Wednesday, April 16, 2025

কুনুতে নাজেলার পরিচয় ও পদ্ধতি এবং মাসায়েল

 নিম্নে কুনুতে নাজেলার পরিচয়, পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত জরুরি কিছু মাসায়েল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. শব্দের অর্থ ও উদ্দেশ্য
নাজেলা অর্থ: সংকট বা বিপদ।
কুনুত অর্থ: সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে উপযুক্ত দোয়া।
কুনুতে নাজেলা: মুসলিম জাতির উপরে কোনো মারাত্মক বিপদ, দুর্যোগ বা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি যেমন: শত্রুর আক্রমণ, দুর্ভিক্ষ বা মহামারী ইত্যাদি ঘটলে, মুমিনদের নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য ফরজ সালাতের মধ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

২. বিধান: কুনুতে নাজেলা পড়া সুন্নত।

৩. কুনুতে নাজেলা পড়ার পদ্ধতি:

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে (ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, ইশার) ফরজ সালাতের শেষ রাকাতে রুকু থেকে দাঁড়িয়ে “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর দুই হাত তুলে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা। ফজরের শেষ রাকাতে তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ইমাম উঁচু আওয়াজে দোয়া পড়বেন আর মুক্তাদিগণ উঁচু আওয়াজে “আমিন, আমিন” বলবেন। এটি যে কোন নামাজেই হোক।
৫.জুমা নামাজে কুনুতে নাজেলা পড়া যায় কিনা তা দ্বিমতপূর্ণ, তবে অধিক নির্ভরযোগ্য মতে পড়া যায়, ইনশাআল্লাহ।

৬. সুন্নত বা নফল সালাতে কুনুতে নাজেলা পড়া শরিয়তসম্মত নয়।
৭. একাকী নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও উক্ত পদ্ধতিতে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা যাবে।
মহিলাও বাড়িতে একাকী সালাতের সময় তা করতে পারেন।
৮. দোয়ার পরে মুখমণ্ডলে হাত না মোছাই ভালো। কারণ দোয়া শেষে হাত মোছার হাদিস অনেক আলেমের মতে জইফ।

৯. পরিস্থিতি অনুযায়ী দোয়া নির্বাচন:

যেসব বিপদ, মুসিবত বা সমস্যা সৃষ্টি হবে, পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেই ধরণের দোয়া করবেন। এ ক্ষেত্রে একান্ত বিনয়, একাগ্রতা ও কান্না বিজড়িত কন্ঠে, মুমিন-মুসলিমদের কল্যাণের জন্য দোয়া, শত্রু বাহিনী তথা মুসলিমদের উপরে আক্রমণকারী কা***ফিরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া এবং বিপদ-মুসিবত থেকে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ প্রার্থনা করবে।

১০. কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দুয়াগুলোর পাশাপাশি নিজের ভাষাতেও দোয়া করা যাবে।
১১.প্রয়োজন বোধে কয়েকদিন যাবত অব্যাহতভাবে দোয়া করা যাবে।
১২. জামাতে সালাতে অতিরিক্ত দীর্ঘ দোয়া করা উচিত নয়, যাতে সাধারণ মুসল্লিদের কষ্ট হয়।
আল্লাহু আলাম।
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল –

নবীদের ১০টি দুআ

নবীদের (আলাইহিমুস সালাম)-এর ১০টি দুআ
নিম্নে কুরআনে বর্ণিত ১০ জন নবীর ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুআ উল্লেখ করা হলো:
❂ ১. আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ: “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।” [সূরা আরাফ: ২৩]
❂ ২. নুহ (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে, আমার ঘরে প্রবেশকারী মুমিনদের এবং সমস্ত মুমিন পুরুষ ও নারীদের ক্ষমা করুন।” [সূরা নূহ: ২৮]
❂ ৩. আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে কষ্ট স্পর্শ করেছে, আর আপনি দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।” [সূরা আম্বিয়া: ৮৩]
❂ ৪. শুয়াইব (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ
অর্থ: “হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা করে দিন, আর আপনিই শ্রেষ্ঠ ফায়সালা কারী।” [সূরা আরাফ: ৮৯]
❂ ৫. মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
অর্থ: “হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাজিল করেন, আমি তার প্রতি অতীব অভাবগ্রস্ত।” [সূরা কাসাস: ২৪]
❂ ৬. ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ: “আপনি ছাড়া প্রকৃত কোনও ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র; নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।” [সূরা আম্বিয়া: ৮৭]
❂ ৭. ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
أَنتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
অর্থ: “আপনি আমার অভিভাবক দুনিয়াতে ও আখিরাতে। আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।” [সূরা ইউসুফ: ১০১]
❂ ৮. ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর দুআ:
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে ও আমার বংশধরদের সালাত কায়েম কারী বানান। হে আমাদের রব! আপনি আমার দুআ কবুল করুন।” [সূরা ইবরাহিম: ৪০]
❂ ৯. ইসা আলাইহিস সালাম-এর দুআ:
رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্য হবে ঈদ-আমাদের অগ্রগামীদের জন্য ও পশ্চাদগামীদের জন্য এবং তা হবে আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন। আপনি আমাদের রিজিক দান করুন। আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজিক দানকারী।” [সূরা মায়িদা: ১১৪]
❂ ১০. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুআ:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থ: “হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতে কল্যাণ দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।” [সূরা বাকারা: ২০১]

(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত) আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। 

ওয়াজ-নসিহত, বক্তব্য ও আলোচনার পরে দোয়া করার বিধান

 প্রশ্ন: কখনও কখনও বক্তা বক্তব্য বা দারস (শিক্ষামূলক আলোচনা) শেষ করার পর হাত তুলে দোয়া করেন। এমন ক্ষেত্রে আমরা কি ঐ দোয়ার আসরে উপস্থিত থাকব নাকি দোয়া শুরু হওয়ার আগেই অনুষ্ঠান ত্যাগ করব? অনুগ্রহ করে আমাদের দিকনির্দেশনা দিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

উত্তর:

لا بأس بالدعاء بعد المحاضرة، أو بعد الموعظة والذكرى؛ لا بأس بالدعاء، يدعو الله للحاضرين بالتوفيق والهداية، وصلاح النية والعمل، لكن رفع اليدين في مثل هذا لا أعلم فيه دليلًا، ولا أعلم أنه ورد عن النبي ﷺ إلا العموم، عموم رفع اليدين بالدعاء، وأنه من أسباب الإجابة، لكن لم أحفظ عنه ﷺ أنه كان بعدما يعظ الناس ويذكرهم كان يرفع يديه ويدعو، ولو كان هذا يفعله؛ لنقل، لنقله الصحابة -رضي الله عنهم- فإنهم ما تركوا شيئًا إلا نقلوه -رضي الله عنهم
فالأولى والأحوط عدم الرفع في مثل هذا، إلا إذا وجد دليلًا يدل على ذلك، أما كونه يدعو لهم بعدما يفرغ يقول: غفر الله لنا ولكم، أو وفقنا الله وإياكم، أو نفعنا الله وإياكم بما سمعنا، أو ما أشبه هذا؛ هذا لا بأس به، وإذا أمنوا فلا بأس بذلك

“বক্তব্য বা শিক্ষামূলক আলোচনার পরে দোয়া করা জায়েজ। বক্তা আল্লাহর কাছে উপস্থিত শ্রোতাদের জন্য তাওফিক, হেদায়েত, সৎ উদ্দেশ্য ও সৎকর্মের জন্য দোয়া করতে পারেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে হাত তোলা সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ আমি জানি না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে এরকম কোনো প্রচলন পাওয়া যায়নি, যদিও দোয়ার জন্য হাত তোলা সাধারণভাবে অনুমোদিত এবং তা দোয়া কবুলের অন্যতম উপায়।

তবে আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এমনটি সংরক্ষণ করিনি যে, তিনি মানুষকে উপদেশ দেওয়ার পরে হাত তুলে দোয়া করতেন। যদি তিনি এমনটি করতেন তবে সাহাবায়ে কেরাম তা বর্ণনা করতেন। কেননা তারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোনো বিষয়ই বাদ দেননি।

তাই এই ক্ষেত্রে হাত না তোলা উত্তম এবং সতর্কতামূলক। তবে যদি এ ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আলোচনার শেষে বক্তা যদি বলেন, “আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের জন্য ক্ষমা করুন” অথবা “আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের তাওফিক দিন” কিংবা “আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের শোনা কথার দ্বারা উপকৃত করুন” ইত্যাদি। এতে কোনো সমস্যা নেই। শ্রোতারা যদি আমিন বলেন তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ইতিকাফ কী এবং এর নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি

 প্রশ্ন: ইতিকাফ কী? এর নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি?

উত্তর: ইতিকাফ একটি সুন্নত ইবাদত। এটি মূলত আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া, তা রাত হোক বা দিন, এক ঘণ্টা হোক বা এক দিন, এক রাত বা একাধিক দিন-রাত হোক।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَلا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ

“তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়ো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত থাকবে।”
[সূরা বাকারা: ১৮৭]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তবে কোনো বছর কিছু কারণে তা করতে না পারলে তিনি শাওয়ালের প্রথম দশকে ইতিকাফ করতেন।

ইতিকাফ সুন্নত এবং এটি রমজানে করা উত্তম, বিশেষত শেষ দশকে।

রমজান ব্যতীত অন্য মাসেও (যেমন শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ, মহররম ইত্যাদি) ইতিকাফ করা জায়েজ। তবে ইতিকাফ অবশ্যই মসজিদে হতে হবে, যেখানে জামাতের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

যদি ইতিকাফের সময় এক সপ্তাহের বেশি হয় এবং তার মাঝে জুমার দিন আসে, তাহলে উত্তম হলো এমন মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে জুমার নামাজ হয়, যাতে জুমার জন্য বের হতে না হয়। তবে যদি এমন মসজিদে ইতিকাফ করা হয় যেখানে জুমা হয় না, তাহলে জুমার দিন বাইরে গিয়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ।

ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো, একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা, আল্লাহর ধ্যান-জিকিরে মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা।
কেউ কেউ বলেছেন: “ইতিকাফ মানে হলো সকল সৃষ্টি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্রষ্টার ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত করা।”

🟢 সারসংক্ষেপ হলো, ইতিকাফের সময় মূলত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া এবং অন্যান্য ইবাদতে মনোযোগী হওয়া। তবে পরিবারের সদস্যরা বা বন্ধু-বান্ধব কেউ ইতিকাফকারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে কোনো সমস্যা নেই। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীগণ সাক্ষাৎ করতেন।

✅ এতেকাফের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই:

ইতিকাফের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এমনকি এক ঘণ্টার জন্যও করা যায়। এটির জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। কেউ যদি রোজা ছাড়া ইতিকাফ করে, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। যদিও কিছু আলিম বলেছেন, ইতিকাফের জন্য রোজা থাকা আবশ্যক, তবে এটি সঠিক মত নয়। আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে: “রোজা ছাড়া ইতিকাফ নেই।” তবে ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেন: “ইতিকাফকারীর জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়, যদি না সে নিজে তা নিজের ওপর বাধ্যতামূলক করে নেয়।”

মূল কথা হলো, ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়, কারণ ইবাদতগুলো শরিয়তের বিধানের ওপর নির্ভরশীল, আর কোরআন-হাদিসে ইতিকাফের জন্য রোজাকে আবশ্যক করার কোনো প্রমাণ নেই।

সুতরাং কেউ রোজা রেখেও ইতিকাফ করতে পারে, আবার রোজা ছাড়া করলেও সমস্যা নেই। ইতিকাফ দিনের বেলা বা রাতেও করা যায়। এর প্রমাণ হলো, উমর (রা.) একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন:
إني نذرت في الجاهلية أن أعتكف ليلة في المسجد الحرام، فقال له: أوف بنذرك، قال له النبي ﷺ أوف بنذرك،
“আমি জাহেলি যুগে মানত করেছিলাম যে, মসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করব।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তাহলে তোমার মানত পূরণ করো।” অথচ রাত রোজার সময় নয়।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
মূল: ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায (রহ)।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

কাবা ঘরে স্থাপিত হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথর সম্পর্কে জরুরি কিছু জ্ঞাতব্য

 প্রশ্ন: ক. কাবা গৃহের হাজারে আসওয়াদ কি জান্নাতের পাথর? এটি কালো কেন?

খ. হাজারে আওয়াদে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করার ফজিলত কী?
গ. শুনেছি যে, “হাজারে আসওয়াদটি একটি ফেরেশতা ছিল। আল্লাহ তাকে পাথর বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।” এটি কি সত্য?
ঘ. এ পাথর সম্পর্কে বানোয়াট হাদিস।
উত্তর: নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের উত্তর দেয়া হল:
♦ ক. কাবা গৃহের হাজারে আসওয়াদ কি জান্নাতের পাথর? এটি কালো কেন?
উত্তর: হ্যাঁ, কাবা ঘরের এক কর্নারে স্থাপিত হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি জান্নাতের পাথর। এ মর্মে হাদিস একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

▪ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

نزل الحجر الأسود من الجنة وهو أشد بياضا من اللبن فسودته خطايا بني آدم ”

“হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। তখন এটি ছিল দুধের চেয়েও সাদা। কিন্তু মানুষের গুনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে।” [তিরমিজি, হা/৮৭৭, মুসনাদ আহমদ, হা/২৭৯২, ইবনে খুযাইমা হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, ৪/২১৯]

আল্লামা মুবারকপুরি রহ. মিরকাত গ্রন্থে বলেন, “অর্থাৎ যে সকল মানুষ এই পাথরকে স্পর্শ করে তাদের পাপের কারণে এটি কালো হয়ে গেছে।”

▪ অন্য হাদিসে এসেছে:

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি:

إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللَّهُ نُورَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُورَهُمَا لأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ

“হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের দুটো ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ তা’আলা এই দুটির আলোক প্রভা নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির প্রভা যদি তিনি নিষ্প্রভ না করতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত।
[তিরমিজি, অধ্যায়: হজ, অনুচ্ছেদ: হাজারে আসওয়াদ, রোকন ও মাকামে ইবরাহিমের ফজিলত। শাইখ আলবানি বলেন: সহিহ তিরমিজি হা/৮৭৮। এ ছাড়াও এটি সহিহ ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান ও হাকিমে বর্ণিত হয়েছে]

♦ খ. হাজারে আওয়াদে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করার ফজিলত কী?
উত্তর: হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করলে স্পর্শকারীর গুনাহ মোচন হবে এবং কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে:
▪যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

عنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مَسْحَ الْحَجَرِ الْأَسْوَدِ، وَالرُّكْنِ الْيَمَانِيِّ يَحُطَّانِ الْخَطَايَا حَطًّا

ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রোকনে ইয়ামানি ও হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, এ দু’টি তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দিবে।”
[সহিহুল জামে-শাইখ আলবানি, হা/২১৯৪, সহিহুত তারগিব, হা/১১৩৯]

▪ অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ
“আল্লাহর কসম, আল্লাহ কিয়ামতের দিন হাজারে আসওয়াদকে উঠাবেন এমন অবস্থায় যে, তার দু টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি জবান থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিবে, যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছ”। [সহিহুল জামে হা/৫৩৪৬-ইবনে মাজাহ- ইবনে আব্বাস রা. থকে বর্ণিত-সহিহ]

♦ গ. প্রশ্ন: শুনেছি “হাজারে আসওয়াদটি একটি ফেরেশতা ছিল। আল্লাহ তাকে পাথর বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।” এ কথা কি সত্য?
উত্তর: পূর্বোল্লিখিত হাদিসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এটি জান্নাত থেকে আসা একটি পাথর।
সুতরাং “এটি আগে ফেরেশতা ছিল” এ কথা যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট এতে কোনো সন্দেহ নাই।

♦ ঘ. হাজারে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বানোয়াট হাদিস:

এ প্রসঙ্গে নিচে দুটি হাদিস পেশ করা হল:

➤ যেমন:
الحَجَرُ الأسودُ يمينُ اللهِ في الأرضِ؛ فمَن صافَحَه وقبَّلَه، فكأنَّما صافَحَ اللهَ وقبَّل يمينَه

“হাজারে আসওয়াদ ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর ডান হাত। সুতরাং যে তাতে হাত লাগাল এবং চুমু খেলো সে যেন আল্লাহর সাথে মুসাফাহা করলো এবং তার ডান হাতে চুমু খেলো।”

হাদিসটি বানোয়াট

– বিখ্যাত হাদিস বিশারদ শুআইব আরনাবুত বলেন, এ হাদিসের সনদে ইসহাক বিন বিশর আল কাহেলী নামক একজন বর্ণনাকারী আছে যাকে একাধিক মুহাদ্দিস মিথ্যুক বলে চিহ্নিত করেছেন।
– ইবনুল জাওযী বলেন, এ হাদিসটি সহিহ নয়।
– আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন, এ হাদিসটি বানোয়াট-বাতিল।

➤ অন্য বর্ণনায় এসেছে,

الحجَرُ الأسوَدُ يمينُ اللَّهِ في الأرضِ يصافحُ بِها عبادَهُ

“হাজারে আসওয়াদ ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর ডান হাত। তিনি তা দ্বারা বান্দাদের সাথে মুসাফাহা করেন।”

হাদিসটির মান: মুনকার/বাতিল।

– শাইখ আলবানি বলেন, এটি মুনকার বা মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। [সিলসিলা যঈফা হাদিস নং ২২৩]
– শুওয়াইব আরনাউত বলেন: এটি বাতিল। [তাখরীজ সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৯/৫২৩]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

অপূর্ব সুন্দর সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক অর্থবহ একটি দুআ

 রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা জননী আয়েশা রা. কে বলেন,

“হে আয়েশা! সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ দুআগুলো তুমি বেশি বেশি করো।

তুমি বলো:

اللهم إني أسألك من الخير كلِّه ، عاجلِه و آجلِه ، ما علمتُ منه و ما لم أعلمُ
و أسألك الجنةَ و ما قرَّب إليها من قولٍ أو عملٍ
و أعوذُ بك من النَّارِ و ما قرَّب إليها من قولٍ أو عملٍ
و أسألك مما سألك به محمدٌ ﷺ
و أعوذ بك مما تعوَّذَ منه محمدٌ ﷺ
و ما قضيتَ لي قضاءً فاجعل عاقبتَه رَشَدًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহী, ‘আ-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহ,
মা আ’লিমতু মিনহু ওয়া মা লাম আ’লাম।

ওয়া আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া মা ক্বাররাবা ইলাই-হা মিন ক্বওলিন আও আ’মাল।
ওয়া আউযু বিকা মিনান না-রি ওয়া মা ক্বাররাবা ইলাই-হা মিন ক্বওলিন আও আমাল।
ওয়া আসআলুকা মিম্মা সাআলাকা বিহী মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ওয়া আউযু বিকা মিম্মা তা’আওয়াযা মিনহু মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

ওয়া মা ক্বাদাইতা লি ক্বাদআন ফাজআল আক্বিবাতাহু রাশাদা।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি, তা দুনিয়াবি হোক বা পরকালীন, যা আমি জানি এবং যা আমি জানি না। আমি জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং আরো প্রার্থনা করছি, জান্নাতের নিকটবর্তী করে এমন সব কথা ও কাজ। আমি জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই এবং আরো আশ্রয় চাই জাহান্নামের নিকটবর্তী করে এমন সব কথা ও কাজ থেকে। আমি আপনার কাছে সেই সব কিছু চাই, যা আপনার নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেয়েছেন, এবং আমি সেই সব কিছু থেকে আশ্রয় চাই, যেগুলো থেকে আপনার নবী আশ্রয় চেয়েছেন। আপনি আমার জন্য যা কিছু নির্ধারণ করেছেন, তার পরিণতি যেন কল্যাণকর হয়।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২৫৪৯৭, সহিহ আদাবুল মুসরাত, হা/৪৯৭]
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকের সময় পঠিতব্য দোয়া

 বজ্রপাত হচ্ছে আসমানি দুর্যোগ। মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখার একটি সতর্কবার্তাও বটে। এ বজ্রপাত আল্লাহ তাআলা শক্তিমত্তার এক মহা নিদর্শন। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কাউকে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে শাস্তি দিতে পারেন। আবার মানুষও এ বজ্রপাত থেকে সর্বোত্তম শিক্ষা নিতে পারে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনের একটি সুরা নাম রেখেছেন রাদ। যার অর্থও বজ্রপাত। বজ্রপাত নামে নাজিল হওয়া সুরায় মহান আল্লাহ সে কথাই ঘোষণা করেছেন-

هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ – وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ

“তিনিই তোমাদের বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্য এবং আশার জন্য এবং উপেক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁর (তাহমিদ) প্রশংসা কর। বজ্র এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে (তাসবিহ রত)। তিনি বজ্রপাত করেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি তা (বজ্রপাত) দ্বারা আঘাত করেন। এরপরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।” [সুরা রাদ : আয়াত ১২-১৩] নিম্নে বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ চমকানো প্রসঙ্গে কী দোয়া পড়তে হয় সে বিষয়ে আলেমদের দুটি ফতোয়া উল্লেখ করার মাধ্যমে আলোচনা করা হলো:

✅ শাইখ বিন বায রাহ.:

প্রশ্ন: শ্রোতা (ম. সিহলি) একাধিক প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। তার একটি প্রশ্ন হলো—বজ্রপাতের শব্দ শোনা বা বিদ্যুৎ চমক দেখার সময় শরিয়তসম্মত কোনো দোয়া আছে কি না? জাযাকাল্লাহু খাইরান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)

উত্তর: কিছু হাদিসে এসেছে যে, বজ্রপাতের শব্দ শোনার সময় বলা হয়:

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ

উচ্চারণ: “সুবহানাল্লাযী ইউসাব্বিহুর রা’দু বিহামদিহি ওয়াল মালায়িকাতু মিন খীফাতিহি।”

অর্থ: “আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করি যার ভয়ে বজ্রধ্বনি ও ফেরেশতাবর্গ তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।” [সূরা রাদ: ১৩]

এটি আব্দুল্লাহ ইবনুজ্ জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বজ্রপাত শুনলে বলতেন।

কিন্তু বিদ্যুৎ চমক (আলো) দেখার সময় বিশেষ কোনো দোয়া পড়ার ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি সুন্নাহ থেকে এ বিষয়ে কিছু পাইনি।

উপস্থাপক:

জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। ”আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।”

✅ ইসলাম ওয়েব:

প্রশ্ন: বজ্রপাতের শব্দ শোনার পর কোন দোয়া পড়তে হয়?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর।

আব্দুল্লাহ ইবনুজ্ জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বজ্রপাতের শব্দ শুনলে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন:

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ

উচ্চারণ: “সুবহানাল্লাযী ইউসাব্বিহুর রা’দু বিহামদিহি ওয়াল মালায়িকাতু মিন খীফাতিহি।”

অর্থ: “আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করি যার ভয়ে বজ্রধ্বনি ও ফেরেশতাবর্গ তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।” [সূরা রাদ: ১৩]

এরপর তিনি বলতেন: “নিশ্চয়ই এটি পৃথিবীর জন্য কঠিন শাস্তির সতর্কবার্তা।”
[ইমাম বুাখারির আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৭২৩, সহিহ সনদে বর্ণিত]

তাই কেউ যদি এই সাহাবির অনুসরণে এটি পড়ে তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমরা এমন কোনো সহিহ হাদিস পাইনি যেখানে এটি সরাসরি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত।

আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

🛑 বজ্রপাত থেকে রক্ষার নিম্নোক্ত দোয়াটা জইফ (দুর্বল):

اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাযাবিকা, ওয়া লা-তুহলিকনা বিআযা-বিকা; ওয়া আ-ফিনা-ক্বাবলা যা-লিকা।’

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাকে পরিত্রাণ দিন।’ [তিরমিজি, হা/৩৪৫০]

এ হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ যদি বজ্রপাতের সময় এ দুআ পড়ে তাহলে সে রক্ষা পাবে। কিন্তু হাদিসটি সহিহ নয়।

[দেখুন: যায়ীফাহ-আলবানি , হা/১০৪২। আজকার-নওয়াবি, হা/২৩৪। তাখরিজুল মুসনাদ-শুয়াইব আরনাবুত, হা/ ৫৭৬৩]
আল্লাহু আলাম।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কুরআন মাজীদকে মাটিতে রাখার বিধান কী

 প্রশ্ন: কুরআন মাজীদকে অল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য মাটিতে রাখার কী হুকুম? তা কি মাটি থেকে অন্তত এক বিঘত উঁচুতে রাখা আবশ্যক?

উত্তর:
وضعه على محل مرتفع أفضل مثل الكرسي أو الرف في الجدار ونحو ذلك مما يكون مرفوعا به عن الأرض، وإن وضعه على الأرض للحاجة لا لقصد الامتهان على أرض طاهرة بسبب الحاجة لذلك ككونه يصلي وليس عنده محل مرتفع أو أراد السجود للتلاوة فلا حرج في ذلك إن شاء الله، ولا أعلم بأسًا في ذلك، لكنه إذا وضعه على كرسي أو على وسادة ونحو ذلك أو في رف كان ذلك أحوط، فقد ثبت عنه ﷺ عندما طلب التوراة لمراجعتها بسبب إنكار اليهود حد الرجم طلب التوراة وطلب كرسيًا ووضعت التوراة عليه، وأمر من يراجع التوراة حتى وجدوا الآية الدالة على الرجم وعلى كذب اليهود.
فإذا كانت التوراة يشرع وضعها على كرسي لما فيها من كلام الله سبحانه، فالقرآن أولى بأن يوضع على الكرسي لأنه أفضل من التوراة.

والخلاصة: أن وضع القرآن على محل مرتفع ككرسي، أو بشت مجموع ملفوف يوضع فوقه، أو رف في جدار أو فرجة هو الأولى والذي ينبغي، وفيه رفع للقرآن وتعظيم له واحترام لكلام الله، ولا نعلم دليلا يمنع من وضع القرآن فوق الأرض الطاهرة الطيبة عند الحاجة لذلك[

“কুরআন মাজীদকে উঁচু জায়গায় রাখা উত্তম, যেমন একটি চেয়ার, দেওয়ালের তাক বা অন্য কোনো উঁচু স্থান যেখানে এটি সম্মানের সঙ্গে রাখা যায়। তবে যদি কেউ প্রয়োজনে, অবমাননার উদ্দেশ্য ছাড়া পাক মাটির উপর কুরআন মাজীদকে রাখে তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন যদি কেউ সালাত আদায় করে এবং তার কাছে কুরআন রাখার জন্য কোনো উঁচু স্থান না থাকে অথবা সে তিলাওয়াতের সিজদার জন্য বসে থাকে তাহলে এটি মাটিতে রাখা জায়েজ হবে।

তবে কুরআনকে চেয়ার, কুশন, বালিশ, তাক বা অন্য কোনো উঁচু স্থানে রাখা উত্তম ও নিরাপদ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহুদিদের পাথর নিক্ষেপের শাস্তি (রজম) অস্বীকার করার জন্য তাদের তাওরাত আনতে বলেন তখন তিনি একটি চেয়ারও আনতে বলেন এবং তাওরাতকে সেটির ওপর রাখা হয়। এরপর তিনি এক সাহাবিকে তাওরাত পড়তে বলেন। অতঃপর তারা সেই আয়াত খুঁজে পান যা রজমের শাস্তির সমর্থনে ছিল। ফলে ইহুদিদের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়।

যেহেতু তাওরাতের মতো কিতাবের জন্যও যার মধ্যে আল্লাহর কালাম আছে চেয়ারে রাখা শরিয়তসম্মত তাই কুরআন মাজীদকে চেয়ারে রাখা আরও বেশি উপযুক্ত। কারণ এটি তাওরাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

মোটকথা, কুরআন মাজীদকে উঁচু স্থানে রাখা যেমন একটি চেয়ার, কুশন, তাক বা দেওয়ালের কোন ফাঁকা স্থানে রাখা উত্তম। এটি কুরআনের সম্মান ও মহত্ব বজায় রাখে। তবে প্রয়োজনে পরিষ্কার পাক-পবিত্র মাটিতে রাখার অনুমতি আছে। একে হারাম বলা যাবে না। [সূত্র: শাইখ ইবনে বায (রহ.), ‘নূরুন আলাদ দারব” প্রোগ্রামের ৭ নম্বর ক্যাসেট মাজমূ’ ফাতাওয়া ও মাকালাত শাইখ ইবন বায (৯/২৮৮)]

❑ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেছেন:

ومن النصيحة لكتاب الله عز وجل : أن لا تضعه في موضع يمتهن فيه ، ويكون وضعه فيه امتهاناً له ، كمحل القاذورات ، وما أشبه ذلك ، ولهذا يجب الحذر مما يصنعه بعض الصبيان إذا انتهوا من الدروس في مدارسهم ، ألقوا مقرراتهم والتي من بينها الأجزاء من المصحف في الطرقات أو في الزبالة أو ما أشبه ذلك ، والعياذ بالله .
وأما وضع المصحف على الأرض الطاهرة الطيبة : فإن هذا لا بأس به ، ولا حرج فيه ؛ لأن هذا ليس فيه امتهان للقرآن ، ولا إهانة له ، وهو يقع كثيراً من الناس إذا كان يصلي ويقرأ من المصحف وأراد السجود يضعه بين يديه : فهذا لا يعدُّ امتهانا ، ولا إهانة للمصحف ، فلا بأس به .
” شرح رياض الصالحين ” ( 1 / 423 ) دار ابن الهيثم ، شرح حديث رقم ( 181

“আল্লাহর কিতাবের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ববোধের অংশ হলো, এটিকে এমন স্থানে না রাখা যেখানে কুরআনের সম্মানহানী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন ময়লা-আবর্জনার স্থান বা অপবিত্র জায়গা।

অনেকে শিশু স্কুল থেকে ফেরার পর তাদের বই-খাতা-যার মধ্যে কুরআনের অংশও থাকতে পারে-রাস্তা বা আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয় এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।)”

“তবে যদি পবিত্র ও পরিষ্কার মাটিতে মাটিতে কুরআন মাজীদ রাখা হয় তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ এটি কোনোভাবেই কুরআনের অবমাননা বা অশ্রদ্ধার শামিল নয়। অনেক মানুষ নামাজ পড়ার সময় মুসহাফ (কুরআনের কপি) থেকে তিলাওয়াত করেন এবং সিজদার সময় তা সামনে রেখে দেন এটি কোনোভাবেই অসম্মানজনক নয়। তাই এতে কোনো বাধা নেই।” [সূত্র: শারহে রিয়াদুস সালিহীন (১/৪২৩), দার ইবনুল হাইসম, হাদিস নং ১৮১]

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরিন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

“পাক-পবিত্র মাটিতে বা জায়নামাজের ওপর কুরআন রাখা কি বৈধ?”

উত্তরে তিনি বলেন:

الأوْلى أن يوضع على مكان مرتفع حتى يتحقق رفعه حسّاً ومعنى ، قال الله تعالى : ( مرفوعة مطهرة ) فإذا احتجتَ إلى وضعه : فضعْه على مكان مرتفع ولو قليلاً ، فإذا لم يتيسر : جاز وضعه على الأرض على فراشٍ طاهرٍ ، ونحوه ، وينزَّه المصحف بأن يوضع على مكان منخفض أو على مكان متنجس أو على التراب ؛ لما فيه من الاحتقار له ، وإذا احتيج إلى وضعه على فراش طاهر : فلا بأس بذلك ، مع الحرص على رفعه حسّاً ومعنى .
” فتاوى إسلامية ” ( 4 / 15 )

“উত্তম হলো কুরআনকে উঁচু স্থানে রাখা, যাতে এটি বাহ্যিকভাবেও ঊর্ধ্বে থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ

“(কুরআন) লিখিত আছে সম্মানিত উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে।” [সূরা আবাসা: ১৪]

“তবে প্রয়োজনে যদি উঁচু স্থান না পাওয়া যায় তাহলে পরিষ্কার বিছানা বা জায়নামাজের ওপর রাখা জায়েজ। তবে এটিকে নিচু জায়গায়, নাপাক স্থানে বা সরাসরি মাটিতে না রাখা উচিত। কারণ এতে কুরআনের সম্মানহানি হতে পারে। যদি পবিত্র স্থান ছাড়া অন্য কোথাও রাখার উপায় না থাকে তবে কুশন বা পরিষ্কার কাপড়ের ওপর রাখা উত্তম।” [সূত্র: ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৪/১৫)]

সারসংক্ষেপ:

✅ উঁচু জায়গায় রাখা উত্তম। তবে প্রয়োজনে পবিত্র স্থান বা জায়নামাজের ওপর রাখা জায়েজ।
🚫 অপবিত্র স্থান, নোংরা জায়গা বা মাটিতে সরাসরি রাখা নিষিদ্ধ। কারণ এতে কুরআনের অবমাননা হতে পারে।▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
অনুবাদক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার বিধান

 আলহামদুলিল্লাহ। অধিকাংশ ইসলামি বিদ্বান ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে বৈধ বলেছেন। কারণ এ বিষয়ে সহিহ হাদিস রয়েছে।

হাদিসের দলিল:

❂ ১. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত:

نَهَى رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ يَومَ خَيْبَرَ عن لُحُومِ الحُمُرِ الأهْلِيَّةِ، ورَخَّصَ في الخَيْلِ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবারের দিনে গৃহপালিত গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।” [সহিহ বুখারি (৩৯৮২), সহিহ মুসলিম (১৯৪১)]

❂ ২. আসমা বিনতে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন:

نحَرْنا على عهد النبي صلى الله عليه وسلم فرساً فأكلناه

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া জবাই করে খেয়েছিলাম।” [সহিহ বুখারি (৫১৯১), সহিহ মুসলিম (১৯৪২)]

❂ ৩. জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত:

سافرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وكنا نأكل لحم الخيل ونشرب ألبانها

“আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সফর করছিলাম এবং ঘোড়ার মাংস খেয়েছি ও এর দুধ পান করেছি।” [দারকুতনি, বায়হাকি – ইমাম নববী বলেছেন: এটি সহিহ সনদ বিশিষ্ট]

❒ বিরোধী মতামত:

কিছু বিদ্বান যেমন ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর দুই শিষ্য ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে মাকরুহ বলেছেন এবং তারা একটি আয়াত ও একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

❂ ১. আয়াতের দলিল:

الْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً

“আর তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা যাতে তোমরা এগুলোর উপর সওয়ার হতে পারো এবং এগুলো তোমাদের জন্য শোভাস্বরূপ।” [সূরা আন-নাহল: ৮]

তারা বলেন, এখানে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে কেবল বাহনের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, খাদ্য হিসেবে নয়। অথচ এর আগের আয়াতে চতুষ্পদ জন্তুর (গরু, উট, ছাগল) মাংস খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

➧ এর জবাব:

ইসলামি স্কলাররা বলেন, এই আয়াতে বাহনের বিষয়টি মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়ায় তা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, এগুলোর অন্য কোনো উপকারিতা নেই। যেমন: আল্লাহ বলেছেন:

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ

“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস।” [সূরা মায়েদা: ৩]

এখানে কেবল মাংসের কথা বলা হলেও, সবাই একমত যে শুকরের চর্বি, রক্ত ও অন্যান্য অংশও হারাম।

❂ ২. হাদিসের দলিল: খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত:

نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن لحوم الخيل والبغال والحمير وكل ذي ناب من السباع

“রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া, খচ্চর, গাধা ও হিংস্র দাঁতওয়ালা প্রাণীর মাংস খেতে নিষেধ করেছেন।” [আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ]

❒ এর জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল।

◈ শাইখ আলবানি জইফ আবু দাউদে এটিকে জয়িফ বলেছেন।
◈ বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হাফিজ মুসা ইবনে হারুন (মৃত্যু: ২৯৪ হিজরি) বলেছেন: “এই হাদিসটি দুর্বল।”
◈ ইমাম বুখারি বলেছেন: “এই হাদিসটি সন্দেহযুক্ত।”
◈ ইমাম বায়হাকি বলেছেন: “এই হাদিসটির সনদ অসংগত এবং এটি বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারীদের হাদিসের (যা ঘোড়ার মাংসের বৈধতার পক্ষে) বিপরীত।”
◈ ইমাম খাত্তাবি বলেছেন: “এই হাদিসটির সনদে সন্দেহ রয়েছে।”
◈ ইমাম আবু দাউদ বলেছেন: “এই হাদিসটি রহিত (মানসুখ)।”
◈ ইমাম নাসাঈ বলেছেন: “ঘোড়ার মাংসের বৈধতার হাদিসই বেশি সহিহ।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন: “যদি নিষেধাজ্ঞার হাদিসটি সহিহ হয়, তবে এটি রহিত (নাসিখ) বলে মনে হয়। কারণ সহিহ হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এটি সেই অনুমতিরই প্রমাণ।” (তথ্যসূত্র: আল মাজমু)

[islamqa থেকে অনুদিত]

❖❖ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.-এর ফতোয়া:

শাইখকে প্রশ্ন করা হয়:

প্রশ্ন: আমাদের অঞ্চলের একটি গ্রামে লোকজন একটি ঘোড়া জবাই করে তার মাংস মানুষের মাঝে বিতরণ করে এই দাবিতে যে, এটি ইসলামে বৈধ। এটি কি সত্য?

উত্তরে তিনি বলেন:

: نعم، لحم الخيل مباح هذا الذي عليه جمهور أهل العلم وهو الصحيح، والرسول ﷺ أذن في لحوم الخيل، وروت أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنهما: أنهم نحروا فرسًا على عهد النبي ﷺ في المدينة وأكلوها، فالمقصود: أن لحوم الخيل مباح، هذا هو الصواب الذي عليه جمهور أهل العلم

“হ্যাঁ, ঘোড়ার মাংস খাওয়া ইসলামে বৈধ। এ বিষয়ে অধিকাংশ ইসলামি স্কলারের ঐকমত্য রয়েছে। এই মতটাই সঠিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেছেন যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে আমরা মদিনায় একটি ঘোড়া জবাই করেছিলাম এবং তা খেয়েছিলাম।” [সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

❑ প্রশ্নকারী: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। এটি কি উটের মতো জবাই করতে হয় নাকি গরুর মতো জবাই করতে হয়?

উত্তর:

تذبح كالبقر، بخلاف البغال والحمير لا، البغال والحمير هذه محرمة الحمر الأهلية المعروفة هذه محرمة، أما الخيل فإنها مباحة، الرسول ﷺ نهى عن الحمر والبغال وأذن في لحوم الخيل.

“ঘোড়া গরুর মতো জবাই করা হয়। তবে খচ্চর ও গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৃহপালিত গাধা ও খচ্চরের মাংস খেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু ঘোড়ার মাংসের ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন।”

❒ ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল। তবে জিহাদের প্রয়োজন হলে জবাই করা উচিত নয়

শাইখক এ বিষয়ে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

الخيل مباحة قد أذن فيها النبي ﷺ، ورخص في لحم الخيل، وقالت أسماء بنت أبي بكر رضي الله تعالى عنهما: نحرنا على عهد النبي ﷺ فرساً، فأكلناه ونحن في المدينة رواه الشيخان في الصحيحين.

فالخيل مباحة، لكن إذا احتيج إليها في الجهاد لا تذبح .. لا تنحر، وإذا لم يحتج إليها وذبحت فهي حلال كالضباء وكالوعل، وكالأرنب، وكغيرها من الصيود النافعة،

أما الحمر والبغال لا، ليست بحلال، محرمة، الحمر والبغال.. الحمر الأهلية والبغال المعروفة هذه محرمة لا يجوز أكلها، أما الحمر الوحشية المعروفة هذه لا بأس بها، يسمونها الوضيحي فهذه مباحة، وهي حمر منقشة لها نقش عجيب، فليست مثل الحمر الأهلية بل لها شكل آخر، ولون آخر، وخلق آخر، فلا بأس بها، أما الحمر الأهلية فإنها تحرم، المعروفة اللي كان الناس يركبونها ويستعملونها في الحرث، والسني عليها، هذه معروفة، وقد ذبحها الناس يوم خيبر، فأنكر عليهم النبي ﷺ وأكفأ القدور، وبين تحريمها عليه الصلاة والسلام.

وهكذا البغال المعروفة لا يحل أكلها، ولكن تستعمل، تركب وتستعمل في
الحمل عليها كالحمير

“হ্যাঁ, ঘোড়ার মাংস খাওয়া বৈধ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন এবং এটিকে হালাল ঘোষণা করেছেন।

আসমা বিনতে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে আমরা মদিনায় একটি ঘোড়া জবাই করে তা খেয়েছিলাম।” [সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম]

◆ ঘোড়া হালাল। তবে যদি জিহাদের জন্য প্রয়োজন হয় তাহলে এটিকে জবাই করা উচিত নয়। যদি জিহাদের প্রয়োজন না থাকে তাহলে তা হরিণ, বন্য ছাগল (ঘুরাল), খরগোশ এবং অন্যান্য উপকারী শিকারযোগ্য প্রাণীর মতোই বৈধ।

◆ গৃহপালিত গাধা ও খচ্চর গৃহপালিত গাধা এবং খচ্চরের মাংস খাওয়া হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবার যুদ্ধে গৃহপালিত গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেন এবং রান্নার হাঁড়িগুলো উল্টে দেন। [সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম]

◆ বন্য গাধা: (নীলগাভি/নীলগাই) বন্য গাধার মাংস খাওয়া বৈধ। এটি গৃহপালিত গাধার মতো নয় এবং এটিকে খাওয়া জায়েজ।

◆ খচ্চরের মাংস খাওয়া হারাম হলেও এগুলো বাহন হিসেবে ব্যবহার করা এবং মাল বহনের কাজে লাগানো বৈধ যেমন গৃহপালিত গাধার ক্ষেত্রে হয়।”

সংক্ষিপ্ত কথা হলো, ঘোড়ার মাংস খাওয়া জায়েজ। হবে জিহাদের প্রয়োজন হলে, তা গণহারে খাওয়া উচিত নয়। হানাফি মাজহাবে তা মাকরুহ বলা হলেও এ মর্মে দলিল প্রমাণিত না হওয়ায় তা গ্রহনযোগ্য নয়।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate