প্রশ্ন: আমরা কীভাবে ইখলাস অর্জন করতে পারব?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মূল প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার পূর্বে আমাদের জেনে রাখা আবশ্যক যে, যেকোনো ইবাদত কবুলের জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। যথা:
১. ইখলাস তথা একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা।
২. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করা।
এই শর্তদ্বয় পূর্ণ না হলে মহান আল্লাহর কাছে কোন ইবাদত কবুল হবে না। ইখলাস হলো ইবাদতের প্রাণশক্তি। এ ছাড়া একজন মানুষ যতই এবাদত করুক না কেন তা হবে প্রাণহীন-অকার্যকর। তাই আমাদের প্রত্যেকটি ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মে ইখলাস অর্জনের চেষ্টা করা অপরিহার্য। এটি যেহেতু মানুষের মনের সাথে সম্পৃক্ত তাই বিষয়টি খুবই সূক্ষ্ম ও বিপদজনক। মনের অজান্তেই মনের মধ্যে ইখলাস পরিপন্থী বিষয় রিয়া তথা লোক দেখানো মনোভাব, মানুষের প্রশংসা পাওয়া বা নানা ধরনের দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা ঢুকে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অন্যথায় ইবাদত করে সওয়াবের পরিবর্তে আমাদের আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে। কেননা যে ইবাদতের মধ্যে রিয়া প্রবেশ করে হবে তা শিরকে আসগর বা ছোট শিরক হিসেবে পরিগণিত হয়। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।
এখন প্রশ্ন হল, আমরা ইবাদতের মধ্যে কীভাবে ইখলাস অর্জন করতে পারি?
🔹নিম্নে এর ১০টি উপায় বর্ণনা করা হলো:
১. যেকোনো ইবাদত করার পূর্বে অন্তরকে সব ধরনের দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা ও লোক দেখানো মনোভাব থেকে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহমুখী করা এবং একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান আশা করা।
২. এই কথা মাথায় রাখা যে, ইবাদতের মধ্যে ইখলাস না থাকলে তা আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত হবে।
৩. ইখলাস বিহীন আমলের পরিণতি মনে জাগ্রত রাখা। আর তা হলো, ইখলাস হীন আমল (বা রিয়া যুক্ত আমল) শিরকে আসগর।
৪. মনের মধ্যে দুনিয়ার স্বার্থ চিন্তা জাগ্রত হলে মনে করতে হবে, কুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অথবা শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। তাই তৎক্ষণাৎ অন্তরের অনিষ্ট এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
৪. যথাসম্ভব ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করবে। (যে সকল ইবাদত প্রকাশ্যে করতে হয় সেগুলো ছাড়া)। যেমন: রাতের শেষ প্রহরে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা, যখন কোন মানুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকে তখন নির্জনে সালাত আদায় করা, গোপনে দান-সদকা করা, নির্জনে দোয়া, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করার চেষ্টা করা ইত্যাদি। হাদিসে যেসব ঈমানদার ব্যক্তিগণ নিভৃতে চোখের পানি ফেলে ক্রন্দন করে এবং গোপনে এমন ভাবে দান করে যে ডান হাত দান করলে বাম হাত জানতে পারে না এমন ব্যক্তিদেরকে কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৫. ইখলাস অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। যেমন: ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইখলাস অর্জনের জন্য এই দোয়াটি পাঠ করতেন:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِي كُلَّهُ صَالِحًا وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا، وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيهِ شَيْئًا
“হে আল্লাহ, আপনি আমার সমস্ত আমলকে নেক বানিয়ে নিন এবং তা আপনার সন্তুষ্টির জন্য কবুল করে নিন। এতে মানুষের জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখবেন না।” [আদ দা ওয়াদ দাওয়া (আল জাওয়াবুল কাফী)- ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ.]
৬. দ্বীনদারি এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে আপনার থেকে যারা এগিয়ে আছেন তাদের দিকে দেখুন। বিশেষ করে সাহাবি এবং তাবেঈদের জীবনী থেকে ঈমান এবং আমলে তাদের অগ্রগামীতার বিষয়টি জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনার নিজের আমল আপনার কাছে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে।
৭. ইবাদত-বন্দেগি করার পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন যে, তিনি আপনাকে তা করার তৌফিক দান করেছেন। তবে তা যেন আপনার অন্তরে অহংকার বা আত্মম্ভরিতা সৃষ্টি না করে সেদিকে সজাগ থাকুন। অন্যথায় উক্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৮. ইবাদত করার পরে অন্তরে এই ভয় জাগ্রত রাখুন যে, কোন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ তাআলা হয়তো এই ইবাদত প্রত্যাখ্যান করবেন।
৯. মানুষের প্রশংসায় গলে যাবেন না। আপনার ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ, রোজা, হজ, ওমরা, পর্দা, সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামের সেবায় অবদান, দান-সদকা ইত্যাদি দেখে মানুষ হয়তো আপনার প্রশংসা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার প্রশংসায় গলে যাবেন না। অন্যথায় তা অন্তরের ইখলাকে ধ্বংস করে দেবে।
১০. এই বিশ্বাস রাখুন যে, আপনার কবরে শুধু আপনি যাবেন আর সাথে যাবে আপনার কিছু সৎ আমল। যদি সেগুলো আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় তবেই তা কবরে কাজে লাগবে; অন্যথায় তা হবে পণ্ডশ্রম। এই মনোভাব অন্তরে ইখলাস সৃষ্টিতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
الله اعلم
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment