Saturday, November 9, 2024

উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করা

 একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত: উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করা:

প্রশ্ন: উঁচু স্থানে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচু স্থানে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নত। ঘরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা বা নামার ক্ষেত্রেও কি তা সুন্নত?
উত্তর: উঁচু স্থানে উঠতে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ স্বরূপ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নত। প্রখ্যাত সাহাবি জাবির রা. বলেন,

كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا

“আমরা যখন উপরের দিকে উঠতাম, ‘আল্লাহু আকবার’ ও যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম।” [বুখারি, হা/২৯৯৩]

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوا الثَّنَايَا كَبَّرُوا، وَإِذَا هَبَطُوا سَبَّحُوا

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় উঠতেন তখন আল্লাহু আকবার বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন সুবহানাল্লাহ’ বলতেন।” [আবু দাউদ, হা/২৫৯৯, সনদ সহীহ]

❒ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ.-এর ফতোয়া:

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ ও আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিসে এসেছে যে, তিনি কোনও উঁচু জায়গায় ওঠার সময় তাকবির বলতেন এবং কোনও নিচু জায়গায় নামার সময় তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলতেন। এখন প্রশ্ন হলো, এই তাকবির ও তাসবিহ কি শুধুমাত্র সফরের সময় পাঠ করতে হয় নাকি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বা তৃতীয় তলায় ওঠানামার সময়ও তাকবির ও তাসবিহ বলা যাবে? জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তরে তিনি বলেন,
” كان النبي صلى الله عليه وسلم في أسفاره إذا علا صَعداً كبر، وإذا نزل وادياً سبح، وذلك أن العالي على الشيء قد يتعاظم في نفسه، فيرى أنه كبير، فكان من المناسب أن يكبر الله عز وجل فيقول: الله أكبر، وأما إذا نزل فالنزول سفول فناسب أن يسبح الله عز وجل عند السفول، هذه هي المناسبة .
ولم ترد السنة بأن يفعل ذلك في الحضر، والعبادات مبنية على التوقيف، فيقتصر فيها على ما ورد، وعلى هذا فإذا صعد الإنسان الدرجة في البيت فإنه لا يكبر، وإذا نزل منها فإنه لا يسبح، وإنما يختص هذا في الأسفار” . انتهى من (لقاءات الباب المفتوح 3/102).

“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের সময় কোনও উঁচু জায়গায় উঠলে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতেন এবং নিচু জায়গায় নামলে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলতেন। কারণ উঁচু জায়গায় উঠলে মানুষ নিজেকে মহান মনে করতে পারে। সে মনে করতে পারে, সে বড়। তাই সে সময় তাকবির তথা আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দেওয়াটা অধিক প্রাসঙ্গিক। আর অবতরণ মানে উপর থেকে নিচে চলে যাওয়া। এ সময় তাসবিহ পাঠ বা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করাটা অধিক প্রাসঙ্গিক। এখানে এটাই তাকবির ও তাসবিহ পাঠের প্রাসঙ্গিকতা।
সুন্নতে এমন কোনও দলিল নেই যে, আবাসে থাকাকালীন এই আমল করতে হয়। আর ইবাদত শুধুমাত্র দলিলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং ঘরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় ওঠানামার সময় তাকবির ও তাসবিহ বলা যাবে না। এই আমলটি কেবল সফরের সাথেই খাস। [সূত্র: লিকাউল বাবিল মাফতুহ, ৩/১০২]

❒ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায.-এর ফতোয়া:

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায. কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় যে, কোনও উঁচু জায়গা থেকে নামার সময় তাসবিহ পাঠ করা এবং উপরে ওঠার সময় তাকবির পাঠ করা-এটা কি শুধু সফরের সময় করতে হয় নাকি আবাসেও করা যায়?

তিনি উত্তরে বলেন,

المعروف في السفر، أما في الحضر فإنَّه يُسبّح ويُكبّر في الصعود والنزول، يُكثر من الذكر، سواء في الحوش، أو في السطح، أو غير ذلك.

“সাধারণত সফরের সময় এটা করা হয়। এ বিষয়ে এটাই প্রসিদ্ধ কথা। তবে আবাসে থাকাকালীন উপরে উঠা, নিচে নামার সময় তাকবির পাঠ করবে, তসবিহ পাঠ করবে এবং অধিক পরিমাণে জিকির করবে। তা বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা অন্য যেকোনো জায়গায় হতে পারে।”

• প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে একসাথে তাকবির বলা কি জায়েজ?

জবাব: না, প্রত্যেকে নিজ নিজে তাকবির বলবে। অন্যের আওয়াজের দিকে খেয়াল করবে না। সবাই মিলে তাকবির বলার কোনও ভিত্তি নাই। এটা বিদআত। প্রত্যেকে নিজের অবস্থান অনুযায়ী আল্লাহর জিকির করবে; অন্যের আওয়াজের দিকে খেয়াল করবে না।

• প্রশ্ন: যখন কেউ সিঁড়ি বেয়ে ওঠে তখন কি তাকবির বলবে?

জবাব: হ্যাঁ, ওঠার সময় বা নামার সময় উভয়ক্ষেত্রেই তাকবির বলা যায়।

• প্রশ্ন: যখন কেউ সিঁড়ি বেয়ে নামে তখন তাসবিহ পড়ে?

জবাব: এটাও খুব ভালো। অথবা নামার সময় আন্যান্য জিকির-আজকার করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ

“তারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং পাশ ফিরে শুয়ে আল্লাহর জিকির করে।” [আল ইমরান: ১৯১] তবে পাহাড়ের উপত্যকা বা খাদে নামার সময় খেয়াল করে তাসবিহ পাঠ করবে সফর অবস্থায়।” [binbaz.org]

❂ তবে কতিপয় আলেমের মতে, সিঁড়ি ব্যবহারের সময়ও উক্ত আমল করা যায়। অর্থাৎ বাড়ি বা কোনও ভবনের সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটের মাধ্যমে উপরে উঠার সময় বলবে, আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় বলবে, সুবহানাল্লাহ। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য। কিন্তু এই উঠানামার সময় সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি যেকোনো জিকির ও দুআ তাসবিহ পাঠ করা যায়। আল্লাহু আলাম।

মোটকথা, কোনও উঁচু বিল্ডিং-এর সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটের মাধ্যমে উপরে উঠার সময়, নামার সময়, পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি চালনা বা গাড়িতে অবস্থানকালে উপরে ওঠা এবং নিচে নামার সময় আমরা সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নানা ধরণের জিকিরের মাধ্যমে আমাদের জিহ্বাকে সচল রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। তবে বিশেষভাবে সফরে পথ চলার সময়, গাড়ি ড্রাইভ করার সময় বা বাহনে থাকা যখন আমরা পাহাড় বা অন্যান্য উঁচু স্থানে উঠব তখন খেয়াল করে এই সুন্নতটি প্রতি আমল করার চেষ্টা করব। অর্থাৎ উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার আর নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করব। এতে আমাদের আমলনামায় জামা হবে অবারিত সওয়াব ইনশাআল্লাহ।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই সুন্নতটি আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিদায় নিয়েছে। তাই এটিকে পুনর্জীবিত করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদি আরব।

Sunday, October 27, 2024

আলেম নন কিন্তু সব বিষয়ে মানুষকে ফতোয়া দেন তার থেকে ফতোয়া নেওয়া যাবে কি

 প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি আলেম নন কিন্তু তার আকিদা সহিহ। তিনি সব বিষয়ে মানুষকে ফতোয়া দেন। তার থেকে ফতোয়া নেওয়া যাবে কি? আর ব্রাদার্সদের থেকে কি ফতোয়া গ্রহণ করা যাবে?

উত্তর: প্রকৃতপক্ষে ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা আমাদের দেশে যাদেরকে আমরা ‘আলেম’ বলে চিনি তাদের অধিকাংশের মধ্যেই নেই‌ ব্রাদার্স, সাধারণ তালেবুল ইলম, কিংবা সাধারণ দ্বীন চর্চা কারী ব্যক্তি তো দূরের কথা। কেননা ফতোয়া দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। ‌যেমন: ইলমুল কুরআন, তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস, আরবি ভাষা সাহিত্য ও ব্যাকরণ, ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সালাফদের ফতোয়া ও মতামত এবং বিশুদ্ধ আকিদা-এর পাশাপাশি ফিকহুল ওয়াকে (পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট) সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা।
তাই সাধারণ মানুষের উচিত, দেখেশুনে, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ইলমের জগতে সুপরিচিত বিদগ্ধ ও বড় আলেমদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

যার তার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা মোটেও নিরাপদ নয়। আর যারা ইচ্ছেমত ফতোয়া দিচ্ছে তাদেরও উচিত, আল্লাহকে ভয় করা। কেননা এটা অনেক বড় আমানত।‌ এবং ইলম বিহীন ফতোয়া দেওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)। তবে সাধারণ আলেম, বক্তা, ওয়ায়েজ, মসজিদের ইমামগণ-খতিব ও ব্রাদার্স প্রমুখগণ যদি বিজ্ঞ আলেমদের দলিল সমৃদ্ধ ফতোয়াগুলো মানুষের কাছে নকল করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। তাদের থেকে এই জাতীয় ফতোয়া গুলো সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদি আরব।

অত্যাচারিত হইওনা এবং অত্যাচার করিও না এটি কি কোন হাদিসের ভাষা

 প্রশ্ন: “অত্যাচারিত হইও না অত্যাচার করিও না” এটা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা? যদি হয়ে থাকে অনেক সময় অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অর্থাৎ অত্যাচারিত না হতে চাইলে দেখা যায় আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হয় পরবর্তীতে তারা আর নতুন করে আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না আমরা যত চেষ্টাই করি। এক্ষেত্রে কি করবো?অত্যাচারিত হতে না চাইলে তাদের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হবে। ঝামেলা করাও তো ইসলামিক ভাবে ঠিক না।

উত্তর: “অত্যাচারিত হইওনা এবং অত্যাচার করিও না” এটি কোন হাদিসের ভাষ্য নয়।
তবে হাদিসে জুলুম করা থেকে এবং জুলুমের শিকার হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার কথা এসেছে। যেমন: বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতেন,
اللَّهمَّ إنِّي أعوذُ بِك مِن أَن أضِلَّ أو أزِلَّ أو أظلِمَ أو أُظلَمَ أو أجهَلَ أو يُجهَلَ عليَّ
– অনুরূপভাবে হাদিসে জুলুম করতে এবং জালিমকে সাহায্য করতে নিষেধ করা হয়েছে।
– কেউ যদি আপনার উপরে জুলুম ও অবিচার করে সবচেয়ে উত্তম হলো, ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে ক্ষমা করে দেওয়া কিন্তু প্রয়োজনে সে যে পরিমাণ অন্যায় করেছে সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে‌।
সুতরাং কেউ যদি আপনার প্রতি কোন ধরনের অন্যায়-অবিচার করে তাহলে তাকে সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিবেন এবং প্রতিশোধ নেওয়া থেকে নিবৃত থাকবেন। অন্যথায় ইচ্ছে করলে আপনি প্রতিবাদও করতে পারেন ও সমপরিমাণ (বেশি নয়) প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারেন। ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এর কারণে যদি আরো বড় ধরনের ফেতনার আশঙ্কা থাকে তাহলে সেদিকে অগ্রসর হবেন না বরং ধৈর্য ধারণ করবেন। আর জালিমকে ক্ষমা করতে না পারলে আখেরাতে আল্লাহর কাছে এর বিচারের ভার তুলে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কেয়ামতের দিন জালিমের উপযুক্ত বিচার করবেন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Monday, October 14, 2024

হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন জিনিস ভাড়া দেওয়া

 প্রশ্ন: হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, সিসি ক্যামেরা, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়া দেওয়া জায়েজ আছে কি?

উত্তর: হিন্দুরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করে। তা হল, মূর্তিপূজা। এটি হল, শিরক। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা নিসা: ৪৮]

সুতরাং কোনও মুসলিমের জন্য জঘন্য শিরকের কাজে কোনও ভাবেই সহায়তা করা বৈধ নয়। অত:এব হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়াও দেওয়া যাবে না।

মোটকথা, পূজার কাজে ব্যবহার করার জন্য কোনও বস্তু বা উপকরণ তাদের কাছে বিক্রয় করা বা ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়। কারণ তা শিরকের কাজে সহায়তার শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, মূর্তি পূজা ও শিরক হল, সবচেয়ে বড় পাপ ও সীমালঙ্ঘন।

