Monday, April 21, 2025

হাদিসে কুদসি কি আল্লাহর কালাম এই বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা

 প্রশ্ন: হাদীসে কুদসি কি? হাদিসে কুদসি কি আল্লাহর কালাম? এই বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো কথা। ফক্বীহগণের পরিভাষায় নাবী কারীম (ﷺ) আল্লাহ্‌র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। অপরদিকে কুদসি (قُدُس) শব্দের শাব্দিক অর্থ:পবিত্র। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনুল কারিম ব্যতীত যে হাদীস তার রবের পক্ষ থেকে সরাসরি বর্ণনা করেন,অথবা জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর মাধ্যমে তার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন তাই হাদীসে কুদসি। রাসূল (ﷺ) যেহেতু সংবাদ দিচ্ছেন তাই এ প্রকারকে হাদীস বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় বিধায় এটাকে হাদীসে কুদসি বলা হয়। মোটকথা যে সকল হাদীসকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় সেটাই হাদীসে কুদসি। হাদীসে কুদসিকে হাদীসে ইলাহি অথবা হাদীসুর রাব্বানি ইত্যাদি বলা হয়। কারণ এসব হাদীসের সর্বশেষ স্তর আল্লাহ তা‘আলা। হাদীসে কুদসির ভাবার্থ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এতে কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই, তবে হাদীসে কুদসীর শব্দ ও অর্থ উভয়টিই কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে, না কেবল অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে আর শব্দ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে? এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দুটি মত রয়েছে।
.
(১).প্রথম অভিমত অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলা তার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদীসে কুদসীর অর্থ বা মর্মবাণী ইলহামের মাধ্যমে, স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা জিবরীল ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে অহি হিসেবে পৌঁছান। তবে এর শব্দ বা বাক্যবিন্যাস নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নির্ধারণ করেন। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারীদের মতে, যেহেতু হাদীসে কুদসীর শব্দ নবীর পক্ষ থেকে এসেছে, তাই তা সৃষ্ট কারণ এটি আল্লাহর কালামের মতো নয়, বরং নবীর বক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। তাদের মতে, একমাত্র কুরআনই আল্লাহর কালাম, যা অর্থ ও শব্দ উভয় দিক থেকেই সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে এবং যার তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা তার ইবাদত আঞ্জাম দেই।
.
(২).দ্বিতীয় অভিমতের অনুসারে হাদীসে কুদসীর শব্দ ও অর্থ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আগত। সুতরাং এটি আল্লাহর কালামের অন্তর্ভুক্ত, সৃষ্ট নয়; কারণ “সাধারণভাবে, যা কিছু আল্লাহর প্রতি বানীরূপে সংযুক্ত হয়, তা আল্লাহরই কথা হিসেবে গণ্য হয়। আর যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন’, তখন এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে ঐ শব্দসমূহ আল্লাহরই কালাম।” তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা শুধু কুরআনেই নয়,বরং অন্য অনেক প্রেক্ষাপটেও কথা বলেন।তবে হাদীসে কুদসী কুরআনের মতো অলৌকিক মু‘জিযা নয়,যেমনি ভাবে কুরআনের সমতুল্য কিছু পেশ করার চ্যালেঞ্জ আল্লাহ তাআলা মানুষের সামনে রেখেছেন, হাদীসে কুদসীর ক্ষেত্রে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়নি। তেমনি হাদীসে কুদসী তিলাওয়াতের দ্বারা সালাত আদায়ের বিধানও শরীয়তে নেই। এই বিষয়ে দুটি অভিমত থাকলেও, অধিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো হাদীসে কুদসী কুরআনের মতো নয় এবং তা দ্বারা সালাত আদায় করা জায়েয নয়।” এই দ্বিতীয় মতটিকেই অধিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
.
হাদীসে কুদসীর শব্দ যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই এসেছে, তা ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর রচনার মাধ্যমেই প্রমাণিত। তিনি সহীহ বুখারীতে ‘بابٌ قولُ الله تعالى: يُرِيدُونَ أَنْ يُبَدِّلُوا كَلامَ اللَّهِ’ শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেন— অর্থাৎ: ‘তারা আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে চায়’। এই শিরোনামের অধীনে তিনি প্রায় দশটি হাদীসে কুদসী সংকলন করেছেন।। হাফিয ইবনু হাজার আল-আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় মন্তব্য করেন:والذي يظهرُ : أنّ غرضهُ أنّ كلامَ الله لا يختصُّ بالقرآنِ ، فإنّه ليسَ نوعًا واحدًا “এটি স্পষ্ট যে, ইমাম বুখারীর উদ্দেশ্য ছিল এ কথা বোঝানো যে, আল্লাহর কালাম কেবল কুরআনেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আল্লাহর বাণীর বিভিন্ন রূপ রয়েছে।”(ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, খন্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৪৭৩)
.
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য থেকে এটাই বুঝা যায়, যেখানে তিনি একটি হাদীসের উপর মন্তব্যে করে বলেছেন:وهو مِن الأحاديثِ الإلهيّةِ التي رواها الرسولُ عن رَبِّهِ ، وأخبرَ أنّها مِن كلامِ الله تعالى ، وإنْ لم تكنْ قرآنًا “এটি সেসব ইলাহি হাদীসের অন্তর্ভুক্ত, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন।এবং তিনি নিজেই বলেছেন যে, এটি আল্লাহ তাআলার কথা, যদিও তা কুরআনের (অন্তর্ভুক্ত) অংশ নয়।”(মাজমু’ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ১৫৭)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: “অনুগ্রহ করে কুরআন ও হাদিসে কুদসীর মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করবেন। যদি আমি হাদিসে কুদসীর ইবারত (আরবী মূল টেক্সট) মনে না রাখতে পারি, তবে কি আমি বলতে পারব যে, এই হাদিসের অর্থ এমন-এমন? হাদিসে কুদসী দ্বারা নফল সলাত আদায় করা কি বৈধ?

উত্তরে শাইখ বলেন:

القرآن هو كلام الله المعجز ، الذي جعله معجزة نبيه صلى الله عليه وسلم ، وجعله دليلاً على صدق رسالته، وأنه على حق ، وأنه كلام الله ، جعله سبحانه وتعالى معجزةً لنبيه صلى الله عليه وسلم ، ودليلاً على أنه رسول الله حقا، يقرأ به المؤمن في صلاته وفي غيرها، يتعبد بذلك ، فهو كلام الله حروفه ومعانيه ، كلام الله حروفه ومعانيه ، كلام الله ، تكلم به سبحانه ونزل به جبرائيل إلى النبي صلى الله عليه وسلم ، هذا قول أهل السنة والجماعة، هو كلام الله حقاً، ليس كلام غيره .
أما الحديث القدسي فهو الكلام المنسوب إلى الله ، الذي نسبه الرسول صلى الله عليه وسلم ، يقال: حديث قدسي، يعني حديث عن الله جل وعلا، فهو أيضاً يعتبر من كلام الله ، لفظه ومعناه، إذا ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: قال الله كذا: فيعتبر من كلام الله ، هذا هو الصحيح لفظاً ومعنى ، كما في الحديث يقول الله جل وعلا: ( يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً فلا تظالموا، يا عبادي كلكم ضال إلا من هديته فاستهدوني أهدكم ) ، هكذا قال النبي صلى الله عليه وسلم عن الله عز وجل ، وهكذا ما جاء فيما معناه من الأحاديث التي ينقلها النبي عن الله ، يقول : هذا كلام الله ، هذا يسمى حديثاً قدسيا، ولكن ليس له لفظ القرآن ، ليس بمعجز، ولا يقرأ به في الصلاة ، الصلاة يقرأ فيها بالقرآن خاصة ، أما الأحاديث القدسية يقرأها الإنسان للفائدة ، في نفسه أو مع إخوانه للفائدة ، أما أنه يقرأ بالحديث القدسي في الصلاة لا ، ليس حكمه حكم القرآن في هذا، القرآن معجز ويقرأ في الصلوات فله حكم آخر، ولكن الحديث القدسي ينسب إلى الله ، ويقال : أنه كلام الله لفظه ومعناه، لكن ليس بمعجز، وليس له حكم القرآن في أن لا يمس الكتاب الذي فيه إلا طاهر، وليس له حكم القرآن في أن يقرأ به في الصلاة ، فهذا شيء، وهذا شيء.”
“কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী, যা অলৌকিক (মুজিযা) এবং আল্লাহ তা’আলা তা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য মুজিজা হিসেবে প্রেরণ করেছেন।এটি তাঁর রিসালাতের সত্যতা ও তাঁর সঠিক পথের উপর থাকার প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা এটিকে তাঁর নবীর জন্য মুজিযা এবং তাঁর সত্যিকারের রাসূল হওয়ার দলীল বানিয়েছেন। ঈমানদারগণ তা সালাতে এবং সালাতের বাইরেও পাঠ করেন; এর মাধ্যমে ইবাদত করেন। এটি আল্লাহর কালাম এর বর্ণ ও অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ স্বয়ং এ কালাম বলেছেন এবং জিবরাঈল (আলাহিস সালাম)-এর মাধ্যমে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নাজিল করেছেন।এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বক্তব্য যে, কুরআন আল্লাহরই কথা যা অন্য কারও নয়। আর হাদীসে কুদসী হল সেই কথা, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ করে তার উম্মতের কাছে বর্ণনা করেছেন। বলা হয় হাদীসে কুদসী অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে হাদীস। এটিকেও আল্লাহর কথা হিসেবে গণ্য করা হয় যদি এটি প্রমাণিত হয় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: এরকম এরকম” তাহলে তা অর্থ ও শব্দসহ আল্লাহর কালাম হিসেবেই গণ্য হবে। যেমন হাদীসে রয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর জুলুম করা কে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর জুলুম-অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে দিশেহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব।” এভাবেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কথা উল্লেখ করেছেন। এরকম আরও হাদীস এসেছে, যা নবী (ﷺ) আল্লাহর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। একে আল্লাহর কথা বলা হয় এবং এটি হাদীসে কুদসী নামে পরিচিত। তবে, এটি কুরআনের শব্দ নয়, এটি মুজিযা নয়, এবং এটি সালাতে তিলাওয়াত করা হয় না, সালাতে কেবল কুরআন পাঠ করা হয়। হাদিসে কুদসীগুলো মানুষ তার নিজের উপকারের জন্য অথবা তার তার সহকর্মীদের উপকারের জন্য পড়ে। তবে হাদিসে কুদসী সালাতে তিলাওয়াত করা হয় না, এর বিধান কুরআনের বিধানের মতো নয়। কুরআন অলৌকিক ও সালাতে পাঠ করা হয়, তাই তার অন্য বিধান রয়েছে। তবে হাদিসে কুদসী আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ করা হয় এবং বলা হয় যে এটি আল্লাহর কথা, তার বাক্য ও অর্থসহ। তবে এটি অলৌকিক (মুজিযা ) নয়, এবং কুরআনের মতো এর কোনো বিধান নেই যে, এটি শুধু পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারবে না, এর কোনো বিধান নেই যে, এটি সলাতে তিলাওয়াত করা যাবে। এটি এক জিনিস আর ওইটি আরেক জিনিস।”( এ বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১০৫২২)
.
জারকানি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:

” الحديث القدسي الذي قاله الرسول حاكيا عن الله تعالى : فهو كلام الله تعالى أيضا ، غير أنه ليست فيه خصائص القرآن التي امتاز بها عن كل ما سواه .

ولله تعالى حكمة في أن يجعل من كلامه المنزل معجزا وغير معجز ، لمثل ما سبق في حكمة التقسيم الآنف من إقامة حجة للرسول ولدين الحق بكلام الله المعجز ، ومن التخفيف على الأمة بغير المعجز ؛ لأنه تصح روايته بالمعنى وقراءة الجنب وحمله له ومسه إياه إلى غير ذلك .

وصفوة القول في هذا المقام : أن القرآن أوحيت ألفاظه من الله اتفاقا ، وأن الحديث القدسي أوحيت ألفاظه من الله على المشهور ، والحديث النبوي أوحيت معانيه ـ في غير ما اجتهد فيه الرسول ـ والألفاظ من الرسول .

بيد أن القرآن له خصائصه : من الإعجاز ، والتعبد به ، ووجوب المحافظة على أدائه ، بلفظه ونحو ذلك ، وليس للحديث القدسي والنبوي شيء من هذه الخصائص .

والحكمة في هذا التفريق أن الإعجاز منوط بألفاظ القرآن ، فلو أبيح أداؤه بالمعنى لذهب إعجازه وكان مظنة للتغيير والتبديل واختلاف الناس في أصل التشريع والتنزيل .

أما الحديث القدسي والحديث النبوي فليست ألفاظهما مناط إعجاز , ولهذا أباح الله روايتهما بالمعنى ، ولم يمنحهما تلك الخصائص والقداسة الممتازة التي منحها القرآن الكريم , تخفيفا على الأمة , ورعاية لمصالح الخلق في الحالين من منح ومنع , إن الله بالناس لرءوف رحيم ”

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে হাদীসে কুদসী আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন, সেটিও আল্লাহ তা‘আলার কথা তবে এর মধ্যে কুরআনের সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ নেই, যা কুরআনকে অন্য সকল বক্তব্য থেকে বিশেষ ও স্বতন্ত্র করেছে।আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাযিলকৃত বানীর মধ্যে কিছুকে মু‘জিযা (অলৌকিক) এবং কিছুকে অ-অলৌকিক রাখার মধ্যে হিকমত স্থাপন করেছেন।

যেমন: পূর্বে আলোচিত বিভাগকরণের হিকমতের ন্যায়, এর একটি হিকমত হলো রাসূল ও সত্য দ্বীনের পক্ষে আল্লাহর অলৌকিক বানীর মাধ্যমে হুজ্জত (দলীল) প্রতিষ্ঠা করা, আর অন্যদিকে উম্মতের জন্য অ-অলৌকিক কথার মাধ্যমে সহজতা ও সুবিধা রাখা; কারণ এসব হাদীস অর্থানুযায়ী বর্ণনা করা বৈধ, জুনুবী অবস্থায় তিলাওয়াত করা জায়েয, বহন করা, স্পর্শ করা ইত্যাদি বৈধ।এই প্রসঙ্গে সারকথা হলো: কুরআন এর শব্দসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী হিসেবে নাযিল হয়েছে এ নিয়ে সকলের ঐকমত্য রয়েছে। হাদীসে কুদসী এর শব্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী হিসেবে নাযিল হয়েছে এটা প্রসিদ্ধ মত। আর হাদীসে নববী এর অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী, যেসব ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) নিজ ইজতিহাদ করেননি, এবং এর শব্দসমূহ রাসূল (ﷺ)-এর নিজস্ব।

তবে কুরআনের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন: এটি মু‘জিযা, এর দ্বারা ইবাদত করা হয়, এর উচ্চারণসহ যথাযথ সংরক্ষণ করা আবশ্যক কিন্তু এসব বৈশিষ্ট্যের কিছুই হাদীসে কুদসী বা হাদীসে নববীর মধ্যে নেই। এই পার্থক্যের মধ্যে হিকমত হলো যে, কুরআনের অলৌকিকতা (মুজিযা) এর শব্দের সাথেই সম্পৃক্ত। অতএব, যদি কুরআনকে অর্থানুযায়ী পাঠের অনুমতি দেওয়া হতো, তাহলে এর মু‘জিযা হারিয়ে যেত এবং এতে পরিবর্তন, বিকৃতি ও আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ মূল শরীআতের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে মতভেদের আশঙ্কা তৈরি হতো। অন্যদিকে, হাদীসে কুদসী ও হাদীসে নববীর মু‘জিযা শব্দের উপর নির্ভরশীল নয়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা এগুলোর অর্থানুযায়ী বর্ণনার অনুমতি দিয়েছেন এবং এগুলোকে কুরআনের মতো বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও পূর্ণ মর্যাদা প্রদান করেননি। এটি উম্মতের উপর হালকা করার জন্য এবং মানুষের কল্যাণের জন্য। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার মান্নাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল”। (মানাহিলুল উরফান; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৭-৩৮)। অতএব, কিছু আলেম দ্বিতীয় মতামতকে গ্রহণ করেছেন, এবং তারা বলেছেন যে, হাদীসে কুদসী আল্লাহ তাআলা থেকে তার অর্থ সহ নাযিল হয়েছে শব্দ নয়।
.
ইবনু হাজার হায়তামী আশ শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

فائدة يعم نفعها ، ويعظم وقعها ، في الفرق بين الوحي المتلو وهو القرآن ، والوحي المروي عنه صلى الله عليه وسلم عن ربه عز وجل ، وهو ما ورد من الأحاديث الإلهية ، وتسمى القدسية .
اعلم أن الكلام المضاف إليه تعالى أقسام ثلاثة :
أولها – وهو أشرفها – : القرآن ، لتميزه عن البقية بإعجازه من أوجه قدمناها أول الكتاب ، وكونه معجزة باقية على ممر الدهر ، محفوظة من التغيير والتبديل ، وبحرمة مسه للمحدث ، وتلاوته لنحو الجنب ، وروايته بالمعنى ، وبتعينه في الصلاة ، وبتسميته قرآنا ، وبأن كل حرف منه بعشر حسنات ، وبتسمية الجملة منه آية وسورة .

وغيره من بقية الكتب والأحاديث القدسية لا يثبت لها شيء من ذلك ، فيجوز مسه ، وتلاوته لمن ذكر ، وروايته بالمعنى ، ولا يجزئ في الصلاة ، بل يبطلها ، ولا يسمى قرآنا ، ولا يعطى قارئه بكل حرف عشرا ، ولا يسمى بعضه آية ولا سورة اتفاقا أيضا .

ثانيها : كتب الأنبياء عليهم الصلاة والسلام قبل تغييرها وتبديلها .

ثالثها : بقية الأحاديث القدسية ، وهي ما نقل إلينا آحادا عنه صلى الله عليه وسلم ، مع إسناده لها عن ربه ، فهي من كلامه تعالى ، فتضاف إليه ، وهو الأغلب ، ونسبتها إليه حينئذ نسبة إنشاء ؛ لأنه المتكلم بها أولا ، وقد تضاف إلى النبي صلى الله عليه وسلم ؛ لأنه المخبر بها عن الله تعالى ، بخلاف القرآن ، فإنه لا يضاف إلا إليه تعالى ، فيقال فيه : قال الله تعالى ، وفيها : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما يروي عن ربه

“একটি উপকারী আলোচনা, যার উপকারিতা সর্বজনীন এবং যার প্রভাব অত্যন্ত মহান, তা হলো: ওহী মাতলু (যা তিলাওয়াতযোগ্য ওহী, অর্থাৎ কুরআন) এবং ওহী মারউই (যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ হাদীসে কুদসী) এটা ইলাহি হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে আর এটাই কুদসী’ নামে পরিচিত। এই দুটির মাঝে পার্থক্য।

জেনে রাখুন আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত বাণীসমূহ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত:

প্রথমত: যা সবচেয়ে সম্মানিত তা হল কুরআন। এর মর্যাদা অন্যান্য সকলের তুলনায় বেশি। কারণ এটি অলৌকিক এবং বিভিন্ন দিক থেকে চ্যালেঞ্জনীয় যা আমরা এই বইয়ের শুরুতেই আলোচনা করেছি। এটি স্থায়ী মুজিযা যা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকবে, এটি পরিবর্তন ও বিকৃতি থেকে সংরক্ষিত, অপবিত্র ব্যক্তি এটি স্পর্শ করতে পারে না, এর তিলাওয়াত জুনুবী ব্যক্তি বা অপবিত্র অবস্থায় বৈধ নয়, এটি অর্থানুযায়ী বর্ণনা করা বৈধ নয়, সালাতে কেবল কুরআনই পড়া যায়, অন্য কিছু পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যায়, এটিকে ‘কুরআন’ বলে বিশেষায়িত করা হয়েছে, এর প্রতিটি অক্ষর তেলাওয়াতের জন্য দশ নেকি লেখা হয়, এর একটি বাক্যকে ‘আয়াত’ এবং কিছু অংশকে ‘সূরা’ বলা হয়। অন্য কোনো কিতাব বা হাদীসে কুদসীর ব্যাপারে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনোটিই প্রমাণিত নয়। তাই সেগুলো স্পর্শ করা বৈধ, অপবিত্র অবস্থায় তা তিলাওয়াত করা বৈধ, অর্থ অনুযায়ী বর্ণনা করা বৈধ, সেগুলোর দ্বারা সালাত আদায় করা বৈধ নয়, বরং তা সালাতকে বাতিল করে দেয়, সেগুলোকে কুরআন বলা যায় না, সেগুলোর প্রতিটি অক্ষরের জন্য দশ নেকি নির্ধারিত নয়, সেগুলোর কোনো অংশকে ‘আয়াত’ বা ‘সূরা’ বলা হয় না এ বিষয়ে সকলের ঐকমত্য রয়েছে।
.
দ্বিতীয়ত: পূর্ববর্তী নবীদের কিতাবসমূহ, যেগুলো পরিবর্তন ও বিকৃতির পূর্বে অবিকৃত ছিল।
.
তৃতীয়ত:বাকি হাদীসে কুদসীসমূহ। যা আমাদের নিকট আহাদ (একক সূত্রে) বর্ণনা হিসেবে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে, আর তিনি এগুলো তাঁর রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন।
এগুলো আল্লাহর কথা তাই এগুলো তাঁর দিকেই সম্বন্ধিত হয়, এবং এটাই অধিক প্রচলিত। তবে এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকেও সম্বন্ধ করা হয় কারণ তিনিই সেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। এটি কেবলমাত্র আল্লাহর দিকেই সম্বন্ধ করা হয়। কুরআনের ব্যাপারে বলা হয়: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন”। অন্যদিকে হাদীসে কুদসীর ব্যাপারে বলা হয়:”রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রব থেকে বর্ণনা করে বলেছেন।” (আল-ফাতহুল মুবীন বিই-শারহিল আরবাঈন”,পৃষ্ঠা: ৪৩২-৪৩৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন

وقد اختلفَ العلماءُ رحمهم الله في لَفْظِ الحديثِ القُدْسيِّ : هل هو مِن كلامِ الله تعالى أو أنّ الله تعالى أَوْحَى إلى رسولِه صلى الله عليه وسلم مَعْنَاه ؛ واللفظُ لَفْظُ رسولِ الله صلى الله عليه وسلم ؟ على قولينِ :

القول الأول : إنّ الحديثَ القُدْسيَّ مِن عند الله لَفْظُهُ ومعناهُ ، لأنّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم أضافهُ إلى الله تعالى ، ومِن المعلومِ أنّ الأصلَ في القولِ المضافِ أنْ يكونَ بِلَفْظِ قائِله لا ناقلِه ، لا سيَّمَا أنّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم أقوى الناسِ أمانةً وأوثقهم روايةً .

القول الثاني: إنّ الحديث َ القُدْسِيَّ معناه مِن عند الله ، ولفظهُ لفْظُ النبيِّ صلى الله عليه وسلم ، وهذا هو الراجح .

ثم لو قيلَ : إنّ الأَوْلَى تركُ الخوضِ في هذا ، خوفًا مِن أنْ يكونَ مِن التنَطُّعِ الهالكِ فاعلُهُ ، والاقتصارُ على القول : بأنّ الحديثَ القُدْسِيَّ ما رواه النبيُّ صلى الله عليه وسلم عن رَبِّهِ وكفى ، لكانَ كافيًا ، ولعلّه أَسْلَمُ والله أعلمُ ”

“হাদীসে কুদসীর শব্দ সম্পর্কে আলেমগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) মতভেদ করেছেন এটি কি আল্লাহ তাআলার কথা? না কি আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে এর অর্থ ওহী করেছেন, আর শব্দাবলী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিজস্ব?
.
এই বিষয়ে দুইটি মত রয়েছে;

প্রথম মত: হাদীসে কুদসীর অর্থ ও শব্দ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে আল্লাহ তাআলার প্রতি সম্বন্ধ করেছেন। আর এটা তো জানা বিষয় যে, কোনো কথাকে যখন কারো দিকে সম্বন্ধ করা হয়, তাহলে মূলনীতি হল সে কথার শব্দ ও অর্থ তারই হবে, যিনি তা বলছেন; বর্ণনাকারীর নয়। বিশেষত এই বিবেচনায় যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বড় আমানতদার এবং হাদীস বর্ণনায় সর্বাধিক বিশ্বস্ত।
.
দ্বিতীয় মত: হাদীসে কুদসীর অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর শব্দাবলী এই বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া উত্তম, এই আশঙ্কায় যে, এটা হয়তো এমন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যার ফলে মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বরং এটুকু বলেই সংক্ষিপ্ত থাকা উচিত হাদীসে কুদসী হচ্ছে এমন হাদীস, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেছেন এটাই যথেষ্ট। এটাই হয়তো সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৫৯-৬৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ নাসরুল্লাহ আল মাদানী।
অনার্স অধ্যায়নরত, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate