প্রশ্ন: অবৈধ হিসাবে প্রবাসে বসবাসকারী অনেক ঋণগ্রস্ত ভাই রয়েছেন যাদের দেশে এসে জীবন ধারণের কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে প্রবাসে থেকে অর্থ উপার্জন করা কি হালাল হবে?
Tuesday, December 2, 2025
অবৈধ পন্থায় প্রবাসে বসবাস করা এবং কাজ করার বিধান
মাইজভান্ডারি দরবার শরীফ এই গুলো কি সহীহ
প্রশ্ন: “মাইজভান্ডারি দরবার শরীফ” এই গুলো কি সহীহ ?
পুরুষের অনুপস্থিতে কি মহিলা নবজাতক শিশুর কানে আযান দিতে পারে
আসলে নব জাতকের কানে আজান দেয়া বৈধ না কি অবৈধ -এ বিষয়টিই দ্বিমত পূর্ণ। কেননা এ মর্মে হাদিসগুলো সহিহ-জঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের মাঝে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়।
দুধ দিয়ে গোসল নিছক কুসংস্কার পূর্ণ কাজ এবং অপচয়ের শামিল
আমাদের দেশে কেউ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে, কেউ রোগ থেকে মুক্ত হয়ে আর কেউ ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে করে। কেউ নতুন বিয়ে করে দুধ দিয়ে গোসল করে, আবার কেউ বউ তালাকের পরে দুধ দিয়ে গোসল করে। কেউ নির্বাচনে জয়লাভ করে আবার কেউ বা কেউ রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে!! এরকম নানা ধরণের সংবাদ আমরা প্রায়শই দেখি। এসব খবরে নেট দুনিয়া সয়লাব। কিন্তু এসব কারণে-অকারণে দুধ দিয়ে গোসল করার আদৌ কি কোনও ভিত্তি আছে নাকি এটা শুধুই আবেগ? প্রকৃতপক্ষে দুধ দিয়ে গোসল করার রীতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। কিন্তু দুঃখ জনক বিষয় হল, দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এবং বিধর্মীদের অন্ধ অনুকরণে ফলে এই জঘন্য প্রথা মুসলিমদের মধ্যেও প্রবেশ করেছে এবং অনেক নামধারী মুসলিম দেখাদেখি এই প্রথা পালন করে চলেছে।
ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং শারঈ কারণ
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর বিভিন্ন সময় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং শার’ঈ কারণ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময় আল্লাহু আকবার ও সুবহানাল্লাহ বলার বিধান
প্রশ্ন: আমার ছোটবেলায়, আমার স্কুলে শেখানো হয়েছিল যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় আমাদের ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ মহান) বলতে হবে এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ (আল্লাহর মহিমা) বলতে হবে। আপনারা কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে ইসলামে এটি পালন করা উচিত কিনা?
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। আল-বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন: “যখন আমরা উপরে উঠতাম, তখন তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতাম এবং যখন আমরা নিচে নামতাম, তখন তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) বলতাম।”
আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যে ইবনে উমর (রাঃ) তাঁকে শিখিয়েছিলেন যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো সফরের উদ্দেশ্যে উটের পিঠে আরোহণ করতেন, তখন তিনি তিনবার তাকবীর বলতেন, তারপর বলতেন:
“সুবহানাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন। ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লা মুনকালিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাস’আলুকা ফী সাফারিনা হা-যা আল-বিররা ওয়াত-তাক্বওয়া ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারদা, আল্লাহুম্মা হাওয়্যিন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্ববি ‘আন্না বু’দাহু। আল্লাহুম্মা আনতা আস-সাহিবু ফিস-সাফারি ওয়াল-খালীয়ফাহু ফিল আহলি” (মহিমান্বিত তিনি, যিনি এটাকে আমাদের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন, যখন আমরা নিজেরা এটাকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না, আর আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে আমাদের এই সফরে চাই নেক ও তাক্বওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টিজনক কাজ। হে আল্লাহ, আমাদের এই সফর সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব আমাদের জন্য কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ, তুমিই সফরে সঙ্গী এবং পরিবারের ওপর তত্ত্বাবধায়ক)।
আর যখন তিনি ফিরে আসতেন, তখন একই কথাগুলো বলতেন এবং এর সাথে যোগ করতেন:
“আইয়িবূনা তায়িবূনা ‘আবিদূনা লি রাব্বিনা হামিদূন” (আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, অনুতপ্ত, ইবাদতকারী এবং আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী)।
যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সেনাবাহিনী কোনো পাহাড়ের উপরে উঠতেন, তখন তাঁরা তাকবীর বলতেন এবং যখন নিচে নামতেন, তখন তাসবীহ বলতেন।
যেসব আলেমগণ মনে করেন যে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার ক্ষেত্রেও এটি মুস্তাহাব (প্রশংসিত), তাঁরা বলেন যে উপরে ওঠার সময় তাকবীর বলা উচিত এবং সিঁড়ি বা পাহাড়ে ওঠা একই জিনিস।
কিন্তু অন্যরা বলেন যে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময় তাকবীর বলা শরীয়তসম্মত নয়, কারণ এটি কেবল নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই বর্ণিত হয়েছে, যেমন ভ্রমণের সময় পাহাড় বা উঁচু স্থানে আরোহণ করা; সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার ক্ষেত্রে এমন কোনো বর্ণনা নেই, যদিও এটি তাঁদের মাঝে পরিচিত ছিল এবং তাঁরা তা করতেন (অর্থাৎ সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতেন)। যদি এটি শরীয়তসম্মত হতো, তাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হয়তো তা করতেন বা তাঁর সাহাবীদেরকে শিখিয়ে দিতেন, যেমন তিনি তাঁদেরকে ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়ের এবং অন্যান্য দৈনন্দিন যিকির শিখিয়েছিলেন।
এই বিষয়ে এটিই সবচেয়ে সঠিক মত।
শায়খ ইবনে উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-কে এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল: হাদীসে আছে যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো পাহাড়ে উঠতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং যখন কোনো উপত্যকায় নামতেন, তখন তাসবীহ বলতেন। এই তাকবীর ও তাসবীহ কি শুধু সফরের সময় প্রযোজ্য, নাকি তিনি – উদাহরণস্বরূপ – বাড়িতে দোতলা বা তিনতলায় ওঠার সময়ও তাকবীর বলতেন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
তিনি উত্তর দেন:
তাঁর সফরের সময়, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো পাহাড়ে উঠতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং যখন কোনো উপত্যকায় নামতেন, তখন তাসবীহ বলতেন। এর কারণ হলো, যে ব্যক্তি উপরে থাকে সে অহংকারী বোধ করতে পারে এবং নিজেকে মহান ভাবতে পারে, তাই তাঁর জন্য ‘আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করা উপযুক্ত। আর যখন সে নিচে নামে, তখন সে নিম্ন স্তরে যাচ্ছে, তাই নিচে নামার সময় তাঁর জন্য আল্লাহর মহিমা কীর্তন করা উপযুক্ত। তাকবীর এবং তাসবীহ বলার প্রেক্ষাপট এটাই।
কিন্তু সুন্নাহতে সফরের বাইরে এমনটি করার কোনো বর্ণনা নেই। ইবাদতসমূহ ‘তাওক্বীফ’-এর (বর্ণিত বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ) উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, অর্থাৎ সেগুলোর প্রমাণ সহীহ বর্ণনার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এর উপর ভিত্তি করে, যখন কোনো ব্যক্তি তার বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে, তখন তাকে তাকবীর বলতে হবে না, এবং যখন সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে, তখন তাকে তাসবীহ বলতে হবে না। বরং তা শুধুমাত্র ভ্রমণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
লিক্বা’আত আল-বাব আল-মাফতুহ থেকে সমাপ্ত।
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব (IslamQA.info) ইংরেজি প্রশ্ন নং: ১৬৪৩৪০
https://islamqa.info/en/answers/164340/remembering-allah-when-climbing-and-descending-stairs
ভূমিকম্প কিংবা আগুন সংঘটিত হলে সালাত ছেড়ে দেয়ার হুকুম কি
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর ভূমিকম্প,আগুন কিংবা অন্য যেকোন সমস্যার কারণে নামায ছেড়ে দেয়ার দুটি অবস্থা হতে পারে।
যদি কোন ব্যক্তি সুদকে হালাল মনে করে তাহলে শরিয়তে তার বিধান কী
ভূমিকা:পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর ইসলামে সুদ সম্পূর্ণরূপে হারাম—এ বিষয়টি কুরআন, সহীহ হাদীস এবং উম্মাহর সর্বসম্মত মত (ইজমা‘) দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। অতএব, কেউ যদি ইজমার ভিত্তিতে সাব্যস্ত সুদের এই হারাম হওয়াকে অস্বীকার করে বা সুদকে হালাল মনে করে, তবে সে গুরুতর ভ্রান্তিতে পতিত হবে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে কাফির গণ্য হবে।কারণ মূলনীতি হলো: যে ব্যক্তি এমন কোনো স্বীকৃত বিষয় অস্বীকার করে, যার ওপর উলামাদের স্পষ্ট ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—সে ব্যক্তি ইসলামের পরিসীমার বাইরে চলে যায়।
Wednesday, November 26, 2025
কেন এত ভূমিকম্প হয়? এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায়
কয়েকদিন পরপরই মৃদু কম্পনে সারা দেশ কম্পিত হয়ে উঠছে, এগুলো বড় একটা কম্পন আসার আগে সতর্ককারী কম্পন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের সতর্ক করেন যাতে করে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। চলুন দেখি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধান এবং এ থেকে কিভাবে আমরা বাঁচতে পারি তার উপায় বের করি।
কেন এত ভূমিকম্প সংগঠিত হয়? এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় :
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের, তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবাদের উপর এবং তাদের উপর যারা তাদের অনুসরণ করেন।
মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, তাঁর ইচ্ছা এবং তিনি যা কিছু প্রেরণ করবেন সে সকল বিষয়ে তিনিই সবকিছু জানেন এবং তিনি সর্বাধিক জ্ঞানী এবং সর্বাধিক অবহিত তাঁর আইন কানুন ও আদেশ সম্পর্কে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদেরকে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শন সৃষ্টি করেন এবং বান্দাহর উপর প্রেরণ করেন যাতে করে তারা মহান আল্লাহ কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও ভীত হয়। বান্দাহরা মহান আল্লাহর সাথে যা শিরক করে (অর্থাৎ, ইবাদত করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সাথে অংশিদারিত্ব করে) এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি এই নিদর্শন সমূহ প্রেরণ করেন যাতে করে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে, তাদের বোধদয় হয় এবং তাদের রবের দিকেই একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করে।
মহান আল্লাহ বলেন:
“আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই” ( সূরা ইসরা ১৭:৫৯)
“অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দিবো), যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, এই (কুরআনই মূলত) সত্য; একথা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার মালিক সবকিছু সম্পর্কে অবহিত?” (সূরা হা-মীম আস সিজদা : ৫৩)
“বল: আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।” (সূরা আল আনআম : ৬৫)
ইমাম-বুখারী তার সহীহ বর্ণনায় জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেন: যখন “তোমদের উপর থেকে (আসমান থেকে) ” নাযিল হলো তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, অথবা যখন, “ অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম” নাযিল হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবললেন: “আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (সহীহ আল বুখারী, ৫/১৯৩)
(আবূল-শায়খ আল-ইস্পাহানি এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন,
“বল: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) ” যার ব্যাখ্যা হলো, তীব্র শব্দ, পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া; “অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম”, যার ব্যাখ্যা হলো, ভুমিকম্প এবং ভূমি ধ্বসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া।)
নিঃসন্দেহে বর্তমানে যেসকল ভূমিকম্পগুলো ঘটছে তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি যা দিয়ে তিনি তাঁর বান্দাহদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। এই ভূমিকম্প এবং অন্যান্য সকল দূর্যোগগুলো সংগঠিত হওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে; এই দূর্যোগগুলো আসার কারণ হচ্ছে, শিরকী কার্যকলাপ(ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে মহান আল্লাহর অংশীদার বানানো) এবং মানুষের পাপ (মহান আল্লাহ যে কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন সে কাজগুলো করার কারণে)।
এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ বলেন:
“(হে মানুষ) যে বিপদ আপদই তোমাদের উপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই, এবং (তা সত্ত্বেও) আল্লাহ তাআলা তোমাদের অনেক (অপরাধ এমনিই) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আশ শূরা : ৩০)
“যে কল্যাণই তুমি লাভ কর (না কেন, মনে রেখো), তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, আর যেটুকু অকল্যাণ তোমার উপর আসে তা আসে তোমার নিজের থেকে”। (সূরা আন নিসা : ৭৯)
মহান আল্লাহ অতীত জাতীর উপর প্রেরিত আযাব সম্পর্কে বলেন:
“অতপর এদের সবাইকে আমি (তাদের) নিজ নিজ গুণাহের কারণে পাকড়াও করেছি, এদের কারো উপর প্রচন্ড ঝড় পাঠিয়েছি (প্রচন্ড পাথরের বৃষ্টি) {যেভাবে লূত জাতির উপর প্রেরণ করা হয়েছিল}, কাউকে মহাগর্জন এসে আঘান হেনেছে {যেভাবে শুআইব (আ) এর জাতীর উপর আঘাত হেনেছিল}, কাউকে আমি যমীনের নীচে গেড়ে দিয়েছি {যেভাবে কারুন জাতীদের উপর এসেছিল}, আবার কাউকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি {নূহ জাতী ও ফেরাউন ও তার লোকদের কে যেভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল}, (মূলত) আল্লাহ তাআলা এমন ছিলেন না যে তিনি এদের উপর যুলুম করেছেন, যুলুম তো বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছে”। ( সূরা আল আনকাবূত : ৪০)
এখন মুসলামানদের এবং অন্যান্যদের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করা উচিত, আল্লাহর কর্তৃক নির্দিষ্ট একমাত্র দ্বীন ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরা এবং আল্লাহ তাআলা যেসব শিরকী কার্যকলাপ ও পাপ কাজ করতে নিষেধ করেছেন (যেমন: নামায পরিত্যাগ না করা, যাকাত আদায় করা থেকে বিরত না হওয়া, সুদ-ঘুষ না খাওয়া, মদ পান না করা, ব্যাভিচার না করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা না করা, গান ও বাদ্যযন্ত্র না শোনা, হারাম কাজ সমূহ ভঙ্গ না করা প্রভৃতি) তা থেকে বিরত থাকা। এটা হতে আসা করা যায়, তারা এই দুনিয়া ও পরবর্তীতে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং আল্লাহ তাদের আযাব থেকে নিরাপদে রাখবেন এবং তাদের উপর রহমত বর্ষন করবেন।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
“অথচ যদি সেই জনপদের মানুষগুলো (আল্লাহ তাআর উপর) ঈমান আনতো এবং (আল্লাহ তাআলাকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু (তা না করে) তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, সুতরাং তাদের কর্মকান্ডের জন্য আমি তাদের ভীষণভাবে পাকড়াও করলাম”। (সূরা আল আ’রাফ : ৯৬)
এবং আল্লাহ আহলে কিতাবধারীদের সম্পর্কে বলেন:
“যদি তারা তাওরাত ও ইনজিল (তথা তার বিধান) প্রতিষ্ঠা করতো, আর যা তাদের উপর তাদের মালিকের কাছ থেকে এখন নাযিল করা হচ্ছে (কুরআন) তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে তারা অবশ্যই রিযিক পেতো তাদের মাথার উপরের (আসমান) থেকে ও তাদের পায়ের নীচের (যমীন) থেকে”। (সূরা আল মায়িদা : ৬৬)
এবং আল্লাহ আরো বলেন:
”(এ) লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে (তারা মনে করে নিয়েছে), আমার আযাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আযাব তাদের উপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না- তখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।” (সূরা আল আ’রাফ :৯৭-৯৯)
আল-আল্লামা ইবনে আল-কাইউম (রহ) বলেন: “মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়; এইটা মানুষগুলোকে ভীত করে, তারা মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে, পাপ কর্ম করা ছেড়ে দেয়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়”। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতেন: “মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সতর্ক করছেন”। মদীনায় যখন একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তার জনগনকে ভাষণে বললেন: “যদি আরো একবার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় তাহলে আমি এখানে তোমাদের সাথে থাকবো না।”
সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকদের কাছে এরকম আরো অনেক ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা যেভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য গ্রহণ দেখলে বলতেন: “যদি তুমি এরকম কিছু দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” (আল-বুখারী ২/৩০ এবং মুসলিম ২/৬২৮)
দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করা উচিত, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“দয়া প্রদর্শন কর, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে”। ( ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, ২/১৬৫)
“যারা দয়া প্রদর্শন করে মহান দয়াশীল আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, এবং স্বর্গে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।” ( আবু দাউদ কতৃক বর্ণিত ১৩/২৮৫, আত-তিরমিযী ৬/৪৩)
“যারা দয়া প্রদর্শন করবে না তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে না”। (আল-বুখারী ৫/৭৫, মুসলিম ৪/১৮০৯ কর্তৃক বর্ণিত)
বর্ণিত আছে যে, যখন কোন ভূমিকম্প সংগঠিত হতো, উমর ইবনে আব্দুল আযিয (রহ) তার গভর্ণরদের দান করার কথা লিখে চিঠি লিখতেন।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা মানুষকে বিপর্যয়(আযাব) থেকে নিরাপদে রাখবে তাহলো, যারা ক্ষমতায় আছে (অর্থাৎ যারা দেশ পরিচালনা করছে) তাদের উচিত দ্রুততার সাথে সমাজে প্রচলিত অন্যায় থামিয়ে দেওয়া, তাদের শরিয়া আইন মেনে চলতে বাধ্য করা এবং সে অনুযায়ী চলা, ভাল কাজের আদেশ দেওয়া এবং খারাপ কাজ নিষেধ করা।
মহান আল্লাহ বলেন:
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। এরা (মানুষদের) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলে (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ; যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, কুশলী।” (সূরা আত তওবা : ৭১)
“আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহ তাআলার (দ্বীনে) সাহায্য করে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। আমি যদি এ (মুসলমান) -দের (আমার) যমীনে (রাজনৈতিক) প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহলে তারা (প্রথমে) নামায প্রতিষ্ঠা করবে, (দ্বিতীয়ত) যাকাত আদায় (এর ব্যবস্থা) করবে, আর (নাগরিকদের) তারা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, তবে সক কাজেরই চূড়ান্ত পরিণতি একান্তভাবে আল্লাহ তাআলারই এখতিয়ারভূক্ত।” (সূরা আল হজ্জ : ৪০-৪১)
“যে ব্যক্তি আল্লাত তাআলাকে ভয় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে (সংকট থেকে বের হয়ে আসার) একটা পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন রিযিক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই; যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট।” (সূরা আত তালাক্ব : ২-৩)
এই বিষয়ে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন।” (আল-বুখারী ৩/৯৮, মুসলিম ৪/১৯৯৬)
এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে ব্যক্তি, এই পৃথিবীতে একজন বিশ্বাসীর দুশ্চিন্তা দূর করে দিবে, মহান আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসের দূশ্চিন্তা থেকে নিরাপদে রাখবেন। যে ব্যক্তি, কারো কাজকে সহজ করে দিবে(যে কঠিন কাজে নিয়োজিত), মহান আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালের কাজকে সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি, একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। মহান আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত একজনকে সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।” (মুসলিম ৪/২০৭৪);
এই বিষয়ের উপর এরকম আরো অনেক হাদীস রয়েছে।
মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন সকল মুসলিমদের খারাপ অবস্থা থেকে ভাল অবস্থার দিকে উন্নীত করেন এবং তাদেরকে হিদায়াত করেন যেন তারা ইসলামকে ভালভাবে বুঝতে পারে ও দৃঢ়তার সাথে একে আকড়ে ধরে রাখে এবং তিনি যেন তাদের সকল পাপকে ক্ষমা করে দেন। আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন যারা মুসলামানদের ক্ষমতায় আছে(সরকার) তাদের সংগঠিত করেন, এবং তাদের মাধ্যমে সত্যকে সাপোর্ট আর মিথ্যাকে দূরীভূত করে দেন, এবং শরীয়া আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করার জন্য যেন তিনি তাদের সাহায্য করেন, এবং শয়তান যেন তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত, প্ররোচিত ও প্রতারিত করতে না পারে তাথেকে মহান আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন, কারণ মহান আল্লাহই একমাত্র সবকিছূ করার ক্ষমতা রাখেন।
মহান আল্লাহর রহমত এবং শান্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারের এবং সাহাবাদের এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর আপতিত হোক।