখন তিনি খুর নিয়ে আসালেন এবং নাভীর নীচের লোম কেটে দিলেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। কারণ আবু ক্বেলাব নামে একজন রাবী আছেন, যার সাথে সা‘দ ইবনু মালেকের সাক্ষাৎ হয়নি। অথচ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[2]
জ্ঞাতব্য : মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পূর্বে কুলুখ করানো, খিলাল করা, পেট টিপে ও উঠা বসা করিয়ে ময়লা বের করা এগুলো সব বিদ‘আতী প্রথা। এ সমস্ত কুসংস্কার থেকে সাবধান থাকতে হবে।
✔ (৫) সাত কিংবা পাঁচ কাপড়ে কাফন পরানো :
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য তিন কাপড়ে কাফন পরানোই সহিহ হাদীছ সম্মত। মহিলাদেরকে পাঁচ কিংবা সাত কাপড়ে কাফন দেয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা সহিহ নয়।
✔ (أ) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِىٍّ ابْنِ الْحَنَفِيَّةِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ كُفِّنَ فِىْ سَبْعَةِ أَثْوَابٍ
(ক) মুহাম্মাদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সাত কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে ইবনু আক্বীল নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[2]
✔ (ب) عَنْ لَيْلَى بِنْتِ قَانِفٍ الثَّقَفِيَّةِ قَالَتْ كُنْتُ فِيْمَنْ غَسَّلَ أُمَّ كُلْثُوْمٍ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ عِنْدَ وَفَاتِهَا فَكَانَ أَوَّلُ مَا أَعْطَانَا رَسُوْلُ اللهِ الْحِقَاءَ ثُمَّ الدِّرْعَ ثُمَّ الْخِمَارَ ثُمَّ الْمِلْحَفَةَ ثُمَّ أُدْرِجَتْ بَعْدُ فِى الثَّوْبِ الآخِرِ قَالَتْ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهُ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًا.
(খ) লায়লা ইবনু কানেফ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মেয়ে উম্মে কুলছূমের মৃত্যুর পর যারা গোসল দিয়েছিল, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। রাসূল (ﷺ) আমাদের প্রথম দিলেন তহবন্দ। তারপর দিলেন জামা, তারপর উড়না, তারপর চাদর দিলেন। অতঃপর সবশেষে একটি কাপড় দ্বারা তাকে ঢেকে দেয়া হল। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় রাসূল (ﷺ) দরজায় বসেছিলেন। তার কাছে কাপড় ছিল। তিনি সেখান থেকে একটি একটি করে দিচ্ছিলেন।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে নূহ বিন হাকীম ছাক্বাফী নামে এক অপরিচিত রাবী আছে।[4] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ﷺ)-এর কন্যার কাফন পরানোর সময় পাঁচ কাপড় দেয়া হয়েছিল মর্মে জাওযাক্বী অতিরিক্ত যে অংশটুকু করেছেন তা যঈফ ও মুনকার।[5] অনুরূপ হাসান বছরীর উক্তিতে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেওয়ার যে কথা বর্ণিত হয়েছে, এই বর্ণনার আলোকে সেটাও যঈফ।[6]
✔ তিন কাপড়ে কাফন দেয়ার সহিহ হাদীছ :
✔ عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْها أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كُفِّنَ فِىْ ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لَيْسَ فِيْهَا قَمِيْصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ .
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ)-কে তিনটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। তাতে জামা এবং পাগড়ী ছিল না।[1]
অতএব পুরুষ নারী উভয়কে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। এর বেশী নয়। কারণ মহিলাদেরকে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেয়া সম্পর্কে কোন সহিহ বর্ণনা নেই।
✔ عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ يُكَفَّنُ الرَّجُلُ فِىْ ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لاَ تَعْتَدُوْا إنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ.
রাশেদ বিন সা‘দ বলেন, ওমর (রাঃ) বলেছেন, পুরুষ ব্যক্তিকে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। সীমা লংঘন করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের পসন্দ করেন না।[2] আলবানী (রহঃ) বলেন,
✔ وَمِمَّا لاَ شَكَّ فِيْهِ أَنَّ النِّسَاءَ فِىْ ذَلِكَ كَالرِّجَالِ لِأَنَّهُ الْأَصْلَ كَمَا يُشْعَرُ بِذَلِكَ قَوْلِهِ إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ.
‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মহিলারাও এ বিষয়ে পুরুষদের ন্যায়। কারণ পুরুষই মূল। যেমন রাসূল (ﷺ)-এর বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়। ‘মহিলারা মূলতঃ পুরুষদেরই খন্ড’।[3] আবুবকর (রাঃ)-এর অছিয়তটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।[4]
✔ (৬) কালেমা পড়া ব্যক্তির জানাযা পড়া :
✔ দ্বীন ইসলামের আরকান ও আহকাম পালন না করলে এবং স্বলাত আদায় না করে শুধু কালেমা পড়ে মারা গেলে তার জানাযা পড়তে হবে, এরূপ কোন বিধান শরী‘আতে নেই। যে কোনদিন স্বলাত আদায় করেনি এবং রাসূল (ﷺ)-এর আদর্শ মোতাবেক জীবন যাপন করেনি, তার উপর জানাযা পড়তে হবে কেন? কবরে রাখার সময় রাসূল (রাঃ)-এর ত্বরীকায় ছিল বলে কেন সাক্ষী দিতে হবে? এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা যঈফ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلُّوْا عَلَى مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَصَلُّوْا خَلْفَ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলেছে, তার জানাযার স্বলাত পড়। অনুরূপ তার পিছনেও স্বলাত আদায় কর।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে ওছমান বিন আব্দুর রহমান নামে একজন যঈফ রাবী আছে। ইবনু মাঈন তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[2] উল্লেখ্য যে, তাদের মত লোকেরাই তাদের জানাযা পড়বে। কোন দ্বীনী আলেম ও পরহেযগার ব্যক্তি তার স্বলাতে হাযির হবে না।[3]
✔ (৭) তাকবীর দেওয়ার সময় একবার হাত উত্তোলন করা :
✔ জানাযার স্বলাত আদায়ের সময় প্রত্যেক তাকবীরেই দুই হাত উত্তোলন করা দলীল সম্মত। একবার হাত উত্তোলন করার হাদীছ যঈফ।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهُ كَبَّرَ عَلَى جَنَازَةٍ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فِى أَوَّلِ تَكْبِيْرَةٍ وَوَضَعَ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা জানাযার স্বলাত পড়ালেন। তিনি প্রথম তাকবীরে হাত তুললেন এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন,
هَذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِى هَذَا فَرَأَى أَكْثَرُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ وَغَيْرِهِمْ أَنْ يَرْفَعَ الرَّجُلُ يَدَيْهِ فِى كُلِّ تَكْبِيرَةٍ عَلَى الْجَنَازَةِ وَهُوَ قَوْلُ ابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِىِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ لاَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلاَّ فِىْ أَوَّلِ مَرَّةٍ وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِىِّ وَأَهْلِ الْكُوْفَةِ.
‘এই হাদীছ গরীব। উক্ত সূত্র ছাড়া আর অন্য কোন সূত্র আমাদের জানা নেই। আলেমগণ উক্ত বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম এবং অন্যান্যদের অধিকাংশই মনে করেন, মুছল্লী জানাযার প্রত্যেক তাকবীরেই দুই হাত উত্তোলন করবে। আর এটাই ইবনুল মুবারক, শাফেঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব-এর বক্তব্য। আর কতিপয় আলেম বলেন, মাত্র একবার হাত উত্তোলন করবে। আর এটা ছাওরী এবং কূফাবাসীর বক্তব্য’।[2]
জ্ঞাতব্য : জানাযার প্রত্যেক তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতে হবে মর্মে রাসূল (ﷺ) থেকে কোন সহিহ হাদীছ নেই।[3] তবে অনেক ছাহাবী থেকে সহিহ আছার বর্ণিত হয়েছে। তাই প্রত্যেক তাকবীরেই হাত উত্তোলন করা উচিত।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عَلَى كُلِّ تَكْبِيْرَةٍ مِنْ تَكْبِيْرِ الْجَنَازَةِ
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার প্রত্যেক তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতেন।[4] ইমাম বুখারী (রহঃ)ও উক্ত আছারের বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন।[5]
✔ (৮) মৃত্যু ব্যক্তির কোন অঙ্গের উপর জানাযা করা :
✔ অনেক স্থানে মৃতের অঙ্গের উপর জানাযা পড়ার ফৎওয়া দেয়া হয়। অথচ উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
عَنِ الشَّعْبِىِّ قَالَ بَعَثَ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنِ مَرْوَانَ بِرَأْسِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ إَلِى ابْنِ حَازِمٍ بِخُرَاسَانَ فَكَفَّنَهُ وَ صَلَّى عَلَيْهِ.
শা‘বী বলেন, আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের মাথা পাঠান ইবনু হাযেমের কাছে। তিনি তার কাফন পরান ও জানাযা করেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে ছায়েদ বিন মুসলিম নামে যঈফ ও পরিত্যক্ত রাবী আছে।[2] ইমাম শা‘বী বলেন, সে ভুল করেছে। তিনি মাথার উপর জানাযা পড়েননি।[3]
✔ عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ صَلَّى عَلَى رِجْلٍ.
আবু আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি পায়ের উপর জানাযা পড়েছিলেন।[4] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,عَنْ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ صَلَّى عَلَى عِظَامٍ بِالشَّامِ ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সিরিয়ায় হাড়ের উপর জানাযা পড়েছিলেন।[5]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনাগুলোর সহিহ কোন ভিত্তি নেই।[6]
✔ (৯) মসজিদে জানাযা পড়তে নিষেধ করা :
প্রয়োজনে মসজিদে জানাযা পড়া যায়। অথচ অনেকে বাধা দিয়ে থাকে। এখানেও যঈফ হাদীছের ভূমিকা আছে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فِى الْمَسْجِدِ فَلاَ شَىْءَ عَلَيْهِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদে জানাযা পড়বে তার জন্য কোন কিছুই নেই। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার উপর কিছুই নেই।[1]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনার সনদে ছালেহ মাওলা তাওআমাহ নামে একজন রাবী আছে সে দুর্বল। ইমাম আহমাদও তাকে যঈফ বলেছেন।[2] বরং প্রয়োজনে মসজিদে জানাযার স্বলাত আদায় করা যাবে। যেমন-
عَنْ أَبِىْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ عَائِشَةَ لَمَّا تُوُفِّىَ سَعْدُ بْنُ أَبِى وَقَّاصٍ قَالَتِ ادْخُلُوْا بِهِ الْمَسْجِدَ حَتَّى أُصَلِّىَ عَلَيْهِ فَأُنْكِرَ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ وَاللهِ لَقَدْ صَلَّى رَسُولُ اللهِ عَلَى ابْنَىْ بَيْضَاءَ فِى الْمَسْجِدِ سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ.
আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, যখন সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ মারা গেলেন, তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তোমরা তার লাশ মসজিদে নিয়ে আস; যাতে আমি জানাযা পড়তে পারি। এতে তার প্রতি অস্বীকৃতি জানান হলে তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বায়যার দুই সন্তান সুহাইল ও তার ভাইয়ের জানাযা মসজিদে পড়েছিলেন।[3]
✔ (১০) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা :
মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা জাহেলী আদর্শ। এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। হুযায়ফাহ (রাঃ) বলেন, يَنْهَى عَنِ النَّعْيِ রাসূল (ﷺ) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করতেন।[1] মৃত্যু সংবাদ প্রচারের নামে শোক প্রকাশ করে কোন লাভ হয় না। শুধু লোক দেখানোই হয়। তার প্রমাণ হল, সব জানাযাতে লোকের সংখ্যা এক রকম হয় না। কারো জানাযায় হাযার হাযার লোক হয়, আবার কারো জানাযায় একশ’ লোকও জুটে না। অথচ সব মাইয়েতের জন্যই মাইকিং করা হয়। সুতরাং এতে কোন ফায়েদা নেই। এটা মূলতঃ ব্যক্তির প্রসিদ্ধি ও গুণের কারণ। তাছাড়া শুভাকাঙ্খী হলে এমনিতেই সে মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাবে, মাইকিং করে জানানো লাগবে না।
উল্লেখ্য যে, মারা যাওয়ার পূর্বে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার উত্তরসূরী ও আত্মীয়-স্বজনকে অছিয়ত করে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিদ‘আতী কর্মকান্ড অনুষ্ঠিত না হয়। বিশেষ করে বিলাপ করা ও বিভিন্ন কথার মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা। কারণ সাবধান করে না গেলে বা এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে এ জন্য তাকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,
أَلاَ تَسْمَعُوْنَ إِنَّ اللهَ لاَ يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ وَلاَ بِحُزْنِ الْقَلْبِ وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ أَوْ يَرْحَمُ وَإِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ. وَكَانَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَضْرِبُ فِيْهِ بِالْعَصَا وَيَرْمِىْ بِالْحِجَارَةِ وَيَحْثِى بِالتُّرَابِ.
‘তোমরা কি শুননি, নিশ্চয়ই আল্লাহ চোখের কান্না ও অন্তরের চিন্তার কারণে শাস্তি দিবেন না; বরং তিনি শাস্তি দিবেন এর কারণে। অতঃপর তিনি তার জিহবার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অথবা তার উপর রহম করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মাইয়েতকে তার পরিবারের কান্নার কারণে শাস্তি দেন। ওমর (রাঃ) এ জন্য লাঠিপেটা করতেন, পাথর মারতেন এবং মাটি নিক্ষেপ করতেন।[2]
No comments:
Post a Comment