Friday, January 10, 2025

নারীদের জন্য শরিয়তের জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি

 নারীদের জন্য শরিয়তের জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি:

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. (মৃত্যু: ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)-এর দিকনির্দেশনা।

✪✪ উপস্থাপক: “হে সম্মানিত শাইখ! এই প্রশ্নকারী জানতে চান: একজন নারীর পক্ষে জ্ঞান অর্জনের জন্য কোথাও যাওয়া কি বৈধ? এবং আপনি কোন শরিয়ত বিষয়গুলো অধ্যয়ন করতে পরামর্শ দেন?”
উত্তর: “হ্যাঁ, একজন নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা বৈধ এবং কখনও কখনও তার জন্য এটি আবশ্যক। তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যেমন:
– রেডিওর মাধ্যমে। বিশেষত ইযাআতুল কুরআন (রেডিও কুরআন) থেকে। (এটি সৌদি আরবে কুরআন ও সুন্নাহর ইলম প্রচারে নিবেদিত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি রেডিও)
– শিক্ষিত নারীদের কাছে গিয়ে।
– এমন ইলমি বৈঠকাদিতে অংশগ্রহণ করে যা নারীদের জন্য উপযুক্ত এবং যেখানে তিনি পর্দা রক্ষা করতে পারেন।
– টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে আলেমদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে।
এসবই জ্ঞান অর্জনের উপায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান দান করেন।”

যদি এমন কোনও মহিলা শিক্ষক থাকেন যিনি নারীদেরকে শিক্ষা দেন তাহলে নারীর জন্য তাদের কাছে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। আর যদি কোনও পুরুষের ইলমি বৈঠক হয় এবং সেখানে নারীদের জন্য পৃথক স্থান থাকে যেখানে তারা পর্দার সঙ্গে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন তাহলে তারা সেখানে গিয়ে শিক্ষা নিতে পারেন। তবে সবক্ষেত্রেই পর্দা রক্ষা করা, ফিতনা এড়ানো এবং নিজের সুরক্ষা বজায় রাখা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা তাঁর মহাগ্রন্থে বলেছেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা আত-তাগাবুন: ১৬]

উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

✪✪ প্রশ্ন: ইয়েমেনের হাদরামাউত থেকে এক বোন প্রশ্ন করছেন: একজন মেয়ের জন্য সঠিক ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি কী? এবং যদি তার দেশে আলেমদের অভাব থাকে তবে ঘরে বসে টেপ রেকর্ড শুনে বা বই পড়ে শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করা কি যথেষ্ট হবে? এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিন, হে সম্মানিত শাইখ।
উত্তর: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম প্রেরিত হোক আল্লাহর রসুল, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবিগণ এবং তাদের উপর যারা সঠিক পথে চলে। শরিয়ত জ্ঞান বিভিন্ন উপায়ে অর্জন করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

◈ ১. রেডিও বা অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে:

o সৌদি আরব থেকে প্রচারিত নূরুন আলাদ-দারব প্রোগ্রাম এবং ইযাআতুল কুরআন (রেডিও কুরআন) শোনার মাধ্যমে।
o আলেমদের বক্তৃতা, জুমার খুতবা এবং অন্যান্য উপদেশমূলক বয়ান শুনে।
o এগুলো ঘরে বসে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই কার্যকর পদ্ধতি।

◈ ২. কুরআন অধ্যয়ন:

কুরআন অধ্যয়ন করা হলো জ্ঞান অর্জনের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপকারী পদ্ধতি। এর মধ্যে রয়েছে:

o কুরআনের অর্থ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা।
o যে বিষয়গুলো বোঝা কঠিন তা জানতে টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে ইলম, আকিদা, আচার-আচরণ ইত্যাদি দিক থেকে সুপরিচিত আলেমদেরকে প্রশ্ন করা।
o নির্ভরযোগ্য তাফসির গ্রন্থ যেমন: তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে তাবারি, বাগাভি, শওকানি প্রভৃতি অধ্যয়ন করা।

◈ ৩. ইলমি মজলিসে অংশগ্রহণ:

o মসজিদে বা উপযুক্ত স্থানে আয়োজিত ইলমি মজলিস বা বৈঠকে নারীরা পর্দার সাথে অংশ নিতে পারেন।
o জুমার খুতবা শোনা যদি বক্তা বিশুদ্ধ আকিদার অনুসারী এবং বিশ্বস্ত আলেম হন।
◈ ৪. টেলিফোন বা চিঠির মাধ্যমে আলেমদের প্রশ্ন: নারীরা টেলিফোনে আলেমদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রশ্নের সমাধান জানতে পারেন। তবে অবশ্যই তাদেরকে নির্ভরযোগ্য আলেমদের হতে হবে।

❑ পুরুষদের জন্য দিকনির্দেশনা:

পুরুষদের ক্ষেত্রেও আলেমদের কাছে সরাসরি গিয়ে বা তাদের সাথে দেখা করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَن يُرِدِ اللَّهُ به خَيْرًا يُفَقِّهْهُ في الدِّينِ
“যাকে আল্লাহ কল্যাণ দান করতে চান, তাকে তিনি দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” [সহিহ বুখারি]
আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন,
مَن سلَكَ طريقًا يلتَمِسُ فيهِ علمًا ، سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طريقًا إلى الجنَّةِ
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” [সহিহ বুখারি]
প্রত্যেকেরই জ্ঞান অর্জনের জন্য আন্তরিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করলে তিনি পথ সহজ করে দেবেন।
উপসংহার: নিশ্চিতভাবে রেডিওর প্রোগ্রাম, জুমার খুতবা, তাফসির গ্রন্থ অধ্যয়ন এবং আলেমদের পরামর্শসহ বিভিন্ন মাধ্যম নারীদের জন্য উপকারী। আল্লাহ সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
উপস্থাপক: আমিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন, হে সম্মানিত শাইখ।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার গুরুত্ব ও মর্যাদা

 আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার গুরুত্ব, মর্যাদা ও অর্থ:

‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা’ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আকিদাগত বিষয়। ইসলামের একে ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ও বলা হয়। তাই এ সম্পর্ক সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি।

তাই নিম্নে অতিসংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হলো:

❒ ১মত: ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা’র মর্যাদা:

এ বিষয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল। যথা:

🔷 যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে আর আল্লাহর জন্যই রাগ বা দুশমনি পোষণ করবে সে প্রকৃত ইমানের স্বাদ উপভোগ করবে:

“আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ طَعْمَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ يُحِبُّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَمَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ كَانَ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللهُ مِنْهُ

“তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ইমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে।
১. যে ব্যক্তি কোনও মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে।
২. যার নিকট আল্লাহ ও আল্লাহর রসুল অন্য সব কিছু হতে অধিক প্রিয় হবে।
৩. এবং আল্লাহ তাকে কুফরি থেকে রক্ষা করার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট অধিক প্রিয় মনে হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদিস: ২১, ৬০৪১ ও সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩, ৬৮]

🔷 আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য রাগ বা ঘৃণা পোষণ করা ইমানের সবচেয়ে মজবুত বন্ধন:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

« إِنَّ أَوْثَقَ عُرَى الْإِيمَانِ أَنْ تُحِبَّ فِي اللهِ، وَتُبْغِضَ فِي اللهِ »

“ইমানের সবচেয়ে সুদৃঢ় বন্ধন হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করা”। [জারির ইবনে আব্দুল হামিদ এর সনদে ইমাম বায়হাকী শুয়াবুল ইমানে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিস নং ১৪]

🔷 এটি আল্লাহর নিকট অতি পছন্দনীয় আমল:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ الْحُبُّ فِي اللهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللهِ »

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা পোষণ করা”।[আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৯৯]

❒ ২য়ত: আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাগ বা ঘৃণা পোষণ করার অর্থ:

🔸‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা’-এর অর্থ হল, আল্লাহর কারণে ভালোবাসা বা আল্লাহকে কেন্দ্র করে ভালোবাসা। কাউকে আমি ভালোবাসবো এ কারণে যে, সে আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহর ইবাদত করে, তার মধ্যে ইমান, তাকওয়া ও দ্বীনদারী বিদ্যমান রয়েছে…। এ ভালোবাসার পেছনে দুনিয়ার কোনও স্বার্থ নেই। এর আলামত হলো ৪টি। যথা:
১. তার জন্য কল্যাণ কামনা করা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া।
২. ভালো কাজে তাকে সাহায্য করা।
৩. তার অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা।
৪. তার যে কোনও সমস্যায় পাশে দাঁড়ানো এবং তার প্রয়োজন পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

🔸‘আল্লাহর উদ্দেশ্যই রাগ বা ঘৃণা পোষণ’ করার অর্থ হল, কোন ব্যক্তিকে আমি ঘৃণা করব বা তার সাথে দুশমনি পোষণ করব এ কারণে যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে ঘৃণা করে বা তাদের সাথে দুশমনি পোষণ করে, আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরিতে লিপ্ত, সে বিদআতে নিমজ্জিত, পাপাচারে মত্ত, তার মধ্যে ইমান ও তাকওয়া নেই, কুরআন-সুন্নাহর বরখেলাফ কাজ করে..ইত্যাদি।

সুতরাং আল্লাহ ভীরু, দ্বীনদার, সৎ লোক ও আহলে ইলমদের কেবল আল্লাহর জন্যই পরিপূর্ণভাবে ভালোবাসতে হবে। আর কাফের-মুশরিক, বিদআতি, মুনাফিক এবং আল্লাহর দুশমনদেরকে পরিপূর্ণভাবে ঘৃণা করতে হবে এবং আন্তরিক দুশমনি পোষণ করতে হবে। তাদের সাথে আন্তরিক ভালোবাসা স্থাপন করা জায়েজ নয়। এটি ইমানের দাবি।
অবশ্য কাফের-মুশরিকদের সাথে দুনিয়াবি স্বার্থে, যেমন: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, আত্মীয়ার বন্ধন, কূটনৈতিক বিষয় ইত্যাদি কারণে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখায় কোন দোষ নেই। আর যার মধ্যে কিছু নেকির কাজ আছে আর কিছু গুনাহর কাজ আছে, যারা কিছু কুরআন-সুন্নাহর অনুকূলে কাজ করে আর কিছু কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত কাজ করে অর্থাৎ যার মধ্যে ভালো-মন্দ দু ধরণেরই আচরণ বিদ্যমান রয়েছে তাদেরকে যতটুকু নেকির কাজ বা ইসলামের আদর্শ আছে ততটুকু ভালোবাসতে হবে আর যতটুকু গুনাহ বা ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম রয়েছে ততটুকু ঘৃণা করতে হবে।

➤ বি:দ্র: কাফের-মুশরেক ও পাপাচারীদের প্রতি রাগ, ঘৃণা বা দুশমনি পোষণ করার অর্থ এই নয় যে, তাদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ রাখা যাবে না, তাদের সাথে কথা বলা যাবে না বা তাদেরকে মোটেই সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। বরং সঠিক কথা হল, দাওয়াতের স্বার্থে বা নিজের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখা যাবে, চলাফেরা করা যাবে এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে। এভাবে সুসম্পর্ক রেখে তাকে দ্বীনের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। হতে পারে, এই সদাচরণ ও সাহায্য-সহযোগিতা তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করবে, ইসলামের প্রতি তাদের বিদ্বেষ ও দুশমনি লাঘব করবে অথবা তদেরকে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করবে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফরজ গোসলের বিধান

 প্রশ্ন: রাতে স্বপ্নদোষ হলে এই শীতের সকালে গোসল সম্ভব নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে চাইলে কী করা উচিত?

উত্তর: স্বপ্নদোষ হওয়া বড় নাপাকির অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। সুতরাং এমনটি ঘটলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় পানি গরম করে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যে, সেখানে পানি গরমের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের কারণে অসুস্থ হওয়ার কিংবা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে এক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ। কিন্তু পানি গরমের ব্যবস্থা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না।
◆ আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।” [সূরা তাগাবুন: ১৬]
◆ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“আমি যদি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে তা পালন করবে।” [সহিহ বুখারি]

◆ হাদিসে আরও এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
احتَلمتُ في ليلةٍ باردةٍ في غزوةِ ذاتِ السُّلاسلِ فأشفَقتُ إنِ اغتَسَلتُ أن أَهْلِكَ فتيمَّمتُ، ثمَّ صلَّيتُ بأصحابي الصُّبحَ فذَكَروا ذلِكَ للنَّبيِّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فقالَ: يا عَمرو صلَّيتَ بأصحابِكَ وأنتَ جنُبٌ ؟ فأخبرتُهُ بالَّذي مَنعَني منَ الاغتِسالِ وقُلتُ إنِّي سَمِعْتُ اللَّهَ يقولُ:( وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) فضحِكَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ولم يَقُلْ شيئًا
“যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় এক প্রচণ্ড শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হল, আমি যদি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকজনকে নিয়ে সালাত আদায় করলাম। পরে তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেন, “হে আমর, তুমি নাকি জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছো?” তখন আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণী শুনেছি, (আল্লাহ বলেছেন,)
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’’ (সূরা নিসা: ২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।” [আবু দাউদ-সহিহ]
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মতির মাধ্যমে এমন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
إذا كان في محل لا يستطيع فيه تدفئة الماء وليس هناك كن يستكن به للغسل بالماء الدافي وخاف على نفسه فإنه يصلي بالتيمم
ولا حرج عليه
“যদি সে এমন জায়গায় থাকে যেখানে সে পানি গরম করতে পারে না এবং গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্য সেখানে এমন কোনো ঘর না থাকে যেখানে (ঠাণ্ডা থেকে) আত্মরক্ষা করবে এবং (ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের কারণে) শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করবে। এতে কোনও আপত্তি নেই।” [binbaz]
🔸উল্লেখ্য যে, এই বিধান স্বপ্নদোষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলন কিংবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের মাধ্যমে জুনুবি (নাপাক) হওয়ার ক্ষেত্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ও প্রসূতি নারীর পবিত্রতার জন্য গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

রজব মাস সম্পর্কিত কতিপয় জাল ও জঈফ হাদিস

 রজব মাস সম্পর্কে আমাদের সমাজে লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহিহ নয় আর কিছু হাদিস এমন রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এ ধরণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলো:

🚫 ক. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদিস:

● ১. “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

ইবনে হাজার রহ. বলেন, হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনে শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

এ হাদিসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন, এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবি রয়েছে। তাই এ হাদিসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

● ২. “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রমজান।”

“হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” [মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯]

হাদিসটি দুর্বল।

এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন, মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

● ৩. “রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাজানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোজা রাখেননি।” [বাইহাকী]

হাফেয ইবনে হাজার বলেন, উক্ত হাদিসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবি রয়েছে। সে খুব দুর্বল। [তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা]

🚫 খ. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদিস:

● ১. রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।”

এটি জাল হাদিস।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদিসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদিস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন, এই হাদিসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদিসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

● ২. কুরআনের মর্যাদা সকল জিকির-আজকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

হাদিসটি বানোয়াট।

ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদিসটি সনদের রাবিগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদিস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

● ৩. রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় একমাস রোজা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”

হাদিসটি জাল।

এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

● ৪. “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামাজ আদায় করত: বিশ রাকাত নামাজ পড়বে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকাত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকাত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”

এটি একটি বানোয়াট হাদিস।

[দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদিস নং ১৪৪)]

● ৫. “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোজা রাখবে এবং চার রাকাত নামাজ পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

হাদিসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনুল জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। (লিসান্স,মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।।

নফল রোজা বা তাহাজ্জুদ সালাত ইত্যাদির মাধ্যমে বর্ষবরণ হল নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা

  প্রশ্ন-১: নতুন বছরের ১ম দিন কি নফল রোজা রাখা যাবে?

উত্তর: নতুন বছরের ১ম দিন বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ বা অন্য কোন ইবাদত নেই। চাই তা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ হোক বা বাংলা নববর্ষ হোক কিংবা হিজরি নববর্ষ হোক। কেননা ইসলামে বর্ষবরণের জন্য এমন কোনও নির্দেশনা আসেনি। অর্থাৎ ইসলামের সোনালী যুগ তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবি ও তাবেয়ীদের থেকে এমন কোনও আমল প্রমাণিত হয়নি। তাই এই নিয়তে এসব কিছু করলে তা বিদআত বা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত আমল হিসেবে গণ্য হবে-যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, বিদআতি আমলে নেকির পরিবর্তে গুনাহ দ্বারা আমলনামা পূর্ণ হয় যদিও বাহ্যত তা দেখতে নেকির কাজ বা ভালো কাজ বলে মনে হয়। মূলতঃ এগুলোই হলো, “নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা।” (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।)

✪✪ বিদআত তথা ইসলামের নামে দ্বীনের মধ্যে নিত্য-নতুন আবিষ্কারের ভয়াবহতা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

◈ আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন কোন আমল (দ্বীনের কাজ) করল যে ব্যাপারে আমার নির্দেশনা নেই তা (আল্লাহর নিকট) পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম]

◈ আয়েশা রা. থেকে আরও বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]

◈ অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের পর বললেন,

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي [وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ].
“নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল, ভ্রষ্টতা।” [মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১]

আর সুনানে নাসাঈতে রয়েছে, “প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম” [নাসাঈ হা/১৫৭৮]।
তবে বছরের ১ম দিন কেউ যদি রমজান বা মানতের কাজা কাজা রাখতে চায় অথবা সে দিনটি যদি সোম বা বৃহস্পতিবার হয় আর সে এ নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় অথবা যদি সে দিনটি আইয়ামে বীয তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ কিংবা ১৫ তারিখ হয় এবং সে দিন বীযের নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সাধারণ নফল ইবাদত হিসেবে বছরের যে কোন দিন (নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া) রোজা রাখতে পারে। সে হিসেবে তা বছরের ১ম দিন হলেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা অবশ্যই নতুন বছরের আগমন বা বর্ষবরণের নিয়তে রাখা জায়েজ নয়। অন্যথায় তা বিদআতে পরিণত হবে। কারণ ইসলামে নিয়তের উপরেই আমলের পরিণতি নির্ভর করে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إنَّما الأعمالُ بالنِّيَّاتِ وإنَّما لِكلِّ امرئٍ ما نوى

“প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রতিটি মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।” [সহিহ বুখারি-১ম হাদিস]

❑ প্রশ্ন-২: আমরা জানি যে, অনেক মানুষ নানা হারাম কাজের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে। কিন্তু আমি যদি অর্ধ রাতের পরে তাহাজ্জুদের সালাত বা কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তা বরণ করি তাহলে কি জায়েজ হবে?
উত্তর: বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে, অর্ধ রজনীর পর তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত বা বিশেষ কোনও ইবাদত-বন্দেগি করার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বক্তব্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ এ উপলক্ষে যা কিছু করা হবে সবই বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা নতুন বছরকে আমাদের জন্য কল্যাণময় করুন এবং সব ধরণের পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম, শিরক, বিদআত সহ সবধরনের আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate