Friday, January 10, 2025

নারীদের জন্য শরিয়তের জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি

 নারীদের জন্য শরিয়তের জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি:

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. (মৃত্যু: ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)-এর দিকনির্দেশনা।

✪✪ উপস্থাপক: “হে সম্মানিত শাইখ! এই প্রশ্নকারী জানতে চান: একজন নারীর পক্ষে জ্ঞান অর্জনের জন্য কোথাও যাওয়া কি বৈধ? এবং আপনি কোন শরিয়ত বিষয়গুলো অধ্যয়ন করতে পরামর্শ দেন?”
উত্তর: “হ্যাঁ, একজন নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা বৈধ এবং কখনও কখনও তার জন্য এটি আবশ্যক। তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যেমন:
– রেডিওর মাধ্যমে। বিশেষত ইযাআতুল কুরআন (রেডিও কুরআন) থেকে। (এটি সৌদি আরবে কুরআন ও সুন্নাহর ইলম প্রচারে নিবেদিত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি রেডিও)
– শিক্ষিত নারীদের কাছে গিয়ে।
– এমন ইলমি বৈঠকাদিতে অংশগ্রহণ করে যা নারীদের জন্য উপযুক্ত এবং যেখানে তিনি পর্দা রক্ষা করতে পারেন।
– টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে আলেমদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে।
এসবই জ্ঞান অর্জনের উপায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান দান করেন।”

যদি এমন কোনও মহিলা শিক্ষক থাকেন যিনি নারীদেরকে শিক্ষা দেন তাহলে নারীর জন্য তাদের কাছে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। আর যদি কোনও পুরুষের ইলমি বৈঠক হয় এবং সেখানে নারীদের জন্য পৃথক স্থান থাকে যেখানে তারা পর্দার সঙ্গে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন তাহলে তারা সেখানে গিয়ে শিক্ষা নিতে পারেন। তবে সবক্ষেত্রেই পর্দা রক্ষা করা, ফিতনা এড়ানো এবং নিজের সুরক্ষা বজায় রাখা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা তাঁর মহাগ্রন্থে বলেছেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা আত-তাগাবুন: ১৬]

উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

✪✪ প্রশ্ন: ইয়েমেনের হাদরামাউত থেকে এক বোন প্রশ্ন করছেন: একজন মেয়ের জন্য সঠিক ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি কী? এবং যদি তার দেশে আলেমদের অভাব থাকে তবে ঘরে বসে টেপ রেকর্ড শুনে বা বই পড়ে শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করা কি যথেষ্ট হবে? এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিন, হে সম্মানিত শাইখ।
উত্তর: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম প্রেরিত হোক আল্লাহর রসুল, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবিগণ এবং তাদের উপর যারা সঠিক পথে চলে। শরিয়ত জ্ঞান বিভিন্ন উপায়ে অর্জন করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

◈ ১. রেডিও বা অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে:

o সৌদি আরব থেকে প্রচারিত নূরুন আলাদ-দারব প্রোগ্রাম এবং ইযাআতুল কুরআন (রেডিও কুরআন) শোনার মাধ্যমে।
o আলেমদের বক্তৃতা, জুমার খুতবা এবং অন্যান্য উপদেশমূলক বয়ান শুনে।
o এগুলো ঘরে বসে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই কার্যকর পদ্ধতি।

◈ ২. কুরআন অধ্যয়ন:

কুরআন অধ্যয়ন করা হলো জ্ঞান অর্জনের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপকারী পদ্ধতি। এর মধ্যে রয়েছে:

o কুরআনের অর্থ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা।
o যে বিষয়গুলো বোঝা কঠিন তা জানতে টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে ইলম, আকিদা, আচার-আচরণ ইত্যাদি দিক থেকে সুপরিচিত আলেমদেরকে প্রশ্ন করা।
o নির্ভরযোগ্য তাফসির গ্রন্থ যেমন: তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে তাবারি, বাগাভি, শওকানি প্রভৃতি অধ্যয়ন করা।

◈ ৩. ইলমি মজলিসে অংশগ্রহণ:

o মসজিদে বা উপযুক্ত স্থানে আয়োজিত ইলমি মজলিস বা বৈঠকে নারীরা পর্দার সাথে অংশ নিতে পারেন।
o জুমার খুতবা শোনা যদি বক্তা বিশুদ্ধ আকিদার অনুসারী এবং বিশ্বস্ত আলেম হন।
◈ ৪. টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে আলেমদের প্রশ্ন: নারীরা টেলিফোনে আলেমদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রশ্নের সমাধান জানতে পারেন। তবে অবশ্যই তাদেরকে নির্ভরযোগ্য আলেমদের হতে হবে।

❑ পুরুষদের জন্য দিকনির্দেশনা:

পুরুষদের ক্ষেত্রেও আলেমদের কাছে সরাসরি গিয়ে বা তাদের সাথে দেখা করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَن يُرِدِ اللَّهُ به خَيْرًا يُفَقِّهْهُ في الدِّينِ
“যাকে আল্লাহ কল্যাণ দান করতে চান, তাকে তিনি দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” [সহিহ বুখারি]
আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন,
مَن سلَكَ طريقًا يلتَمِسُ فيهِ علمًا ، سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طريقًا إلى الجنَّةِ
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” [সহিহ বুখারি]
প্রত্যেকেরই জ্ঞান অর্জনের জন্য আন্তরিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করলে তিনি পথ সহজ করে দেবেন।
উপসংহার: নিশ্চিতভাবে রেডিওর প্রোগ্রাম, জুমার খুতবা, তাফসির গ্রন্থ অধ্যয়ন এবং আলেমদের পরামর্শসহ বিভিন্ন মাধ্যম নারীদের জন্য উপকারী। আল্লাহ সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
উপস্থাপক: আমিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন, হে সম্মানিত শাইখ।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার গুরুত্ব ও মর্যাদা

 আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার গুরুত্ব, মর্যাদা ও অর্থ:

‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা’ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আকিদাগত বিষয়। ইসলামের একে ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ও বলা হয়। তাই এ সম্পর্ক সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি।

তাই নিম্নে অতিসংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হলো:

❒ ১মত: ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা’র মর্যাদা:

এ বিষয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল। যথা:

🔷 যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে আর আল্লাহর জন্যই রাগ বা দুশমনি পোষণ করবে সে প্রকৃত ইমানের স্বাদ উপভোগ করবে:

“আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ طَعْمَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ يُحِبُّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَمَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ كَانَ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللهُ مِنْهُ

“তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ইমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে।
১. যে ব্যক্তি কোনও মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে।
২. যার নিকট আল্লাহ ও আল্লাহর রসুল অন্য সব কিছু হতে অধিক প্রিয় হবে।
৩. এবং আল্লাহ তাকে কুফরি থেকে রক্ষা করার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট অধিক প্রিয় মনে হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদিস: ২১, ৬০৪১ ও সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩, ৬৮]

🔷 আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা ইমানের সবচেয়ে মজবুত বন্ধন:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

« إِنَّ أَوْثَقَ عُرَى الْإِيمَانِ أَنْ تُحِبَّ فِي اللهِ، وَتُبْغِضَ فِي اللهِ »

“ইমানের সবচেয়ে সুদৃঢ় বন্ধন হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করা”। [জারির ইবনে আব্দুল হামিদ এর সনদে ইমাম বায়হাকী শুয়াবুল ইমানে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিস নং ১৪]

🔷 এটি আল্লাহর নিকট অতি পছন্দনীয় আমল:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ الْحُبُّ فِي اللهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللهِ »

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করা”।[আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৯৯]

❒ ২য়ত: আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার অর্থ:

🔸‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা’-এর অর্থ হল, আল্লাহর কারণে ভালোবাসা বা আল্লাহকে কেন্দ্র করে ভালোবাসা। কাউকে আমি ভালোবাসবো এ কারণে যে, সে আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহর ইবাদত করে, তার মধ্যে ইমান, তাকওয়া ও দ্বীনদারী বিদ্যমান রয়েছে…। এ ভালোবাসার পেছনে দুনিয়ার কোনও স্বার্থ নেই। এর আলামত হলো ৪টি। যথা:
১. তার জন্য কল্যাণ কামনা করা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া।
২. ভালো কাজে তাকে সাহায্য করা।
৩. তার অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা।
৪. তার যে কোনও সমস্যায় পাশে দাঁড়ানো এবং তার প্রয়োজন পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

🔸‘আল্লাহর উদ্দেশ্যই রাগ বা ঘৃণা পোষণ’ করার অর্থ হল, কোন ব্যক্তিকে আমি ঘৃণা করব বা তার সাথে দুশমনি পোষণ করব এ কারণে যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে ঘৃণা করে বা তাদের সাথে দুশমনি পোষণ করে, আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরিতে লিপ্ত, সে বিদআতে নিমজ্জিত, পাপাচারে মত্ত, তার মধ্যে ইমান ও তাকওয়া নেই, কুরআন-সুন্নাহর বরখেলাফ কাজ করে..ইত্যাদি।

সুতরাং আল্লাহ ভীরু, দ্বীনদার, সৎ লোক ও আহলে ইলমদের কেবল আল্লাহর জন্যই পরিপূর্ণভাবে ভালোবাসতে হবে। আর কাফের-মুশরিক, বিদআতি, মুনাফিক এবং আল্লাহর দুশমনদেরকে পরিপূর্ণভাবে ঘৃণা করতে হবে এবং আন্তরিক দুশমনি পোষণ করতে হবে। তাদের সাথে আন্তরিক ভালোবাসা স্থাপন করা জায়েজ নয়। এটি ইমানের দাবি।
অবশ্য কাফের-মুশরিকদের সাথে দুনিয়াবি স্বার্থে, যেমন: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, আত্মীয়ার বন্ধন, কূটনৈতিক বিষয় ইত্যাদি কারণে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখায় কোন দোষ নেই। আর যার মধ্যে কিছু নেকির কাজ আছে আর কিছু গুনাহর কাজ আছে, যারা কিছু কুরআন-সুন্নাহর অনুকূলে কাজ করে আর কিছু কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত কাজ করে অর্থাৎ যার মধ্যে ভালো-মন্দ দু ধরণেরই আচরণ বিদ্যমান রয়েছে তাদেরকে যতটুকু নেকির কাজ বা ইসলামের আদর্শ আছে ততটুকু ভালোবাসতে হবে আর যতটুকু গুনাহ বা ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম রয়েছে ততটুকু ঘৃণা করতে হবে।

➤ বি:দ্র: কাফের-মুশরেক ও পাপাচারীদের প্রতি রাগ, ঘৃণা বা দুশমনি পোষণ করার অর্থ এই নয় যে, তাদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ রাখা যাবে না, তাদের সাথে কথা বলা যাবে না বা তাদেরকে মোটেই সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। বরং সঠিক কথা হল, দাওয়াতের স্বার্থে বা নিজের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখা যাবে, চলাফেরা করা যাবে এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে। এভাবে সুসম্পর্ক রেখে তাকে দ্বীনের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। হতে পারে, এই সদাচরণ ও সাহায্য-সহযোগিতা তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করবে, ইসলামের প্রতি তাদের বিদ্বেষ ও দুশমনি লাঘব করবে অথবা তদেরকে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করবে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফরজ গোসলের বিধান

 প্রশ্ন: রাতে স্বপ্নদোষ হলে এই শীতের সকালে গোসল সম্ভব নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে চাইলে কী করা উচিত?

উত্তর: স্বপ্নদোষ হওয়া বড় নাপাকির অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। সুতরাং এমনটি ঘটলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় পানি গরম করে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যে, সেখানে পানি গরমের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের কারণে অসুস্থ হওয়ার কিংবা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে এক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ। কিন্তু পানি গরমের ব্যবস্থা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না।
◆ আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা তাগাবুন: ১৬]
◆ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“আমি যদি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে তা পালন করবে।” [সহিহ বুখারি]

◆ হাদিসে আরও এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
احتَلمتُ في ليلةٍ باردةٍ في غزوةِ ذاتِ السُّلاسلِ فأشفَقتُ إنِ اغتَسَلتُ أن أَهْلِكَ فتيمَّمتُ، ثمَّ صلَّيتُ بأصحابي الصُّبحَ فذَكَروا ذلِكَ للنَّبيِّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فقالَ: يا عَمرو صلَّيتَ بأصحابِكَ وأنتَ جنُبٌ ؟ فأخبرتُهُ بالَّذي مَنعَني منَ الاغتِسالِ وقُلتُ إنِّي سَمِعْتُ اللَّهَ يقولُ:( وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) فضحِكَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ولم يَقُلْ شيئًا
“যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় এক প্রচণ্ড শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হল, আমি যদি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকজনকে নিয়ে সালাত আদায় করলাম। পরে তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেন, “হে আমর, তুমি নাকি জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছো?” তখন আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণী শুনেছি, (আল্লাহ বলেছেন,)
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’’ (সূরা নিসা: ২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।” [আবু দাউদ-সহিহ]
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মতির মাধ্যমে এমন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
إذا كان في محل لا يستطيع فيه تدفئة الماء وليس هناك كن يستكن به للغسل بالماء الدافي وخاف على نفسه فإنه يصلي بالتيمم
ولا حرج عليه
“যদি সে এমন জায়গায় থাকে যেখানে সে পানি গরম করতে পারে না এবং গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্য সেখানে এমন কোনো ঘর না থাকে যেখানে (ঠাণ্ডা থেকে) আত্মরক্ষা করবে এবং (ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের কারণে) শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করবে। এতে কোনও আপত্তি নেই।” [binbaz]
🔸উল্লেখ্য যে, এই বিধান স্বপ্নদোষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলন কিংবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের মাধ্যমে জুনুবি (নাপাক) হওয়ার ক্ষেত্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ও প্রসূতি নারীর পবিত্রতার জন্য গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

রজব মাস সম্পর্কিত কতিপয় জাল ও জঈফ হাদিস

 রজব মাস সম্পর্কে আমাদের সমাজে লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহিহ নয় আর কিছু হাদিস এমন রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এ ধরণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলো:

🚫 ক. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদিস:

● ১. “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

ইবনে হাজার রহ. বলেন, হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনে শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

এ হাদিসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবি রয়েছে। তাই এ হাদিসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

● ২. “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রমজান।”

“হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” [মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯]

হাদিসটি দুর্বল।

এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন, মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

● ৩. “রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাজানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোজা রাখেননি।” [বাইহাকী]

হাফেয ইবনে হাজার বলেন, উক্ত হাদিসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবি রয়েছে। সে খুব দুর্বল। [তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা]

🚫 খ. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদিস:

● ১. রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।”

এটি জাল হাদিস।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদিসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদিস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন, এই হাদিসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদিসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

● ২. কুরআনের মর্যাদা সকল জিকির-আজকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

হাদিসটি বানোয়াট।

ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদিসটি সনদের রাবিগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদিস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

● ৩. রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় একমাস রোজা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”

হাদিসটি জাল।

এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

● ৪. “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামাজ আদায় করত: বিশ রাকাত নামাজ পড়বে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকাত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকাত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”

এটি একটি বানোয়াট হাদিস।

[দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদিস নং ১৪৪)]

● ৫. “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোজা রাখবে এবং চার রাকাত নামাজ পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

হাদিসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনুল জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। (লিসান্স,মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।।

নফল রোজা বা তাহাজ্জুদ সালাত ইত্যাদির মাধ্যমে বর্ষবরণ হল নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা

  প্রশ্ন-১: নতুন বছরের ১ম দিন কি নফল রোজা রাখা যাবে?

উত্তর: নতুন বছরের ১ম দিন বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ বা অন্য কোন ইবাদত নেই। চাই তা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ হোক বা বাংলা নববর্ষ হোক কিংবা হিজরি নববর্ষ হোক। কেননা ইসলামে বর্ষবরণের জন্য এমন কোনও নির্দেশনা আসেনি। অর্থাৎ ইসলামের সোনালী যুগ তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবি ও তাবেয়ীদের থেকে এমন কোনও আমল প্রমাণিত হয়নি। তাই এই নিয়তে এসব কিছু করলে তা বিদআত বা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত আমল হিসেবে গণ্য হবে-যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, বিদআতি আমলে নেকির পরিবর্তে গুনাহ দ্বারা আমলনামা পূর্ণ হয় যদিও বাহ্যত তা দেখতে নেকির কাজ বা ভালো কাজ বলে মনে হয়। মূলতঃ এগুলোই হলো, “নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা।” (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।)

✪✪ বিদআত তথা ইসলামের নামে দ্বীনের মধ্যে নিত্য-নতুন আবিষ্কারের ভয়াবহতা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

◈ আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন কোন আমল (দ্বীনের কাজ) করল যে ব্যাপারে আমার নির্দেশনা নেই তা (আল্লাহর নিকট) পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম]

◈ আয়েশা রা. থেকে আরও বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]

◈ অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের পর বললেন,

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي [وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ].
“নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল, ভ্রষ্টতা।” [মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১]

আর সুনানে নাসাঈতে রয়েছে, “প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম” [নাসাঈ হা/১৫৭৮]।
তবে বছরের ১ম দিন কেউ যদি রমজান বা মানতের কাজা কাজা রাখতে চায় অথবা সে দিনটি যদি সোম বা বৃহস্পতিবার হয় আর সে এ নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় অথবা যদি সে দিনটি আইয়ামে বীয তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ কিংবা ১৫ তারিখ হয় এবং সে দিন বীযের নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সাধারণ নফল ইবাদত হিসেবে বছরের যে কোন দিন (নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া) রোজা রাখতে পারে। সে হিসেবে তা বছরের ১ম দিন হলেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা অবশ্যই নতুন বছরের আগমন বা বর্ষবরণের নিয়তে রাখা জায়েজ নয়। অন্যথায় তা বিদআতে পরিণত হবে। কারণ ইসলামে নিয়তের উপরেই আমলের পরিণতি নির্ভর করে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إنَّما الأعمالُ بالنِّيَّاتِ وإنَّما لِكلِّ امرئٍ ما نوى

“প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রতিটি মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।” [সহিহ বুখারি-১ম হাদিস]

❑ প্রশ্ন-২: আমরা জানি যে, অনেক মানুষ নানা হারাম কাজের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে। কিন্তু আমি যদি অর্ধ রাতের পরে তাহাজ্জুদের সালাত বা কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তা বরণ করি তাহলে কি জায়েজ হবে?
উত্তর: বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে, অর্ধ রজনীর পর তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত বা বিশেষ কোনও ইবাদত-বন্দেগি করার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বক্তব্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ এ উপলক্ষে যা কিছু করা হবে সবই বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা নতুন বছরকে আমাদের জন্য কল্যাণময় করুন এবং সব ধরণের পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম, শিরক, বিদআত সহ সবধরনের আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

সালাত সংক্রান্ত কতিপয় জরুরি মাসায়েল

 সালাতে সূরা ফাতিহার পর সর্বনিম্ন পূর্ণ অর্থবোধক বা কোনও হুকুম সম্বলিত একটি আয়াত পড়াই যথেষ্ট।

❑ সালাতে সূরা ফাতিহার পর সর্বনিম্ন পূর্ণ অর্থবোধক বা কোন হুকুম সম্বলিত একটি আয়াত পড়াই যথেষ্ট

প্রশ্ন: সালাতে সর্বনিম্ন কতটুকু আয়াত তিলাওয়াত করা হলে সালাত শুদ্ধ হবে? যেমন আয়াতুল কুরসি (এক আয়াত),“আ-মানার রসূলু…” থেকে শেষ পর্যন্ত (দুই আয়াত) বা সুরা তাওবার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি। ন্যূনতম কতটি আয়াত তিলাওয়াত করা সালাতের জন্য যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
সালাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন পূর্ণ অর্থবোধক বা কোনও হুকুম সম্বলিত একটি আয়াত পাঠ করাই যথেষ্ট। তবে তা লম্বা হওয়া উত্তম-যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমদ, কাজি আবু ইয়ালা রহ. প্রমুখ।
সুতরাং সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বা সূরা তাওবার শেষ দুআ আয়াত পড়া যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে পূর্ণ অর্থবোধক বা কোন বিধান সম্বলিত আয়াত না হলে তাতে একটি আয়াত যথেষ্ট নয়। যেমন, مُدْهَامَّتَانِ , الم ইত্যাদি। [কাশফুল কানা’-ইমাম ভূতী, ১/৩৪২]

উল্লেখ্য যে, ১ম বা ২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব নয় বরং মোস্তাহাব। অর্থাৎ কেউ যদি সূরা ফাতিহার পরে কোন কিছু না পড়ে সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত ভবে তা ছাড়া ঠিক নয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من قرأ بأم الكتاب فقد أجزأت عنه ، ومن زاد فهو أفضل

“যে ব্যক্তি সুরা ফাতিহা পাঠ করবে (সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য) তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে এর চেয়ে বেশী পাঠ করবে তা হবে উত্তম।” [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৮] আল্লাহু আলাম।

❑ প্রশ্ন : সালাতে ১ম রাকাতে সুরা বাকারার ১ম রুকু ও ২য় রাকাতে শেষ রুকু তেলাওয়াত করা যাবে কি? কোন সুরার মাঝখান থেকে তিলাওয়াত করলে কি বিসমিল্লাহ পড়তে হবে? যেমন ১ম রাকাতে আয়তুল কুরসি ও ২য় রাকাতে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করলে আয়তুল কুরসির আগে কি বিসমিল্লাহ পড়ব ? বিষয়গুলো আমার কাছে পরিষ্কার নয়। দয়া করে জানাবেন।
উত্তর :
সালাতে ১ম রাকাতে সুরাহ বাকারার ১ম রুকু ও ২য় রাকাতে শেষ রুকু তিলাওয়াহ করা জায়েজ আছে।
কোন সুরার মাঝখান থেকে তিলাওয়াত করলে বিসমিল্লাহ পড়া ও না পড়া উভয়টি জায়েজ। তবে সূরার শুরু থেকে পড়লে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। আল্লাহু আলাম।

❑ প্রশ্ন : তারাবির নামাযে দীর্ঘ কেরাত পাঠ করতে হয়। তবে আমরা যারা বড় বড় সূরা পারি না,যে সূরাগুলো পারি সবই যদি পড়ি। কিন্তু কুরআনে পরপর যেভাবে সূরা সিরিয়াল ভাবে আছে সেভাবেই কি পড়তে হবে? নাকি ফালাক আগে পড়লাম ফীল পরে পড়লাম এমন করলে হবে?
উত্তর:
সঠিক মতানুযায়ি সুরা পড়ার ক্ষেত্রে সুরার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়।▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

রাতের বেলায় কুরআনের ১০০ টি আয়াত তেলাওয়াতের বিশেষ মর্যাদা

 প্রশ্ন: হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাতের বেলা ১০০ আয়াত পাঠ করলে সারা রাত নফল নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হল, এই ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে আমরা নামাযে যে সব সুরা পাঠ করি সেগুলোও কি এর আওতাভুক্ত হবে নাকি নামাযের বাইরে আলাদা ভাবে তেলাওয়াত করতে হবে? বিষয়টি জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর: প্রথমে আমরা এ মর্মে বর্ণিত দুটি হাদিস দেখবো।
❑ তামীম দারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قَالَ مَنْ قَرَأَ مِائَةَ آيَةٍ فِي لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ لَيْلَةٍ
“যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাতের ইবাদত বন্দেগী ও নফল নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।”
(আহমাদ ১৬৯৫৮, নাসাঈ কুবরা ১০৫৫৩, ত্বাবারানী ১২৩৮, দারেমী ৩৪৫০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৪৪)

❑ তিনি আরও বলেছেন,.

مَنْ قرأَ في ليلةٍ مِائةَ آيَةٍ لمْ يُكْتَبْ مِنَ الغَافِلِينَ أوْ كُتِبَ مِنَ القَانِتِينَ
“যে ব্যক্তি রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে তাকে গাফেলদের (অন্যমনস্ক, অমনোযোগীদের) মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে না। অথবা তাকে আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দাদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে।”

(ইমাম মুহাম্মদ বিন নাসর আল মারওয়াযী রহ. ক্বিয়ামুল লাইল, পৃ:৬৬; শাইখ আলবানী সিলসিলা সহীহাহ গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসে শাইখাইন তথা ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হা/৬৪৩)

উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ে কেবল রাতের বেলা ১০০টি আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে। নামাযের ভিতরে না কি বাইরে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি। তাহলে আশা করা যায়, নামাযের ভিতরেই হোক অথবা বাইরে হোক রাতে একশত আয়াত পড়া হলে উক্ত মর্যাদা লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন : উক্ত মর্যাদা লাভের জন্য কি রাতের সালাতে পড়া আবশ্যক?

উত্তর : কিছু হাদিসে রাতের সালাতের কথা উল্লেখ আছে। অর্থাৎ কেউ যদি রাত্রে নফল সালাতে ১০০ টি আয়াত পাঠ করে তাহলে সে এই মর্যাদা লাভ করবে। যেমনটি বলেছেন, ইমাম ইবনে হাজার সহ অন্যান্য আলেমগণ।
তবে কিছু হাদিসে সালাতের কথা উল্লেখ নেই। এ কারণে কিছু আলেমের মতে, সালাতের বাইরে পড়লেও এই মর্যাদা লাভ হবে। যেমনটি মিশকাতুল মাসাবিহ-এর ভাষ্যগ্রন্থ মিরআতুল মাফাতীহ (مرعاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح)-এর লেখক আল্লামা উবায়দুল্লাহ মোবারকপুরি ইমাম তীবীর সূত্রে এ মত উল্লেখ করেছেন।
وحاصله أن الحديث مطلق غير مقيد لا بصلاة ولا بليل، فينبغي أن يحمل على أدنى مراتبه، ويدل عليه قوله لم يكتب من الغافلين

সুতরাং এমতানুযায়ী যদি সালাতের বাইরেও আয়াতুল কুরসি, সূরাতুল ইখলাস, সূরাতুল ফালাক, সূরাতুন নাস, সুরাতুল মুলক ইত্যাদি পাঠ করে তাহলে এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে সালাতের মধ্যে পাঠ করা নিঃসন্দেহে আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ। এতে সালাতের মর্যাদার পাশাপাশি এই ১০০ আয়াত পাঠের মর্যাদা উভয়টি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলাম ওয়েবের ফতোয়ায় লেখা হয়েছে,

فإن المقصود يحصل بقراءة الآيات في الصلاة ـ سواء قرأها في ركعة واحدة أو أكثر ـ ويحتمل حصوله بمجرد التلاوة ـ ولو لم يكن في صلاة ـ لما في الحديث: من قرأ عشر آيات في ليلة لم يكتب من الغافلين. رواه الحاكم وقال صحيح على شرط مسلم، وقال فيه الألباني: صحيح لغيره.
ولكن الأولى أن يكون ذلك في الصلاة، لما في الحديث: من صلى في ليلة بمائة آية لم يكتب من الغافلين. رواه ابن خزيمة والحاكم وصححاه.

“উদ্দেশ্য হলো, উক্ত মর্যাদা লাভ হবে যদি তা সালাতে পড়া হয়। চাই এক রাকাতে পড়ুক কিংবা একাধিক রাকাতে পড়ুক। এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, কেবল তিলাওয়াতের মাধ্যমেই এই মর্যাদা অর্জিত হবে যদিও সালাতে না পড়ে। কেননা এক হাদিসে এসেছে,
من قرأ عشر آيات في ليلة لم يكتب من الغافلين

“যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে সে গাফিলদের দলভুক্ত হিসেবে নথিভুক্ত হবে না।”

[ইমাম হাকেম হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, সহিহ মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ। শাইখ আলবানি বলেন, সহিহ লিগাইরিহী।]

তবে উত্তম হলো, সালাতে পাঠ করা। কেননা অন্য হাদিসে এসেছে যে,
من صلى في ليلة بمائة آية لم يكتب من الغافلين
“যে ব্যক্তি রাতের সালাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করবে সে গাফিলদের মধ্যে নথিভুক্ত করা হবে না।”
[ইবনে খুযায়মা ও হাকেম। তারা উভয়েই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❖❖❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।

অবৈধ পন্থায় প্রবাসে বসবাস ও কাজ করার বিধান এবং এর ক্ষতিকর দিক সমূহ

 প্রশ্ন: অবৈধ হিসাবে প্রবাসে বসবাসকারী অনেক ঋণগ্রস্ত ভাই রয়েছেন যাদের দেশে এসে জীবন ধারণের কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে প্রবাসে থেকে অর্থ উপার্জন করা কি হালাল হবে?

উত্তর: ইসলামে প্রবাসে বসবাস ও কাজ করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে অনেকেই বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে চলে যান। কিন্তু অনেকে সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করে ও অর্থ উপার্জন করে।

ইসলাম শরিয়ত এই বিষয়ে কী নির্দেশনা দেয় তা জানা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

❑ অবৈধ পন্থায় প্রবাস: ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

অবৈধ পন্থায় প্রবাস বলতে সাধারণত বোঝায়, কোনও দেশের আইন-কানুন ভঙ্গ করে বা অনুমতি ছাড়া সেখানে বসবাস করা এবং কাজ করা।

মনে রাখা কর্তব্য যে, একজন মানুষ যখন প্রবাসে যাওয়ার জন্য ভিসা গ্রহণ করে তখন সে দেশে গিয়ে সেখানকার আইন-কানুন মেনে চলার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে পরিগণিত হয়‌। অতএব সে আইন ও শরিয়ত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলতে বাধ্য।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ

“হে ইমানদারগণ, তোমরা অঙ্গীকার (ও চুক্তিসমূহ) পূর্ণ কর।” [সূরা মায়েদা: ১]

আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

المسلمونَ على شروطِهم

“মুসলিমগণ তাদের শর্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” [সহীহ আবু দাউদ, হা/৩৫৯৫] অর্থাৎ মুসলিমগণ তাদের সাথে কৃত শর্ত লঙ্ঘন করবে না।

সুতরাং প্রবাসীদের জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে সে দেশের কোনও আইন লঙ্ঘন করা জায়েজ নেই। (যদি শরিয়ত বিরোধী কোন আইন না হয়। শরিয়ত বিরোধী হলে তা মানা জায়েজ নয়)।

অতএব কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে অবৈধ ভাবে প্রবাসে বসবাস করে তাহলে সে দেশের আইনের দৃষ্টিতে যেমন অপরাধী বলে গণ্য হবে তেমনি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতেও সে গুনাহগার হবে। তবে সে যদি হালাল কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তাহলে হারাম নয়।

❑ ফতোয়া:
প্রশ্ন: আমি একজন মুসলিম। সুইডেনে থাকি। রাষ্ট্র থেকে ভাতা পাই। আমার বাড়ি স্কুল ও বাজার থেকে অনেক দূরে হওয়ায় আমাকে গাড়ি কিনতে হয়েছে। আমার কিছু প্রতিবেশী আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা দেয়। সুইডেনের শ্রম আইন অনুযায়ী এই কাজটি অবৈধ। কারণ এটি করের বাইরে। আমার এখনও রেসিডেন্স পারমিট না থাকায় আমি এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে পারি না। আমার প্রশ্ন হলো, আমার এই কাজটি কি ইসলামে হারাম? কারণ এটি দেশের আইন ভঙ্গ করে। আর যদি আমি শুধুমাত্র গাড়ির বীমা, ট্যাক্স বা মেরামতের খরচ জোগাড় করার জন্য এই কাজটি করি, তাহলে কি ইসলাম অনুযায়ী এটি হারাম হবে? জাযাকাল্লাহু খাইরান।
জবাব: আলহামদুলিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। অতঃপর-

অন্য দেশে যাওয়া মুসলমানদের উচিত, সেই দেশের আইন-কানুন মেনে চলা-সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সময় যেগুলো মেনে চলার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিলো যদি না সেগুলো ইসলাম বিরোধী হয়। কেননা মুসলিমগণ চুক্তি রক্ষা করে, ওয়াদা পালনে সত্যবাদি হয় এবং আমানত যথাযথভাবে পালন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤولًا

“আর চুক্তি পূর্ণ কর। নিশ্চয় চুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সূরা ইসরা, আয়াত ৩৪)।
তাই যদি কেউ এই আইন ভঙ্গ করে তাহলে সে ভুল করেছে। তবে এর মানে এই নয় যে, সে তার কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ হারাম। যদি কাজটি হালাল হয় তাহলে তার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থও হালাল। আইন ভঙ্গ করা আলাদা বিষয় আর কাজের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ আলাদা বিষয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। (সংক্ষেপায়িত)
[উৎস: মিসরিয় ফতোয়া বোর্ড। ফতোয়া নাম্বার: ১৩১৩, ২০২২ সন]

❑ অবৈধ পন্থায় বিদেশে থাকার ক্ষতিকর দিক সমূহ:

প্রকৃতপক্ষে অবৈধ পন্থায় প্রবাসে বসবাসকারীগণ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার কারণে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেমন:

• অনেক সময় অবৈধ পন্থায় বসবাসকারী প্রবাসীরা চুরি, ডাকাতি, নানা হারাম ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
• অবৈধ অভিবাসীরা অনেক সময় সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং স্থানীয় জনগণের সাথে নানা ধরণের সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে।
• তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লুকোচুরির আশ্রয় নেওয়ার কারণে ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামি পরিবেশ থেকে দূরে থাকে। যার ফলে তারা বিভিন্ন ধরণের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
• তারা আইন ও প্রশাসনের ধরাছোঁয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। ফলে তাদের মধ্যে সবসময় একটা অপরাধ বোধ কাজ করে এবং তারা হীনমন্যতায় ভুগে।

• তারা বৈধ পন্থায় দেশে টাকা পাঠাতে পারে না। যার কারণে তারা সাধারণত: হুন্ডির আশ্রয় গ্রহণ করে। অথচ তা সে যে দেশে বসবাস করছে এবং নিজ দেশ উভয় দেশেই নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
• অবৈধ প্রবাসীরা যে কোনও সময় সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি তার স্ত্রী-পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

❑ কেউ যদি পরিস্থিতির শিকার হয়ে কিংবা অনিচ্ছা বশতঃ প্রবাসে অবৈধ হয়ে যায় তাহলে তার করণীয়:

কোন ব্যক্তি যদি তার ইচ্ছার বাইরে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ছ প্রবাসে ‘অবৈধ’ হয়ে যায় তাহলে সে নিজ দেশে ফিরে আসার জন্য সে উক্ত দেশে নিয়োজিত দূতাবাস/কনস্যুলেটের মাধ্যমে আইনানুগ পন্থায় চেষ্টা করবে। এ সময় তার জীবন ধারণ এবং দেশে ফেরত আসার খরচ যোগানের জন্য সে সতর্কতার সাথে যেকোনো হালাল কাজ করতে পারে। কেননা এটা অপারগ অবস্থা। অপারগ অবস্থায় শরিয়তের ছাড় রয়েছে। ইসলামি ফিকাহের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল,

الضرورة تبيح المحظورات

“জরুরত নিষিদ্ধ জিনিসকে বৈধ করে দেয়।” যেমন প্রচণ্ড ক্ষুধায় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য শূকর বা মরা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সে দেশে অবৈধ পন্থায় জীবন-যাপন করা ও অর্থ উপার্জন অব্যাহত রাখা জায়েজ নাই।

➤ উল্লেখ্য যে,
– একজন মুসলিম কোন অমুসলিম দেশে যাওয়ার আগে সে কোন শরিয়ত বিরোধী কোন আইন মানার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। এমনটি হলে (বিশেষ কারণ ছাড়া) সে দেশে ভ্রমণ করা বা গমন করা জায়েজ নেই।
– অজ্ঞতাবশত সেখানে যাওয়ার পরে শরিয়ত বিরোধী আইন মানতে বাধ্য হতে হলে যথাসম্ভব দ্রুত সেখান থেকে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করা অপরিহার্য।
– অমুসলিম দেশে কোন কারণে যাওয়া জায়েজ আর কোন কারণে জায়েজ নয় এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া গ্রহণ করা উচিৎ। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মসজিদুল হারামের সম্মুখে একজন বিধর্মী ফুটবল খেলোয়াড়ের ফেইক ছবি জায়েজ নাকি নাজায়েজ

 মক্কার মসজিদুল হারামের সম্মুখে একজন কা*ফের ফুটবল খেলোয়াড়ের ফেইক ছবি। জায়েজ নাকি নাজায়েজ? কা*ফের খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা ইত্যাদিকে ভালোবাসার বিধান।

প্রশ্ন: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কিছু মুসলিম একজন অমুসলিম ফুটবল খেলোয়াড়কে ইহরামের পোশাক পরিয়ে মসজিদুল হারামের সামনে দাঁড়িয়ে মুনাজাত রত অবস্থার একটি ফেইক ছবি পোস্ট ও শেয়ার করছে। এটা কি জায়েজ নাকি হারাম? যেহেতু আমরা জানি যে, অমুসলিমদের জন্য মক্কার হারামে প্রবেশ নিষেধ। অমুসলিমদেরকে‌ ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
উত্তর: আমাদের কিছু আবেগী নামধারী মুসলিমের কার্যক্রম অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতা সুলভ। এরা আবেগের বশবর্তী হয়ে ইসলামের নামে এমন কিছু কাজ করে যা আদতে ইসলামে নিষিদ্ধ।

যাহোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারকৃত ছবিগুলো মূলত বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এবং তার স্ত্রীর। এ ছবিগুলো পুরোটাই এডিট কৃত বা আর্টিফিশ্যাল ইনটেলিজেন্ট (AI) দ্বারা তৈরি। অর্থাৎ এগুলো ফেইক বা মিথ্যাচার। এটি উক্ত ব্যক্তিদের প্রতি যেমন মিথ্যাচার তেমনি সাধারণ মানুষের সাথেও মিথ্যাচার। আর ইসলামে মিথ্যাচার করা সাধারণ কোনও গুনাহ নয় বরং কবিরা গুনাহ।

◈ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ

“তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। মিথ্যা পাপাচারের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়।” [বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ১০৫-(২৬০৭)]

সুতরাং এসব ফেইক ছবি তৈরি করা ও প্রচার করা, শেয়ার বা লাইক করা সবই হারাম।

যারা এসব করাকে ইসলাম প্রচার করা মনে করছে তারা মূলত মূর্খ। এসব বকধার্মিক মূর্খরা সোশাল মিডিয়ায় কিছু লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার ধান্ধায় এ ধরণের নিম্নমানের কাজ করে থাকে।

– অন্য দিকে একজন কাফে**রকে ইহরামের পোশাক পরিধান করিয়ে কাবার সম্মুখে মুনাজাত রত অবস্থায় তার মুখ খোলা স্ত্রীর সাথে কিংবা এককভাবে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শুধু হারাম নয় বরং অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কেননা একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কা**ফেরদের জন্য জন্য ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মক্কার হারাম সীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَٰذَا
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে।” [সূরা তওবা: ২৮]

সুতরাং এসব ছবি আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে তুচ্ছ করার শামিল এবং মুসলিম জাতির কিবলা ও দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত ঘর কাবাতুল মুশাররাফার জন্য মর্যাদাহানিকর।

❑ কা**ফের নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড় ইত্যাদিকে ভালোবাসা হারাম:

আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, যে খৃষ্টান আল্লাহর নবী ইসা আ. (তাদের ভাষায় যিশুখ্রিস্ট) কে ‘আল্লাহর পুত্র ও গড’ বলে বিশ্বাস করে, যে হিন্দু মাটির তৈরি মূর্তিকে উপাস্য মনে করে (যেগুলো বড় শিরক বা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভয়ানক ও জঘন্য পাপ) কিংবা যে নাস্তিক ইসলামকেই অস্বীকার করে বা যারা ইসলাম বিদ্বেষ ও আল্লাহদ্রোহীতায় লিপ্ত তাকে তার প্রতি কোনও মুসলিমের ভালোবাসা প্রকাশ করা বা তার সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলা জায়েজ নয়।
আর এসব অমুসলিম খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেলেব্রিটি ইত্যাদির ছবি সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা, প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা, ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা, শোকেসে তাদের মূর্তি সাজিয়ে রাখা, তাদের ছবি বিশিষ্ট টি-শার্ট-জামা ইত্যাদি ব্যবহার করা ইত্যাদি তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের নামান্তর-যা সুস্পষ্ট হারাম।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ

“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।” [সূরা মুজাদালা: ২২]

◈ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়িদা: ৫১]

ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, কাউকে ভালোবাসতে হলে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালবাসতে হবে এবং কাউকে ঘৃণা করতে হলে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। এটিই ইমানের দাবী ও সবচেয়ে শক্তিশালী শাখা। যেমন হাদিসে এসেছে,

◈ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর রা. কে বললেন, হে আবু যর, ইমানের কোন শাখাটি সর্বাধিক মজবুত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই অধিক অবগত। তিনি বললেন,

«الْمُوَالَاةُ فِي اللَّهِ وَالْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ»

“একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর সখ্যতা স্থাপন করা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করা। [বায়হাকি-এর শুআবুল ঈমান। হাসান]

◈ হাদিসে আরও বলা হয়েছে,

‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏

“যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে (কিয়ামত দিবসে) সে তার সাথেই অবস্থান করবে।” [সুনান আত তিরমিজি, অধ্যায়: ৩৪/ দুনিয়াবি ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি, পরিচ্ছেদ: ৫০. যে যাকে ভালোবাসে (কিয়ামত দিবসে) সে তার সাথী হবে]

আর এটা নিশ্চিত যে, কা**ফেররা পরকালে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের বাসিন্দা হবে। সুতরাং যে সকল নামধারী মুসলিম এসব কা**ফেরদেকে অকুণ্ঠ ভালোবাসে তাদের কী পরিণতি হবে তা সহজে অনুমেয় যদি না তারা জীবদ্দশায় লজ্জিত অন্তরে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

◈ এছাড়া কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা পোষণ করা ইমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ এবং কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে অবস্থানের সুযোগ লাভের কারণ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

কা**ফেদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা প্রকাশ একজন মুমিনের ইমানকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি ইমান থেকেও দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তবে আমরা সর্বদা অমুসলিমদের জন্য দুআ করব, আল্লাহ যেন, তাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমরা মহান আল্লাহ নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সব ধরণের হারাম ও নির্বুদ্ধিতা সুলভ কার্যক্রম থেকে হেফাজত করেন। আমিন।

-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি-

Translate