Wednesday, June 12, 2024

হযরত মু’হাম্মাদ স্বল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ‘হায়াতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা!

 

হযরত মুহাম্মাদ স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্তহায়াতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা!

হযরত মুহাম্মাদ স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্তহায়াতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা!

================================================

 

১ম বছর ৫১৭খ্রীঃ বাবাআব্দুল্লাহ্ ইন্তেকাল, আস্বহাবুল্‌-ফীল বা হস্তি-বাহিনীর ঘটনা, নবীজির জন্ম, দুধ মাহালিমার সাথে বনূ সাআ গোত্রে গমণ।

৩য় বছর ৫৭৩খ্রীঃ দুধ পান শেষে মা আমিনার কোলে, পূণরায় বনূ সা গোত্রে গমণ।

৪র্থ বছর ৫৭৪খ্রীঃ বক্ষ বিদরণ, মা আমিনার কাছে প্রত্যাবর্তন।

৬ষ্ট বছর ৫৭৭খ্রীঃ বাবার কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ইয়াছ্রিব (মদীনায়)গমণ, মা আমিনার ইন্তেকাল, দাদাআব্দুল মুত্তালিবের দায়িত্বভার গ্রহণ।

৮ম বছর ৫৭৯খ্রীঃ দাদাআব্দুল মুত্তালিবের ইন্তকাল, চাচা আবু তালেবের দায়িত্বভার গ্রহণ।

১২তম বছর ৫৮৩খ্রীঃ চাচার সাথে ব্যবসায়িক সফরে শা-(সিরিয়া)গমণ। পাদ্রী বুহায়রার সাথে সাক্ষাত এবং তার অভিমত।

১৬/২০তম বছর ৫৮৬-৯০ খ্রীঃ হিল্ফুল্ফুযূলনামক সেবামূলক সংগঠনে যোগদান।

২৫তম বছর ৫৯৬খ্রীঃ খদীজা রদ্বিঃ-এর সাথে ব্যবসায়িক সফরে শা- গমণ, আমানতদারী বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে নবীজিকে খদীজা রদ্বিঃ-এর বিবাহের প্রস্তাবদান বিবাহকার্য সম্পাদন।

২৮তম বছর ৫৯৬-৯৮খ্রীঃ হযরত ক্বাসেম, রদ্বিঃ-এর জন্মগ্রহন।

৩০তম বছর ৬০০খ্রীঃ বড় কন্যা যায়নাব রদ্বিঃ-এর জন্মগ্রহণ, নবীপুত্র কাসেম রদ্বিঃ-এর ইন্তেকাল।

৩৩ তম বছর ৬০৩খ্রীঃ নবুওয়াতের পূর্বাভাস স্বরুপ বিশেষ নূরের অবলোকন, রুক্বইয়া রদ্বিঃ-এর জন্মগ্রহণ।

৩৫-৪০তম বছরঃ –কাবা ঘর পূণঃনির্মাণ, নিজ হাতেহাজ্রে আসওয়াদ স্থাপন, ’হেরা গুহায় আরাধনা, “রদইয়া স্ব-দিক্বাহ্‌” তথা সত্যস্বপ্ন দর্শনের সূচনা।

 

 

নবুওয়াতের পর মক্কী জীবনঃ

===============

হিজরতপূর্ব তের বছর-

১ম বছর ৬১০খ্রীঃ –নবুয়াত লাভ, হযরত খদীজা, আবু বাকার আলী প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিঃ-এর ইসলাম গ্রহণ, ওয়ারক্বহ্বিন নাউফালের সান্তনা ভবিষ্যত বাণী, ফাতেমা রদ্বিঃ-এর জন্ম।

৩য় বছর ৬১২খ্রীঃ -প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের আদেশ, স্বফা পর্বতে ঐতিহাসিক খুৎবা(ভাষণ) প্রদান, মুশরিকদের নিন্দা ভৎসনা।

৫ম বছর ৬১৪খ্রীঃ -কাফেরদের অত্যাচার বৃদ্ধি, হাবশায় প্রথম হিজরত, রসূলুল্ল-হ্স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মুখে সূরা-নাজ্ম্‌’ এর তিলাওয়াত শুনে কাফেরদের সেজদায় লুটে পড়া।

৬ষ্ট বছর ৬১৪-৬১৫খ্রীঃ- হযরত হামযা উমার রদ্বিঃ-এর ইসলাম গ্রহণ।

৭ম বছর ৬১৫খ্রীঃ -শিআবে আবী তালেবে অবরোধ অবস্থায় তিন বছর অবস্থান, হাবশায় দ্বিতীয় হিজরত।

১০ম বছর ৬১৯খ্রীঃ -‘-মুল্‌ ’হুয্ন্বা দূঃখের বছর, বিভীষিকাময় অবরোধের সমাপ্তি, সরদার আবূ তালেব হযরত খদীজা রদ্বিঃ-এর ইন্তেকাল, তায়েফ গমন, হযরত সাওদা রদ্বিঃ-এর সাথে বিবাহ।

১১তম বছর ৬২০খ্রীঃ -মদীনার মিনায় ছয় সৌভাগ্যবান ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ, মদীনায় ইসলামের যাত্রা শুরু, হযরতআইশাহ্রদ্বিঃ-এর সাথে বিবাহ।

১২তম বছর ৬২১খ্রীঃ- আক্ববায়ে ঊলা তথাআক্ববাহ্নামক স্থানে প্রথমবার বাইআত গ্রহণ, মুস্বআব বিনউমাইর রদ্বিঃ-কে শিক্ষক হিসেবে মদীনায় প্রেরণ, দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণ।

১৩ তম বছরঃ -‘আক্ববায় দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণ, মদীনার ৭৩জন পুরুষ ২জন মহিলার ইসলাম গ্রহণ এবং সাহায্যের অঙ্গীকার প্রদান, ‘দারুন্নাদওয়ায়কুরইশের মুশরিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক, নবীজিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র, মক্কা মুকার্রমাকেআল-বিদাজানিয়ে হিজরতের জন্য মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা।

 

 

 

 

মাদানী জিবনঃ

========

১ম হিঃ ৬২২-৬২৩ খ্রীঃ -মাসজিদে ক্বুবায় প্রথম জুমুআর স্বলাত(নামাজ) আদায়, মদীনায় প্রবেশ, হযরত আবূ আইয়ূব আন্ছারী রদ্বিঃ-এর ঘরে অবস্থান, মসাজিদে নাববীর নির্মাণ, আনছার-মুহাজির ভ্রাতৃত্ববন্ধন স্থাপন, ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি, মদীনা-সনদ প্রবর্তন, নববধূ হিসেবে হযরতআইশাহ রদ্বিঃ এর আগমন।

২য় হিঃ ৬২৩-৬২৪ খ্রীঃ -সাল্মান ফারসী রদ্বিঃ-এর ইসলাম গ্রহণ, ক্বিব্লা পরিবর্তন, মুসলমানদের উপর ক্বুরইশের কাফেরদের প্রথম আক্রমণ, বদর-যুদ্ধ, রুক্বইয়া বিন্তে মুহাম্মাদ স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল, ‘হাফ্সা বিন্তেউমার রদ্বিঃ এর সাথে বিবাহ।

৩য় হিঃ ৬২৪-৬২৫খ্রীঃ -হযরতহাসান রদ্বিঃ-এর জন্ম, হুদ যুদ্ধ, হযরত যায়নাব বিন্তে খুযাইমা রদ্বিঃ-এর ইন্তকাল।

৪র্থ হিঃ ৬২৫-৬২৬খ্রীঃ -রজী বিরে মাঊনার ঘটনা, (রজীতে দশজন এবং বিরে মাঊনায়া সত্তুরজন বড় বড় সাহাবা রদ্বিঃ শহীদ হন) নবীজির নাতিআব্দুল্লাহ্ইব্নেউছ্মান রদ্বিঃ এর ইন্তেকাল, হযরতহুসাইন রদ্বিঃ এর জন্ম, হযরত উম্মে সালামা রদ্বিঃ এর সাথে বিবাহ।

৫ম হিঃ ৬২৬-৬২৭খ্রীঃ -খনদক্ব যুদ্ধ, বানূ কুরইযাকে মূলোৎপাটন, ‘আইশাহ রদ্বিঃ এর মিথ্যা অপবাদ আরোপ, হযরত যায়নাব বিন্তে জাহাশ জুওয়াইরিয়া রদ্বিঃ-এর সাথে বিবাহ, হযরত সা বিন মুআয রদ্বিঃ এর ইন্তেকাল।

৬ষ্ট হিঃ ৬২৭-৬২৮খ্রীঃ -বাইআতে রিদ্বওয়ান, হুদাইবিয়ার সন্ধি, রাজা বাদশাহ্দের নামে পত্র-প্রেরণ, উম্মেহাবিবা রদ্বিঃ এর সাথে বিবাহ।

৭ম হিঃ ৬২৭-৬২৮খ্রীঃ -খাইবার-যুদ্ধ, নবীজিকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার পায়তারা, ’উমরাতুল ক্বদ্বা- আদায়, ছফিয়্যাহ্ মাইমূনাহ্রদ্বিঃ-এর সাথে বিবাহ।

৮ম হিঃ ৬২৯-৬৩০খ্রীঃ- মুতা-যুদ্ধ, মক্কা-বিজয়, ‘উমরায়ে জীর-না, ’হুনাঈন-যুদ্ধ, যায়নাব বিন্তে মুহাম্মাদ স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল, নবীপুত্র হযরত ইব্রাহীম রদ্বিঃ-এর জন্ম, খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিঃ,‘আমার ইবনুল্‌ ‘আস উছমান ইব্নে আবূ ত্বলহা রদ্বিঃ-এর ইসলাম গ্রহন।

৯ম হিঃ ৬৩০-৬৩১খ্রীঃ -“’আমুল্ওফূদবা বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের আগমনের বছর, হযরত আবূ বাকার রদ্বিঃ-এর নেতৃত্বে প্রথমহাজ্জ(হজ্জ) আদায়, তাবুক-যুদ্ধ, নাবী কন্যা উম্মে কুল্ছূম্রদ্বিঃ,বাদশাহ নাজ্জাশী মুনাফিক্ব সরদারআব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর ইন্তেকাল।

১০ম হিঃ ৬৩২খ্রীঃ -হযরত মুআবিয়াহ রদ্বিঃ-কে ইয়ামান প্রেরণ, বিদায়হাজ্জ,(হজ্জ) নাবী জীবনের শেষসারিয়্যাহ্‌” বা যুদ্ধাভিযান প্রেরণ, সোমবার ১২ই রবিউল্আউয়াল ১৮জুন চাশ্তের সময় সাইয়িদুল্মুর্সালীন,খ্বতামান্‌-নাবিয়্যীন,-ক্বায়ে নামদার,তাজদারে মাদীনা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা, হমাদ মুস্তফা স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহকাল থেকে তাঁর সৃষ্টিকর্তার সান্নিদ্ধ গ্রহণ করেন, ১৪ই রবিউল্আউয়াল বুধবার রাতে হযরতআইশাহ রদ্বিঃ-এর আবাসস্থলে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

 

শারীআতের গুরুত্বপূর্ণ বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরিপেক্ষিতে রসূল স্বল্লাল্ল-হুআলাইহি ওয়াসাল্লামের নাবাবীহায়াত-

==========================================

নবুওয়াতের ১ম বছর -পবিত্রতা ওয়াদ্বূর (ওযু) বিধান।

নবুওয়াতের ৫ম বছর -ফার্দ্ব্‌ (ফরয) পাঁচ ওয়াক্ব্ স্বলাত (নামায)-এর বিধান (অন্য বর্ণনা মতে ৯ম/১০ম/১১তম বছর)

হিজরী ১ম বছর -আযান প্রবর্তন (অন্য বর্ণনা মতে ২য় হিজরী) জুমুআহ্ঈদের স্বলাতের বিধান, জোহ্,’আস্ব্র্ইশার স্বলাতে দুরকাআত বৃদ্ধিকরণ।

হিজরী ২য় বছর -ক্বিব্লাহ্ পরিবর্তন(বাইতুল্মাক্বদিস্থেকে কাবার দিকে), জিহাদের বিধান, স্বদাক্বতুল্ফিত্র্‌ (ফিত্রাহ) রমাদ্ব- এর স্বওম (রোযা) এর বিধান, ‘-শূরায় স্বওম (রোযা) মুস্তাহাব হওয়ার বিধান।

হিজরী ৩য় বছর -মীরাছের বিধান (আত্নিয়তার ভিত্তিতে), মদহারামের বিধান (অন্য বর্ণনা মতে ৪র্থ/৫ম হিজরী)

হিজরী ৫ম বছর -’হিজাবের(পর্দা)বিধান, পালক সন্তানের স্ত্রীকে বিবাহ করার বৈধতার বিধান, যিনার(বেবিচার) ‘হদ্দ, ‘হদ্দে কযফ (অপবাদ দেওয়ার প্রেক্ষিতে শান্তি প্রাদান)

হিজরী ৯ম বছর -‘হাজ্জের(হজ্জ)বিধান, যাকাত খিরাজের(ভূমিকর)বিধান, ইলা তাখয়ীর (স্ত্রীকে তালাকের ইচ্ছাধিকার দেওয়া)বিধান, কাপড় পরিহিত হয়ে ত্বওয়াফের আবশ্যকীয়তার বিধান।

হিজরী ১০ বছর- মীরাছ প্রাপ্তিতে কালালা (পিতৃহীন নিঃসন্তান)-এর অধিকার প্রদান।

 

আসমানের সব ফেরেশতারা যে দুটি আমলের কারণে হযরত আবু যর গিফারী (রা:) কে চিনতেন

হযরত আবু যর গিফারী (রা:) ছিলেন বিশ্বনবীর একজন কাছের সাহাবী। তিনি বিশ্বনবীর আশেপাশে সবসময় থাকতেন বলে নিজের জন্য একটি ঘরও তৈরী করার সময় পাননি।

একদিন হযরত জিবরাইল : বিশ্বনবীকে কে বললেন, যে চাদর গায়ে দেওয়া আপনার সাহাবী, উনাকে আমি চিনি।বিশ্বনবী বললেন, তুমি কিভাবে উনাকে চিন? হযরত জিবরাইল : বললেন, শুধু আমি নই, আসমানের সব ফেরেশতারা উনাকে চিনে। বিশ্বনবী জিজ্ঞাসা করলেন কেন আসমানের সব ফেরেশতারা হযরত আবু যর গিফারীকে চিনে? তখন জিবরাইল : বললেন, উনার দুইটি আমলের কারণে আসমানের সব ফেরেশতারা উনাকে চিনে।

. “লিসসিগারীহি আলা নাফসিহিঅর্থ নিজেরে নিজে খুব ছোট মনে করে।

. “লিকাসরাতি তিলাওয়াতে সুরা ইখলাসঅর্থ বেশী বেশী সুরা ইখলাস পড়ে।

আমরা এই দুটি আমল বেশী বেশী করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

 

শায়খ ডঃ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসের জীবন কথা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা। কেমন আছেন আপনারা সবাই?

আজ আমি কাবা শরীফের প্রধান ইমাম শায়খ ডঃ আব্দুর রহমান আস-সুদাইস সর্ম্পকে কিছু জানাবো আপনাদের এবং উনার তেলাওয়াত করা পবিত্র আল-কুরআন আপনাদের শোনাবো।

তো আসুন প্রথমে আব্দুর রহমান আস-সুদাইস সর্ম্পকে কিছু জেনে নেই

সঊদি আরবের আল-ক্বাসীম এলাকার বুকাইরিয়া শহরে তার জন্ম হয় ১৩৮২ হিজরীতে। তার মানে ২০১৪ সালে তাঁর বয়েস হলো মাত্র ৫৩ বছর। তিনি ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। প্রায় ১২ বছর বয়েসে তিনি পবিত্র কোরআনের হাফিয হন। লেখাপড়া করেছেন রিয়াদে। ১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শরিয়া ফ্যাকাল্টি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

তিনি ছোট বেলার একটা ঘটনা বলতে গিয়ে খুব আবেগী হয়ে যান। ছোট বেলায় কি একটা দুষ্টুমি করেছিলেন ফলে তার মা তার ওপর রেগে যান। রেগে গিয়ে বলেনঃ তুই বের হয়ে যা, গিয়ে হারামাইনেরইমামহ।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার আম্মার এই দোয়া কবুল্ল করেছেন। তিনি কাবা শরীফের ইমাম হওয়ার আগে অনেক ছোটবড় মসজিদের ইমামতিও করেছেন।

তিনি উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তিনি শরীয়া কোর্টের বিচারপতিও ছিলেন। তাঁর এই গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি সব সময় শিক্ষকতার পেশাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে কাছে টেনে নিয়েছেন। সৌদি সরকারের অনুমোদিত জামেয়াতুল মারেফা আল-আলামিয়্যাহ (নলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর) যার শিক্ষকতায় আছেন সৌদি গ্রান্ড মুফতি, ধর্মমন্ত্রী সহ অনেক উচ্চ পদস্থ উলামায়ে কেরাম।

তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা হলো ৯টা এবং আরো টি গ্রন্থ গবেষনা পত্র প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

তিনি খুবই বিনয়ী। সব সময় সাধারণ মানুষদের কাছে থাকতে সাথে থাকতে ভালোবাসেন। তিনি এখন কাবা শরীফ মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম। কিন্তু এখনও তিনি ক্লিনারদের সাথে বসে ইফতার করতে খাবার খেতে পছন্দ করেন। তিনি সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। সবার সাথে হাসি মুখে মন খুলে কথা বলেন। খুব বিনয়ের সাথে নরম মিষ্টিস্বরে কথা বলেন। তিনি হাল্কা কৌতুক করতে চুটকি বলতে পছন্দ করেন। তবে, নামাযে দাড়ালেই কেঁদে ফেলেন।

শেখ সুদাইস একবার এক টিভি অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা ফোন করে বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি যে এক বড় বিখ্যাত শায়খ কাবা শরীফে উলংগ হয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করছেন। তিনি আমার কোন আত্মীয় নন, বা কাছের কেউ নন। কিন্তু আমি তাকে খুব ভালো করেই চিনি। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি?

তখন শেখ সুদাইস বললেনঃ সেই লোকের জন্যে সুসংবাদ, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট আছেন এবং তিনি গুনাহ থেকে মুক্ত হয়েছেন। তখন প্রশ্নকারী মহিলা বললেনঃ আমি যে শায়খকে স্বপ্ন দেখেছি তিনি হলেনআপনি’ (শায়খ সুদাইস) কথা শুনার সাথে সাথেই শায়খ সুদাইস অঝোর ধারায় কেঁদে দিলেন। 

আল্লাহ হাফেজ

 

দাম্পত্য জীবন সুখি হওয়ার উপায়!

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম


স্বামী স্ত্রী মিলে অনেকগুলো কাজ আছে। ছেলে মেয়ের লেখা পড়া,বিয়ে দেয়া,বিয়ে করানো ইত্যাদি। এই কাজগুলো আনজাম দেয়ার জন্য, দুজনের একজনকে নেতা বানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বামী হবে নেতা। কারণ স্ত্রীর তুলনায়, স্বামীর শক্তি বেশী,বুদ্ধি বেশী,ধর্মীয় ডিউটি বেশী। তাছাড়াও স্বামী তার যাবতীয় ব্যয় ভার বহন করার দায়িত্ব নিয়েছেন। কাজেই নেতৃত্ব থাকবে স্বামীর হাতে। তবে পরামর্শ হবে বিবির সাথে।
অর্থাৎ স্বামীর দুটি কাজ, নেতাগীরি নিজের হাতে। পরামর্শ বিবির সাথে।
স্ত্রীর জন্য দুটি কাজ, স্বামী কাছে থাকলেও তার মন জয় করে চলা। স্বামী দূরে থাকলেও তার মন জয় করে চলা।
স্বামী কাছে থাকলে, তার মনের গতি বুঝে কাজ করা, সে কখন কি চায়, কি তার চাহিদা এসব পূরণ করা। দূরে থাকলেও মন জয় করার পথ হলো, তার মাল,সন্তানাদি, সতিত্বকে হেফাজত করে চলা।
স্বামী আর স্ত্রী মিলে দুয়ে দুয়ে চারটি সবক যদি পালন করে অবশ্যই তাদের দাম্পত্য জীবন সুখি হবে। ইনশাল্লাহ………


সূরা,নিসার ৩৪ নং আয়াতের আলোকে মুসলিম হিসেবে যা যা আমার ব্যক্তিগত!

আসালামু আলাইকুম। আর কিছুদিন পরই দীর্ঘ  অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমাদের সামনে হাজির হবে পবিত্র রমাদান। রমাদানের পবিত্রতা আমাদের স্পর্শ করুক

ব্যক্তিগত বলে সবারই কিছু বিষয় থাকে। মুসলিম হিসেবে আমারও কিছু ব্যক্তিগত বিষয় আছে। যেগুলো আমি পরম মমতায় আগলে রাখি। যত্ন নেওয়ার সময় একটু বেশী খেয়াল রাখি। অন্তত  এই বিষয়গুলো সবসময় ঘুছিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আমি মনে করি মুসলিম হিসাবে সবার উচিত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিদিষ্ট করা। এত করে ব্যক্তিত্ববোধ পরিষ্কার হয়, নিজেকে অন্যের সামনে বয়ান ছাড়া উপস্থাপন করা যায়। আসুন আমার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই

 

পবিত্র কোরআনঃ

খুব ছোট বেলায় মকতবে গিয়ে কায়দা পড়তাম। তারপর কোরআন শরীফ নেওয়া। পড়তাম মকতবে রেখে চলে আসতাম। একটা সময় মকতবে যাওয়া বন্ধ হলো। বাসায় নিয়ম করে সকালে কোরআন পড়তাম। এই নিয়ম করে পড়ার পিছনে আমার মমতাময়ী মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তো বলেই দিয়েছেন,

أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا ١٧:٧٨

আপনি নামায কায়িম করুন সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের কুরআনে। নিশ্চয়ই ফজরের কুরআনে (দিন রাতের ফেরেশতাদের) উপস্থিতি হয়।” (আল-কুরআন, সূরাহ ইসরা, আয়াত নং ৭৮) এই আয়াতের তেলাওয়াত শুনতে চাইলে এখানে ক্লিক করে শুনতে পারেন। চমৎকার তেলায়াত। তো যখন থেকে বাসায় কোরআন পড়া শুরু তখন থেকে একটা কোরআন আমার ব্যক্তিগত হয়ে গেল। যদিও আজকে আমরা ইন্টারনেটে, মোবাইলে পবিত্র কোরআন পড়ি তবুও আমার সেই কোরআন শরীফে আমি কোরআন তেলাওয়াত করে আমি অন্যরকম একটা শান্তি পাই। আমার কোরআনের সূরাহ ইয়াসিন সূরাহ আর রাহমানের পাতাগুলো বেশীই নরম হয়ে গেছে। এই করণে মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়।

 

. জায়নামাজঃ

আমার ডেস্কে হাত দিলেই যাকে পাই সে হল এই জায়নামাজ। এটা আমাকে উদ্যত করে। মাঝে মাঝে জায়নামাজকে আমার কাছে গরম কালের পুকুর মনে হয়। যার চারপাশে অনেকগুলো বড় বড় গাছ। খালি ডুব দিতে মন চায়।

 

.মেসওয়াকঃ

আরেক মজার জিনিস। কাছে থাকলে মনে হয় আমি অন্যদের থেকে আলাদা। লটারি জিতার মত একটা একটা ব্যাপার। যদিও ইসলামে প্রত্যেকজন মুসলমানের লটারি জিতার সম্ভাবতা / মুখে দুই ডলা দিয়া নামাজ পড়লে ৭০গুণ বেশী। বিশ্বনবী বলেছেন,  ” যদি আমার উম্মতের জন্য কঠিন হওয়ার আশংকা না হত তবে আমি প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করা ওয়াজিব করে দিতাম ( বুখারী, মুসলিম ) কি জিনিসই না লুকিয়ে আছে এতে! যা থাকার থাকুন, আমি ব্যবহার করতে থাকি। বিশ্বনবী যেহেতু বলেছেন, লুকানো বিষয়টা আনন্দেরই হবে। তুচ্ছ বিষয় অথচ ইসলাম কত আন্তরিক। ভাই, তুমাগরে বুজাইতে পারলাম, ইসলাম কি জিনিস! কেনটলস্টয় Saying of prophet(PBUH) নিয়ে ঘুরতেন! এই মহামতির মৃত্যুর পর তার ওভারকোটের পকেটেও পাওয়া গিয়েছিল, Saying of prophet(PBUH). এই টলস্টল নিয়ে লিখা হয়েছে, Tolstoy : Escape from Paradise.

 

.টুপিঃ

টুপি নিয়ে একটা গল্প শেয়ার করি। একবার কি একটা কিনার জন্য বাজার গিয়েছিলাম। তখন রাত ৮টা কি ৯টা। দোকানদারের সাথে কথা চলছে। এমন সময়ে হঠাৎ দুইজন বৃদ্ধ আসলো। একজনের মাথায় টুপি আছে। অন্যজনের মাথায় টুপি নাই। যার মাথায় টুপি আছে সে, অন্যজনকে টুপি কিনতে উৎসাহ দিচ্ছে [সম্ভবত দুইজনে খুব প্রিয় কাছের বন্ধু] আমি আর হকে মত। তো টুপিওয়ালা বন্ধু টুপিছাড়া বন্ধুকে বলছে, একবার আমাদের নবীর কাছে তার এক সাহাবী এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ সা: আপনাকে আমার মাথায় নিয়ে নিয়ে ঘুরতে মন চায়! তখন রাসূল সা: বললেল, তুমি টুপি মাথায় দিয়ে ঘুরলেই আমাকে মাথায় নিয়ে ঘুরার মত হবে! দুই বন্ধু টুপি মাথায় দিয়ে হাসি মুখি চলে গেল। যেন তাদের মাথায় সত্যিই বিশ্বনবী বসে আছেন!

এই গল্পের সত্যতা কতটুকু আমি জানি না তবে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল। এই গল্প জানার আগে আমার অনেকগুলো টুপি ছিল। গল্প জানার পর  আমর টুপি একটাযাকে সবসময় সাথে রাখার চেষ্ট করি।  এই টুপিটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে অন্যতম।

. মাঃ

মায়ের কারণে আমি জন্ম থেকেই পাপী। দুনিয়াতে যখন আসছি তখন এই মানুষকে কষ্ট দিয়েই আসছি। কষ্ট দিসি এই কারণে ভালোবাসি না, অজানা কারণে ভালোবাসি মা! মা, তুমি আমার ব্যক্তিগত। সুঘ্রাণ দরকার হলে আমি মায়ের কাছে যাই অথবা বেলী ফুলের কাছে [ মা কাছে না থাকলে ] আমার কাছে,মায়ের জন্য কিছু করা সুখের সমানুপাতিক!

আরেকটা বিষয় আছে ব্যক্তিগত। এখনো আমার হয়নি, বয়স কম তো!  যদিও আমি তাকে জানি না!

ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) : নবী প্রেমের নামে ইসলামে পরিবর্তন সাধন

১২ রবিউল আউয়াল বর্তমানে এই দিনকে ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) হিসেবে পালন করা হয় এবং সবাই এই দিনকে মুসলমানদের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে জানে

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবন সংক্রান্ত আলোচনা উত্তম ইবাদত এবং তা ইমানের রুহ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা চোখের মনির দৃষ্টি স্বরুপ তাঁর জন্ম, শৈশব, যৌবন, নবুওয়াত, আহবান, জিহাদ, ত্যাগ, জিকির-ফিকির, ইবাদত নামাজ, উত্তম চরিত্র, দুনিয়া বিমুখতা খোদা ভীরুতা অর্থাৎ, তাঁর প্রত্যেকটি কাজ উম্মতের জন্য উত্তম আদর্শ হেদায়াতের ফুল স্বরুপ।
তাঁর জীবনী শিখা শিখানো এবং এর আলোচনা করা উম্মতের কর্তব্য।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবনের দুই অংশ।

) জন্ম থেকে নবুয়তের আগ পর্যন্ত

) নবুয়তের পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত

তাঁর জীবনের এই দুই অংশকে কুরআন কারীমেউত্তম আদর্শবলা হয়েছে।

তাঁর উত্তম জীবনী বর্ণনা করার দুটি পদ্ধতি।

) তাঁর উত্তম জীবনের প্রতিটি নকশা নিজের জীবনের ভিতরে বাহিরে এভাবে বাস্তবায়ন করা যে, তাকে দেখে প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দাস মনে করে।

) যেখানে সুযোগ পাওয়া যায়, সেখানেই তাঁর উত্তম কাজের আলোচনা করা। এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার চেষ্টা করা।

পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণ কখনোই সীরাতুন্নবী (সাঃ) অথবা মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর মাহফিল করেননি।

প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের প্রচলন ইসলামের প্রথম ছয় শতাব্দীতে ছিল না। এই ছয় শতাব্দীতে উম্মতে মুহাম্মদী কখনোই এই মাহফিল করেনি।

সুলতান আবু সাঈদ মুজাফ্ফর এবং আবুল খাত্তাব ইবনে ওয়াহইয়া ৬০৪ হিজরীতে সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের প্রচলন ঘটায়। যেখানে বিশেষভাবে তিনটি বিষয় ছিল।

এক. ১২ রবিউল আউয়াল মিলাদ মাহফিলের তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

দুই. আলেম-উলামা এবং নেক বান্দাদের সমাবেশ ঘটানো হয়।

তিন. মাহফিল শেষে খবার বিতরণের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রুহে ছওয়াব পৌঁছানো হয়।

উক্ত দুই ব্যক্তির ব্যাপারে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে যে, তারা কোন শ্রেণীর লোক
কোন ইতিহাসবিদ তাদেরকে ফাসেক (পাপাচারী) কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী) বলেছেন। আবার কেউ তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ বিশ্বস্ত বলেছেন।

যেই কাজ ছাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) তাবেয়ীদের জামানায় হয়নি, যেই কাজ ইসলামের প্রথম ছয় শতাব্দীতে হয়নি, বর্তমানে সেই কাজ কীভাবে ইসলামের উৎসব বলা হয় ! এবং এই বানোয়াট উৎসব পালনকারীদের কীভাবেআশেকে রাসূলবলা হয়!
আর যারা এই নবসৃষ্ট উৎসব পালন করেনা তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শত্রু মনে করা হয়!
(
নাউযুবিল্লাহ)

কথিতআশেকে রাসূলএর দল কখনো এই চিন্তা করেছে যে, ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা তো দেয়া হয়েছে আরাফাহর ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষণে এরপর কোন নবী এসে এমন একটি বিষয়কে ইসলামের উৎসব ঘোষণা দিয়েছে, যার ব্যাপারে মুসলমানগণ ছয় শতাব্দী যাবত অনবগত ছিল?

ইসলাম কি কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি যে, যখন ইচ্ছা, তখন কোন বিষয় সংযোজন করা হবে এবং যখন ইচ্ছা, তখন কোন বিষয় বিয়োজন করা হবে!

ইসলামের পূর্ববতী সম্প্রদায়গুলোর মাঝে তাদের সৎ ব্যক্তি এবং ধর্ম প্রণেতাদের মৃত্য বার্ষিকী পালন করার প্রথা ছিল যেমন, খৃস্টানরা হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিবসেঈদে মীলাদ” (জন্মদিনের আনন্দ) পালন করতো
পক্ষান্তরে, ইসলাম এর থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ইসলাম এসব প্রথা বিলুপ্ত করেছে
এক্ষেত্রে দুটি হিকমত রয়েছে

) সারা বছর যা করা হয়, এসবের সাথে ইসলাম ধর্মের আহবান এবং মৌলিক বিষয়ের কোন সম্পর্ক নেই। এবং ইসলামে এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও বলা হয়নি।

) অন্যান্য ধর্মের মত ইসলাম ধর্মে বিশেষ কোন দিবস পালনের প্রথা রাখেনি। বরং ইসলাম হল উত্তম একটি বৃক্ষ, যার ফল ছায়া সর্বক্ষণের জন্য। এব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, اكلها دائم و ظلها (অর্থঃ তার ফল ছায়া স্থায়ী)
ইসলামের আহবান নির্ধারিত কোন দিনের সাথে বিশেষিত নয় বরং তা সবসময়ের জন্য

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস পালনের প্রথা যদিও সপ্তম শতাব্দী থেকে পালিত হয়ে আসছে এবং পরবর্তীতে তাতে অনেক বিষয় যোগ করা হয়েছে, তবুও কেউ এই দিবসকেঈদনাম দেয়নি কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমার কবরকে তোমরা ঈদ বানিও না
কিন্তু কয়েক বছর যাবত এই দিনকেঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)” নামে নামকরণ করা হয়েছে

পৃথিবীর কোন্ মুসলমান জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলমানদের জন্য দুই দিনকে (ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন?

যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্মদিবসকেঈদবলা সঠিক হতো এবং ইসলামী আদর্শের সাথে কোন সম্পর্ক থাকতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই দিনকেঈদবলতেন
আর যদি তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট পছন্দনীয় হতো, তাহলে শুধু তিঁনিই না, বরং খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) তাঁর জন্মদিবসকে ঈদ মনে করে ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের আয়োজন করতেন কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আমাদের চেয়ে অধিক রাসূল প্রেমী হওয়া সত্ত্বেও এমনটি করেননি

জেনে রাখা উচিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন ৮ই রবিউল আউয়াল তবে প্রসিদ্ধ হল ১২ই রবিউল আউয়াল
কিন্তু, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যু ১২ই রবিউল আউয়াল, ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই

আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্মদিন পালন করছি এমন দিনে, যেদিন তাঁর মৃত্যুবরণ করার ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই
কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, আমরা ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করি তাঁর জন্মের কারণে, না তাঁর মৃত্যুতে খুশি হয়ে?
তখন আমরা কী উত্তর দিবো?

এই দিনকেঈদবলাটা সাধারণ কোন ব্যাপার নয় এটা ইসলাম ধর্মে পরিবর্তন সাধন কেননা, ঈদ শব্দটি ইসলামী পরিভাষা আর ব্যক্তিগত মতামতের কারণে নবসৃষ্ট কোন বিষয়ে ইসলামী পরিভাষা প্রয়োগ করাটা ইসলামে পরিবর্তন সাধন তাই, এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক

সর্বশেষ, ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা সম্পূর্ণ অপচয় এবং ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে যেসব বানোয়াট প্রথা বর্তমানে প্রচলিত, তা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী ইসলাম কখনোই এসব সমর্থন করে না
তাই, ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত

জ্ঞানের উৎস এবং ব্যাখ্যাজাফর শেখ ইদ্রীস

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। সালাত সালাম মহান রাসূল, আল্লাহর হাবীব মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ সঙ্গীদের উপর। মুসলমানদের জ্ঞানের উৎস দুটি।

§  . আল্লাহ ওহী।

§  . আল্লাহ সৃষ্টি।

এক্ষেত্রে আমরা বস্তুবাদী, নাস্তিক যারা কোন বিশ্বস্ত গ্রন্থ পায়নি তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি। তাদের জন্য একমাত্র জ্ঞানের উৎস এই পৃথিবী, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকুল।
আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কথা জানি। এই পদ্ধতি আমাদের সত্য উদঘাটনে সাহায্য করে। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি জ্ঞানের অন্য উৎস হতে সত্য উদঘাটনের জন্যও একটি পদ্ধতি আছে। সুতরাং প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করি, তেমনি পবিত্র কুরআন হাদীসের অন্তর্নিহিত জ্ঞান আহরণের জন্য একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
সুতরাং, এই দুই উৎস মুসলমানদের জ্ঞানের উৎস। কেননা আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা করে পাই, একজন মুসলমানের তা অস্বীকার করা উচিত নয়। অনেক মানুষ মনে করে শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সত্যই মুসলমানদের জন্য সত্য। তারা মনে করে যদি কোন সত্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কুরআনে এর প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু না-এটা যেমন নির্ভরযোগ্য উৎস, ওটাও নির্ভরযোগ্য উৎস। আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন প্রকৃতিতে সে ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের দরকার নেই, তেমনি আল্লাহ প্রকৃতিতে যা বর্ণনা করেছেন কুরআন হাদীসে সেই ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কখনও কখনও এটা মানুষের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে যদি আমরা কুরআনে এমন কিছু পাই যা কুরআনের অবতীর্ণকালের মানুষ জানত না এবং তা প্রায় কয়েকশ বছর পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সে কুরআন বিশ্বাস করে, এবং এই ঘটনা তার বিশ্বাস আরও সংহত করেআল্লাহ তাআলাই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তা না হলে কিভাবে মহানবী (সঃ) এর সময়কালের মানুষ বিংশ শতাব্দীর কোন ঘটনা জানতে পারবে?
সুতরাং প্রকৃতি এবং আল্লাহ তাআলার প্রেরিত ওহী্উভয়ই জ্ঞানের উৎস। বিজ্ঞান ধর্মের মধ্যে তাই কোন দ্বন্দ্ব নেই। আল্লাহ বলেছেন:

যখন তুমি ভূমিষ্ঠ হওতুমি কিছুই জানতে না… অতঃপর আল্লাহ্‌ তোমকে দৃষ্টিশক্তিশ্রবণশক্তি এবং মন দিয়েছেন।” (আননহল ৭৮)

যখন আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হলাম, আমরা কিছুই জানতাম না। তাহলে আমরা কিভাবে জ্ঞান অর্জন করব? ইন্দ্রিয় মনের সাহায্যেজ্ঞান অর্জনের অন্য কোন উপায় নেই। এমনকি কুরআনের ক্ষেত্রেও, আমরা কিভাবে কুরআনকে জানি? আমরা এটা শুনি বা পড়ি, সুতরাং আমাদের ইন্দ্রিয় ব্যবহার করতেই হয়। আমাদের যুক্তি সম্পন্ন হতে হয়, আমাদের বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন হতে হয়। অন্যথায় আমরা কিছুই বুঝব না তা সে আলাহর বাণীই হোক বা অন্য কারো।
প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণের জন্যও আমাদের এসব দরকার। সুতরাং ধর্ম বা প্রকৃতি হতে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমগুলো অভিন্ন। যদি এই দুইয়ের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন কি হবে? তখন আমরা কি করব? মনে করুন কুরআনে বা কোন প্রাথমিক হাদীসে এমন কিছু পাওয়া গেল, বৈজ্ঞানিকগণ যার বিপরীতে মত দেন। এর জবাবে বলা যায় যে, প্রকৃত দ্বন্দ্ব কখনও হতে পারে না। অন্যথায় এটা আসমানী কিতাব হতে পারে না। যদি আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তাহলে তিনি তার সৃষ্টি সম্বন্ধে জানেন। আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, কুরআন আল্লাহর বাণী। আল্লাহ অবশ্যই প্রতারক নন। তিনি সত্যবাদী। সুতরাং, তিনি একভাবে পৃথিবী তৈরি করে আমাদের অন্য কিছু বলবেনতা হতে পারে না। যদি আমরা এমন কিছু নিশ্চিতভাবে জানি এবং কেউ বলে যে, আল্লাহ অন্য কথা বলেছেন, আমরা বলব না সত্য হতে পারে না।
এই কারণে কিছু বিজ্ঞ খ্রিস্টান বাইবেল বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য এই দুইয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বাইবেল আল্লাহ তাআলার বাণী হতে পারে না, অন্তত পক্ষে সম্পূর্ণটা নয়। একটা উদাহরণের কথা মনে পড়ছে। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচারীরা বলে যে মৌলবাদীরা বিশ্বাস করে বাইবেলে একটি আয়াত আছে যেখানে বলা হয়েছে খরগোশ চিবিয়ে খায়। তারা বলে যে, এটা সত্য নয়। আমরা জানি যে, খরগোশ চিবায় না, কিন্তু সে মুখ এমনভাবে নাড়ায় যে সাধারণ কেউ সহজেই বলবে যে, খরগোশ উটের মত চিবায়। সুতরাং, আল্লাহ খরগোশ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি ভালোভাবেই জানেন খরগোশ কি করে। যদি কেউ বলে যে আল্লাহ কথা বলেছেন, এর মানে এই দাঁড়ায় যে আল্লাহ সম্পর্কে জানেন না। সুতরাং এটা হতে পারে না। অতএব বাইবেল আল্লাহর বাণী নয়।
সুতরাং, প্রথম কথা হচ্ছে আল্লাহর বাণী বিজ্ঞানের মাঝে প্রকৃত দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। যদি আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, এটা আল্লাহ তাআলার বা রাসূলের বাণী বা এটা আল্লাহ তাআলার বা তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অর্থ এবং আমরা যদি নিশ্চিতভাবে জানি এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য প্রমাণিত, তাহলে এই দুইয়ের মাঝে প্রকৃত কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। অর্থাৎ দ্বন্দ্বটা আপাতঃ হতে পারে।
আমি এখন ব্যাপারে ইবন তাইমিয়া বক্তব্য পেশ করছি। তিনি বলেছেন, বিশ্বাস এবং যুক্ত্তিযুক্তির পরিবর্তে আমি বিজ্ঞান বলছি কেননা তাদের জন্য এটা সহজে বোধগম্য। এখন আমি তোমাদের অন্য একটি প্রশ্ন করছি যেটা তোমাদের জন্য সহজ হবে। মনে কর আমরা নিশ্চিতভাবে কোন হাদীস জানি এবং এর অর্থও। কিন্তু অন্যদিকে কোন বৈজ্ঞানিকের সূত্র, কোন প্রমাণিত সত্য নয়। কোনটি তুমি গ্রহণ করবে। অবশ্যই প্রথমটি।
এখন এটা অন্যভাবে চিন্তা কর। মনে কর, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে প্রমাণিত কিন্তু হাদীসে এর কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেইতুমি কোনটি পছন্দ করবে? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকে গ্রহণ করব (হাদীসের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দুটি শর্তের একটি এটা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছ্ছেবিশ্বস্ততা অর্থের স্বচ্ছতা) মনে কর, হাদীসের প্রমাণ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত কিন্তু এর অর্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই, তখন আমরা কি করব? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকেই গ্রহণ করব এবং প্রামাণ্য হাদীসটির অর্থ অনুধাবনে একে ব্যবহার করব। তাই তিনি বলেছেন, আমরা সেটিই গ্রহণ করব যা প্রমাণিত, নির্দিষ্ট, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।
ঐশী বাণী বা সৃষ্টি বা বিজ্ঞান যেটাই হোক না কেন, আমরা সন্দেহ থেকে নিশ্চিতকেই গ্রহণ করব। তারপর তিনি (তাইমিয়া) তৃতীয় প্রশ্ন করেছেন। যখন দুইয়ের মাঝে কোনটিই নিশ্চিত নয়, তখন আমরা কি করব? আমরা হাদীসটির প্রামাণ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই আবার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত নই। তখন আমরা কি করব? আমরা অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে অধিক সাক্ষ্য রয়েছে। আমি জানি যে, এটা বিচার করা কঠিন। তাই আমরা বলব আমরা জানি না, আর যদি বলতেই হয় তাহলে আমরা সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে বেশী সাক্ষ্য রয়েছে।
মুসলমানদের কুরআন সম্পর্কে মতামত, কুরআন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, একজন বিজ্ঞানীর প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির মতই। মনে কর, বিজ্ঞানীগণ একটি নিশ্চিত তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি এমন একটি জিনিস আবিষ্কার করলেন যা পূর্বের বিপরীত। তখন তিনি কি করেন? তিনি কি বলেন যে প্রকৃতি এই বৈপরীত্য ধারণ করে? সুতরাং গবেষণার দরকার নেই?
তিনি কি করেন? তিনি তার অন্তের কি বিশ্বাস করেন? তিনি কেন গবেষণা চালিয়ে যান? কারণ তিনি মনে করেন যে তিনি এর সমাধান করতে পারবেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃতিতে কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। কুরআনের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং যখন কুরআনের একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের বিরোধিতা করে বলে মনে হলে হতাশ হওয়া যাবে না। শয়তানকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই দ্বন্দ্বটা সাময়িক।
উদাহরণস্বরূপ, আমার স্কুলের একটি ঘটনা মনে পড়ে। একদিন শিক্ষক বললেন, প্রথম ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয় স্বাভাবিক উচ্চতার কোন স্থানে। পরবর্তীতে কিছু বিজ্ঞানী পাহাড় বা উঁচু এলাকায় আরও কম তাপমাত্রায় পানি ফুটানো যায়্এই তথ্য উদ্ভাবন করেছিলেন। তারা বলেননি যে পানির দুই ধর্মই আছে। তারা গবেষণা চালিয়ে গেছেন এবং পরবর্তীতে তাপমাত্রা চাপের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন।
একই ব্যাপার প্রযোজ্য কুরআনের বেলায়। যখন আয়াতের অর্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়, বুঝতে হবে যে, এটা তোমার অজ্ঞতা। এটা নিশ্চিত যে কুরআনের দুই আয়াতের অর্থে বা কোন সহীহ হাদীসের অর্থে বৈপরীত্য থাকতে পারে না। বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র স্বতন্ত্র বাসব্ত ঘটনার উপর নির্ভর করে না, তাদের রয়েছে বিভিন্ন থিওরি বা সূত্র। অনুরূপ আমাদের আছে ফিক্হ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হুকুম জানলেই কেবল একজনকে ফকীহ বলা হয় না। ফকীহ হচ্ছেন তিনি যিনি ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখেন, ধর্মীয় আইন জানেন, একজন ফকীহ এসব ঘটনা পবিত্র কুরআন সহীহ হাদীসের আলোকে বা কুরআন হাদীসের অনুসরণ করে উলামা সমপ্রদায়ের মত দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। এটাই উসুল-আল-ফিকহএর মধ্যে আমরা পাই।
এবার সেই পদ্ধতি প্রসঙ্গে আসি, যাকে আমি বলব (কুরআন হাদীস থেকে অর্থ বের করার) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কুরআন হাদীসের প্রকৃত অর্থ জানার উপায় কি?

§  প্রথমতঃ ভাষা। ঐশী বাণী এবং সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সৃষ্টি বস্তুবিশেষ। সুতরাং সৃষ্টি সম্পর্কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে পর্যবেক্ষণ। আমরা এগুলো দেখি বা শুনি। কিন্তু ঐশী বাণীর ক্ষেত্রে আমরা শব্দ পাই এবং এসব বাণী বা বাক্যগুলো বুঝতে হলে আমাদের ভাষা বুঝতে হবে। কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এটা বারবার বলেছেন যাতে কেউ কুরআনকে এমনভাবে ব্যাখ্যা না করে যাতে আরবী ভাষার সাথে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।সুতরাং কুরআন ভালভাবে বোঝার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে আরবী ভাষা বোঝা। এটা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় যারা অনুবাদের উপর নির্ভর করে কেননা অনুবাদ তো করা হয়েছে আরবী ভাষা বোঝার উপর নির্ভর করেই। আরবী ভাষা জানা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় যারা সরাসরি কুরআন থেকে জ্ঞান আহরণ করতে চায়। অন্যথায় আরবীভাষী জনগণও সরাসরি কুরআন বুঝতে পারবে না, তাদেরকে উলামা সমপ্রদায়ের উপর নির্ভর করতে হয় কেননা কুরআনে ব্যবহৃত আরবী এবং বর্তমানে প্রচলিত আরবী এক নয়। আমি আরবী বলতে পারি, কিন্তু আমাকে তাফসীর পড়তে হয়। এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো বর্তমানে আরবীভাষী জনগণের পরিচিত নয়্এসব শব্দের অর্থ জানতে তাদের ডিকশনারী বা ভাষ্যকারের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়কালের আরবী ভাষায়। আমরা যারা আধুনিক আরবী বলি তারা এমন অনেক ভুল করি যা কুরআনের অনুবাদ যারা পড়ে তারা ভুল করে না। কেন? কারণ কিছু শব্দ বর্তমানে নতুন অর্থ পেয়েছে, রাসূল (সঃ) এর সময়ে এসব শব্দের অর্থ এরকম ছিল না। ফলস্বরূপ, আমরা যারা কুরআন পড়ি, তারা কুরআনের নতুন অর্থ করি, যা মূল অর্থ হতে ভিন্ন।সুতরাং কুরআনের অর্থ ব্যাখ্যা করতে হবে রাসূল (সঃ) এর সময়কার আরবী ভাষায়। যারা কুরআনের ভুল অর্থ করেন তারা এই প্রথম শর্ত ভঙ্গ করেন। যদি তুমি কুরআনকে বিকৃত করতে চাও তোমাকে আরবী ভাষা পরিবর্তন করতে হবে। অনেক মুতাসাওয়িফা, কোন কোন মুতাযিলা এমনকি কিছু তথাকথিত আধুনিক মানুষ পাশ্চাত্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কুরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই শর্ত ভঙ্গ করেন।

§  দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে তাফসিরুন নাসি বিন নাস নাস হচ্ছে একটি বক্তব্য। আরবী ভাষা জানার পর কুরআনের মাধ্যমেই কুরআনের বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করতে হবে যেমনটি আরবীতে বলা হয়ে থাকে ইয়ুফাসিরু বাদুহু বাদানঅর্থাৎ কুরআন নিজেই এর ব্যাখ্যাস্বরূপ। তাই কোন আয়াতে সাধারণভাবে কোন কিছু উল্লেখ করা হলে অন্য আয়াতে এর বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। একই কথা প্রযোজ্য হযরত মুহম্মদ (সঃএর হাদীসের ক্ষেত্রেও। আমরা কুরআনের ব্যাখ্যা করব হাদীসের আলোকে কেননা কুরআনে বলা হয়েছে যেহযরত মুহম্মদ (সঃএর কাজ হচ্ছে কুরআনের ব্যাখ্য করাযা কিনা কুরআনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। সুতরাং হযরত মুহম্মদ(সঃযা করেছেনকুরআনে অনত্ত পক্ষে তার অনুমতি রয়েছে। তাই কেউ যদি হযরত মুহম্মদ (সঃকরেছেন এমন কোন কাজ কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবী করে তবে তা অগ্রহণযোগ্য। অতএব আমরা কুরআনকে ব্যাখ্যা করব কুরআনের আলোকেকুরআনকে ব্যাখ্যা করব হাদীসের আলোকে। আমরা রাসূলের সুন্নাহ ব্যাখ্যা করব তার সুন্নাহর আলোকে।

§  তৃতীয় প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে সাহাবীদের বক্তব্য, তাঁদের ব্যাখ্যাসমূহ ভালভাবে বোঝা। তাঁরা সবিশেষ মর্যাদার অধিকারী-কারণ এই নয় যে আমরা বিশ্বাস করি তারা নিষ্পাপ বরং তাঁদের মর্যাদার কারণগুলো হল: প্রথমত, কুরআনের ভাষা ছিল সেই ভাষা, যে ভাষায় তাঁরা কথা বলতেন, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের লোকদের থেকে তাঁরা কুরআন বেশী ভালভাবে বুঝতেন। দ্বিতীয়ত, তাঁরা হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর সাথে বাস করতেন। তাঁরা কুরআনের অবতীর্ণ হওয়ার সময়, ঘটনা উপলক্ষ জানতেন। তৃতীয়ত, তাঁরা সরাসরি হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

§  চতুর্থত, তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান। তাঁরা নবীরাসূলের মত ছিলেন না, তারা অভ্রান্ত ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা মুসলিম জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আমরা জানি নিশ্চিত না হয়ে তাঁরা কোন আয়াতের ব্যাখ্যা দিতেন না। যদি নিশ্চিত না হতেন তাহলে বলতেন আমি নিশ্চিত নই” , না হলে বলতেন আমার মনে হয় এই আয়াতের ব্যাখ্যা এরূপ

§  যদি কোন নিশ্চিত ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আয়াতের বা হাদীসের ব্যাখ্যায় ইজমাগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রয়েছে কিয়াস। কিয়াস কুরআন থেকে সরাসরি গৃহীত কোন দলিল নয়, বরং যেসব ব্যাপারে কুরআনে সরাসরি নির্দেশ নেই, সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার হুকুম জানার পদ্ধতি। কিয়াস-শব্দটির অর্থের ব্যাখ্যা এরূপ- আমরা কুরআন হাদীস থেকে জানি যে, ‘এর ক্ষেত্রে নির্দেশ’, এখন আমরাখুঁজে পেলাম যাএর মত। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ‘এর ক্ষেত্রেও নির্দেশ এটাই কিয়াস।

§  ষষ্ঠ প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। যে কেউ এমনকি যদি সে মুসলমান নাও হয়, সে ভাষা রপ্ত করতে পারে, সে হাদীস এবং কুরআনের আয়াতসমূহ শিখতে পারে, মুখস্থ করতে পারে, সে এসব আয়াতের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা বুঝতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রকৃত জ্ঞান দিবেন না- যে জ্ঞান একজন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, তিনি তাকে হিদায়াত দিবেন না যদি না তার ইখলাস থাকে।

আমরা কুরআন হাদীসের জ্ঞান আহরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমরা আরবী শিখব, আমরা চিন্তা করব, কুরআন তেলাওয়াত করব, যত বেশী সম্ভব হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর হাদীস পড়ব, সাহাবাদের জীবনী পড়ব। সুতরাং আমরা সবকিছু করব, কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করতে হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য, আমাদের বিশ্বস্ত হতে হবে তাঁর প্রতি। ইবনে তাইমিয়া বলেছেন:

আমি একটি আয়াতের একশত তাফসীর পড়িএরপর মসজিদে যাই এবং বলি, “ইয়া মুআল্লিমুল খালিলী আলিমনী” অর্থাৎহে খলীলের (ইব্রাহীম ()) শিক্ষকআমাকে শেখান।

এভাবেই আমাদের উলামা সমপ্রদায় বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন। তাঁরা শুধু হাদীস কুরআন মুখস্থ করেননি, তাঁরা শুধু স্বতন্ত্র বিষয়গুলো সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করেননিবরং আল্লাহ্তাআলা তাঁদের দিয়েছেন ফিকহ্কুরআন হাদীসের গভীর জ্ঞান।

“100 Year Of Silk Letter” রেশমী রুমাল আন্দোলন পেরিয়ে গেল একশটি বছর!

রেশমী রুমাল আন্দোলন পেরিয়ে গেল একশটি বছর!

যার নেতৃত্বে ছিলেন শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দি রহঃ-

ব্যবসা-হ্যাঁ, ব্যবসার জন্যই এসেছিল ইংরেজরা। সবাই, এমনকি বিলাসিতায় মত্ত থাকা তৎকালীন মোগল সম্রাটরাও জানত ইংরেজদের ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্যবসার জন্যই এসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেল এটা ছিল ইংরেজদের প্রতারণা। ব্যবসার আড়ালে মূলত তারা এসেছিল ভারতের শাষণক্ষমতা দখলের জন্য। এক পর্যায়ে তারা মুসলমানদের কাছ থেকে শাসনক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। ক্ষমতার মসনদে বসে ইংরেজরা এদেশে শোষণ নিপীড়নের শাসন চালাতে থাকে। ইংরেজদের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে বিক্ষিপ্ত কিছু বিদ্রোহ হয়। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ ইংরেজদের উড়ে এসে জুড়ে বসা দুঃশাসনকে অগত্যা মেনে নেয়। কিন্তু চিরস্বাধীনতাকামী আলেম সমাজ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার নিরবচ্ছিন্ন মেহনত চালিয়ে যান। রেশমী রুমাল আন্দোলন তারই একটি অংশ।  আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে ছিলেন শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান রহঃ।

মাওলানা মাহমুদুল হাসান ১৮৫১ সালে বেরেলীতে এক বিদ্বান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা জুলফিকার আলী সরকারী শিক্ষা বিভাগের ডেপুটি ইন্সপেক্টর ছিলেন। মাওলানা মাহমুদুল হাসান, চাচা মাওলানা মাহতাব আলীর নিকট হতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৬৬ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হলে তাকে সেখানে ভর্তি করানো হয়। তিনি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের প্রথম ছাত্র। লেখাপড়া শেষে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার মহান পেশার মাধ্যমে তিনি স্বাদীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত একদল ছাত্র গড়ে তুলেন। তিনি ১৯০৯ সালে তাঁর একনিষ্ঠ শিষ্য স্বাধীনচেতা মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে জমিয়াতুল আনসার নামক এক সংগঠনের পতাকাতলে সকল ছাত্রকে সমবেত করার নির্দেশ দেন। এরপর ভারতকে বৃটিশ আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য শাইখুল হিন্দ রহঃআজাদ হিন্দ মিশননামে একটি বিপ্লবী পরিষদ গড়ে তুলেন। একটি চুড়ান্ত বিপ্লবের মাধ্যমে ইংরেজদেরকে এদেশের  মাটি থেকে বিতাড়িত করাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।  তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে আন্দোলন শুরু করেন। যা ইতিহাসে “রেশমী রুমালআন্দোলন নামে সমধিক পরিচিত। উল্লেখ্য, এটাই ছিল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ছিল ইংল্যান্ড তাদের মিত্র শক্তি ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া, বেলজিয়াম জাপান। অপরদিকে কেন্দ্রিয় শক্তি হিসেবে তাদের বিপরীতে ছিল জার্মান, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি তুরস্ক। সময় শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান রহঃ তুর্কী আফগান সরকারের সাথে এই ঐক্যমতে উপনীত হন যে, তুর্কী বাহিনী নির্ধারিত সময়ে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে এসে বৃটিশ-ভারতে আক্রমন করবে এবং একই সময় ভারতবাসীও একযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। এভাবে বৃটিশদেরকে উৎখাত করে তুর্কী বাহিনী বিপ্লবী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় আক্রমনের জন্য নির্ধারিত তারিখটি হবে ১৯১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী। সময় ইংরেজ সরকার বেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রাজনৈতিক নেতাদের ধর-পাকড় শুরু হয়। মাওলানা  মুহাম্মদ আলী জওহার, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ মাওলানা শওকত আলী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ গ্রেফতার হলে শাইখুল হিন্দ তাঁর শিষ্য মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে কাবুল চলে যেতে বলেন। আর তিনি নিজে রওনা হন হিজাজের পথে। হিজাজ তখন ছিল তুরস্কের শাসনাধীন। শাইখুল হিন্দ তার পরিকল্পনা নিয়ে হিজাজের গভর্নর গালিব পাশার সাথে কথা বলেন। এরপর মদীনায় তুরস্কের যুদ্ধমন্ত্রী আনোয়ার পাশার সাথে তার বৈঠক হয়। উভয়ের মাঝে সর্বাত্মক সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শাইখুল হিন্দ আনোয়ার পাশাকে দিয়ে আফগান সরকারের উদ্দেশ্যে পত্র লিখিয়ে নেন। তাতে লেখা ছিল আফগান সরকারের সম্মতি থাকলে ১৯১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী তুর্কী বাহিনী আফগান সীমান্তের মধ্য দিয়ে বৃটিশ-ভারত আক্রমণ করবে এবং সাথে সাথে ভারতের অভ্যন্তরেও বিদ্রোহ ঘটাবে। পত্রটি আফগানিস্তানে অবস্থানরত মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর কাছে পৌঁছানো হয়। তার নেতৃত্বে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ পত্রটি নিয়ে আফগান বাদশাহ হাবিবুল্লাহ্ সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইংরেজদের কাছে নতজানু হওয়ার কারণে বাদশাহ হাবিবুল্লা বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করলেন না। তবে পরিস্থিতির চাপে তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন। মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী আমীর নাসরুল্লাহ খান চুক্তির বিষয়বস্তু ভারত আক্রমনেলর তারিখ আরবীতে রূপান্তর করেন। এরপর একজন দক্ষ কারিগর দ্বারা একটি রেশমী রুমালের গায়ে সেই আরবী ভাষ্য সুতার সাহয্যে অংকিত করে মক্কায় অবস্থানরত শাইখুল হিন্দ রহঃ এর নিকট পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যাতে বৃটিশ বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খবরটি নির্বিঘ্নে পৌঁছানো যায়। একজন কাপড় ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সিন্ধুর শাইখ আবদুর রহীমের নিকট রেশমী রুমালরূপী পত্রটি পৌঁছানো হয়। যাতে হজ্জে গিয়ে তিনি তা শাইখুল হিন্দ রহঃ এর হাতে পৌছে দেন। অপর দিকে বাদশাহ হাবীবুল্লাহ বিরাট অংকের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এসব গোপন তথ্য ইংরেজদের সরবরাহ করে। ফলে গোয়েন্দা পুলিশ শাইখ আব্দুর রহীমের বাড়ি তল্লাশী চালিয়ে রেশমী রুমালরূপী পত্রটি উদ্ধার করে। ইংরেজ বিরোধী গোপন তৎপরতার কথা ফাঁস হয়ে যায়। শুরু হয় নেতাকর্মীদের ধর-পাকড়। ইতিমধ্যে ইংরেজদের মদদপুষ্ট শরীফ হুসাইন হিজাজে তুর্কী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। গালিব পাশা, শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সহযোগী মাওলানা উযাইর গুল, মাওলানা ওয়াহীদ আহমদ মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীকে গ্রেফতার করা হয়। ইংরেজরা শাইখুল হিন্দ রহঃ-কে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত রেকর্ডপত্র না থাকায় তারা আপোষহীন স্বাধীনতা সংগ্রামী এই নেতাকে ভূমধ্য সাগরীয় দ্বীপ মাল্টায় নির্বাসনে প্রেরণ করে। স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের চুড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো প্রেরণের জন্য রেশমী রুশালকে মাধ্যম বানানোর কারণেই ঘটনাটি ইতিহাসেরেশমী রুমালআন্দোল নামে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে।রেশমী রুমালআন্দোলন হয়েছিল ১৩৩৪ হিজরী সালে (১৯১৬ ইং সালে) ১৩৩৪ থেকে ১৪৩৪ পেরিয়ে গেল একশটি বছর। শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ভারত সরকার গত ১১ জানুয়ারীরেশমী রুমালআন্দোলনের উপর ডাকটিকেট প্রকাশ করে। এতে দারুল উলুম দেওবন্দে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাজধানী দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত ডাক-টিকেট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি বলেন, স্বাধিনতার জন্য শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর আত্মত্যাগের ইতিহাস নতুন জেনারেশনকে অবশ্যয়ই জানতে হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য আনওয়ারুর রহমান। তিনি বলেন, আজ শাইখুল হিন্দ রহঃ এর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের সাথে সাথে মূলত দারুলউলুম দেওবন্দের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হলো। তথ্যমন্ত্রী শ্রী কপিল সিবাল বলেন, আমাদের স্মরণ রাখাউচিত, মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দীই মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীকে মহাত্মা উপাধি প্রদান করেছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান মাওলানা কারী মুহাম্মাদ উসমান মানসূরপুরী আল্লাহ্ শুকরিয় আদায় করে বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের মুজাহিদদের স্মরণ করা হয়েছে এবং স্বধীনতা আন্দেলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেশমী রুমাল আন্দোলনের উপর ডাক-টিকেট প্রকাশ করে তা স্বীকৃতি প্রদান করা হলো। তিনি আরও বলেন, যদি রেশমী রুমাল আন্দোলন সফল হতো তাহলে ভারত তিরিশ বছর পূর্বে স্বাধীন হতো। উত্তর খন্ডের গভর্নর . আজীজ কুরইশী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে উলামায়ে দেওবন্দের অবদানকে সিলেবাসভুক্ত করা উচিত। তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তাদের যোগ্য আসন দান করা হয়নি। ভারত দেরীতে হলেও বৃটিশ খেদাও আন্দোলনে উলামায়ে দেওবন্দের অবদানকে স্বীকৃতি দিল। আর আমরা? এদেশে কখনো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল সেকথা আমরা একদম ভুলে গেছি। নাকি পরিকল্পিতভাবে ভোলানো হচ্ছে?

ভয় সাহস-২১ জন সাহসী ব্যক্তির উদাহরণ

আবু হুরাইরা বর্ণনা করেন, “একজন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা একজন শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় (মুসলিম)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শই দুয়া করতেন, “ইয়া আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা দুঃখবোধ থেকে; উদাসীনতা অলসতা  থেকে;  কাপুরুষতা, কৃপণতা এবং বার্ধক্যের চরম পর্যায় থেকে, এবং আরও আশ্রয় চাই কবরের আযাব হতে’ (বুখারী-মুসলিম)

লক্ষ্য করুন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে গিয়ে  দুশ্চিন্তা এবং দুঃখবোধ দুটি বিষয়কে একত্রিত করেছেন। দুশ্চিন্তা হচ্ছে এমন কিছুর কারণে ভীত হওয়া যা এখনো আসেনি, ভবিষ্যতে আসতে পারে, আর দুঃখবোধ হচ্ছে অতীতে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা, যা চলে গেছে তার কারণে মন খারাপ করে থাকা, বিষণ্ণতা। কাজেই, একজন মুসলিম সে বিষন্ন হতে পারে না, হোক সে ঘটনা অতীতের কোন কিছু কিংবা ভবিষ্যতের।  এবং তিনি আরও একত্রিত করেছেন, উদাসীনতা অলসতাকে। কারণ, উদাসীনতা হচ্ছে মানসিক অকর্মণ্যতা, আর অলসতা হচ্ছে দৈহিক অকর্মণ্যতা।  তিনি একত্রিত করেছেন, কৃপণতা কাপুরুষতাকে; কৃপণতা হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সংকীর্ণতা অনুভব করা, আর কাপুরষতা হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে, নিজের আত্মাকে বিলিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সংকীর্ণতা অনুভব করা।

 

কিভাবে ভয়কে জয় করবেনঃ

কাপুরুষতা হচ্ছে সাহসিকতার বিপরীত। সাহসিকতা হচ্ছে অন্তরের দৃঢ়তা। আর মানুষের অন্তর বা কলব হচ্ছে সকল ভালো কাজের উৎস, আর অন্তর দৃঢ় থাকতে পারে না যদি মন সুস্থ না থাকে। যদি অন্তর দুর্বল হয় তাহলে এটা কাপুরুষতার দিকে নিয়ে যায়, আর যদি অন্তর বেশি কঠিন হয় তাহলে তা মানুষকে বেপরোয়া করে তুলে।

কাপুরুষদের কাপুরুষিতা দূর করার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হল ভয়ের কারণকে দূর করা। কি কারণে সে ভীত, সেই কারণকে খুঁজে বের করে তা দূর করা। যদি ভয়ের কারণ হয় অজ্ঞতা, তাহলে অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে ইলম অর্জন করা। যদি অজানা কোন কিছুর ভয়ে কেউ ভীত হয়, তাহলে তা দূর করার উপায় হচ্ছে সেই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করা, অজানা বিষয়কে বা পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, ফলে সে বিষয়টি আর নতুন বা অজানা থাকে না।

আমরা দেখেছি, জনতার সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুরুর দিকে অনেকেই একটি ভীতিতে আক্রান্ত হন, কিন্তু বার বার এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মাধ্যমে এই অজানা ভীতি দূর হয়ে যায়। অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই অজানা বিষয়ের ভীতির প্রতিষেধক। আমরা দেখেছি, যখন কোন একজন ব্যক্তি প্রথমবারের মত রাজা বা প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত করে, তারা সেই আয়োজনকে ভয় পায়, তাদের জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসে, এবং বডি ল্যাংগুয়েজ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, একটি অজানা নতুন পরিস্থিতির কারণে উদ্বিগ্নতা। কিন্তু, যদি সেই ঘটনাটি বারবার ঘটতে থাকে তাহলে সেই বিষয় থেকে ভয় চলে যায়। মানুষের অরিজিনাল স্বভাব বা ন্যাচার পরিবর্তন করা সম্ভব।

প্রমাণ হিসেবে এই উদাহরণটিই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি যে, একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু (সার্কাস বা অন্যান্য ট্রেনিং যেখানে সাপের খেলা দেখানো হয়) একটি বড় সাপ দেখে ভয় পায় না, কিন্ত  একজন সাহসী যুবকও ভয় পেতে পারে, আবার সেই একই শিশুটি হয়তো একটি ব্যাং দেখে ভয় পেতে পারে, কারণ সে এভাবে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ নয়। সে হয়তো আগে কখনো ব্যাং দেখেনি। অরিজিনাল ন্যাচার বা আদি স্বভাব পরিবর্তনের একটি ভালো উদাহরণ হলো, বন্য পশুকে পোষ মানানো, বন্য পশুকে পোষ মানানোর মাধ্যমে তার স্বাভাবিক ন্যাচারকে পরিবর্তন করা যায়, এর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। একটা নেকড়ে ভেড়ার সাথে খেলা করতে পারে, বিড়াল পারে ইদুরের সাথে খেলতে, কুকুর বিড়াল একসাথে থাকতে পারে; যদি তাদের স্বভাবের বিপরীতে তারা আচরণ করতে পারে, অথচ এগুলো তো তাদের আদি স্বভাবের বিপরীত !

এখন, একটা পশু যদি তার নিজের স্বভাব প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে মানুষ কেন পারবে না?

একটি দৃঢ়চেতা অন্তর বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়। আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘কিভাবে আপনি আপনার শত্রুদের পরাজিত করেন?’ তিনি বলেছিলেন, ‘যখন আমি আমার শত্রুর সাথে মোকাবেলা করি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে নেই যে, আমিই তাকে পরাজিত করবআর যখন সেও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, আমি তাকে পরাজিত করব, তখন আমার এবং তার উভয় সত্তা আমাকে সাহায্য করে, তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করতে  ’

কেউ কেউ এই উপদেশ দিয়ে থাকেন, ‘বিজয়ের উপর বিশ্বাস রাখ, তুমিই হবে বিজয়ী

অন্যেরা বলেন, ‘তুমি যদি তোমার শত্রুকে ভয় পাও, তাহলে তুমি নিজেই তোমার অন্তরে এক বিশাল বাহিনীকে অনুপ্রবেশ করিয়ে দিলে

আমরা দেখেছি, যারা নিজেদের সাহসিকতার কারণে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের থেকে যারা ভয়ের কারণে মৃত্যু বরণ করেছে তাদের সংখ্যাই বেশি

আল তারতুসী বলেন, সাহস তিন প্রকার;

- এমন ব্যক্তি যে বিপক্ষ দলের সামনে দাঁড়িয়ে আহবান করে একজন প্রতিপক্ষের জন্য যে বের হয়ে আসবে এবং তাঁর সাথে লড়বে।

এমন ব্যক্তি যে শান্ত থাকে, মনোযোগী থাকে, প্রশান্ত থাকে যখন যুদ্ধ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। আর যখন বাকিদেরকে ভয় গ্রাস করে নেয়, তখনো সে তার অবস্থান হারায় না, দ্বিধাগ্রস্ত হয় না, এবং এমনভাবে আচরণ করে যা প্রমাণ করে সে নিজের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

এমন ব্যক্তি যখন সে দেখে বাকি সবাই পরাজিত হয়েছে, এবং পিছু হটছে, তখন সে দৃঢ় থাকে এবং তাদেরকে আহবান করে, তাদেরকে উৎসাহ দেয় এবং লড়াই চালিয়ে যেতে বলে।

আল তারতুসী বলেন, তৃতীয় ব্যক্তিই হল সবার চেয়ে বেশি সাহসী।

মূলঃ শাইখ ইবন নুহাস(মৃত্যু ৮১৪ হিজরী) এর মাশারী আল আশউয়াক্ব ইলা মাশারী আল-উশাক্ব ,
অধ্যায় ১৫

এই উম্মতের সাহসী ব্যক্তিদের উদাহরণ

c2a9tree-silhouette-by-cherie-roe-dirksen

 

এই উম্মতের  ২১ জন সাহসী ব্যক্তিদের উদাহরণঃ

মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সাহসী ব্যক্তি হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সবচেয়ে সাহসী অন্তরের মানুষ ছিলেন, সবচেয়ে কঠিন অবস্থাগুলো তিনি মোকাবেলা করেছেন। যখন তিনি দৃঢ়তা প্রদর্শন করতেন এরপর তার পাশে এসে অন্যান্য বীর যোদ্ধারা দাঁড়াত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে কখনো পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি।

২২৬ বুখারী এবং মুসলিমে আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল লোকদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ছিলেন সবার চেয়ে বেশি দয়ালু এবং সবার চেয়ে বেশি সাহসী
২২৭ আলী রা) বলেন, ‘যখন যুদ্ধের ময়দানে লড়াই ভয়াবহ আকার ধারণ করতো এবং এর চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যেত, চোখ লাল হয়ে যেত (ময়দানের ধূলাবালির কারণে) তখন আমরা এসে রাসূলুল্লাহর পিছনে আশ্রয় নিতাম। আমাদের মধ্যে তিনিই শত্রুদের সবচেয়ে নিকটে থাকতেন (মুসলিম) ’

২২৮- এক ব্যক্তি বারাহ বিন আযিবকে প্রশ্ন করলো, ‘ কখনো কি আপনি ময়দান থেকে পলায়ন করেছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ে?” তিনি বলেন, ‘আমরা করেছি, কিন্তু তিনি করেননি’ (বুখারী,মুসলিম)
উহুদের দিনে, উবাই বিন খালাফ, ঘোড়ায় চড়ে, রাসূল সা) এর দিকে আক্রমণ করতে আসল, হাতে বর্শা নিয়ে। কিছু মুসলিম উঠে দাঁড়াতে চাইলেন তাকে প্রতিরোধ করার জন্য, কিন্তু রা সা) সবাইকে বারণ করলেন, বললেন, সরে যাও। রাসূল সা) একটি বর্শা উঠিয়ে নিলেন, এবং সেটা উবাই এর দিকে ছুঁড়ে মারলেন, যে পা থেকে মাথা পর্যন্ত লোহার বর্মে ঢাকা ছিল। তার চোখ এবং ঘাড়ের দিকের একটি ছোট্ট অংশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আর ঘাড়ের ঠিক সেখানেই বর্শাটি আঘাত করে গেল এবং সে ঘোড়া থেকে পড়ে গেল। যদিও বর্ম পড়ে থাকার কারণে খুব সামান্য একটা আঁচড়ের বেশি আঘাত লাগেনিকিন্তু সে ষাঁড়ের মত চেঁচাতে লাগল এবং বলতে লাগল, ‘মুহাম্মাদ আমাকে মেরে ফেলল!’ কুরাইশের লোকেরা তাকে পরীক্ষা করে দেখল, এবং বলল, ‘ আমরা কোন বড় আঘাত দেখতে পেলাম না। তুমি ঠিক হয়ে যাবে! সে বলল, ‘মুহাম্মাদ বলেছিল, সে আমাকে হত্যা করবে, কাজেই এটা সত্যি হবেই!’, পরে সে ফিরতি পথে মক্কার পথে মারা যায়।

এই উম্মাহর সাহসী ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক, এই লিস্টের উপরের দিকে যারা আছেন, তারা হলেন সাহাবা, যাদের প্রশংসা আল্লাহ কুরআনে করেছেন :


আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল সূরা ফাতাহ ২৯
এই উম্মতের বিখ্যাত সাহসী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আছেনঃ

 

 

আবু বকরঃ

আবু বকরের সাহসিকতার সাক্ষী এই উম্মতের আরেক বীর, আলি ইবন আবি তালিব। যখন আলী খলিফা হলেন, তাকে প্রশ্ন করা হল, “মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী কে?
তারা বলল, ‘আপনি
তিনি বললেন, ‘আমি কখনো কারও সাথে দৈতযুদ্ধে হারিনি। কিন্তু লোকদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী হলেন আবু বকর। বদরের যুদ্ধে আমরা রাসুলুল্লাহ সা) এর জন্য একটি ছাউনি নির্মান করেছিলাম এবং আমাদের প্রশ্ন করা হল, কে হবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহরক্ষী? আবু বকর তাঁর তরবারী খাপ মুক্ত করে সেখানে এলেন, এবং সারাদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রক্ষা করলেন। মক্কাতে একবার, কুফফাররা রাসূল সা) কে আক্রমণ করেছিল, যেই কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, তাকেই অন্যেরা আটক করছিল এবং মারধর করছিল, আর বলছিল, ‘তোমরা কি সব দেব দেবীর পরিবর্তে একজন দেবতা স্থির করেছ?’ কেউই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাওয়ার সাহস করছিলেন না, একমাত্র আবু বকর ব্যতিক্রম। তিনি গেলেন, এবং তাদের সাথে লড়াই বাঁধিয়ে দিলেন, এবং বলছিলেন, ‘তোমরা কি একজন লোককে শুধুমাত্র এই কারণে হত্যা করতে যাচ্ছ যে সে বলে, ‘আল্লাহ আমার রব!’

এরপর আলী প্রশ্ন করলেন, ‘কে উত্তম, আবু বকর না ফেরাউনের সভাসদের সেই ব্যক্তিটি?’ (ফিরাউনের সভাসদদের মধ্যেও এক ব্যক্তি অনুরূপ মন্তব্য করেছিল যখন ফিরাউন সিদ্ধান্ত নিল মূসাকে হত্যা করবে)

লোকেরা নীরবতা অবলম্বন করলো। তিনি বললেন, ‘তোমরা উত্তর করছ না কেন? আল্লাহর নামে, আবু বকরের জীবনের একটি মুহুর্ত উত্তম, সারা দুনিয়া যদি ভর্তি হয়ে যায় সেই ফিরাউনের সভার ঈমানদার ব্যক্তিদের মত ব্যক্তি দিয়ে। ফিরাউনের সভাসদের সেই ব্যক্তিটি নিজের ঈমানকে গোপন রেখেছিল, আর আবু বকর তাঁর ঈমানকে প্রকাশ করেছিলেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পর এই উম্মতের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি হলেন আবু বকর। বদরের যুদ্ধের ঘটনা থেকে, উহুদ, খন্দক, হুদায়বিয়া,হুনাইন ইত্যাদি থেকে একজন ব্যক্তির উচিত তার অন্তরের দৃঢ়তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা। সব বিপর্যয়ের বড় বিপর্যয়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তিনি যে ভূমিকা পালন করেছিলেন

সেটাই যথেষ্ট তার অবিচলতা, দৃঢ়তা, এবং মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানান দেয়ায় জন্য। সেটা ছিল এমন এক মুহুর্ত যখন অন্তর বিচলিত ছিল, উম্মাহ বিপর্যস্ত ছিল। যখন সবার অন্তর কাঁপছিল, সিদ্দিকের অন্তর সুদৃঢ় ছিল। যদি দাড়িপাল্লার একদিকে আবু বকরের অন্তর আর বিপরীত দিকে সমস্ত উম্মাহর অন্তর স্থাপন করা হয়, তাহলে আবু বকরের অন্তরই ভারী হবে। মুরতাদদের সাথে আবু বকরের যুদ্ধ ঘোষণার সাহসী সিদ্ধান্ত, এই সাহসিকতাকে যদি সারা পৃথিবীর সমস্ত কাপুরুষদের অন্তরে বন্টন করে দেয়া যায়, সেটা তাদেরকে সাহসী করে তুলবে।

খাত্তাবের পুত্র উমর

এটা উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে যে, উমরের ভয়ে ভীত হয়ে শয়তান সেই পথ পরিহার করে চলত। আল্লাহর রাসূল সা) উমরকে বলেছিলেন, ‘হে খাত্তাবের পুত্র, যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, শয়তান তোমাকে এক রাস্তায় দেখলে সে অন্য রাস্তা ধরে (বুখারী) তার ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি পেল। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, ‘উমর মুসলিম হবার আগ পর্যন্ত আমরা প্রকাশ্যভাবে কাবার কাছে সালাত আদায় করতে পারতাম না
আলি বিন আবি তালিব

তিনি ছিলেন এই উম্মাহর একজন সিংহপুরুষ। তিনি একমাত্র তাবুক যুদ্ধ ছাড়া আর কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেননি, কারণ সেই সময়ে রাসূল সা) তাঁর অনুপস্থিতিতে তাকে মদীনার দায়িত্বে নিয়োজিত রাখেন। খায়বারের যুদ্ধের সময় রাসূল সা বলেন, ‘আগামীকাল আমি যুদ্ধের ব্যানার এমন এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিব, যে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। তিনি যুদ্ধের ময়দানে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন না, এবং আল্লাহ তাঁর হাতেই আমাদের বিজয় দান করবেন সব সাহাবাই সেই সম্মান মনে মনে চেয়েছিলেন। পরের দিন, রাসূল সা) আলীকে ডাকলেন এবং তাকে যুদ্ধের ব্যানার তুলে দিলেন। মুসআব আল যুবাইরি বলেন, ‘আলি যুদ্ধের ময়দানে খুব সতর্ক  থাকতেন। তিনি তার শত্রুর প্রতি ক্ষিপ্র গতিতে ঘুরতেন আর যখন তিনি তাঁর শত্রুর দিকে হামলা করতেন, তিনি নিজের চতুর্দিক থেকে নিজেকে রক্ষা করতেন, আর যখন ফিরে আসতেন তখন তিনি নিজেকে আরও সতর্কতার সাথে রক্ষা করতেন। কেউ তাঁর কাছে যাওয়ার সাহস করতো না, তার ঢাল একমুখী থাকত। এটা শুধুমাত্র সামনের দিক থেকে তাকে রক্ষা করতে পারতো। যখন তাকে প্রশ্ন করা হল, ‘আপনি কি এই ভয় করেন না যে, আপনার পিছন দিক থেকে হামলা হতে পারে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি আমার শত্রুকে কখনো এই সুযোগই দেই না যে, সে আমার পিছন থেকে এসে হামলা করতে পারবে

তালহা বিন উবায়দুল্লাহ

তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের একজন। তিনি উহুদের যুদ্ধে নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রক্ষা করেছিলেন এবং ৭০ টির বেশি আঘাত পেয়েছিলেন। এমনকি যখনই রাসুলুল্লাহ সা) কুফফারদের দিকে তাকাতে চাইতেন তালহা তাকে অনুরোধ করতেন বিরত থাকার জন্য এবং নিজের দেহ দিয়ে আড়াল করে রাখতেন।

আল যুবাইর আল আওয়াম

তিনিও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের একজন। তিনিই প্রথম মুসলিম যিনি তরবারী খাপমুক্ত করেছিলেন। মক্কার ইসলামের প্রাথমিক যুগে একটি গুজব রটানো হল যে, আল্লাহর রাসূলকে অপহরণ করা হয়েছে। আল যুবাইর তার তরবারী কোষমুক্ত করলেন এবং তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি রাসুলুল্লাহর দিকে দৌড়ে গেলে, রাসুল সা) তাকে প্রশ্ন করেন, “যুবায়ের, কোন সমস্যা?”
তিনি বলেন, “আমি শুনেছিলাম, আপনাকে অপহরণ করা হয়েছে, তাই আমি তাদের সাথে লড়াই করতে এসেছিলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য দুয়া করেন।

সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস
তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের একজন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য দুয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ ! তার তীরগুলোকে লক্ষ্যভেদ করিয়ে দাও, তার দুয়া কবুল করে নাও উমর তাকে কাদিসিয়াহ যুদ্ধের সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। মুসলিমরা বিজয়ী হয়েছিল, এবং তিনি তাদেরকে পারস্যে নেতৃত্ব দিতে থাকেন যতক্ষণ না তিনি অধিকাংশ এলাকা বিজয় লাভ করেন এবং রাজধানীতে প্রবেশ করেন, আল মাদায়েন। সাদ , তিনি কুফা এবং বাসরা নগরী প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যখন তিনি মৃত্যুশয্যায় তিনি ওসীয়ত করেছিলেন যেন তার দেহকে একটি পুরনো ঊলের কাপড়ে কাফন দেয়া হয়। তিনি বলেন, এটা পরেই আমি বদরের যুদ্ধ করেছিলাম এবং এই দিনের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছি।

আবু উবাইদাহ বিন আল যাররাহ
তিনিও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের একজন। উমার তাকে শাম বিজয়ী বাহিনীর দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনিই ছিলেন ইয়ারমুকের সেই বিখ্যার যুদ্ধের সেনাপতি। তিনি শামে যখন প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে সেই রোগে মৃত্যুবরণ করেন।

হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব

তিনি আসাদুল্লাহ- আল্লাহর তাঁর রাসূলের সিংহ। যখব বদর যুদ্ধের পর উমাইয়া বিন খালাফ যে বন্দী হয়েছিল সে আব্দুর রহমান বিন আউফকে প্রশ্ন করল, ‘তোমাদের মধ্যে লোকটী কে ছিল যার বুকে উট পাখির পালক লাগানো ছিল?’
আব্দুর রহমান বলেন, ‘তিনি ছিলেন হামযাহ উমাইয়া বললো, ‘সেই আজকে আমাদের সর্বনাশ করে ছেড়েছে তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন।

জাফর বিন আবি তালিব
তিনি তাঁর ভাই আলির থেকে বছর দশেকের বড়। মুতার যুদ্ধে তিনি পর্যায়ক্রমে ২য় ব্যক্তি হিসেবে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যখন যায়িদের পর দায়িত্ব বুঝে পান, তিনি ডানহাতে যুদ্ধের ব্যানার বহন করছিলেন, এরপর যখন ডান হাতটী কাটা গেল তিনি বাম হাতে সেই পতাকা তুলে ধরেন, আর বাম হাত কাটা পড়লে  তিনি দুই বাহু দিয়ে পতাকাকে আঁকড়ে ধরে রাখেন, যতক্ষণ না তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এরপর লোকেরা তাঁর দেহে ৯০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পায়।

 

১০ মুয়ায বিন আমর বিন আল যামুহ
তিনি ছিলেন এই উম্মাহর ফেরাউন আবু জাহেলের জবাইকারী। তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন আবু জাহেলকে আমার টার্গেট স্থির করে নেই। যখন আমি তাকে পাই, আমি তাকে আক্রমণ করি, এবং আমার তরবারী দিয়ে হামলা করি আর তার পা দ্বিখন্ডিত করে দেই। এরপর তার সন্তান ইকরিমাহ আমার ঘাড়ে আঘাত হানে এভাবে আমার বাহু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুধু একটি চামড়ার উপর সেই কাটা বাহু ঝুলে থাকে। কিন্তু, এতে আমার যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছিল, দিনের অধিকাংশ সময় সেটা আমার পিছনে ঝুলতে থাকে। কিন্তু, বেশি অসুবিধা দেখে দিলে, আমি পা দিয়ে চেপে ধরে আমার সেই বাহুকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি।

১১ আল বারাহ বিন মালিক

তিনি আনাস বিন মালিকের ভাই, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম ছিলেন। তিনিই এই উম্মাহর বীর পুরুষদের একজন। আনাস একদিন দেখলেন তাঁর ভাই বারাহ কি যেন কবিতা গুনগুন করছেন, তাই তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ আমার ভাই, কবিতা পড়ছো নাকি? কেমন হয় যদি এটাই তোমার শেষ কথা হয়ে যায়? ’ [যখন কুরআন নাযিল হচ্ছিল, তখন সাহাবারা কুরআন বাদে অন্য কিছু তিলাওয়াত কিংবা আবৃত্তি করাটা অপছন্দ করতেন। কারণেই আনাস তাঁর ভাইকে সতর্ক করে বলছিলেন, ভাই এই কবিতা আবৃত্তি করা অবস্থায় যদি আপনার মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে কিভাবে তুমি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে? আরেকটি বর্ণনায় তিনি বলছিলেন যে আল্লাহকে স্মরণ করো ]
আল বারাহ বলেন, ‘না ! আমার মত লোক বিছানায় মরতে পারে না, আমি ৯৯জন কাফির মুনাফিককে হত্যা করেছি (মুসান্নাফ ইবন বিন শাইবা)

উমর তাঁর মিলিটারি জেনারেলদের কাছে লিখে পাঠালেন যে বারাহ বিন মালিককে কখনো নেতৃত্বের কোন পদ দিও না, কারণ সে মুসলিমদের মধ্যে একটু বেশি বেপরোয়া (অর্থাৎ এত আক্রমণাত্বক যে সাধারণ মুসলিমদের বিপদ হতে পারে !) (আল হাকিম)

একটি উদাহরণ, মুসায়লামা মিথ্যুক নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি অবরুদ্ধ ফটক খোলার জন্য অপর মুসলিমদের বললেন, তোমরা আমাকে একটি ঢালের উপর বসিয়ে দাও, এরপর বর্শার মাথার ঢাল বহন করে দেয়ালের উপর দিয়ে ঢাল সহ আমাকে ছুঁড়ে মার ! এরপর তাকে ছুঁড়ে মারা হল, তিনি সেই দূর্গের ফটক খুললেন ঠিক, কিন্তু এরপর তার দেহে ৮০টিরও বেশি জখম হল। (আল ইসাবাহ)

তাস্তুরের যুদ্ধে, আল বারাহকে বললেন, আপনি বাইয়াত গ্রহণ করুন বিজয় পর্যন্ত
আল বারাহ বলেন, ‘ইয়া আল্লাহআমি এই মর্মে বাইয়াত গ্রহণ করছি যে, আপনি আমাদেরকে তাদের কাঁধের উপর স্থাপন করুন, (আমাদের বিজয় দান করুন) এবং আমাকে আপনার নবীর পথে নিয়ে নিন (মৃত্যু) তিনি শত্রুদের আক্রমণ করলেন, এবং মুসলিমরা তাকে অনুসরণ করল, পারস্যবাসীরা পরাজিত হল। এবং আল বারাহ শহীদ হলেন। আল্লাহ তাঁর বাইয়াতকে তাঁর শপথকে পূর্ণ করে দিলেন।

আনাস বলেন, যখন আবু মূসাকে আল বাসরার গভর্ণর পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল তিনি আল বারাহকে বলেন যেকোন নেতৃত্বের পদ নির্বাচন করে নিতে, এবং তার সরকারের সেই পদেই তাকে নিযুক্ত করা হবে। আল বারাহ বলেন, ‘আমি এসব কিছু চাই না। বরং আমি চাই, আমাকে আমার ঘোড়া, বর্শা, ঢাল, তরবারী এগুলো দিয়ে দিবেন এবং আমাকে জিহাদে প্রেরণ করবেন। সেই বাহিনীর প্রথম নিহত ব্যক্তি হলেন আল বারাহ ’ (ইমাম আবু শাইবাহ)
১২ আবু দুজানা (সাম্মাক বিন খারশাহ)

 

উহুদ যুদ্ধের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি তরবারী বের করলেন এবং বললেন, ‘কে আছ এই তরবারী দিয়ে লড়াই করবে এবং একে প্রাপ্য হক দিবে?’
কিছু লোক উঠে দাঁড়াল এবং এটা চাইল, কিন্তু আল্লাহর রাসূল তাদের কাউকেই দিলেন না। এরপর আবু দুজানা উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ ! এর হক কি ?’ তিনি বলেন, ‘আর তা হল তুমি এটা দিয়ে শত্রুদের মুখে আঘাত করবে যতক্ষণ না তা বাঁকা হয়ে যায়

আবু দুজানা বলেন, ‘আমি এটা গ্রহন করব ইয়া রাসুলুল্লাহ এবং তিনি তাকে সেটা দিলেন। আল যুবাইর বিন আল আওয়াম বলেন, ‘আমি কিছুটা মন খারাপ করেছিলাম, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফুপাতো ভাই। আমি চাইলাম, আর তরবারীখানা পেলাম না, কিন্তু আবু দুজানা পেয়ে গেল। কাজেই আমি আবু দুজানাকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং সে কি করে তা দেখার জন্য। আবু দুজানা একটি লাল পট্টি নিয়ে মাথায় বাঁধলেন, আনসাররা বলেন, ‘আবু দুজানা তার মৃত্যুর রুমাল বেঁধে নিয়েছে! এরপর তিনি শত্রুদের আক্রমণ করলেন এবং যাকে সামনে পেলেন তাকেই হত্যা করলেন

এবং যুদ্ধের পূর্বে তিনি শত্রুসারির সামনে গর্বের সাথে হাঁটলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এটা এমন হাঁটা যা আল্লাহ ঘৃণা করেন, কিন্তু এই অবস্থা ব্যতিক্রম

ইয়ামামার যুদ্ধে, তিনি নিজেকে একটি দেয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়ে দেন যা শহরকে ঘিরে রেখেছিল এবং পড়ে গিয়ে  নিজের পা ভেঙ্গে ফেলেন। তিনি সেই ভাংগা পা নিয়েই যুদ্ধ চালিয়ে যান যতক্ষণ না শাহাদাত বরণ করেন।

১৩ খালিদ বিন আল ওয়ালিদ
তিনি আল্লাহর নির্বাচিত তলোয়ার। যখনই তিনি মুসলিম হলেন, রাসূলুল্লাহ সা) তাকে শত্রুদের সাথে লড়াই এর কাজে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি জীবনে কোন যুদ্ধে পরাজিত হননি। খালিদ বিন আল ওয়ালিদ বলেন, ‘যদি আমার একজন সুন্দরী নারী যাকে আমি ভালোবাসি তাকে বিয়ে করার অবস্থা সামনে থাকে, অথবা যদি আমাকে এই সুসংবাদ প্রদান করা হয় যে, তোমার একজন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করেছে, এটাই আমার নিকট কম প্রিয় হবে এবং আমার অন্তরে কম পছন্দের হবে, বরং এক বরফের ন্যায় শীতল রাত্রিতে যদি আমাকে বলা হয়, একটি বাহিনী তোমার শত্রু হিসেবে আগামীকাল সকালে তোমার অপেক্ষায় আছে আমি সেটাই বেশি পছন্দ করব।
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, জিহাদে যাও !’ এই কথাগুলো ছিল খালিদের মৃত্যুশয্যায় বলা।
১৪ সালামাহ বিন আল আকওয়া
আমরা তাঁর ঘটনা ইতোপুর্বে আলোচনা করেছি, যেখানে তিনি একাই কুফফারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্পর্কে বলেন, “আমাদের পদাতিকদের মধ্যে আজকের দিনের সেরা সালামাহ বিন আল আকওয়া

১৫ উকবাহ বিন মাহসিন
যুদ্ধের ময়দানে তাঁর বীরত্ব সবার কাছেই সুপরিচিত। গাবাহ যুদ্ধে তিনি দেখলেন আমর বিন আবার তার পিতার সাথে একই উটের উপর বসে আছে, তিনি সেদিকে লক্ষ্য করে তাঁর বর্শা ছুঁড়ে মারলেন এবং একই আঘাত একই বর্শায় দুজনকে নিহত করে দিলেন।

 

১৬ আমর বিন মাআদি ইয়াকরিব.

তিনি ইয়েমেনের একজন রাজা ছিলেন, যিনি তাঁর সাহসীকতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে মুসলিম হলেন। উমার তাকে এক হাজার লোকের সমান মনে করতেন। আল তারতুসী  তার সিরাজ আল মালুক কিতাবে বলেন, আমর বিন মায়াদি ইয়াকরিব নদীর তীরে গেলেন এবং লোকদের বললেন, ‘আমি সেতু পার হতে যাচ্ছি। যদি তোমরা এতটুকু সময় পরে আমাকে অনুসরণ কর যতটুকু সময় একটা উট জবাই করতে লাগে, তাহলে তোমরা আমাকে পাবে আমার তরবারী সহ লড়াইরত অবস্থায়, আমার সামনে যেই আসুক না কেন, আমার চারপাশে শত্রু ঘিরে থাকা অবস্থায়, আর আমি তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকব। আর এর পরে যদি তোমরা আস, তাহলে আমাকে মৃত অবস্থায় পাবে এবং এরপর তিনি সেতু পার হলেন এবং শত্রুদের শিবিরে পৌঁছে গেলেন, এরপর তাঁর লোকেরা চিৎকার দিয়ে উঠলো, ‘হে জাবিদের বেটারা ! আমরা কি আমাদের লোকটাকে একলা তাদের মাঝে ছেড়ে দিব? দেরি করলে আমরা তাকে জীবিত অবস্থায় আর পাব নাকাজেই এরপর তারা সেতু পার হল এবং সেখানে গিয়ে দেখল সে ঘোড়াবিহীন অবস্থায় লড়ছে আর শত্রুদের একটি ঘোড়ার পিছনের দুইটি পা এমনভাবে ধরে আছে যে সেই ঘোড়াটি নড়তে পারছে নাঘোড়ার উপরে বসে থাকা যোদ্ধাটি আমরের কাছে আসার চেষ্টা করছিল কিন্তু সে নাগাল পাচ্ছিল না, তার তরবারী কোন কাজে আসছিল না। যখন যোদ্ধাটি দেখল আমরা সবাই তার সাহায্যে এগিয়ে এসেছি, তখন সে ঘোড়া থেকে নেমে পালিয়ে গেল। তখন আমর সেই ঘোড়ার উপরে চড়ে বসলেন। এরপর তিনি আমাদের বললেন, ‘তোমরা আর একটু পরে এলেই আমাকে আর পেতেনা তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার ঘোড়াটি কই’? তিনি বলেন, ‘একটা তীর এসে ওটাকে মেরে ফেলে আর আমি ওর পিঠ থেকে পড়ে গিয়েছিলাম


১৭ ইকরামা, আবু জাহেলের পুত্র

তিনি ইসলাম পূর্ব জীবন থেকেই দুঃসাহসী ছিলেন, এবং ইসলাম গ্রহণের পর তা কেবল বৃদ্ধিই পেল। ইয়ারমুকের যুদ্ধে তিনি দুর্ধর্ষ লড়াই করেন। তাকে বলা হল, ধীরে, সাবধানে ! তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি লাত আর উযযাকে (দুইটি মূর্তি) রক্ষার জন্যে এক সময় লড়াই করেছি, আর তখনো আমি নিজের জন্য কোন খেয়াল করতাম না। আর আজকে যখন আমি আল্লাহ তাঁর রাসূলের জন্য লড়াই করছি, আমাকে বলছো সাবধান হতে!’ এরপর তিনি বলেন, ‘কে আছো, মৃত্যুর উপর বাইয়াত দিবে?’

আল হারিথ বিন হিশাম, দিহার বিন আল আযওয়ার এবং আরও ৪০০ জন দুঃসাহসী মুসলিম বের হলেন এবং বাইয়াত করলেন। তারা রোমানদের উপর আক্রমণ করলেন, এবং তাদের ্যাংককে অদৃশ্য করে দিলেন। ইকরিমাহ আর ফিরে আসেননি, তাঁর দেহ যখন খুঁজে পাওয়া গেল, তার মধ্যে সত্তরটিরও বেশি জখম দেখা গেল।

 

১৮- তুলাইহা আল আযদি-
যখন সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস পারস্য অভিযানে ছিলেন তখন তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে খলিফা উমরের কাছে রি ইনফোর্সমেণ্ট এর আবেদন পাঠালেন, উমর জবাব দিলেন, ‘আমি তোমার কাছে দুই হাজার পুরুষ পাঠালাম, আমর বিন মাদি ইয়াকরিব এবং তুলাইহা আল আযদি। তাদের প্রত্যেকে এক হাজার জনের সমান তুলাইহা, আমর এবং কায়েস বিন মাকসুহ  তিনজনের দলটিকে একটি তদন্ত করতে স্কাউট হিসেবে পাঠানো হল, শত্রুদের বাহিনীর কাছে। আমর এবং কায়েস দুইজনে মিলে কয়েকজন পারস্য সেনাকে অপহরণ করলেন, এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য মুসলিম ক্যাম্পে নিয়ে আসলেন। তুলাইহা আরও বড় কাজ করে দেখালেন, তিনি শত্রু সেনাদের ঘাঁটিতে প্রবেশ করলেন এবং অগ্রসর হতে লাগলেন এভাবে যতক্ষণ না সরাসরি কমাণ্ডারের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন !
তিনি রাত ঘনিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, এরপর সরাসরি তিনি কমাণ্ডারের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, এবং তার ঘোড়া ছিনিয়ে নিলেন, যা তাঁবুর সাথে বাঁধা ছিল এবং এরপর সেখান থেকে চলে এলেন। কিন্তু একজন পারসী সেনা তাকে দেখে ফেললেন এবং ধাওয়া করলেন।তুলায়হা তাকে হত্যা করলেন, এবং কমাণ্ডারের ঘোড়ার সাথে তার ঘোড়াটিকেও নিয়ে আসতে লাগলেন,  আরেকটি ঘোড়সওয়ার তাকে দেখে ফেলে এবং ধাওয়া করলো, তুলায়হা তাকেও হত্যা করে তার ঘোড়াটিকেও ছিনিয়ে নেন, এরপর তৃতীয় আরেকজন ঘোড়সওয়ার তাকে ধাওয়া করে এবং তুলায়হার কাছে সে ভয়ে আত্মসমর্পণ করে।  তুলায়হা ঘোড়াগুলোর সাথে তাকেও আটক করে নিয়ে আসতে থাকেন, অর্থাৎ একজন বন্দী চারটি ঘোড়া নিয়ে তিনি মুসলিম শিবিরে চলে আসেন, মুসলিম নেতাগণ সেই পারসী সেনার দিকে মনোযোগ দিলেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, দেখলেন সেনাটি তাদের একজন নেতা !

সেই পারসী সেনা পরবর্তীতে মুসলিম হন এবং আসুন তাঁর জবানীতেই সেই লোমহর্ষক ঘটনাটি শুনি, তিনি বলেন,

আমি অসংখ্য যুদ্ধ লড়েছি, কিন্তু এই ব্যক্তিটির মত দ্বিতীয়টি দেখিনি ! তিনি শুধু আমাদের সীমানাতেই  প্রবেশ করেননি, এমন এক স্থানে প্রবেশ করেছেন, যেখানে বীর সাহসী ব্যক্তিরা পর্যন্ত সাহস করে না, আমাদের সেনাদের কমাণ্ডারের তাঁবুতেসেখানে ৭০,০০০ সৈন্য ছিল। যেন তাঁর জন্যে এটাও যথেষ্ট হল না, তিনি আরও সামনে এগিয়ে গেলেন, এমনকি কমাণ্ডারের ঘোড়াটিকেই ছিনিয়ে নিলেন, আর আমাদের প্রথম যে ব্যক্তি তাকে ধাওয়া করেছিল তাকে আমরা ১০০০ জনের সমকক্ষ বলে মনে করতাম, আর তিনি কিনা তাকে কতল করে দিলেন। দ্বিতীয় একজন তাকে ধাওয়া করলো, আর তিনি তাকেও শেষ করে দিলেন,   এবং এরপর আমি ধাওয়া দিলাম, আর আমি মনে করিনা বাহিনীতে আমার মত শক্তিশালী এবং সাহসী আর কেউ আছে, কিন্তু আমি তাঁর হাতে মৃত্যু দেখতে পেলাম, আত্মসমর্পণ করলাম !’ সেই পারসী সেনানায়ক পরবর্তীতে মুসলিম হন এবং মুসলিমদের সাথে জিহাদ করেন।

১৯ আব্দুল্লাহ বিন আল যুবাইর
তিনি ছিলেন বীরের পুত্র বীর। তাঁর পিতা ছিলেন আল যুবাইর বিন আল আওয়াম। আবদুল্লাহ উত্তর আফ্রিকা বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং জানজিরকে হত্যা করেছিলেন, যিনি ছিলেন বারবার এর রাজা।
২০ আব্দুল্লাহ বিন আবি আল সারহ-
তিনি আফ্রিকার অন্যতম বিজেতা। তিনি মুসলিমদের প্রথম নৌবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। রোমানদের বিরুদ্ধে আল সায়ারি এর যুদ্ধ, তিনি উসমান রা) এর সময়ে মিশরের গভর্ণর পদে নিযুক্ত ছিলেন। যখন ফিতনা শুরু হল তখন তিনি অবসর নিয়ে রামাল্লা ফিলিস্তিনে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যু পর্যন্ত অবস্থান করেন।
২১ আমরের পুত্র আল কাকা
বদর যুদ্ধের পূর্বে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করছিলেন, তখন আল কাকা বলে উঠেন, ‘সামনে এগিয়ে যান এবং লড়াই করুন, আর আমরাও বনী ইসরাইলের লোকেরা মূসাকে যা বলেছিল সেটা বলব না, ‘আপনি এবং আপনার রব গিয়ে লড়াই করুন, আমরা এখানে বসে রইলামবরং আমরা বলব, ‘আপনি সামনে এগিয়ে যান এবং আপনার রবকে সাথে নিয়ে লড়াই করুন, আমরাও সমানতালে আপনার সাথে লড়াই করব
আবু বকর তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে আল কাকার কন্ঠের আওয়াজ এক হাজার লোকের থেকেও উত্তম

ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখলেন ইকামত দিচ্ছে এমন অবস্থাই আপনি কি করবেন? সুন্নত পড়ে নিবেন? না জামাতে সামিল হবেন?

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমেই একটি হাদীসের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নেই। হাদীসটি হল- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন নামায শুরু হয়, তখন ফরজ নামায ছাড়া আর কোন নামায পড়া জায়েজ নয়। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪২১}

এবার ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে বর্ণিত কয়েকটি হাদীসের দিকে দৃষ্টি দেই। যেমন- عن عائشة رضي الله عنها قالت: لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم على شيء من النوافل أشد منه تعاهدا على ركعتي الفجر হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত এর মত কোন নফল নামাযকে এত হিফাযত গুরুত্ব প্রদানকারী ছিলেন না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৪৬৩}

عن عائشة عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال « ركعتا الفجر خير من الدنيا وما فيها হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ দুনিয়া তাতে যা কিছু আছে তা থেকে ফজরের দুই রাকাত উত্তম। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭২১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৫০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০৭}

عن أبى هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تتركوا ركعتي الفجر ولو طردتكم الخيل হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেও তোমরা ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] ছেড়ো না। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৬০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪২৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৫৩}

ফজরের ফরজের আগে দুই রাকাত নামায সুন্নত। দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ কী পরিমাণ গুরুত্বারোপ করেছেন তা আমরা উপরোক্ত কয়েকটি হাদীস থেকে স্পষ্টই বুঝতে পারছি। এরকম তাকীদ আর কোন সুন্নত নামাযের ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ করেননি। যা বুখারীতে বর্ণিত হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। আর আমরা একথাও ভাল করেই জানি যে, প্রতিটি বস্তু তার ঠিক সময়ে আদায় করাই উক্ত ইবাদতের দাবি। ফজরের দুই রাকাত আদায়ের সময় হল ফজরের ফরজ পড়ার আগে। তাই সে হিসেবে উপরে বর্ণিত ফজরের সুন্নত পড়ার তাকিদ সম্বলিত হাদীস সুনিশ্চিতভাবেই ফজরের ফরজ পড়ার আগে পড়ার জন্যই বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল রাসূল সাঃ তো ফরজ নামায দাঁড়িয়ে গেলে কোন নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। তাহলে ফজরের সুন্নত না পড়া অবস্থায় জামাত দাঁড়িয়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ফজরের সুন্নত এর কি করবে? যেটি আসল আদায়ের সময় হল ফজরের ফরজ পড়ার আগে। এখনতো জামাতই দাঁড়িয়ে গেল। এখন করণীয় কি? ব্যাপারে রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি কোন কিছুই আমরা পাই না। গুরুত্বপূর্ণ ফজরের সুন্নত যথাসময়ে আদায় করে জামাতে শরীক হবে? না আগে জামাত পড়ে তারপর সুন্নাত পড়বে? এর কোন সমাধান রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হল রাসুল সাঃ এর হাদীস শুনেছেন সাহাবাগণ। সাহাবাদের মাধ্যমে আমরা হাদীস পেয়েছি। সাহাবাগণ রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি কথা শুনেছেন। স্বচক্ষে রাসূল সাঃ এর আমল দেখেছেন। তাই এক্ষেত্রে আমাদের কাছে সাহাবাগণ কর্তৃক সমাধান ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। আমরা দেখতে পাই সাহাবাগণের মাঝে রাসূল সাঃ এর কাছের ফক্বীহ সাহাবাগণের অন্যতম হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ, রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ, হযরত আবু দারদা রাঃ, রাসূল সাঃ এর একনিষ্ট ভক্ত প্রতিটি কাজের একনিষ্ট অনুসারী হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ সহ অনেক সাহাবী ফজরের সুন্নত না পড়া অবস্থায় নামায দাঁড়িয়ে গেলেও আগে সুন্নত পড়ে, তারপর ফরজে শরীক হতেন। যেহেতু আমরা রাসূল সাঃ এর নামায সচক্ষে দেখিনি। তাই রাসূল সাঃ এর হাদীস আমরা যাদের মাধ্যমে পেলাম তাদের আমল এর কারণে বলে থাকি যে, ফজরের দুই রাকাত সুন্নত জামাত শুরু হলেও পড়ে নিতে হবে যদি নামায পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে সুন্নত বাদ দিয়ে ফরজ পড়ে নিবে। আমল আমাদের বের করা নয়। সাহাবাগন কর্তৃক আমল করা আমল। তাই আমরা নিজেদের বুঝ সমঝের উপর নির্ভর না করে সাহাবাগণের বুঝ সমঝের উপর নির্ভর করেছি। নিম্নে প্রসিদ্ধ সাহাবাগণের আমল উদ্ধৃত করা হল। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর আমল عبد الله بن أبى موسى عن أبيه : حين دعاهم سعيد بن العاص دعا أبا موسى وحذيفة وعبد الله بن مسعود رضي الله عنهم قبل أن يصلى الغداة ثم خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة فجلس عبد الله الى أسطوانة من المسجد فصلى الركعتين ثم دخل في الصلاة فهذا عبد الله قد فعل هذا ومعه حذيفة وأبو موسى لا ينكران ذلك عليه فدل ذلك على موافقتهما إياه (شرح معانى الأثار، كتاب الصلاة، باب الرجل يدخل المسجد والإمام في صلاة الفجر ولم يكن ركع أيركع أو لا يركع، رقم الحديث- 2037 আব্দুল্লাহ বিন মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ বিন মুসা হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ, হযরত হুযায়ফা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ কে ডাকলেন ফজরের নামাযের আগে। তারপর তারা বের হলেন তার [সাঈদ বিন মুসা রাঃ] নিকট থেকে এমতাবস্থায় যে, [ফজরের] নামায দাঁড়িয়ে গেছে। তখন আব্দুল্লাহ মসজিদের এক স্তম্ভের কাছে বসে গেলেন। তারপর দুই রাকাত [ফজরের সুন্নাত] নামায পড়লেন। তারপর নামাযে [ফরজের জামাতে] শরীক হলেন। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ একাজটি করলেন। সাথে ছিলেন হুযায়ফা আবু মুসা রাঃ। কিন্তু তাদের কেউ এটা বারন করেননি। সুতরাং এটি প্রমাণ বহন করে যে, তারাও এতে রাজি ছিলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৭} عن أبى إسحاق عن عبد الله بن أبى موسى عن عبد الله : انه دخل المسجد والإمام في الصلاة فصلى ركعتي الفجر (رقم الحديث-2038) আব্দুল্লাহ বিন আবী মুসা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব ছিলেন নামাযে, তখন তিনি [আগে] ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৮} হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ এর আমল عن أبى مجلز قال : دخلت المسجد في صلاة الغداة مع بن عمر وابن عباس رضي الله عنهم والإمام يصلى فأما بن عمر رضي الله عنهما فدخل في الصف وأما بن عباس رضي الله عنهما فصلى ركعتين ثم دخل مع الإمام (رقم الحديث-3029 আবী মিজলাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের নামাযে একদা ইবনে ওমর রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিল। তখন ইবনে ওমর রাঃ কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবনে আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-৩০২৯}

عن أبى عثمان الأنصاري قال : جاء عبد الله بن عباس والإمام في صلاة الغداة ولم يكن صلى الركعتين فصلى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما الركعتين خلف الإمام ثم دخل معهم وقد روى عن بن عمر مثل ذلك আবু উসমান আলআনসারী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এমতাবস্থায় এলেন যে, ইমাম সাহেব ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। আর তিনি ফজরের [সুন্নত] দুই রাকাত পড়েননি। তাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন ইমামের পিছনে। তারপর তিনি ইমামের সাথে শরীক হলেন। ইবনে ওমর রাঃ এর ব্যাপারেও এমনি বর্ণিত। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪০}

আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এর আমল نافعا يقول : أيقظت بن عمر رضي الله عنهما لصلاة الفجر وقد أقيمت الصلاة فقام فصلى الركعتين হযরত নাফে বলেনঃ আমি ইবনে ওমর রাঃ কে ফজরের নামাযের জন্য জাগালাম এমতাবস্থায় যে, ফজরের নামায জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪২}

হযরত আবু দারদা রাঃ এর আমল عن أبى الدرداء : أنه كان يدخل المسجد والناس صفوف في صلاة الفجر فيصلى ركعتين في ناحية المسجد ثم يدخل مع القوم في الصلاة আবু দারদা থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, লোকেরা ফজরের নামাযের কাতারে ছিল, [তথা নামায শুরু করে দিয়েছে] তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন মসজিদের কিনারায়,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪৪}

হযরত ওমর রাঃ এর জমানায় সাহাবায়ে কেরামের আমল عن أبى عثمان النهدي قال : كنا نأتي عمر بن الخطاب رضي الله عنه قبل أن نصلى ركعتين قبل الصبح وهو في الصلاة فنصلى ركعتين في آخر المسجد ثم ندخل مع القوم في صلاتهم আবু উসমান আননাহদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এর কাছে এলাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত পড়ার আগে। তখন তিনি নামাযরত ছিলেন। তখন আমরা মসজিদের শেষ মাথায় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লাম। তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলাম। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪৬}

তাবেয়ী মাসরূক রহঃ এর আমল الشعبي يقول : كان مسروق يجىء الى القوم وهم في الصلاة ولم يكن ركع ركعتي الفجر فيصلى ركعتين في المسجد ثم يدخل مع القوم في صلاتهم শাবী থেকে বর্ণিত। মাসরূক লোকদের কাছে এমন সময় এলেন যখন তারা নামায পড়ছিল। তিনি সে সময় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়েন নি। তাই তিনি মসজিদে দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {তাহাবী শরীফ,হাদীস নং-২০৪৮}

তাবেয়ী হাসান বসরী রহঃ এর আমল يزيد بن إبراهيم عن الحسن : أنه كان يقول إذا دخلت المسجد ولم تصل ركعتي الفجر فصلهما وان كان الإمام يصلى ثم ادخل مع الإمام ইয়াযিদ বিন ইবরাহীম হাসান [বসরী রহঃ} থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, তুমি যদি এমতাবস্থায় মসজিদে প্রবেশ কর যে, তুমি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়নি, তাহলে তা পড় যদিও ইমাম নামায পড়াচ্ছে। তারপর ইমামের সাথে শরীক হও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৫০}

প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান: (বিষয়: পবিত্র কুরআন)

১০০)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে?উত্তরঃ ১১৪টি।১০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি?উত্তরঃ সূরা ফাতিহা।১০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার নাম কি?উত্তরঃ সূরা বাকারা।১০৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরার নাম কি?উত্তরঃ সূরা কাওছার।১০৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি কোন সূরায়?উত্তরঃ সূরা বাক্বারার ২৮২ নং আয়াত।১০৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আয়াত কোনটি?উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। (সূরা বাক্বারা ২৫৫ নং আয়াত।১০৬) প্রশ্নঃ ফরয নামাযান্তে কোন আয়াতটি পাঠ করলে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোন বাধা থাকে না?উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী।

১০৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্সূরাটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে?উত্তরঃ সূরা মুলক। (৬৭নং সূরা)১০৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান?উত্তরঃ সূরা ইখলাছ। (112 নং সূরা)১০৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রতি ভালবাসা মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে?উত্তরঃ সূরা ইখলাছ।১১০) প্রশ্নঃ কোন সূরাটি পবিত্র কুরআনের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ?উত্তরঃ সূরা কাফেরূন। (109 নং সূরা)১২২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি জুমআর দিন বিশেষভাবে পাঠ করা মুস্তাহাব?উত্তরঃ সূরা কাহাফ (18 নং সূরা))১২৩ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রথমাংশ তেলাওয়াতকারীকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করবে?উত্তরঃ সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত। (18 নং সূরা))১২৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দুটি সূরা জুমআর দিন ফজরের নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?উত্তরঃ সূরা সাজদা দাহার।১২৫ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দুটি সূরা জুমআর নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?উত্তরঃ সূরা লা গাশিয়া।১২৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন কত বছরে নাযিল হয়?উত্তরঃ তেইশ বছরে।১২৭) প্রশ্নঃমুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরনাম পবিত্র কুরআনে কত স্থানে উল্লেখ হয়েছে?উত্তরঃ চার স্থানে। () সূরা আল ইমরান আয়াত- ১৪৪। () সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০। () সূরা মুহাম্মাদ আয়াত নং ২। () সূরা ফাতাহ্আয়াত নং ২৯।১২৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়?উত্তরঃ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী…..১২৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল হয়?উত্তরঃ আল্লাহ্বলেন, (وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ) সূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াত। (ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় দিন জীবিত ছিলেন।- আল ইতক্বান ফি উলূমিল কুরআন)১৩০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন সূরাটি পূর্ণাঙ্গরূপে নাযিল হয়?উত্তরঃ সূরা ফাতিহা।১৩১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন প্রথম যুগে কিভাবে সংরক্ষিত ছিল?উত্তরঃ ছাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিতে, লিখিত অবস্থায় চামড়ায়, হাড়ে, পাতায় এবং পাথরে।১৩) প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কে কুরআন একত্রিত করেন?উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।১৩৩) প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল?উত্তরঃ যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)কে।১৩৪) প্রশ্নঃ কার পরামর্শে এই কুরআন একত্রিত করণের কাজ শুরু হয়?উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)১৩৫) প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওহী লেখক কে কে ছিলেন?উত্তরঃ আলী বিন আবী তালেব, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান, যায়েদ বিন ছাবেত উবাই বিন কা প্রমুখ (রাঃ)।১৩৬) প্রশ্নঃ কোন যুগে কার নির্দেশে কুরআনের অক্ষরে নকতা দেয়া হয়?উত্তরঃ উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিকের যুগে হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নির্দেশে একাজ হয়।১৩৭) প্রশ্নঃ কুরআনে নকতা দেয়ার কাজটি কে করেন?উত্তরঃ নসর বিন আছেম বিন য়ামার (রহঃ)।১৩৮) প্রশ্নঃ কুরআনে কে হরকত (যের যবর পেশ ইত্যাদি) সংযোজন করেন?উত্তরঃ খলীল বিন আহমাদ আল ফারাহীদী (রহঃ)।১৩৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবারদুনিয়াশব্দটি এসেছে?উত্তরঃ ১১৫ বার।১৪০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবারআখেরাতশব্দটি এসেছে?উত্তরঃ ১১৫ বার।১৪১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি অক্ষর রয়েছে?উত্তরঃ ৩২৩৬৭১টি।১৪২)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি শব্দ আছে?উত্তরঃ ৭৭৪৩৯টি।১৪৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি আয়াত আছে?উত্তরঃ ৬২৩৬টি।১৪৪) প্রশ্নঃ কোন সূরার শেষ দুটি আয়াত কোন মানুষ রাত্রে পাঠ করলে তার জন্য যথেষ্ট হবে?উত্তরঃ সূরা বাক্বারার শেষের আয়াত দুটি। (285 ২৮৬ নং আয়ত)১৪৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি সিজদা আছে এবং কোন কোন সূরায়?উত্তরঃ১৫টি। রাফ (২০৬নং আয়াত), রা (১৫নং আয়াত), নাহাল (৪৯নং আয়াত), ইসরা (১০৭নং আয়াত), মারইয়াম (৫৮নং আয়াত), হাজ্জ (১৮ ৭৭ নং আয়াত), ফুরক্বান (৬০নং আয়াত), নামাল (২৫নং আয়াত), সজিদা (১৫নং আয়াত), সোয়াদ (২৪নং আয়াত), হা-মীম আস সাজদাহ (৩৭নং আয়াত), নাজম (৬২নং আয়াত), ইনশক্বিাক (২১নং আয়াত), আলাক (১৯নং আয়াত)।১৪৬) প্রশ্নঃ কোন সূরায় দুটি সিজদা রয়েছে?উত্তরঃ সূরা হজ্জ। (18 ৭৭ নং আয়াত)১৪৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবাররহমানশব্দের উল্লেখ হয়েছে?উত্তরঃ ৫৭ বার।১৪৮)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবারজান্নাতশব্দ এসেছে?উত্তরঃ ১৩৯ বার। (একবচন, দ্বিবচন বহুবচন শব্দে)১৪৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবারজাহান্নামশব্দ এসেছে?উত্তরঃ ৭৭বার।১৫০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবারনার বা আগুনশব্দ এসেছে?উত্তরঃ ১২৬বার।চলবে>>>>ইনশাআল্লাহ

ইসলামে কেন দাবা খেলার অনুমতি নাই ? রহস্যটা কোথায় ?

মুসাদ্দাদ ()…. বুরায়দাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী করীম (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শতরঞ্চ বা দাবা খেলে, সে যেন তার হাতকে শূকরের গোশত রক্তের মধ্যে প্রবেশ করায় [প্রমান দেখুনঃ সহীহ মুসলিম শরীফ , ৫ম খন্ড , ৪২ তম পর্ব , ১ম অধ্যায় , হাদীস নং- ১০/২২৬০ (ফুয়াদ আল বাকীর মূল আরবী নম্বর) , ৫৬৯৯ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) , ৫৭৩১ (ইসলামিক সেন্টার) , ৫৭৮৯ (হাদীস একাডেমী) / সুনানে আবু দাউদ , অধ্যায় নং- ৪৩ , অনুচ্ছেদ নং- ৬৪ , হাদীস নং- ৪৯৩৯ / সুনানে ইবনু মাজাহ , হাদীস নং- ৩৭৬৩ / মুসনাদে আহমদ , হাদীস নং- ২২৪৭০, ২২৫১৬, ২২৫৪৭ (মূল আরবী নম্বর) / ইমাম বোখারীর আল আদাবুল মুফরাদ , অনুচ্ছেদ নং- ৬১৫ , ৬১৬ , হাদীস নং- ১২৮৩ (৪৪২ পৃষ্ঠা , আহসান পাবলিকেশন্স) , ১২৮৯ (৫৫৮ পৃষ্ঠা , ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবু মুসা আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি দাবা ( সতরঞ্জি) খেললো সে আল্লাহ্ তার রাসূলের নাফরমানী করলো। [প্রমান দেখুনঃ সুনানে আবু দাউদ , অধ্যায় নং- ৪৩ , অনুচ্ছেদ নং- ৬৪ , হাদীস নং- ৪৯৩৮ / মুয়াত্তা মালিক , হাদীস নং- ১৭৮৬ (মূল আরবী নম্বর) / সুনানে ইবনু মাজাহ , হাদীস নং- ৩৭৬২ / ইমাম বোখারীর আল আদাবুল মুফরাদ , অনুচ্ছেদ নং- ৬১৫ , ৬১৬ , হাদীস নং- ১২৮১ (৪৪২ পৃষ্ঠা , আহসান পাবলিকেশন্স) , ১২৮৬ (৫৫৮ পৃষ্ঠা , ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সুনানে আদ দারেমী / মুসনাদে আহমদ , হাদীস নং- ১৯০২৭, ১৯০৫৭, ১৯০৮৩ (মূল আরবী নম্বর)] তাহক্বীক তাখরীজঃ মাহবুব হোসেন অনিক ; দাঈ , ইসলামি গবেষক চেয়ারম্যানইসলামিক রিসার্চ লাইব্রেরী (আই.আর.এল) , নারায়ণগঞ্জ

যে প্রেমের পরিণতি বিয়ে- সেটা কি হারাম?

আলহামদুলিল্লাহ।

 

প্রথমত,

একজন নারী একজন পুরুষের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, যাকে লোকেপ্রেমবলে থাকে সেটা কতগুলো হারাম জিনিসের সংমিশ্রণমাত্র যা শারীয়াহ এর সাথে সাংঘর্ষিক।

 

কোন বিবেকসম্পন্ন লোকেরই সন্দেহ থাকতে পারে না যে বিষয়টি হারাম কেননা এতে একজন পুরুষকে তার মাহরাম নন এমন মহিলার সাথে একাকী কাটানো, তার দিকে তাকানো, স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া কিংবা প্রেমালাপ ইত্যাদি করতে হয় যাতে প্রবৃত্তি জড়িত থাকে।

 

ধরনের সম্পর্ক এর চাইতেও মারাত্নক দিকে গড়াতে পারে, যেমনটি বর্তমানে ঘটছে।

 

দ্বিতীয়ত,

গবেষনায় দেখা গেছে, একজন পুরুষ একজন মহিলার মধ্যকার বিবাহপূর্ব প্রেমের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা  বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যর্থ হয়, অন্য দিকে যে সকল বিয়ে ধরনের হারাম সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নি যেগুলোকে লোকেরাপ্রথাগত বিয়েবলে থাকেন সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়।

 

একজন ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী কর্তৃক মাঠপর্যায়ে চালানো এক গবেষনায় উঠে এসেছে,

যখন দুই পক্ষ বিবাহ পূর্ব প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয় না তখন সে বিয়ের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়

 

প্রফেসর ইসমাঈল আবদআল বারিকর্তৃক প্রায় ১৫০০ পরিবারের ওপর চালানো অন্য এক জরিপের ফলাফল ছিল এমন যে শতকরা ৭৫ ভাগভালবেসে বিয়েএর পরিণতি ছিল ডিভোর্স যেখানেপ্রথাগত বিয়েএর ক্ষেত্রে শতকরা ভাগেরও কম।

 

এধরনের পরিণতির পেছনে কারন হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে,

 

- আবেগ একজন মানুষকে অপরের ভুলগুলো সম্পর্কে অন্ধ করে তুলতে পারে; যেমনটি বলা হয়ে থাকে,”ভালবাসা অন্ধ।একপক্ষ বা উভয়পক্ষেরই সমস্যা থাকতে পারে যেটা তাদেরকে বিপরীত পক্ষের জন্য অযোগ্য করে তুলতে পারে, কিন্তু এই ত্রুটিগুলো ঠিক বিয়ের পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

 

- প্রেমিক-প্রেমিকারা ভেবে থাকতে পারেন যে, এই জীবন শুধুই ভালবাসার পথে অন্তহীন একযাত্রা, তাই দেখা যায় তাদের মাঝে কেবল ভালবাসার গল্প আর স্বপ্নের জাল বোনা ইত্যাদি। তারা বাস্তব জীবনের সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান নিয়ে সে সময়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। এই প্রবণতাটি বিয়ের পর কেটে যায়, যখন তারা নানা দ্বায়িত্ববোধ সমস্যার মুখোমুখি হয়।

 

- প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল তিক্ত আলোচনা কিংবা তর্কে কম অভ্যস্ত হয় কেননা বেশিরভাগ সময়ই একে অপরকে খুশি করবার জন্য ত্যাগ মেনে নেয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের মধ্যে বরং প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয় কারন অপর পক্ষ ত্যাগ স্বীকার করে তাকে খুশি করতে চায়। বিয়ের পর ঠিক উলটোটি ঘটে এবং তাদের বিবাদগুলো সমস্যায় রূপ নিতে থাকে কারন পূর্বে তারা দেখে এসেছে বিনা বাক্য ব্যয়ে অপর পক্ষকে তার কথাটি মেনে নিতে।

 

- কোন পক্ষই অপর পক্ষের সত্যিকার রূপটা বুঝে উঠতে পারে না। কারন উভয় পক্ষই অন্যের কাছে নিজেকে শান্ত, ভদ্র হিসেবে তুলে ধরতে তাকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করে। নিজেকে এভাবে উপস্থাপনের ঘটনাটা ঘটে থাকে তথাকথিত ভালবাসার পর্যায়ে, কিন্তু কেউই সারা জীবন এই প্রবণতাকে ধরে রাখতে পারে না। ফলে সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠে বিয়ের পরে এবং সমস্যার জন্ম দেয়।

 

- ভালবাসার সময়টা থাকে স্বপ্ন বিলাসিতার যা বিবাহ পরবর্তি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়। প্রেমিক মনে করতে পারে যে সে তার প্রেমিকাকে একখন্ড চাঁদ হাতে তুলে এনে দেবে এবং সে তার প্রেমিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে না দেখতে পেলে নিজে সুখী হতে পারবে না।

 

এবং বিনিময়ে প্রেমিকা তার সাথে একই ছাদের নিচে থাকবে এবং তার অন্য কোন আবদার থাকবে না, অনুরোধ থাকবে না যতক্ষণ প্রেমিক তার মন দখল করে রাখবে। যেমন একজন বলেছিল, “আমাদের জন্য একটা ছোট্ট কুটিরই যথেষ্টএবংদু-একমুঠো ভাতই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবেকিংবাতুমি আমাকে একটুকরো অমুক অমুক খাবার এনে দিলেই আমি খুশি থাকবো”  এগুলো নিতান্তই বাস্তবতা বিবর্জিত কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তা এবং বিয়ের পর উভয়পক্ষই এগুলো ভুলে যায়। স্ত্রী তার স্বামীর আর্থিক দুরাবস্থার অভিযোগ করে এবং স্বামী স্ত্রীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তখন স্বামীও পালটা অভিযোগ আনে স্ত্রীর বেশি বেশি চাওয়া নিয়ে।

 

 

এগুলো এবং আরো বেশ কিছু কারনে যখন উভয় পক্ষ বলে যে আমরা প্রতারিত হয়েছি এবং বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি সেটা শুনে আমরা অবাক হই না। স্বামী আক্ষেপ করে কেন বাবা-মায়ের পছন্দের অমুক অমুককে বিয়ে করলো না কিংবা স্ত্রী আক্ষেপ করে কেন অমুককে বিয়ে করলো না অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই সেটা করে নি নিজেদের আকাঙ্ক্ষার কারনে। ফলে মানুষ যেটাকে ভাবে পৃথিবীর জন্য একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে তাদেরভালবেসে বিয়েটি সেখানে কিছুদিন পর সে বিয়েটি ভেঙ্গে যায়।

 

তৃতীয়ত,

এখানে যে কারনগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবত এবং সত্যিকার অর্থেই এগুলো ঘটছে মানুষের জীবনে। কিন্তু আমাদেরকে এই ব্যর্থতার পেছনে আসল কারনটিকে ভুলে গেলে চলবে না, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা। ইসলাম কখনই ধরনের ঘৃণিত সম্পর্ককে অনুমোদন দেয় না, এমনকি যদিও উদ্দেশ্য বিয়ে করা হয় থাকে। ফলে তারা কোনভাবেই আল্লাহতাআলার নির্ধারিত শাস্তি থেকে রেহাই পায় না। আল্লাহ বলছেন,

 

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেতার জীবিকা সংকীর্ণ হবে.. (সুরা ত্বা-হা ১২৪)

 

আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারনে এবং কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার কারনে এই রকম হয়।

 

এছাড়া আল্লাহতাআলা বলছেন,

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করততবে আমি তাদের প্রতি আসমানী পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সুরা আরাফ ৯৬)

 

আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ হচ্ছে সৎকর্মপরায়ণতা বিশ্বাসের পুরষ্কার স্বরুপ, আর যদি সৎকর্মপরায়ণতা কিংবা ঈমান না থাকে অথবা কম থাকে তবে পুরষ্কারও কমিয়ে দেয়া হবে কিংবা দেয়াই হবে না।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদারপুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সুরা আন-নাহল ৯৭)

 উত্তম জীবন হল বিশ্বাস সৎকর্মের ফসল।

 আল্লাহ যথার্থই বলেছেন,

যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর সে ব্যক্তি উত্তম , না যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে পতনোন্মুখ একটি গর্তের কিনারায় যা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়বে , আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না” (সুরা আত-তওবাহ ১০৯)

 যে ব্যক্তির বিয়ে এধরনের হারামের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তার উচিত দ্রুত তওবাহ করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সৎকর্মময় জীবনের কামনা করা যার ভিত্তি হবে ঈমান, পরহেযগারী সৎকর্ম।

 আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য এই ফতোয়াটি (ইংরেজিদেখতে পারেন।

 আল্লাহতালা  আমাদের সবাইকে তাঁর নিকট পছন্দনীয় কাজগুলো করবার জন্য সাহায্য করুন।

 এবং আল্লাহতাআলাই ভাল জানেন।

স্ত্রীর ঋতুকালীন সময় স্বামীর ধৈর্য্য ধারণ করণে ইসলামের হুকুম

প্রশ্ন

জনৈক স্ত্রীর মাসিক ঋতু সাতদিন স্থায়ী থাকে, স্বামী -সময় ধৈর্যধারণ করতে পারে না, যেহেতু তার যৌন চাহিদা প্রবল, তাই -সমস্যার সমাধানে কী করা উচিত?

উত্তর

আল-হামদুলিল্লাহ

স্ত্রীর ঋতুকালীন সহবাস ব্যতীত সবধরণের ভোগ-ক্রীড়া স্বামীর জন্য বৈধ। ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে মেলামেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

( اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلا النِّكَاحَ )

সহবাস ব্যতীত তার সাথে সবকিছু কর।মুসলিম : (৩০২)

স্বামীর যৌনচাহিদা মিটানোর জন্য অন্য বৈধ উপায়ও রয়েছে, যেমন স্ত্রীর হাতের মাধ্যমে যৌন চাহিদা মিটানো। এর দলিল আল্লাহ তাআলার বাণী :

: ( وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (29) إِلا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ ) المعارج/29-30 .

আর যারা তাদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাজতকারী। তবে তাদের স্ত্রী তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না।সূরা মাআরেজ : (২৯-৩০)
আয়াতের ব্যাপক অর্থ এর বৈধতা প্রদান করে।

 

আমলের প্রতিদান

প্রশ্ন: আপনি কি আল্লাহ পাকের সংরক্ষণে থাকতে চান?

উত্তর: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবে সে আল্লাহর জিম্মায় হয়ে যাবে এবং তার হিসাব আল্লাহর উপর

(সহীহুল জামে)
প্রশ্ন: আপনি কি নিষ্পাপ ফেরেশতার দোয়া চান?

উত্তর: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে, দায়িত্বশীল ফেরেশতা তাকে বলেনঃ -মীন(হে আল্লাহ ! কবুল করুন) এবং তোমার জন্যও (দোয়ার) অনুরূপ।

(মুসলিম)
প্রশ্ন: আপনি কি মুনাফেকী জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির সনদ চান?
উত্তর: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন প্রথম তাকবিরের সাথে (তাকবিরে ঊলা) জামাতে নামাজ আদায় করবে, তার জন্য দুটি অব্যাহতি লেখা হবে। (প্রথমটি ) জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি (দ্বিতীয়টি) মুনাফেকী থেকে অব্যাহতি।

(সহীহ তিরমিজী)
প্রশ্ন: আপনি কি একটি কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব চান?
উত্তর: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর (কাবার) চারপার্শ্বে সাত চক্কর দেয় এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, যেন সে একটি কৃতদাস মুক্ত করে।

( সহীহুল জামে)

যে ব্যক্তি দশবার
(لا اله الا الله وحده لاشريك له له الملك وله الحمد وهو علي كل شيء قدير )
লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা- শারিকালাহ, লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল-হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর
বলে,

সে যেন  ইসমাঈল (.)-এর বংশের একটি কৃতদাস মুক্ত করে।

(বুখারী মুসলিম)
প্রশ্ন: আপনি কি পঞ্চাশটি নেকী অর্জন করতে চান?
উত্তর: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে তাঁর রব( প্রতিপালক) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক বলেন: আমার নিকট কথার পরিবর্তন নাই। নামাজ সংখ্যায়  পাঁচ ওয়াক্ত হলেও সওয়াবের দিক থেকে তা হবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত।

(বুখারী মুসলিম

চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার বিধান

উত্তর : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

এক.

যে ব্যক্তি জমিনে সিজদা করতে অক্ষম তার ব্যপারে হুকুম হলসে ইশারায় সিজদা আদায় করবে। এমন মাযূরব্যক্তি যদি অন্য কোন কারণে

চেয়ারে বসে নামায আদায় করেন তাহলেও

তিনি ইশারায়ই সিজদা করবেন,সামনে তখতা বা টেবিল রেখে তাতে সিজদা করার প্রয়োজন নেই। যদি কেউ এমনটি করে তা সিজদা বলে

গণ্যহবে না। অবশ্য এর দ্বারা যেহেতু ইশারার

কাজ হয়ে যায় ফলে তার সিজদা আদায় হয়ে যাবে।

চেয়ারে বসে সামনে তখতা বা টেবিল ইত্যাদির উপর কপাল রাখাকে দুই কারণে সিজদা বলা সহীহ নয়। .সিজদার জন্য শর্ত হলউভয়

হাঁটু জমিনের উপর রাখা। সিজদার সময়

কপালের অংশ কোমরের অংশ থেকেনীচু থাকা দরকার। চেয়ারে বসে সামনের কোন কিছুর উপর কপাল রাখলে উল্লিখিত উভয় শর্ত

পাওয়া যায় না।সুতরাং সেটাকে হাকীকী সিজদা

(নিয়মতান্ত্রিক সিজদাবলা ঠিক নয়।

আর আপনি মাকতাবা দারুল উলূম করাচী থেকে প্রকাশিত রিসালার বরাতে যে কথা লিখেছেনতা যদিও দারুলউলূম করাচীরই কিছু

ফতওয়ায় উল্লেখ আছেকিন্তু সম্প্রতি এই মাসআলার

বিষয়ে উসতাযে মুহতারাম হযরতমাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের এক সদ্য লিখিত ফতওয়া আমাদের

হস্তগতহয়েছে। যাতে দারুল উলূম করাচী-এর

দারুল ইফতার অন্যান্য হাযারাতের দস্তখতও রয়েছে। তাতে হযরতদামাত বারাকাতুহুম আগের ফতওয়া থেকে ‘রুজুর’ (প্রত্যাহারের)

 লেখায় হযরত ‘‘ফাতওয়া শামী’’ 

ইবারাতের’ (বক্তব্যউপর বিষদ আলোচনা করেছেন যার ভিত্তিতে দারুল উলূমের আগের ফতওয়া দেয়াহয়েছিল। এবং তিনি

এটা প্রমাণ করেছেন

যে ইবারাতের ভিত্তিতে এই মাসআলার

দলীল দেয়া সিদ্ধ নয়।তিনি স্পষ্ট লিখেছেন :

“لہذا كرسى پر بيٹهكر سامنے كسى چيز پر سجدہ كرنے كو “سجدۂ حقيقيہ” (باقاعدہ سجدہ) كہنا درست نہين”

‘‘… তাই চেয়ারে বসে সামনে কোন কিছুর উপর সিজদা করাকে ‘হাকীকী সিজদা’ (নিয়মতান্ত্রিক সিজদাবলাঠিক নয়।’’

তিনি আরও লিখেছেন,

كرسى پر بيٹهنے كى صورت پر علامہ شامى

رحمة اللہ عليہ كى بات صادق نہيں آتى، اوراس كى بنياد پر سامنے كى كسى چيز پر سجدہ كرنے كو واجب نہيں كہا جا سكتا ہے.

‘‘চেয়ারের উপর বসে নামায আদায়কারীর ক্ষেত্রে আল্লামা শামীর  বক্তব্য প্রযোজ্য নয় এবং এর ভিত্তিতেসামনে কোন কিছু

রেখে তার উপর সিজদা করাকে ওয়াজিব বলা যায় না।’’

এই সদ্য লিখিত ফতওয়ার শেষে হযরত লিখেছেন,

اس تحرير سے پہلے دار

الافتاء جامعہ دار العلوم كراچى سے جارى ہونے والے فتاوى ميں كوئى جزء اس تحرير كے خلاف ہےاس سے رجوع كيا جاتا ہے.

‘‘এই লেখার পূর্বে দারুল ইফতাজামেয়া দারুল উলূম করাচী থেকে জারিকৃত ফতওয়ার যে সকল অংশ এইলেখার খেলাফ

হয় তার থেকে ‘রুজু’ করা হচ্ছে।’’ অর্থাৎ তা প্রত্যাহার করা হল।

এই ফতওয়ার উপর তারিখ দেয়া আছে  রবিউস সানী ১৪৩৪হিজরী।

আর আপনি  রিসালার বরাতে যেই ফতওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তা বর্তমান ফতওয়ার চেয়ে অনেক আগেরতারিখের।

বর্তমান ফতওয়ায় যাঁদের সম্মতিসূচক দস্তখত রয়েছে :

1.    আব্দুর রউফ সাখ্খারবী (মুফতী)

2.   মাহমুদ আশরাফ উসমানী (মুফতী)

3.  আব্দুল মান্নান (নায়েবে মুফতী)

4.    আব্দুল্লাহ [বরমী] (সদস্য)

5.   আসগার আলী রাববানী (সদস্য)

এই ফতওয়ায় দারুল ইফতার সীলের মধ্যে ফতওয়া নাম্বার লেখা আছে : ৪১/১৫০৮।

দুই.

যে ব্যক্তি জমিনে সিজদা করতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে হানাফী ফকীহগণের প্রসিদ্ধ মত ওটাই যা আপনি দরসীকিতাবের

হাওয়ালায় লিখেছেন যে, ‘‘এমন ব্যক্তির উপর দাড়িয়ে নামায আদায় করা জরুরী নয় বরং সে বসেইশারায় নামায আদায়

করবে।’’

 বক্তব্যটি যদিও একেবারে দলীলবিহীন নয়কিন্তু অনেক মুহাক্কিক ফকীহের দৃষ্টিতে এই মাসআলায় দলীলেরবিচারে

ফিকহে হানাফীর  বক্তব্য বেশি শক্তিশালী যা ইমাম আবু

হানিফার রাহশাগরিদ ইমাম যুফার ইবনেহুযাইল রাহ.-এর মাযহাব। আর এটাই বাকী তিন ইমামের (ইমাম মালেক

রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহএবংইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.)

মাযহাব। আর তা হলএমন ব্যক্তি ( যে ব্যক্তি জমিনের উপর সিজদা করতেঅক্ষমযদি দাড়িয়ে নামায আদায় করতে

সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে।

আরযেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায় সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয় তাহলে রুকুওইশারায়

আদায় করবে) জমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে

দাড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না।

মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের যে নতুন ফতওয়ার কথা উপরে আলোচনা হয়েছে তাতেতিনি

এই মাসআলার উপর বিশদ আলোচনা করেছেন এবং ‘ফাতহুল

কাদীর’  পৃ৪৬০, ‘আননাহরুলফায়েক  পৃ৩৩৭ এবং ‘ইলাউস সুনান  পৃ২০৩ ইত্যাদির বরাতে

দালায়েলের আলোকে এই ‘কওল’ (বক্তব্য)-কেই শক্তিশালী বলেছেন যেকিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু  ব্যক্তি ছাড়

পাবে যে দাড়িয়ে নামাযআদায়

করতে অক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে কিয়াম-এর

ছাড় পাবে না। তিনি সেখানেবিশদভাবে  কথারও খন্ডন করেছেন যেশুধু সিজদার জন্য কিয়াম ফরয করা হয়েছে।

তাই সিজদা করতেঅক্ষম হলেই কিয়াম জরুরী থাকে না।

তিনি একাধিক দলীল দ্বারা  কথা প্রমাণ করেছেন যেকিয়াম নামাযেরএকটি স্বতন্ত্র ফরয তা শুধু সিজদার জন্য নয়।

এমন কি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম  ফতওয়ায়  কথাও লিখেছেন যেযেব্যক্তি

দাড়িয়ে নামায শুরু করতে পারে কিন্তু সিজদার জন্য জমিনে বসার

পর আবার দাড়াতে তার অনেক কষ্টহয়এমন ব্যক্তিও কিয়াম (দাড়িয়ে নামায পড়াএকেবারে ছাড়বে না। বরং প্রথম

রাকাত দাড়িয়ে আদায়করবে। এরপর দাড়াতে কষ্ট হওয়ার

কারণে বাকী নামায বসে আদায় করবে।

এর সাথে সাথে হযরত দামাত বারাকাতুহুম  বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন যেজমিনের উপর সিজদাকরতে অক্ষম

কোন মুসল্লী যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী

আমল করে এবং পুরা নামায বসে আদায়করে এবং  ইশারায় রুকু সিজদা করে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়েছে বলব না।

কারণগায়রে মুজতাহিদের(মুজতাহিদ নয় এমনজন্য

মুজাতাহিদের ‘কওল (বক্তব্যদলীলে শরয়ী। সুতরাং যে ব্যক্তি সে অনুযায়ীআমল করেছে আমরা বলব না তার নামাজ

ফাসেদ হয়েছে।

(لأن المسألة من الاجتهاديات، و القول المشهور و إن كان مرجوحا من

حيث الدليل و لكنه ليس من الزلات المحضة، فله بعض الأدلة أيضا، مذكور في “مختصر اختلاف العلماء” ج ١ ص ٣٢٥-عبد المالك)

তিন.

যে ব্যক্তি শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে নামায আদায় করছেন তিনি মস্ত বড় ভুলকাজ করছেন। এভাবে

নামায আদায় করার দ্বারা তার নামাযই হবে না। তার

উপর ফরযদাড়িয়ে নামায আদায়করা এবং যথা নিয়মে রুকু সিজদা আদায় করা।

আর যে ব্যক্তি জমিনের উপর বসে নামায আদায় করতে সক্ষম তার জন্য শুধু এই বাহানায় চেয়ারে বসে নামাযআদায় করা ঠিক নয়

যেসে দাড়িয়ে নামায আদায় করতে বা রুকু সিজদা

করতে অক্ষম। বরং  ধরণেরলোকেরা জমিনে বসে নামায আদায় করবে। চেয়ারে বসে নামায আদায় করবেন শুধু  লোকেরা

যারা জমিনেবসে নামায আদায় করতে অক্ষম।

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারকাতুহুম তার সদ্য লেখা  ফতওয়ায় চেয়ারে বসে নামাযআদায় করার ক্ষতির

দিকগুলো আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘জমিনে বসে নামায আদায় করার শক্তি থাকাসত্ত্বেও চেয়ারে বসার যে প্রচলন দেখা যায়

তাতে বিভিন্ন দিক থেকে আপত্তি রয়েছে।

মাযুর ব্যক্তিদের জন্য জমিনে বসে নামায আদায় করাই উত্তম  মাসনূন তরীকা। এর উপরই সাহাবায়েকেরাম রাযিয়াল্লাহু

আনহুম এবং পরবর্তীদের আমল চলে আসছে। চেয়ারে বসে

নামায আদায় করার রেওয়াজকেবল শুরু হয়েছে। খায়রুল কুরূনে এর নযীর নেই। অথচ সে যুগে মাযুরও ছিল চেয়ারও ছিল।

যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযুর নয়অর্থাৎ কিয়ামরুকু সিজদা করতে সক্ষমতার জন্য জমিনে বা চেয়ারেবসে ফরয এবং

ওয়াজিব নামায আদায় করাই জায়েয নেই। অথচ কখনো

কখনো দেখা যায়  ধরণের সুস্থব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।

চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কাতার সোজা করা  সোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অথচ মিলেমিলে দাড়ানো 

কাতার সোজা করার বিষয়ে হাদীস শরীফে জোর তাকীদ

এসেছে।

বিনা প্রয়োজনে মসজিদে চেয়ারের অধিক্যের কারণে তা নাসারাদের গির্জা  ইহুদীদের উপাসনালয়ের সাদৃশদেখা যায়।

তারা গির্জায় চেয়ার  বেঞ্চে বসে উপাসনা করে। আর দ্বীনী

বিষয়ে ইহুদী নাসারা  অন্যান্য জাতিরসাদৃশ্য থেকেহ নিষেধ করা হয়েছে।

নামায তো এমন ইবাদত যা আদায় করতে হয় বিনয়াবনত হয়ে বিগলিতচিত্তে। আর চেয়ারে বসে নামাযআদায় করার চেয়ে

জমিনে বসে নামায আদায়ের মাঝে তা পূর্ণমাত্রায় পাওয়া

যায়।

কোন কোন যুবক  সুস্থ ব্যক্তি নামাযের পর মসজিদে রাখা চেয়ারে বসে আরাম করে। কখনো কখনো চেয়ারনিয়ে গোল হয়ে

বসে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয়। এটা মসজিদের পবিত্রতা,

মার্যাদা  আদবের খেলাফ।

মসজিদে চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কোন কোন ছুরতে কুরআনে কারীম এবং মুরববী নামাযীদের আদব ওএহতেরামের

ব্যত্যয় ঘটে।’’

(নমুনা স্বরূপ আপত্তির  সাতটি দিক উল্লেখ করার পর হযরত লেখেন 🙂

اس لئے اشارہ سے نماز پرهنے كے لئے بهى حتى الامكان كرسيوں

كے استعمال سے بچنا چاہئے اور ان كے استعمال كى حوصلہ

شكنى كرنى چاہئے، اور ان كا استعمال صرف ان حضرات كى حد تك محدود كرنا چاہئے جو زمين پر بيٹهكر نماز ادا كرنے پر قادر نہ ہوں.

‘‘… জন্যই ইশারায় নামায আদায় করার জন্যও যথাসম্ভব চেয়ারের ব্যবহার না করা চাই। চেয়ার ব্যবহারেরপ্রতি নিরুৎসাহিত

করা চায় এবং এর ব্যবহার কেবলমাত্র  সকল ব্যক্তির

মাঝে সিমাবদ্ধ করা উচিতযারাজমিনে বসে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়।’’

এই স্পষ্ট বক্তব্য সত্ত্বেও হযরত আবার এটাও লিখেছেন যেরুকু সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তিগণ জমিনের উপরবসে ইশারায়

নামায আদায় করতে সক্ষম হওয়ার পরও যদি চেয়ারে বসে

নামায আদায় করে থাকেনতাহলেসেটাও জায়েযকিন্তু অনুত্তম কাজ। আর দারুল উলূম দেওবন্দের ফতওয়ায় এটাকে শুধু

অনুত্তমই বলা হয়নিবরং বলা হয়েছেতা বিভিন্ন কারণে

কারাহাত’ মুক্ত নয়।

আমার যদ্দুর জানা আছেআমাদের দেশের বিভিন্ন দারুল ইফতার ফতওয়াও এটাই। মারকাযুদ দাওয়ার দারুলইফতার

ফতওয়াও এটাই যেরুকু সিজদায় অক্ষম ব্যক্তিগণ জমিনে বসতে

সক্ষম হলে তাদের জন্য চেয়ারে বসেনামায আদায় করা মাকরূহ। যা পরিহার করা জরুরী। আর রুকু সিজদায় সক্ষম ব্যক্তি

যদি এমনটি করে তাহলেতো তার নামাযই শুদ্ধ হবে না।

মোদ্দাকথা এই যেযে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হলজমিনে বসে তাআদায় করা।

আর যে রুকু সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল,

ইশারায় তা আদায় করা। আর যেব্যক্তি যমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প হলচেয়ারে বসে নামায

আদায় করা।কেবলমাত্র প্রথম  দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে

বসে নামায আদায় করা ঠিক নয়।

আপাতত আপনার প্রশ্নের উত্তরে এই সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলে শেষ করলাম। যদি আল্লাহ তাওফীক দেন তাহলেমাযূর ব্যক্তিদের

নামায বিষয়ে বিস্তারিত  দালীলীক একটি প্রবন্ধ

আলকাউসারে প্রকাশ করার ইচ্ছা থাকল।

و ما توفيقي إلا بالله عليه توكلت و إليه أنيب

 

 

No comments:

Post a Comment

Translate