৫. তিনটি বড় ধরণের ভূমিধসন ভূমিধসন অর্থ হচ্ছে যমিনের কোন অংশ নিচে চলে গিয়ে বিলীন হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻓَﺨَﺴَﻔْﻨَﺎ ﺑِﻪِ ﻭَﺑِﺪَﺍﺭِﻩِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ( “অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম’’। (সূরা কাসাসঃ ৮১) কিয়ামতের পূর্বে তিনটি স্থানে বিশাল আকারের ভূমিধস হবে। এগুলো হবে কিয়ামতের বড় আলামতের অন্তর্ভূক্ত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻟَﻦْ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﺬَﻛَﺮَﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺧُﺴُﻮﻑٍ : ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺠَﺰِﻳﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ “দশটি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। তার মধ্যে থেকে তিনটি ভূমি ধসের কথা উল্লেখ করলেন। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে’’।[71] উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ ﺳَﻴَﻜُﻮْﻥُ ﺑَﻌْﺪِﻯْ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕ ﻭَ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺠَﺰِﻳْﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳٌﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ! ﺃَ ﻳُﺨْﺴَﻒُ ﺑِﺎﻟْﺎَﺭْﺽُ ﻭَ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺍﻟﺼَﺎﻟِﺤِﻴْﻦَ؟ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻬﺎَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﺃَﻫْﻠُﻬَﺎ ﺍﻟﺨَﺒَﺚُ “আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি উহাতে ভূমিধস হবে? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপকাজ বেশী হবে’’। [72] এই ভূমিধসগুলো কি হয়ে গেছে? কিয়ামতের অন্যান্য বড় আলামতের মতই এই ভূমিধসগুলো এখনও সংঘটিত হয়নি। এক শ্রেণীর আলেম মনে করেন ভূমিধসন তিনটি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে এই আলামতগুলোর কোন একটিও এখনও প্রকাশিত হয়নি। এখানে সেখানে প্রায়ই আমরা যে সমস্ত ভূমিধসের সংবাদ পেয়ে থাকি সেগুলো কিয়ামতের ছোট আলামতের অন্তর্ভূক্ত। আর যে সমস্ত ভূমিধসন কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হিসেবে প্রকাশিত হবে তা হবে অত্যন্ত বড় আকারে। পূর্ব, পশ্চিম এবং আরব উপদ্বীপের বিশাল এলাকা জুড়ে তা প্রকাশ হবে। মোটকথা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে তিনটি ভূমিধসের খবর দিয়েছেন তা আখেরী যামানায় অবশ্যই সংঘটিত হবে। প্রতিটি মুসলিমের উপর তাতে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। ৬. বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমণ কিয়ামতের অন্যতম বড় আলামত হচ্ছে আখেরী যামানায় কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে বিশাল আকারের একটি ধোঁয়া বের হয়ে আকাশ এবং যমিনের মধ্যবর্তী খালি জায়গা পূর্ণ করে ফেলবে। মুমিন ব্যক্তিদেরকে সামান্য একটু সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত করে দিবে। কাফেরদের শরীরের ভিতরে প্রচন্ডভাবে প্রবেশ করবে। ফলে তাদের শরীর ফুলে যাবে এবং শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। এটি তাদের জন্য একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাবে পরিণত হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻓَﺎﺭْﺗَﻘِﺐْ ﻳَﻮْﻡَ ﺗَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀُ ﺑِﺪُﺧَﺎﻥٍ ﻣُﺒِﻴﻦٍ (10 ) ﻳَﻐْﺸَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻫَﺬَﺍ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ( 11 ) ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻛْﺸِﻒْ ﻋَﻨَّﺎ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺇِﻧَّﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ( 12 ) ﺃَﻧَّﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮَﻯ ﻭَﻗَﺪْ ﺟَﺎﺀَﻫُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻣُﺒِﻴﻦٌ (13 ) ﺛُﻢَّ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻣُﻌَﻠَّﻢٌ ﻣَﺠْﻨُﻮﻥٌ ( 14 ) ﺇِﻧَّﺎ ﻛَﺎﺷِﻔُﻮْﺍ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ﻗَﻠِﻴْﻠًﺎ ﺇِﻧّﻜُﻢْ ﻋَﺎﺋِﺪُﻭْﻥَ ( 15 )( “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে। এবং তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে মানব জাতিকে। এটা হবে এক যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। তখন তারা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই শাস্তি হতে মুক্তি দিন আমরা ঈমান আনয়ন করবো। তারা কি করে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট একজন রাসূল। অতঃপর তারা তাঁকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বলেছেঃ সে তো শেখানো কথা বলছে, সে তো একজন পাগল’’। আমি আযাব একটখানি সরিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এরপরও তোমরা পূর্বের ন্যায় আচরণ করবে। (সূরা দুখানঃ 10-15) মুসলিম শরীফে হুজায়ফা ইবনে উসায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺘَﺬَﺍﻛَﺮُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺗَﺬَﺍﻛَﺮُﻭﻥَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺬْﻛُﺮُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻦْ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺍﻟﺪُّﺧَﺎﻥَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔَ ﻭَﻃُﻠُﻮﻉَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻣِﻦْ ﻣَﻐْﺮِﺑِﻬَﺎ ﻭَﻧُﺰُﻭﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻳَﺄَﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺧُﺴُﻮﻑٍ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺠَﺰِﻳﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻭَﺁﺧِﺮُ ﺫَﻟِﻚَ ﻧَﺎﺭٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﺗَﻄْﺮُﺩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺤْﺸَﺮِﻫِﻢْ “একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আগমণ করলেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ ততদিন কিয়ামত হবেনা। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমণ (৩) দাব্বা (ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ) (৪) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারিয়ামের আগমণ (৬) ইয়াজুয-মা’জুযের আবির্ভাব (৭) পূর্বে ভূমিধসন (৮) পশ্চিমে ভূমিধসন (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধসন (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’।[73] তিনি আরো বলেনঃ ﺇِﻥَّ ﺭََّﺑﻜُﻢْ ﺃَﻧْﺬَﺭَﻛُﻢْ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ : ﺍﻟﺪُّﺧَﺎﻥَ ﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻛَﺎﻟﺰَّﻛَﻤَﺔِ ﻭَﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮَ ﻓَﻴَﻨْﺘَﻔِﺦُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣَﺴْﻤَﻊٍ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ ﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔَ ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝَ “নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করছেন। (১) ধোঁয়া, যা মুমিনকে কেবল এক প্রকার সর্দিতে আক্রান্ত করে দেবে এবং কাফেরের শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে বের হতে থাকবে। (২) ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ। (৩) দাজ্জালের আগমণ।[74] মোটকথা কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ধোঁয়ার আলামতটি বের হয়ে সমগ্র পৃথিবী ছেয়ে ফেলবে। কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীছের মাধ্যমে প্রমাণিত বিধায় তাতে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মু’মিনের উপর ওয়াজিব। ৭. পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে বর্তমানে প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে। আখেরী যামানায় কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ঘটবে। এটি হবে কিয়ামতের অত্যন্ত নিকটবর্তী সময়ে। পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। কুরআন ও সহীহ হাদীছের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমাণিত। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻫَﻞْ ﻳَﻨﻈُﺮُﻭﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﺗِﻴَﻬُﻢْ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﺃَﻭْ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻭْ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺑَﻌْﺾُ ﺁﻳَﺎﺕِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑَﻌْﺾُ ﺁﻳَﺎﺕِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻔَﻊُ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺇِﻳﻤَﺎﻧُﻬَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺁﻣَﻨَﺖْ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞُ ﺃَﻭْ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﻓِﻲ ﺇِﻳﻤَﺎﻧِﻬَﺎ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻗُﻞْ ﺍﻧﺘَﻈِﺮُﻭﺍ ﺇِﻧَّﺎ ﻣُﻨﺘَﻈِﺮُﻭﻥَ ( “তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম’’। (সূরা আন’আমঃ ১৫৮) অধিকাংশ মুফাস্সিরে কুরআনের মতে অত্র আয়াতে “কোন নিদর্শন’’ বলতে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর আত্-তাবারী বলেনঃ আয়াতে বর্ণিত নিদর্শনটি পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়াই অধিক বিশুদ্ধ। কারণ এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[75] ১) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮْﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻣِﻦْ ﻣَﻐْﺮِﺑِﻬَﺎ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻃَﻠَﻌَﺖْ ﻭَﺭَﺁﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﻥَ ﻓَﺬَﻟِﻚَ ﺣِﻴﻦَ ( ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻔَﻊُ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺇِﻳﻤَﺎﻧُﻬَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺁﻣَﻨَﺖْ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞُ ﺃَﻭْ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﻓِﻲ ﺇِﻳﻤَﺎﻧِﻬَﺎ ﺧَﻴْﺮًﺍ ) “যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি’’।[76] ২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﺒْﺴُﻂُ ﻳَﺪَﻩُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻟِﻴَﺘُﻮﺏَ ﻣُﺴِﻲﺀُ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻭَﻳَﺒْﺴُﻂُ ﻳَﺪَﻩُ ﺑِﺎﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻟِﻴَﺘُﻮﺏَ ﻣُﺴِﻲﺀُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻣِﻦْ ﻣَﻐْﺮِﺑِﻬَﺎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা দিনের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা রাত স্বীয় হাত প্রসারিত করে রাখেন এবং রাতের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা দিন তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন। পশ্চিম আকাশ দিয়ে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তাওবার দরজা খোলা থাকবে’’।[77] পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবেঃ আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত পরম দয়াময় ও ক্ষমাশীল। বান্দা গুনাহ করে যখন তাঁর কাছে ক্ষমা চায় তখন তিনি খুশী হন এবং বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত তিনি বান্দার তাওবা কবূল করতে থাকবেন। কিন্তু যখন পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠে যাবে তখন কারো ঈমান গ্রহণযোগ্য হবেনা এবং ফাসেক ও গুনাহগারের তাওবাও কবূল হবেনা। কারণ পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়া একটি বিরাট নিদর্শন যা সে সময়কার প্রতিটি জীবিত ব্যক্তিই দেখতে পাবে এবং প্রত্যেক কাফেরই কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। অথচ ইতিপূর্বে তারা অস্বীকার করতো। মরণ উপস্থিত হওয়ার পর পাপী মুমিন ব্যক্তির মতই হবে তাদের অবস্থা। মরণ উপস্থিত হওয়ার পর গুনাহগার বান্দার তাওবা যেমন কবূল হয়না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর তেমনি কাফেরের ঈমান ও গুনাহগারের তাওবা কবূল হবেনা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺃَﻭْﺍ ﺑَﺄْﺳَﻨَﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺁﻣَﻨَّﺎ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻭَﻛَﻔَﺮْﻧَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﺑِﻪِ ﻣُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ( 84 ) ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻚُ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻬُﻢْ ﺇِﻳﻤَﺎﻧُﻬُﻢْ ﻟَﻤَّﺎ ﺭَﺃَﻭْﺍ ﺑَﺄْﺳَﻨَﺎ ﺳُﻨَّﺔَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻗَﺪْ ﺧَﻠَﺖْ ﻓِﻲ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻭَﺧَﺴِﺮَ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ( “তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো তখন বললোঃ আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করতাম তাদেরকে পরিহার করলাম। অতঃপর তাদের এ ঈমান কোন উপকারে আসলোনা যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল। আল্লাহর এ নীতি পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। সেখানে কাফেরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’। (সূরা গাফেরঃ ৮৪-৮৫) ইমাম কুরতুবী পূর্ববর্তী যামানার আলেমদের থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর ঈমান ও তাওবা কবূল না হওয়ার করণ এই যে, তখন অন্তরে ভয় ঢুকে যাবে, পাপ কাজ করার আশা- আকাঙ্খা মিটে যাবে এবং শরীরের শক্তি শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় সকল মানুষ মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাবে। তাই পশ্চিম আকাশে সূর্য দেখে কেউ তাওবা করলে তার তাওবা কবূল হবেনা। যেমনভাবে মালকুল মাওতকে দেখে তাওবা করলে কারও তাওবা কবূল হয়না। (তাফসীরে কুরতুবী, ৭/ ১৪৬) ইমাম ইবনে কাছীর বলেনঃ “সে দিন যদি কোন কাফের ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যায় তার ঈমান গ্রহণ করা হবেনা। সে দিনের পূর্বে যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে যদি ঈমানদার হওয়ার সাথে সাথে সৎকর্ম পরায়ন হয়ে থাকে তাহলে সে মহান কল্যাণের উপর থাকবে। আর যদি সে গুনাহগার বান্দা হয়ে থাকে এবং পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠতে দেখে তাওবা করে তার তাওবা কবূল হবেনা’’।[78] ৮. দাব্বাতুল আরদ্ আখেরী যামানায় কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে যমিন থেকে দাব্বাতুল আরদ্ নামক এক অদ্ভুত জানোয়ার বের হবে। জন্তুটি মানুষের সাথে কথা বলবে। এটি হবে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায়, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই যমিন থেকে এই অদ্ভুত জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে- এ কথাটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু’মিনের কপালে লিখে দিবে ‘মুমিন’ এবং কাফেরের কপালে লিখে দিবে ‘কাফের’। এ ব্যাপারে কুরআন থেকে যা জানা যায়ঃ কুরআন মাযীদের সূরা নামলের ৮২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻭَﻗَﻊَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺃَﺧْﺮَﺟْﻨَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺩَﺍﺑَّﺔً ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺗُﻜَﻠِّﻤُﻬُﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ ( “যখন প্রতিশ্রুতি (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী নির্গত করবো। সে মানুষের সাথে কথা বলবেঃ এ বিষয়ে যে, মানুষ আমার নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করতোনা’’। ইবনে কাছীর বলেনঃ আখেরী যামানায় মানুষ যখন নানা পাপ কাজে লিপ্ত হবে, আল্লাহর আদেশ পালন বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের সামনে এই জন্তুটি বের করবেন’’।[79] ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “জন্তুটি মানুষের মতই কথা বলবেমুমিন।[80] প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলবে- এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেনঃ আয়াতে উল্লেখিত কুরআনের বাণীটিই হবে তার কথা। অর্থাৎ ( ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ ) এই বাক্যটি সে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কিয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে। এমনকি আমার আগমণের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাস করতোনা। এখন সে সময় এসে গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি। দাব্বাতুল আরদ্ সম্পর্কে হাদীছ থেকে যা অবগত হওয়া যায়ঃ ১) মুসলিম শরীফে হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺘَﺬَﺍﻛَﺮُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺗَﺬَﺍﻛَﺮُﻭﻥَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺬْﻛُﺮُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻦْ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺍﻟﺪُّﺧَﺎﻥَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔَ ﻭَﻃُﻠُﻮﻉَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻣِﻦْ ﻣَﻐْﺮِﺑِﻬَﺎ ﻭَﻧُﺰُﻭﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻳَﺄَﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺧُﺴُﻮﻑٍ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺠَﺰِﻳﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻭَﺁﺧِﺮُ ﺫَﻟِﻚَ ﻧَﺎﺭٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﺗَﻄْﺮُﺩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺤْﺸَﺮِﻫِﻢْ “একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমণ করলেন। আমরা তখন কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ ততদিন কিয়ামত হবেনা। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমণ (৩) ভূগর্ভ থেকে নির্গত দাব্বাতুল আরদ্ নামক অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ ৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের আগমণ (৬) ইয়াজুয- মা’জুযের আবির্ভাব (৭) পূর্বে ভূমিধসন (৮) পশ্চিমে ভূমিধসন (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধসন (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’। ২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔُ ﻓَﺘَﺴِﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﺮَﺍﻃِﻴﻤِﻬِﻢْ ﺛُﻢَّ ﻳَﻐْﻤُﺮُﻭﻥَ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺸْﺘَﺮِﻱَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻟْﺒَﻌِﻴﺮَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣِﻤَّﻦِ ﺍﺷْﺘَﺮَﻳْﺘَﻪُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﺷْﺘَﺮَﻳْﺘُﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪِ ﺍﻟْﻤُﺨَﻄَّﻤِﻴﻦَ অর্থঃ “দাব্বাতুল আরদ্ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছো? সে বলবেঃ আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি’’।[81] ৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔُ ﻣَﻌَﻬَﺎ ﻋَﺼَﺎ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻭَﺧَﺎﺗَﻢُ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻓَﺘَﺠْﻠُﻮ ﻭَﺟْﻪَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺑِﺎﻟْﻌَﺼَﺎ ﻭَﺗَﺨْﺘِﻢُ ﺃَﻧْﻒَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِ ﺑِﺎﻟْﺨَﺎﺗَﻢِ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺨِﻮَﺍﻥِ ﻟَﻴَﺠْﺘَﻤِﻌُﻮﻥَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻦُ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﺎ ﻛَﺎﻓِﺮُ “দাব্বাতুল আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি। কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আঃ)এর লাঠি দিয়ে মু’মিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মুমিন! হে কাফের![82] প্রাণীটির ধরণ কেমন হবে? প্রাণীটি হবে মানব জাতির কাছে পরিচিত চতুষ্পদ জন্তুসমূহের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। সেটি মানুষের সাথে কথা বলবে। প্রাণীটি কোন শ্রেণীর হবে- এনিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ১) ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এটি হবে সালেহ (আঃ)এর উটনীর বাছুর। যখন কাফেরেরা উটনীকে হত্যা করে দিল তখন বাছুরটি পাথরের মাঝে ঢুকে পড়েছিল। সেটি আল্লাহর অনুমতিক্রমে কিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবে। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এটিই বিশুদ্ধ মত। তাঁর এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিনি যে হাদীছ দিয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন তার সনদে এমন একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। ২) কেউ কেউ বলেছেন এটি হবে দাজ্জালের হাদীছে বর্ণিত জাস্সাসা। এ মতটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ দাজ্জালের হাদীছে যে প্রাণীটির কথা এসেছে তার নাম জাস্সাসা। আর কিয়ামতের পূর্বে যে প্রাণীটি বের হবে তার নাম দাব্বাতুল আরদ্ যা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩) কেউ কেউ বলেছেনঃ এটি হলো সেই সাপ যা কা’বার দেয়ালে ছিল। কুরাইশরা যখন কা’বা ঘর নির্মাণ করার ইচ্ছা পোষাণ করল তখন সাপটিই তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করতে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটি পাখি এসে সাপটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলে নির্মাণ কাজের বাধা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এ কথার পক্ষেও কোন দলীল নেই। এমনি আরো অনেক কথা বর্ণিত আছে। এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ কোন একটি মতের স্বপক্ষে সহীহ কোন দলীল পাওয়া যায়না। শায়খ আহমাদ শাকের মুসনাদে আহমাদের ব্যাখ্যায় বলেনঃ “কুরআনের আয়াতে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় বলা আছে এটি হলো দাব্বাতুল আরদ্। দাব্বা অর্থ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কোন প্রকার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই; বরং আমরা বিশ্বাস করি আখেরী যামানায় একটি অদ্ভুত ধরণের জন্তু বের হবে। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। কুরআন ও সহীহ হাদীছে তাঁর গুণাগুণও বর্ণিত হয়েছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করিমুমিন। পৃথিবীর কোন্ জায়গা থেকে প্রাণীটি বের হবে? ১) এটি বের হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মসজিদ থেকে। ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ “সাফা পাহাড় ফেটে প্রাণীটি বের হবে। তিনি বলেনঃ আমি যদি চাইতাম তাহলে যে স্থানটি থেকে বের হবে তাতে পা রেখে দেখাতে পারতাম’’। [83] ২) জন্তুটি তিনবার বের হবে। প্রথমে বের হবে কা’বা শরীফ হতে দূরবর্তী একটি গ্রাম থেকে। অতঃপর কিছু দিন লুকিয়ে থাকার পর আবার বের হবে। পরিশেষে কাবা ঘর থেকে বের হবে। এ ব্যাপারে আরো কথা বর্ণিত আছে। সব মিলিয়ে আমরা বলবঃ মক্কা শরীফ থেকে দাব্বাতুল আরদ্ বের হবে। অতঃপর সমগ্র পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে। প্রাণীটির কাজ কি হবে? ১) প্রাণীটি মানুষের সাথে কথা বলবে। প্রাণীটি কি বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলবে- এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেনঃ আয়াতে উল্লেখিত কুরআনের বাণীটিই হবে তার কথা। অর্থাৎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ এই বাক্যটি সে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কিয়ামতের আলামত ও তা আগমণের বিষয়ে। এমনকি আমার আগমণের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাস করতোনা। এখন সে সময় এসে গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি। ২) সে মুমিনদেরকে কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু’মিনের কপালে লিখে দিবে ‘মুমিন’এবং কাফেরের কপালে লিখে দিবে ‘কাফের’। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔُ ﻓَﺘَﺴِﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﺮَﺍﻃِﻴﻤِﻬِﻢْ ﺛُﻢَّ ﻳَﻐْﻤُﺮُﻭﻥَ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺸْﺘَﺮِﻱَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻟْﺒَﻌِﻴﺮَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣِﻤَّﻦِ ﺍﺷْﺘَﺮَﻳْﺘَﻪُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﺷْﺘَﺮَﻳْﺘُﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪِ ﺍﻟْﻤُﺨَﻄَّﻤِﻴﻦَ “দাব্বাতুল আরদ্ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছো? সে বলবেঃ আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে কিনেছি’’।[84] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔُ ﻣَﻌَﻬَﺎ ﻋَﺼَﺎ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻭَﺧَﺎﺗَﻢُ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻓَﺘَﺠْﻠُﻮ ﻭَﺟْﻪَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺑِﺎﻟْﻌَﺼَﺎ ﻭَﺗَﺨْﺘِﻢُ ﺃَﻧْﻒَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِ ﺑِﺎﻟْﺨَﺎﺗَﻢِ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺨِﻮَﺍﻥِ ﻟَﻴَﺠْﺘَﻤِﻌُﻮﻥَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻦُ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﺎ ﻛَﺎﻓِﺮُ “দাব্বাতুল আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি। কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগিয়ে দিবে এবং মূসা (আঃ)এর লাঠি দিয়ে মু’মিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। এমনকি লোকেরা খানার টেবিলে (দস্তরখানায়) বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মুমিন! হে কাফের!’’[85] ৯. কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত কিয়ামতের পূর্বে ইয়ামানের আদন নামক স্থানের গর্ত থেকে একটি ভয়াবহ আকারের আগুন বের হয়ে মানুষকে হাশরের দিকে একত্রিত করবে। এ ব্যাপারে কতিপয় সহীহ হাদীছ নিম্নে বর্ণিত হলোঃ ১) মুসলিম শরীফে হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧَﺘَﺬَﺍﻛَﺮُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺗَﺬَﺍﻛَﺮُﻭﻥَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺬْﻛُﺮُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻦْ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮَﻭْﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺍﻟﺪُّﺧَﺎﻥَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝَ ﻭَﺍﻟﺪَّﺍﺑَّﺔَ ﻭَﻃُﻠُﻮﻉَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻣِﻦْ ﻣَﻐْﺮِﺑِﻬَﺎ ﻭَﻧُﺰُﻭﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻳَﺄَﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺧُﺴُﻮﻑٍ ﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﺑِﺠَﺰِﻳﺮَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻭَﺁﺧِﺮُ ﺫَﻟِﻚَ ﻧَﺎﺭٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﺗَﻄْﺮُﺩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺤْﺸَﺮِﻫِﻢْ “একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আগমণ করলেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ তত দিন কিয়ামত হবেনা। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমণ (৩) ভূগর্ভ থেকে নির্গত দাব্বাতুল আরদ্ নামক অদ্ভুদ এক জানোয়ারের আগমণ (৪) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের আগমণ (৬) ইয়াজুজ-মা’জুজের আবির্ভাব (৭) পূর্বে ভূমি ধসন (৮) পশ্চিমে ভূমি ধসন (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমি ধসন (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’।[86] (২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻭَﻧَﺎﺭٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦْ ﻗُﻌْﺮَﺓِ ﻋَﺪَﻥٍ ﺗَﺮْﺣَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ “আদনের গর্ত থেকে ভয়াবহ একটি আগুন বের হবে যা মানুষকে হাঁকিয়ে নিবে’’। [87] ৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺳَﺘَﺨْﺮُﺝُ ﻧَﺎﺭٌ ﻣِﻦْ ﺣَﻀْﺮَﻣَﻮْﺕَ ﺃَﻭْ ﻣِﻦْ ﺑَﺤْﺮِ ﺣَﻀْﺮَﻣَﻮْﺕَ ﻗَﺒْﻞَ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺗَﺤْﺸُﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ “কিয়ামতের পূর্বে ইয়ামানের ‘হাযরামাওত’ অথবা ‘হাযরামাওত’ এর সাগর থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষদেরকে একত্রিত করবে’’।[88] মানুষকে কোথায় একত্রিত করা হবে? আখেরী যামানায় ইয়ামানের আদন নামক গর্ত থেকে আগুনটি বের হয়ে সকল মানুষকে হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। হাশরের স্থান হবে শাম দেশ। তৎকালে সিরিয়া, ফিলিস্তীন, লেবানন এবং জর্ডান অঞ্চল শাম দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এমর্মে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ১) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻫَﺎﻫُﻨَﺎ ﺗُﺤْﺸَﺮُﻭﻥَ ﻫَﺎﻫُﻨَﺎ ﺗُﺤْﺸَﺮُﻭﻥَ ﻫَﺎﻫُﻨَﺎ ﺗُﺤْﺸَﺮُﻭﻥَ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ ﺭُﻛْﺒَﺎﻧًﺎ ﻭَﻣُﺸَﺎﺓً ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻜُﻢْ ﻓَﺄَﺷَﺎﺭَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺸَّﺎﻡ “তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে, তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে, তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে, কথাটি তিনবার বললেন। আরোহিত অবস্থায়, পদব্রজে এবং মুখের উপর টেনে-হিচঁড়ে একত্রিত করা হবে। অতঃপর তিনি শামের দিকে ইঙ্গিত করলেন’’।[89] ২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﺍﻟﺸَّﺎﻡِ ﺃَﺭْﺽُ ﺍﻟﻤَﺤْﺸَﺮِ ﻭَ ﺍﻟْﻤَﻨْﺸَﺮِ “শাম হলো হাশর ও পুনরুত্থানের স্থান’’।[90] ৩) ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ শামের যমিন হাশরের মাঠ হওয়ার ব্যাপারে যে ব্যক্তি সন্দেহ পোষণ করবে সে যেন সূরা হাশরের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে। বনী নযীরের ইহুদীরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করল তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা মদীনা থেকে বের হয়ে যাও। তারা বললোঃ আমরা কোথায় যাবো? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাশরের যমিনের দিকে।[91] অর্থাৎ তিনি তাদেরকে শামের দিকে বিতাড়িত করলেন এবং শামকে হাশরের যমিন হিসেবে ব্যক্ত করলেন। ৪) হাফেজ ইবনে রজব বলেনঃ আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে যখন শুধু নিকৃষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে তখন বিরাট একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে শামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে তথায় একত্রিত করবে।[92] মানুষকে হাঁকিয়ে নেয়ার অবস্থা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻳُﺤْﺸَﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋَﻠَﻰ ﺛَﻠَﺎﺙِ ﻃَﺮَﺍﺋِﻖَ ﺭَﺍﻏِﺒِﻴﻦَ ﺭَﺍﻫِﺒِﻴﻦَ ﻭَﺍﺛْﻨَﺎﻥِ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻌَﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﻋَﺸَﺮَﺓٌ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﻳَﺤْﺸُﺮُ ﺑَﻘِﻴَّﺘَﻬُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺗَﻘِﻴﻞُ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻭَﺗَﺒِﻴﺖُ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﺑَﺎﺗُﻮﺍ ﻭَﺗُﺼْﺒِﺢُ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﺃَﺻْﺒَﺤُﻮﺍ ﻭَﺗُﻤْﺴِﻲ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﺃَﻣْﺴَﻮْﺍ “মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে। [93] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আদনের গর্ত হতে একটি অগ্নি বের হয়ে মানুষকে বেষ্টন করে নিবে। চতুর্দিক থেকে তাদেরকে হাশরের মাঠের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। যে পিছিয়ে থাকবে আগুন তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।[94] এই আগুনটি সর্বশেষে যাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে তারা হলো মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻳَﺘْﺮُﻛُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﺸَﺎﻫَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻌَﻮَﺍﻑِ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﻋَﻮَﺍﻓِﻲَ ﺍﻟﺴِّﺒَﺎﻉِ ﻭَﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻭَﺁﺧِﺮُ ﻣَﻦْ ﻳُﺤْﺸَﺮُ ﺭَﺍﻋِﻴَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﻣُﺰَﻳْﻨَﺔَ ﻳُﺮِﻳﺪَﺍﻥِ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻳَﻨْﻌِﻘَﺎﻥِ ﺑِﻐَﻨَﻤِﻬِﻤَﺎ ﻓَﻴَﺠِﺪَﺍﻧِﻬَﺎ ﻭَﺣْﺸًﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﺎ ﺛَﻨِﻴَّﺔَ ﺍﻟْﻮَﺩَﺍﻉِ ﺧَﺮَّﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻤَﺎ “মদীনা ভাল হওয়া সত্ত্বেও লোকেরা তা থেকে চলে যাবে। তারা চলে যাওয়ার পর হিংস্র পশু- পাখিরাই কেবল তাতে আশ্রয় নিবে। সর্বশেষে যে দু’জন লোককে হাঁকিয়ে নেয়া হবে তারা হলো মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তারা ছাগলের পাল নিয়ে মদীনার দিকে আসতে থাকবে। মদীনার কাছে এসে দেখবে হিংস্র পশু- পাখিরা মদীনাতে বসবাস শুরু করেছে। ‘ছানিয়াতুল ওয়াদা’ নামক স্থানে পৌঁছার পর তারা মুখের উপর উপুড় হয়ে পড়ে যাবে’’।[95] চেহারার উপর পড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ﻓَﻴَﻨْﺰِﻝ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺎﻥِ ﻓَﻴَﺴْﺤَﺒَﺎﻧِﻬِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫﻬﻤَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻠْﺤِﻘَﺎﻫُﻤَﺎ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ “তাদের দুজন যেহেতু পিছনে পড়েছে, তাই দু’জন ফেরেশতা আগমণ করে তাদের চেহারার উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে শামের দিকে চলমান মানুষের সাথে মিলিয়ে দিবে’’।[96] এ হাশরটি হবে দুনিয়াতেঃ উপরের হাদীছগুলোতে শাম দেশের যমিনে যে হাশরের আলোচনা করা হয়েছে তা পরকালের হাশর নয়, যা সংঘটিত হবে কবর থেকে পুনরুত্থানের পর; বরং এটি হবে কিয়ামতের একটি আলামত। এ হাশরের সময় জীবিত সমস্ত মানুষকে শামদেশের যমিনে আগুনের মাধ্যমে হাঁকিয়ে একত্রিত করা হবে। অধিকাংশ আলেম একথার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সহীহ হাদীছগুলো এ কথারই প্রমাণ বহন করে। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ আলেমদের কথা হলো এই হাশরটি দুনিয়ার শেষ বয়সে কিয়ামতের ও শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পূর্বে সংঘটিত হবে। শাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হাশর হবে। ইসরাফীলের শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে কিয়ামত হবার পর কবর থেকে উঠে যে হাশরের মাঠের দিকে লোকেরা দৌড়িয়ে যাবে তার ধরণ শামদেশে হাশরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। যার সামান্য বিবরণ কিছুক্ষণ পর প্রদান করা হবে। শামদেশে হাশরের অবস্থার বিবরণ আবূ হুরায়রা (রাঃ)এর হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যেস্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যে স্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সে স্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে। [97] এছাড়া আরো অনেক সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় আদনের গর্ত থেকে নির্গত আগুনের হাশর হবে দুনিয়াতে এবং তার স্থান হবে বর্তমান সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও ফিলিস্তীনের বিভিন্ন অঞ্চল। উপরের হাদীছ এবং অন্যান্য সহীহ হাদীছ থেকে আরো জানা যাচ্ছে, এই হাশরের পরও আরোহন, পানাহার, নিদ্রা, মৃত্যু ইত্যাদি বর্তমান থাকবে। আর পুনরুত্থানের পর যে হাশর হবে তাতে আরোহন, ক্রয়-বিক্রয়, পানাহার, মৃত্যু, নিদ্রা, পোষাক-পরিচ্ছদ ও পার্থিব জীবনের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। শুধু তাই নয়; পরকালের হাশরের ব্যাপারে হাদীছের বিবরণ হলো মুমিন- কাফেরসহ সকল মানুষ হাশরের মাঠে খালী পা, উলঙ্গ শরীর, খাতনাবিহীন এবং সম্পূর্ণ নিঁখুত অবস্থায় একত্রিত হবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ) ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻣَﺤْﺸُﻮﺭُﻭﻥَ ﺣُﻔَﺎﺓً ﻋُﺮَﺍﺓً ﻏُﺮْﻟًﺎ ﺛُﻢَّ ﻗَﺮَﺃَ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃْﻧَﺎ ﺃَﻭَّﻝَ ﺧَﻠْﻖٍ ﻧُﻌِﻴﺪُﻩُ ﻭَﻋْﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻓَﺎﻋِﻠِﻴﻦَ ﻭَﺃَﻭَّﻝُ ﻣَﻦْ ﻳُﻜْﺴَﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ( “নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রি করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ ) ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃْﻧَﺎ ﺃَﻭَّﻝَ ﺧَﻠْﻖٍ ﻧُﻌِﻴﺪُﻩُ ﻭَﻋْﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻓَﺎﻋِﻠِﻴﻦَ ( “যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে।[98] সারকথা উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো এখানে হাশর বলতে দুনিয়ার হাশরকে বুঝানো হয়েছে। কিয়ামতের অল্পকাল পূর্বে তা দুনিয়াতেই অনুষ্ঠিত হবে। পরকালের হাশরঃ উভয় প্রকার হাশরের মধ্যকার পার্থক্যটি যাতে পাঠকদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় সেজন্যে এখানে পরকালের হাশরের কিছু দৃশ্য তুলে ধরা হলোঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻳَﻮْﻡَ ﺗُﺒَﺪَّﻝُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕُ ﻭَﺑَﺮَﺯُﻭﺍ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪِ ﺍﻟْﻘَﻬَّﺎﺭِ ( “সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ যমিনকে অন্য যমিন দ্বারা এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমান সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮) সেদিন হাশরের মাঠের মাটির অবস্থা সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻳُﺤْﺸَﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺭْﺽٍ ﺑَﻴْﻀَﺎﺀَ ﻋَﻔْﺮَﺍﺀَ ﻛَﻘُﺮْﺻَﺔِ ﻧَﻘِﻲٍّ ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﻌْﻠَﻢٌ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ “কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মত চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোন নিশানা থাকবেনামুমিন।[99] হাশরের মাঠে প্রত্যেক মানুষ মহা ব্যস্ততায় থাকবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺯَﻟْﺰَﻟَﺔَ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﺷَﻲْﺀٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﻳَﻮْﻡَ ﺗَﺮَﻭْﻧَﻬَﺎ ﺗَﺬْﻫَﻞُ ﻛُﻞُّ ﻣُﺮْﺿِﻌَﺔٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺃَﺭْﺿَﻌَﺖْ ﻭَﺗَﻀَﻊُ ﻛُﻞُّ ﺫَﺍﺕِ ﺣَﻤْﻞٍ ﺣَﻤْﻠَﻬَﺎ ﻭَﺗَﺮَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺳُﻜَﺎﺭَﻯ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻢْ ﺑِﺴُﻜَﺎﺭَﻯ ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺷَﺪِﻳﺪٌ ( “হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সে দিন তোমরা দেখতে পাবে প্রত্যেক স্তন্যদায়ী তার দুধের শিশুকে ভুলে গেছে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভের সন্তান প্রসব করে দিবে আর আপনি মানুষকে মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব খুবই কঠিন’’। (সূরা হজ্জঃ ১-২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺍﻟﺼَّﺎﺧَّﺔُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻔِﺮُّ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀُ ﻣِﻦْ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻭَﺃُﻣِّﻪِ ﻭَﺃَﺑِﻴﻪِ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒَﺘِﻪِ ﻭَﺑَﻨِﻴﻪِ ﻟِﻜُﻞِّ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺷَﺄْﻥٌ ﻳُﻐْﻨِﻴﻪِ ( “অতঃপর যখন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে। তার মাতা, তার পিতা, তার পত্মী এবং তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেই নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে’’। (সূরা আবাসাঃ ৩৩-৩৭) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺫَﻛَﺮَﺕِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻓَﺒَﻜَﺖْ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣَﺎ ﻳُﺒْﻜِﻴﻚِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺫَﻛَﺮْﺕُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻓَﺒَﻜَﻴْﺖُ ﻓَﻬَﻞْ ﺗَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔِ ﻣَﻮَﺍﻃِﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺬْﻛُﺮُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﻴﺰَﺍﻥِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻌْﻠَﻢَ ﺃَﻳَﺨِﻒُّ ﻣِﻴﺰَﺍﻧُﻪُ ﺃَﻭْ ﻳَﺜْﻘُﻞُ ﻭَﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺣِﻴﻦَ ﻳُﻘَﺎﻝُ ( ﻫَﺎﺅُﻡُ ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﻛِﺘَﺎﺑِﻴَﻪْ ) ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻌْﻠَﻢَ ﺃَﻳْﻦَ ﻳَﻘَﻊُ ﻛِﺘَﺎﺑُﻪُ ﺃَﻓِﻲ ﻳَﻤِﻴﻨِﻪِ ﺃَﻡْ ﻓِﻲ ﺷِﻤَﺎﻟِﻪِ ﺃَﻡْ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﻇَﻬْﺮِﻩِ ﻭَﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁِ ﺇِﺫَﺍ ﻭُﺿِﻊَ ﺑَﻴْﻦَ ﻇَﻬْﺮَﻱْ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ “তিনি জাহান্নামের আগুনের কথা মনে করে কাঁদতে শুরু করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বললেনঃ আমি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদছি। হাশরের মাঠে কি আপনার পরিবার ও আপনজনের কথা মনে রাখবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ “তিনটি স্থান এমন রয়েছে, যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে না হালকা হবে (২) যখন আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে? না বাম হাতে পাবে? এ নিয়ে চিন্তিত থাকবে (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা’’।[100] আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আরো বর্ণনা করেন যে, ﻳُﺤْﺸَﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺣُﻔَﺎﺓً ﻋُﺮَﺍﺓً ﻏُﺮْﻟًﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝُ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻈُﺮَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ “কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে।[101] প্রত্যেকেই নিজের উপায় কি হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানোর চিন্তাও করবেনা। হাশরের মাঠের একটি দিনের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এদিনের দীর্ঘতা দেখে মানুষ মনে করবে দুনিয়াতে তারা অতি সামান্য সময় বসবাস করেছিল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﺗَﻌْﺮُﺝُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡٍ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻘْﺪَﺍﺭُﻩُ ﺧَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ ( “ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিন যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান’’। (সূরা মাআ’রিজঃ ৪) সকল আলামত প্রকাশের পর পৃথিবীর কিছু অবস্থা ইসলাম মিটে যাবে ও কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবেঃ পূর্বে আলোচনা হয়েছে, ইয়াজুয ও মা’জুযের দল হালাক হয়ে যাওয়ার পর এবং কিয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো প্রকাশ হওয়ার পর পৃথিবীর সর্বত্র ইসলামের মহান বিজয় ও বিস্তার ঘটবে। অতঃপর আবার ইসলাম দুর্বল হয়ে যাবে, অশ্লীলতা ও পাপাচারিতা বিস্তার লাভ করবে, ইসলামের শিক্ষা উঠে যাবে, কুরআন মুছে যাবে এবং দ্বীনি ইলমের চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে। সকল ঈমানদার লোককে উঠিয়ে নেয়া হবে। শুধু নিকৃষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত কায়েম হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “কাপড়ের রং যেমন উঠে যায়, তেমনিভাবে ইসলাম উঠে যাবে। নামায, রোজা, হজ্জ ও যাকাতের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। কুরআনের আয়াতগুলো মিটে যাবে। পৃথিবীর মানুষের মাঝে তখন ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ব্যতীত ইসলামের অন্য কিছু অবশিষ্ট থাকবেনা। তারা বলবেঃ আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে এ বাক্যটি বলতে শুনেছি তাই আমরা বলি।[102] তাওহীদের কালেমা পাঠকারী এ শ্রেণীর লোকও চলে যাওয়ার পর কেবল নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত কায়েম হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺇِﻟَّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺷِﺮَﺍﺭِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ “নিকৃষ্ট মানুষের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে’’।[103] কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মুমিনদের রূহ কবজঃ আখেরী যামানায় একটি বাতাস এসে সমস্ত মুমিনদের জান কবজ করে নিবে। তারপর পৃথিবীতে আল্লাহ, আল্লাহ বলার মত তথা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মত কোন লোক থাকবেনা। নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের উপরেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। আখেরী যামানায় সৎ লোকদের চলে যাওয়ার ধরণ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺒْﻌَﺚُ ﺭِﻳﺤًﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﺃَﻟْﻴَﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺪَﻉُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝُ ﺫَﺭَّﺓٍ ﻣِﻦْ ﺇِﻳﻤَﺎﻥٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﺒَﻀَﺘْﻪُ “আল্লাহ তা’আলা ইয়ামানের দিক থেকে রেশমের চেয়ে অধিক নরম একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। সেদিন যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সেও এ বাতাসের কারণে মৃত্যু বরণ করবে’’।[104] বাতাসটি রেশমের চেয়ে নরম ও কোমল হবে। ফিতনার সময় ঈমানের উপর অটল মুমিনদের সম্মানার্থেই আল্লাহ এ ধরণের বাতাস প্রেরণ করবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺛُﻢَّ ﻳُﺮْﺳِﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭِﻳﺤًﺎ ﺑَﺎﺭِﺩَﺓً ﻣِﻦْ ﻗِﺒَﻞِ ﺍﻟﺸَّﺄْﻡِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺒْﻘَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﺟْﻪِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺣَﺪٌ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝُ ﺫَﺭَّﺓٍ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﺃَﻭْ ﺇِﻳﻤَﺎﻥٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﺒَﻀَﺘْﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﺩَﺧَﻞَ ﻓِﻲ ﻛَﺒَﺪِ ﺟَﺒَﻞٍ ﻟَﺪَﺧَﻠَﺘْﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻘْﺒِﻀَﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴَﺒْﻘَﻰ ﺷِﺮَﺍﺭُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓِﻲ ﺧِﻔَّﺔِ ﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻭَﺃَﺣْﻠَﺎﻡِ ﺍﻟﺴِّﺒَﺎﻉِ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﺮِﻓُﻮﻥَ ﻣَﻌْﺮُﻭﻓًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻨْﻜِﺮُﻭﻥَ ﻣُﻨْﻜَﺮًﺍ ﻓَﻴَﺘَﻤَﺜَّﻞُ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺃَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﺠِﻴﺒُﻮﻥَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻓَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻣُﺮُﻧَﺎ ﻓَﻴَﺄْﻣُﺮُﻫُﻢْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺍﻟْﺄَﻭْﺛَﺎﻥِ “অতঃপর আল্লাহ তা’আলা শামদেশের দিক থেকে একটি ঠান্ডা বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাসের কারণে যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে, সেও মৃত্যুবরণ করবে। সে যদি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ে বাতাসটিও সেখানে প্রবেশ করে তার জান কবজ করবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, অতঃপর কেবল দুষ্ট লোকেরা বর্তমান থাকবে। তাদের চরিত্র হবে হিংস্র পশু- পাখির ন্যায়। কোন ভাল কাজেই তারা লিপ্ত হবেনা এবং কোন খারাপ কাজ থেকেই তারা বিরত হবেনা। তাদের কাছে শয়তান আগমণ করে বলবেঃ তোমরা কি আমার কথা শুনবেনা? তারা বলবেঃ তুমি আমাদেরকে কিসের আদেশ দিচ্ছো? অতঃপর শয়তান তাদেরকে মূর্ত্যি পূজার আদেশ দিবে। [105] শয়তানের আহবানে তারা প্রতিমা পূজাতে লিপ্ত হবে। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে পৃথিবীবাসীর চারিত্রিক অধঃপতনের কথা বর্ণনা করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻓَﺒَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻫُﻢْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﺫْ ﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭِﻳﺤًﺎ ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﻓَﺘَﺄْﺧُﺬُﻫُﻢْ ﺗَﺤْﺖَ ﺁﺑَﺎﻃِﻬِﻢْ ﻓَﺘَﻘْﺒِﺾُ ﺭُﻭﺡَ ﻛُﻞِّ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻭَﻳَﺒْﻘَﻰ ﺷِﺮَﺍﺭُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻳَﺘَﻬَﺎﺭَﺟُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺗَﻬَﺎﺭُﺝَ ﺍﻟْﺤُﻤُﺮِ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ “ঈসা (আঃ) এর আগমণের পরে মুমিনদের অবস্থা খুব ভালভাবেই অতিবাহিত হতে থাকবে। এমন সময় আল্লাহ তা’আলা সুন্দর একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। বাতাসটি প্রত্যেক মুমিন- মুসলিমের বগলের নীচে প্রবেশ করবে। এতে তাঁরা মৃত্যু বরণ করবে। শুধু দুশ্চরিত্রবান পাপীষ্ঠরাই বেঁচে থাকবে। গাধা যেমন গাধীর সাথে প্রকাশ্যে যৌনকর্মে লিপ্ত হয় তারাও অনুরূপভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের চোখের সামনে রাস্তার মাঝখানে জেনা- ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। এই প্রকার নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। [106] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﺎ ﻳُﻘَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ “পৃথিবীতে যতদিন “আল্লাহ আল্লাহ’’ বলা হবে ততদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা’’।[107] কা’বা ঘর ভেঙ্গে ফেলা হবেঃ কা’বা ঘর পৃথিবীর সকল মুসলমানদের কিবলা এবং তাদের সম্মানের প্রতীক। মুসলমানগণ যতদিন কা’বার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণের ভিতর থাকবে। আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে যখন পৃথিবীতে “আল্লাহ আল্লাহমুমিন বলার মত কোন লোক থাকবেনা তখন কা’বাঘরের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হবে। তবে নামধারী মুসলমানদের দ্বারাই এ ঘটনা ঘটবে। যখন কা’বার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হবে তখন মুসলমানদের ধ্বংস অনিবার্য। হাবাশা থেকে যুল- সুওয়াইকাতাঈন নামক একজন লোক এসে কা’বা ঘরকে ভেঙ্গে ফেলবে। কা’বার ভিতরের গুপ্তধন বের করে নিবে এবং তাকে গেলাফ শুন্য করে একটি একটি করে পাথর খুলে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। এরপর হজ্জ-ওমরা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ তখন পৃথিবীতে কোন মুসলিম অবশিষ্ট থাকবেনা।[108] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻳُﺨَﺮِّﺏُ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔَ ﺫُﻭ ﺍﻟﺴُّﻮَﻳْﻘَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺒَﺸَﺔِ “যুল-সুওয়াইকাতাঈন নামক এক হাবশী লোক কাবা ঘর ধ্বংস করবে।[109] শিঙ্গায় ফুঁৎকার এবং মহান কিয়ামত দুনিয়ার বয়স যখন শেষ হয়ে যাবে, মানুষের চারিত্রিক পতন ঘটবে, কুকর্মে পৃথিবী ভরপুর হয়ে যাবে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মত কোন লোক বাকী থাকবেনা তখন কোন এক জুমআর দিন ইসরাফীল ফেরেশতার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে দুনিয়া ফানা হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻨﻔَﺦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ ﻓَﺘَﺄْﺗُﻮﻥَ ﺃَﻓْﻮَﺍﺟًﺎ ( “সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। অতঃপর তোমরা দলে দলে উপস্থিত হবে’’। (সূরা নাবাঃ ১৮) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ) ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻧُﻘِﺮَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﻗُﻮﺭِﻓَﺬَﻟِﻚَ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻳَﻮْﻡٌ ﻋَﺴِﻴﺮٌ ( “অতঃপর যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। সেটি হবে অত্যন্ত কঠিন দিন’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৮-৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ) ﻭَﻧُﻔِﺦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ ﻓَﺼَﻌِﻖَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺛُﻢَّ ﻧُﻔِﺦَ ﻓِﻴﻪِ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻢْ ﻗِﻴَﺎﻡٌ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ( “এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। তৎক্ষনাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৮) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ﻛَﻴْﻒَ ﺃَﻧْﻌَﻢُ ﻭَﺻَﺎﺣِﺐُ ﺍﻟْﻘَﺮْﻥِ ﻗَﺪِ ﺍﻟْﺘَﻘَﻢَ ﺍﻟْﻘَﺮْﻥَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻤَﻊَ ﺍﻟْﺈِﺫْﻥَ ﻣَﺘَﻰ ﻳُﺆْﻣَﺮُ ﺑِﺎﻟﻨَّﻔْﺦِ ﻓَﻴَﻨْﻔُﺦُ “আমি কিভাবে শান্তিতে থাকবো? ইসরাফীল ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে কান পেতে আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে শিঙ্গায় ফুঁক দিবে’’।[110] শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে কিয়ামত হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﺤْﻠُﺐُ ﺍﻟﻠِّﻘْﺤَﺔَ ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺼِﻞُ ﺍﻟْﺈِﻧَﺎﺀُ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻠَﺎﻥِ ﻳَﺘَﺒَﺎﻳَﻌَﺎﻥِ ﺍﻟﺜَّﻮْﺏَ ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺘَﺒَﺎﻳَﻌَﺎﻧِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﻠِﻂُ ﻓِﻲ ﺣَﻮْﺿِﻪِ ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺼْﺪُﺭُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻘُﻮﻡَ “এত অল্প সময়ের মধ্যে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে যে, লোকেরা উটনীর দুধ দহন করবে কিন্তু পান করার সময় পাবেনা। দু’জন লোক কাপড় ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য একমত হবে, কিন্তু ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করে কাপড়টি হস্তগত করার সুযোগ পাবেনা। লোকেরা পানির হাওজে নেমে তা মেরামত করতে থাকবে, কিন্তু তা থেকে বের হয়ে আসার পূর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। [111] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﻭَﻟَﺘَﻘُﻮﻣَﻦَّ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﻭَﻗَﺪْ ﻧَﺸَﺮَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻠَﺎﻥِ ﺛَﻮْﺑَﻬُﻤَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺘَﺒَﺎﻳَﻌَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻄْﻮِﻳَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻟَﺘَﻘُﻮﻣَﻦَّ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﻭَﻗَﺪِ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﻠَﺒَﻦِ ﻟِﻘْﺤَﺘِﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻄْﻌَﻤُﻪُ ﻭَﻟَﺘَﻘُﻮﻣَﻦَّ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﻠِﻴﻂُ ﺣَﻮْﺿَﻪُ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺴْﻘِﻲ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻟَﺘَﻘُﻮﻣَﻦَّ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﻭَﻗَﺪْ ﺭَﻓَﻊَ ﺃُﻛْﻠَﺘَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻄْﻌَﻤُﻬَﺎ “কিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, দু’জন লোক ক্রয়- বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের কাপড় একে অপরের সামনে পেশ করবে কিন্তু তারা তা ক্রয়-বিক্রয় বা ছড়ানো কাপড় ভাঁজ করার সময় পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি উটনী দোহন করে নিয়ে আসবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি পশুকে পানি পান করানোর জন্য চাড়ি বসাতে থাকবে কিন্তু তার পশুকে পানি পান করানোর সুযোগ পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি মুখে খাদ্যের লোকমা উঠাবে কিন্তু তা মুখে দিয়ে খাবার সুযোগ পাবেনা’’। [112] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ﺛُﻢَّ ﻳُﻨْﻔَﺦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺻْﻐَﻰ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻭَّﻝُ ﻣَﻦْ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﻠُﻮﻁُ ﺣَﻮْﺿَﻪُ ﻓَﻴَﺼْﻌَﻖُ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺒْﻘَﻰ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺻَﻌِﻖَ ﺛُﻢَّ ﻳُﺮْﺳِﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻭْ ﻳُﻨْﺰِﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗَﻄْﺮًﺍ ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﺍﻟﻄَّﻞُّ ﻓَﺘَﻨْﺒُﺖُ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺛُﻢَّ ﻳُﻨْﻔَﺦُ ﻓِﻴﻪِ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻢْ ﻗِﻴَﺎﻡٌ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ “অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া মাত্রই প্রত্যেক ব্যক্তি তা কান পেতে শুনার চেষ্টা করবে। সর্বপ্রথম উটের হাওজ মেরামতরত একজন ব্যক্তি সেই শব্দ শুনতে পেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর সকল মানুষ সেই শব্দ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা শিশিরের ন্যায় এক প্রকার হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তাতে মানুষের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। পুনরায় শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে সকল মানুষ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে’’।[113] সমাপ্ত ____________________________________________________________ [৭১] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [৭২] – ইমাম হায়ছামী বলেনঃ তাবারানী তাঁর আওসাতে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।। [৭৩] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [৭৪] – তাফসীরে তাবারী, ইবনে কাছীর। [৭৫] – তাফসীরে তাবারী, (৮/ ১০৩) [৭৬] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতার্বু রিকাক। [৭৭] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা। [৭৮] – তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৩/৩৭১)। [৭৯] – তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৩/৩৫১)। [৮০] – পূর্বোক্ত উৎস। [৮১] – মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৩২২। [৮২] – মুসনাদে ইমাম আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন, হাদীছ নং- ৭৯২৪। [৮৩] – তাফসীরে কুরতুবী (১৩/ ২৬৩), তাবারানী ফিল আওসাত (২/১৭৬)। [৮৪] – মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৩২২। [৮৫] – মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আহমাদ শাকের বলেনঃ হাদীছের সনদ সহীহ, হাদীছ নং- ৭৯২৪। [৮৬] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [৮৭] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [৮৮] – মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং- ৩৬০৩। [৮৯] – মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, মুসনাদে আহমাদ। ইমাম তিরমিজী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ। তুহফাতুল আহওয়াযী, (৬/৪৩৪-৪৩৫)। [৯০] – আল-জামেউস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৩৬২০। [৯১] – ফাতহুল বারী, (১১/৩৮০) ও তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৪/৩৩০) [৯২] – লাতায়েফুল মাআরেফ, লিল-হাফেয ইবনে রজব। [৯৩] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতার্বু রিকাক। [৯৪] – নিহায়া, অধ্যায়ঃ ফিতান ওয়া মালাহিম। [৯৫] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হাজ্জ। [৯৬] – ফাতহুলবারী, (৬/১০৪) [৯৭] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতার্বু রিকাক। [৯৮] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতার্বু রিকাক। [৯৯] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতার্বু রিকাক। [১০০] – আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ। [১০১] – বুখারী- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল জান্নাত। [১০২] – মুস্তাদরাকুল হাকেম, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৮৭। [১০৩] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১০৪] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১০৫] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১০৬] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১০৭] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান। [১০৮] – ﺃﺷﺮﺍﻁ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﻟﻠﻮﺍﺑﻞ ( ﺹ ২৩১) [১০৯] – মুসনাদে আহমাদ। আল্লামা আহমাদ শাকের (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। [১১০] – তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল কিয়ামাহ। [১১১] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১১২] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। [১১৩] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। _______________________________________________________________________________________ (বইঃ কিয়ামতের আলামত থেকে সংগৃহীত) লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল- মাদানী। লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট ক্লাশ। প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
No comments:
Post a Comment