“আশুরার দিন গোসল করলে সারা বছর রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকবে” এবং “যে ব্যক্তি আশুরার দিন চোখে সুরমা লাগাবে সে সারাবছর চোখের পীড়াতে আক্রান্ত হবে না।” বানোয়াট হাদিস এবং এ সংক্রান্ত আরো কিছু বিদআতি কার্যক্রম:
বর্তমানে নিম্নোক্ত হাদিসটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মানুষ প্রচার করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। বরং তা হাদিসের নামে মিথ্যাচার:
“যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে, সে সারাবছর রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকবে। কেননা সেদিন জমজমের পানি সমগ্র পৃথিবীর পানির সাথে মিশে যায়!” [তাফসিরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ১৪২]
বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ, এই মর্মে প্রচলিত হাদিসটিকে হাদিসের নামে মিথ্যাচার, বানোয়াট বা জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদের সংকলিত ‘প্রচলিত বানোয়াট ও জাল হাদিস শীর্ষক গ্রন্থগুলোতে এটিকে জাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন:
❂ আল্লামা ইবনুল ইয আল হানাফী বলেন,
“আশুরার দিন রোজা রাখা ব্যতিরেকে অন্য কোনও কিছু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়নি। যখন শিয়া রাফেজীরা হুসাইন রা. এর নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ দিন মাতম-বিলাপ ও শোক পালনের বিদআত চালু করল তখন আহলুস সুন্নাহ-এর জাহেলরা এ দিনকে আনন্দ উদযাপন, পরিবার-পরিজনকে ভালো খাবার-দাবার খাওয়ানো, চোখে সুরমা লাগানোর বিদআত চালু করল এবং এ দিন চোখে সুরমা ব্যবহার ও পরিবারকে ভালো খাবার খাওয়ানোর পক্ষে বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করল।” [আল ইবদা ফী মাযারিল ইবতিদা, পৃষ্ঠা নাম্বার: ২৭১]
❂ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. আশুরার দিন চোখে সুরমা ব্যবহার করা, গোসল করা, শরীরে মেহেদী ব্যবহার লাগানো, কলপ ব্যবহার করা, পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত করা, মাজার জিয়ারতে যাওয়া, ভালো খাবার রান্না করা, আনন্দ প্রকাশ করা ইত্যাদিকে অপর পক্ষে এ দিন শোক প্রকাশ, মাতম করা, পিপাসায় থাকা, বিলাপ করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি কার্যক্রমকে বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন,
لَمْ يَرِدْ فِي شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلا عَنْ أَصْحَابِهِ، وَلا اسْتَحَبَّ ذَلِكَ أَحَدٌ مِنْ أَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ لا الأَئِمَّةِ الْأَرْبَعَةِ، وَلا غَيْرِهِمْ. وَلا رَوَى أَهْلُ الْكُتُبِ الْمُعْتَمَدَةِ فِي ذَلِكَ شَيْئًا، لَا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلا الصَّحَابَةِ، وَلا التَّابِعِينَ، لا صَحِيحًا وَلا ضَعِيفًا، لا فِي كُتُبِ الصَّحِيحِ، وَلا فِي السُّنَنِ، وَلا الْمَسَانِيدِ، وَلا يُعْرَفُ شَيْءٌ مِنْ هَذِهِ الأَحَادِيثِ عَلَى عَهْدِ الْقُرُونِ الْفَاضِلَةِ
No comments:
Post a Comment