তবে সিসি ক্যামেরা ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। কারণ তা মুসলিম-হিন্দু সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। কেননা অনেক সময় কিছু স্বার্থান্বেষী অমুসলিম মুসলিম সেজে পূজা মণ্ডপে আক্রমণ চালিয়ে মুসলিমদের উপর তার দোষ চাপিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরা থাকলে হয়ত এমন চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে এতে কোনও সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ।

সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি বিশ্ববরণ্যে আলেম আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

لا يجوز لمسلم التعاون للمسلم ولا المسلمة مشاركة النصارى أو اليهود أو غيرهم من الكفرة في أعيادهم ، بل يجب ترك ذلك ؛ لأن ” مَن تشبَّه بقوم فهو منهم ” ، والرسول عليه الصلاة والسلام حذرنا من مشابهتهم والتخلق بأخلاقهم ، فعلى المؤمن وعلى المؤمنة الحذر من ذلك ، ولا تجوز لهما المساعدة في ذلك بأي شيء لأنها أعياد مخالفة للشرع ، فلا يجوز الاشتراك فيها ، ولا التعاون مع أهلها ، ولا مساعدتهم بأي شيء لا بالشاي ولا بالقهوة ولا بغير ذلك كالأواني وغيرها ؛ ولأن الله سبحانه يقول : ( وتعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الإثم والعدوان واتقوا الله إن الله شديد العقاب ) فالمشاركة مع الكفرة في أعيادهم نوع من التعاون على الإثم والعدوان .
” مجموع فتاوى الشيخ ابن باز ” ( 6 / 405 ) .

“কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ই-হুদি-খ্রি-স্টান বা অন্যান্য কা-ফেরদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা জায়েজ নয় বরং তা বর্জন করা আবশ্যক। কারণ “যে ব্যক্তি অন্য কোনও জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও চরিত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

সুতরাং ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য এ বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি। এ উৎসব পালনে তাদেরকে কোনভাবেই সাহায্য করা বৈধ নয়। কেননা এগুলো শরিয়ত বিরোধী উৎসব। সুতরাং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয়। চা, কফি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি দ্বারাও সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

আর কা*ফেরদের সাথে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা তাদেরকে গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তার শামিল।” [ফতোয়া বিন বায, ৬/৪০৫]
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদে নতুন পোশাক কেনা কোন বিলাসিতা নয়

 প্রশ্ন: স্বামীর যদি সামর্থ্য থাকে তবু্ও যদি সে সন্তানদের ঈদে নতুন ড্রেস কিনে না দেয় এবং বলে ঈদের কাপড় কিনা বিলাসিতা। কথাটা কি সঠিক? উল্লেখ্য সেই সন্তানেরা নানা বাড়ি থেকে নতুন ড্রেস গিফট পেয়েছে। এবং প্রতিটি সন্তানর‌ই বাবার কাছে এটা চাওয়া থাকে,না পেলে মন খারাপ হয়।

উত্তর: ঈদের সময় সুন্দর পোশাক পরা ও সাজ-সজ্জা করা সুন্নত। যেমন হাদিসে এসেছে,

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ‏”‌‏.‏ فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ ‏”‏ إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ‏”‌‏.‏ وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ‏”‌‏.

বদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন।”

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর (রাঃ) তা গ্রহন করেন এবং সেটি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোশাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।

[সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৩/ দুই ঈদ, পরিচ্ছেদঃ ৬০২. দুই ঈদ ও এতে সুন্দর পোশাক পরা]

আর এ কথা সত্য যে, ঈদের সময় সুন্দর ও নতুন জামা-কাপড় ঈদের আনন্দকে বৃদ্ধি করে দেয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। এমন অতিরিক্ত করা যাবে না যা অপচয় পর্যায়ে চলে যায়।

বরং সাধ্যানুযায়ী ভালো পোশাক পরবে, প্রয়োজন বোধে নতুন জামা ক্রয় করবে। আর্থিক সামর্থ থাকলে এটিকে বিলাসিতা বলা উচিৎ নয়। হ্যাঁ, সামার্থ্য না থাকলেও অনেক কষ্ট করে বা ধার-দেনা করে নতুন জামা ক্রয় করতেই হবে-এমন চিন্তা বিলাসিতা বলে গণ্য হতে পারে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate