Saturday, February 22, 2025

শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কী এবং তা কি শিরক

 প্রশ্ন: শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কী? তা কি শিরক?

উত্তর: প্রথমত: আমাদের জানা জরুরি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম মৃত বরণ করলে (চাই স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করুক অথবা অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু হোক) তার জন্য কী কী করণীয় তা নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন: তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের পক্ষ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা ও জন কল্যাণ মূলক কাজ করা, সকদায়ে জারিয়া মূলক কার্যক্রম করা, তাদের উদ্দেশ্যে হজ-উমরা আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে তারা কবরে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।

পক্ষান্তরে তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তথাকথিত স্মৃতি স্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা, তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক স্যালুট জানানো, তাদের উদ্দেশ্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা, মোমবাতি জ্বালান, মশাল জ্বালানো, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন প্রজ্বলন ইত্যাদি হল, অমুসলিমদের সংস্কৃতি- যা অমুসলিম সংস্কৃতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলিমরা অবলীলা ক্রমে তাদের অন্ধ অনুকরণ বশত: পালন করে থাকে। ইসলামের সাথে এগেুলোর দূরতম কোন সম্পর্ক নাই। ‌

অথচ ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:

❖ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ই*হুদি-খৃ*ষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।

❖ সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»

‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি ষণ্ডা (মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।” সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ই*হুদী ও খৃ*ষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: তবে আর কারা? [বুখারি, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারির বর্ণনায় حذو القذة بالقذة – এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।]

এমন কি সরাসরি মৃতদের কবরেও এসব কার্যক্রম করা দীনের মধ্যে চরম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। আর শহিদ মিনার বা স্মৃতি সম্ভে ফুল দেয়া সরাসরি শিরক না হলেও তা শিরকের দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম। কা*ফেরদের অন্ধ অনুকরণ তো বটেই। সব দিক থেকেই তা পালন করা হারাম। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন)

অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শবিনা খানি, কুলখানি, ইসালে সওয়াব, মিলাদ মাহফিল, মৃত্যু বার্ষিকী পালন, স্মরণ সভা, ওরশ মাহফিল ইত্যাদি হল দীনের মধ্যে নব সংযোজিত বিদআত। আর বিদআত হল, ভ্রষ্টতা এবং জাহান্নামের পথ। ইসলামের লেবাস পরা ‘দেখিতে সুন্দর’ প্রতিটি বেদআতই হল, শয়তানের দেখানো সুসজ্জিত পথ। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের মধ্যে কোনও কমতি রেখে গেছেন তাহলে সে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ‘রেসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা কারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করল। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং তাতে সামান্যতম সংযোজন ও বিয়োজনের কোনও সুযোগ নাই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ

“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি।[মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবান রা. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলা সাহীহা (সহীহ হাদিস সিরিজ) হাদিস নং ২৭৩৫]

তিনি বিভিন্ন সময় বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বলতেন:

أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

“অতঃপর,সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা। সব চেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়াদি। আর প্রতিটি নতুন বিষয়ই ভ্রষ্টতা।[সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: নামায এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা।]

প্রশ্নোত্তরের সার কথা হল, শহিদ মিনারে ফুল দেয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও তাদের অন্ধ অনুকরণের কারণে হারাম। কোনও মুসলিমের জন্য কথিত শহিদদের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কোনও কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ নাই। কেউ অজ্ঞতা বশত: এমনটি করে থাকলে তার উচিৎ, অনতি বিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল কারী। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের কু সংস্কৃতি, অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণ এবং ইসলামের নামে সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন”। আমিন।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

যারা ভাষার জন্য নিহত হয়েছেন তাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে শহিদ বলা যাবে কি

প্রশ্ন: যারা ভাষার জন্য নিহত হয়েছেন তাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে ‘শহিদ’ বলা যাবে কি?
উত্তর: ‘শহিদ’ একটি ইসলামি পরিভাষা। সুতরাং এটি ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। ইসলামের শহিদের মর্যাদা অতুলনীয়। শহিদ মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করতে থাকেন।
এটি কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিভাষা নয়। তাই ইসলামের নির্ধারিত সংজ্ঞা ছাড়া অন্য কোনো প্রসঙ্গে এই শব্দটি ব্যবহার করা উচিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে তাকেই শহিদ বলা হয়, যিনি একমাত্র আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করতে করতে নিহত হন।

সুতরাং কেউ যদি শুধু দেশ, ভাষা, আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক স্বার্থ, বংশগত আভিজাত্য কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশে যুদ্ধ বা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নিহত হন, তবে তিনি শহিদ হবেন না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমাদের সমাজে এই মর্যাদাপূর্ণ বিশেষণটি রাজনৈতিক স্বার্থে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নাস্তিক যে কারও জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে!

❑ কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে শহিদের পরিচয় ও মর্যাদা:

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِنْ لَا تَشْعُرُونَ

“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পারো না।” [সূরা বাকারা: ১৫৩]

◈ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۚ وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

“কাজেই যারা পার্থিব জীবনকে আখিরাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তাদেরই আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা উচিত। বস্তুত যারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে বিশাল প্রতিদান দান করব।” [সূরা নিসা: ৭৪]

◈ হাদিসের ভাষায় শহিদ:

عن أبي موسى قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الرجل يقاتل للمغنم والرجل يقاتل للذكر والرجل يقاتل ليرى مكانه فمن في سبيل الله ؟ قال : ” من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله”

আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “এক ব্যক্তি গণিমতের সম্পদ অর্জনের জন্য জিহাদ করল, একজন নিজের সুনামের জন্য জিহাদ করল, আরেকজন তার বীরত্ব দেখানোর জন্য যুদ্ধ করল। এদের মাঝে কে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করল?”

রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানকে উচ্চকিত করতে যুদ্ধ করল, সে-ই কেবল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করল।” [সহিহ বুখারি, হাদিস নং-২৬৫৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৫০২৯]

❂ ইসলামের দৃষ্টিতে আরও যারা শহিদের অন্তর্ভুক্ত:

রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

من قتل دون ماله فهو شهيد ومن قتل دون أهله أو دون دمه أو دون دينه فهو شهيد

• যে ব্যক্তি নিজ সম্পত্তি রক্ষায় নিহত হয়, সে শহিদ।
• যে ব্যক্তি নিজ পরিবার রক্ষায় নিহত হয়, সেও শহিদ।
• যে ব্যক্তি প্রাণ রক্ষায় কিংবা দ্বীন রক্ষায় নিহত হয় সেও শহিদ।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৭৭৪; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-১৬৫২)

❂ আরও কতিপয় ব্যক্তি যারা শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন:
রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

الشهداء سبعة سوى القتل في سبيل الله المطعون شهيد والغرق شهيد وصاحب ذات الجنب شهيد والمبطون شهيد والحرق شهيد والذي يموت تحت الهدم شهيد والمرأة تموت بجمع شهيد

“আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহিদ রয়েছে। যথা:
১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
৩. ফুসফুসের রোগে (প্লুরিসি) মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
৪. পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
৬. দেয়াল বা ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহিদ।
৭. সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুবরণকারী নারীও শহিদ।” [মুয়াত্তা মালিক, হাদিস নং-৫৫৪, ৮০২; আল-মু’জামুল কাবীর, হাদিস নং-১৭৮০; সহিহ কুনুজুস সুন্নাহ, হাদিস নং-২৩]

❑ কাউকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ বলা জায়েজ নাই:

আল্লাহ এবং তাঁর রসুল যাদেরকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাদেরকে ছাড়া আর কোন মানুষকে নির্দিষ্ট করে শহিদ বলা জায়েজ নাই। সে যেই হোক না কেন। এমনকি জিহাদে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে মারা গেলেও তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ বলা বৈধ নয় যে, উমুক, উমুক শহিদ। কারণ আমি-আপনি জানি না সে কী নিয়তে জিহাদ করেছে। আল্লাহর দ্বীনের জন্য নাকি মানুষ তাকে বীর যোদ্ধা বা সহাসী মুজাহিদ বলবে সে জন্য।

তবে কোনও ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থার প্রতি সুধারণা রেখে তা জন্য দুআ করা যাবে যে, আল্লাহ তাকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন। অথবা আশা করা যায়, যে সে আখিরাতে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। অথবা আমভাবে বলা যাবে যে, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে তারা শহিদ. যারা এই এই করবে তারা শহিদ। কিন্তু নাম ধরে নির্দিষ্টভাবে নয়। ইমাম বুখারি এভাবে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন যে,

باب لا يقال: فلان شهيد

”একথা বলা যাবে না যে, অমুক ব্যক্তি শহিদ।”

ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. বলেন,

: أي على سبيل القطع بذلك إلا إن كان بالوحي، وكأنه أشار إلى حديث عمر أنه خطب فقال: تقولون في مغازيكم فلان شهيد ومات فلان شهيداً ولعله قد يكون قد أوقر راحلته. ألا لا تقولوا ذلكم ولكن قولوا كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من مات في سبيل الله أو قتل فهو شهيد. وهو حديث حسن أخرجه أحمد وسعيد بن منصور وغيرهما من طريق محمد بن سيرين … وعلى هذا فالمراد النهي عن تعيين وصف واحد بعينه بأنه شهيد، بل يجوز أن يقال ذلك على طريق الإجمال. انتهى

অর্থাৎ ওহির মাধ্যমে অবগত হওয়া ব্যতীত অকাট্য ভাবে কারও জন্য শহিদ হওয়ার ফায়সালা দেওয়া যাবে না। তিনি (ইমাম বুখারি রাহ.) সম্ভবত উমর রা. এর একটি ভাষণের দিকে ইংগিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বলে থাক, অমুক ব্যক্তি শহিদ, অমুক ব্যক্তি শহিদ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। কিন্তু হতে পারে সে তার বাহনে আরোহন করেছে, ব্যবসার উদ্দেশ্যে।

খবরদার! এভাবে বলো না বরং তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতো বল যে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু বরণ করল অথবা জীবন দিল সে শহিদ।” [মুসনাদ আহমদ-হাসান]

এ কথার ভিত্তিতে ইমাম বুখারির অনুচ্ছেদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কাউকে নির্দিষ্টভাবে শহিদ উপাধিতে ভূষিত করা নিষিদ্ধ। তবে অনির্দিষ্টভাবে তা বলা জায়েজ।” [ফাতহুল বারি ৬/৯০] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদান করেছেন:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব। 

কুরআনের কসম এবং কুরআন হাতে নিয়ে কসম করার বিধান

 নিম্নে এ বিষয়ে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

❑ কুরআনের কসম করার বিধান:

ইসলামের দৃষ্টিতে কসম করার সঠিক নিয়ম হলো, কেবল আল্লাহর নাম বা তাঁর গুণের কসম খাওয়া। যেমন: “আল্লাহর নামে কসম করছি…” বা “আল্লাহর ইজ্জতের কসম করছি…”। কারণ আল্লাহর নামে কসম খাওয়ার চেয়ে বড় কিছু আর হতে পারে না। কেউ যদি কুরআনের কসম করে এই বিশ্বাসে যে, এটি আল্লাহর কালাম বা বাণী তবে তা বৈধ। কারণ আল্লাহর কালাম তাঁর গুণের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামি শরিয়তে আল্লাহর গুণের কসম করা বৈধ। কারণ আল্লাহর গুণ তাঁর সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু যদি কেউ কুরআন দ্বারা কাগজ, কালি ও আরবি বর্ণমালাকে বোঝায় তবে তা বৈধ নয়; বরং এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ কাগজ, কালি ও আরবি বর্ণমালা মাখলুক বা সৃষ্ট জিনিস। সুতরাং কুরআনের কসম পরিহার করাই উত্তম।

এ প্রসঙ্গে বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,

إذا حلف بالمصحف قصده القرآن بكلام الله فلا بأس؛ لأن القرآن كلام الله، فإذا قال: وعزة الله، أو وكلام الله، أو بالمصحف، وقصده القرآن مقصوده كلام الله U فهذا يمين لا بأس به، هذه يمين لا بأس بها، ولا حرج فيها، والحمد لله، مثلما لو قال: وعزة الله، وعلم الله، وكلام الله لا بأس، يحلف بصفة من صفات الله، كما لو قال: والرحمن والرحيم، والعزيز، والحكيم، فهكذا إذا قال: وعزة الله، ورحمة الله، وعلم الله، وكلام الله لا بأس

“যদি কেউ কুরআনের কসম করে এবং তার উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর বাণী তথা কালামুল্লাহ তাহলে এতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ কুরআন আল্লাহর কালাম।

সুতরাং যদি কেউ বলে: “আল্লাহর ইজ্জতের কসম”, “আল্লাহর কালামের কসম” বা “কুরআনের কসম” এবং তার উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর বাণী, তাহলে এটি বৈধ কসম হবে এতে কোনও সমস্যা নেই, আলহামদুলিল্লাহ।

এটি তেমনই যেমন কেউ বলে: “আল্লাহর ইজ্জতের কসম”, “আল্লাহর জ্ঞানের কসম”, “আল্লাহর বাণীর কসম”— এতে কোনও অসুবিধা নেই। কেননা এটি আল্লাহর একটি সিফত বা গুন।। যেমন কেউ যদি বলে: “রহমানের কসম”, “রহিমের কসম”, “আযীযের কসম”, “হাকীমের কসম” এগুলোও বৈধ কসম।

একইভাবে, “আল্লাহর ইজ্জতের কসম”, “আল্লাহর রহমতের কসম”, “আল্লাহর জ্ঞানের কসম”, “আল্লাহর বাণীর কসম” বলাও বৈধ।” (সমাপ্ত)

❑ কুরআন হাতে (আল্লাহর নামে) কসম করার বিধান:

কুরআনের উপর হাত রেখে কসম করা, তা সরাসরি কুরআনের পাতার ওপর হোক বা তার মলাটের ওপর হোক শরিয়ত অনুমোদিত নয়। বরং বহু আলেম এটিকে সুন্নাহ পরিপন্থী বা বিদআত বলেছেন।

নিম্নে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববরেণ্য কতিপয় আলিমের ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:

❂ ১. ইবনে কুদামা আল হাম্বলি রহ. তার “আল-মুগনি” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কতিপয় আলেম কসমকে আরও দৃঢ় করার জন্য কুরআনের ওপর হাত রেখে কসম করাকে পছন্দ করেছেন। কিন্তু তিনি বলেন:

وَهَذَا زِيَادَةٌ عَلَى مَا أَمَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فِي الْيَمِينِ، وَعلى ما فَعَلَهُ الْخُلَفَاءُ الرَّاشِدُونَ وَقُضَاتُهُمْ، مِنْ غَيْرِ دَلِيلٍ وَلَا حُجَّةٍ يُسْتَنَدُ إلَيْهَا، وَلَا يُتْرَكُ فِعْلُ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَأَصْحَابِهِ لِفِعْلِ ابْنِ مَازِنٍ وَلَا غَيْرِهِ.انتهى.

“এটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পদ্ধতিতে কসম নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তার থেকে যেমন অতিরিক্ত কিছু তেমনি এটি খোলাফায়ে রাশেদিন এবং তাদের বিচারকদের বিচারকার্য থেকে অতিরিক্ত। এর পক্ষে কোনও গ্রহণযোগ্য দলিল বা প্রমাণ নেই। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের আমল ছেড়ে ইবনে মাজিন বা অন্য কারও আমল অনুসরণ করা উচিত নয়।”

❂ ২. কুরতুবি রহ. তার তাফসিরে লিখেছেন:

“শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারীরা কসমের কঠোরতা বাড়ানোর জন্য কুরআনের ওপর হাত রেখে কসম নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে ইবনুল আরাবি (রহ.) এটিকে বিদআত বলেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, সাহাবিদের মধ্যে কেউ কখনো এই পদ্ধতি অবলম্বন করেননি।”

❂ ৩. শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ. সৌদি আরবের জনপ্রিয় “নুরুন আলাদ-দারব” শীর্ষক এক রেডিও অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন:

وإذا حلف بالله سبحانه وتعالى فإنه لا حاجة إلى أن يأتي بالمصحف ليحلف عليه، فالحلف على المصحف أمر لم يكن عند السلف الصالح، لم يكن في عهد النبي صلى الله عليه وسلم ولا في عهد الصحابة، حتى بعد تدوين المصحف لم يكونوا يحلفون على المصحف بل يحلف الإنسان بالله سبحانه وتعالى بدون أن يكون ذلك على المصحف.

“যদি কেউ আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে কুরআন হাতে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কুরআনের ওপর হাত রেখে কসম করা আমাদের সালাফদের যুগে ছিল না। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ এবং এমনকি কুরআন সংকলনের পরও প্রচলিত ছিল না। বরং মানুষ আল্লাহর নামে কসম খেত কুরআন হাতে না নিয়েই।”

❂ ৪. তিনি আরও বলেন:

الحلف على المصحف لتأكيد اليمين: وهذه صيغة لا أعلم لها أصلاً من السنة فليست مشروعة

“কসম দৃঢ় করার জন্য কুরআনের ওপর হাত রেখে কসম নেওয়ার কোনও ভিত্তি আমি সুন্নতে পাইনি। এটি শরিয়তসম্মত নয়।”

❂ ৫. “লাজনাতুদ দায়িমাহ” (সৌদি স্থায়ী ফতোয়া কমিটি) তাদের ফতোয়ায় বলেছেন:

الحلف على المصحف أو على (صحيح البخاري) لا أصل له في الشرع، وإنما هو من عمل بعض الجهال، فيجب ترك هذه العادة، وتعظيم اليمين بالله عز وجل من غير أن يكون ذلك على المصحف أو (صحيح البخاري) أو غيرهم

“কুরআন বা ‘সহিহ বুখারি’ এর ওপর হাত রেখে কসম করার কোনও শরয়ি ভিত্তি নেই। এটি কিছু অজ্ঞ লোকের প্রচলিত কাজ মাত্র।

সুতরাং এ ধরনের প্রথা পরিহার করা উচিত এবং আল্লাহ তাআলার নামে কসমকে যথাযথভাবে সম্মান করা উচিত, তবে তা কুরআন বা অন্য কোনও কিতাবের ওপর হাত রেখে করা উচিত নয়।” [ফতোয়াগুলোর উৎস: Islam Q&A]

বিজ্ঞ আলেমদের উপরোক্ত ফতোয়া ও আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, কুরআন হাতে নিয়ে কসম করা সাহাবিদের যুগে প্রচলিত ছিল না এমনকি কুরআন সংকলিত হওয়ার পরও সাহাবি ও তাবেয়িদের মধ্যে এটি দেখা যায়নি। সুতরাং কুরআনুল কারিমের উপর হাত রেখে কসম করা শরিয়ত সম্মত নয় বরং বিদআত।

❑ আল্লাহ তাআলা ও তাঁর গুণ ছাড়া অন্য কিছুর কসম খাওয়া শিরক:

মুসলিমদের জন্য মনে রাখা আবশ্যক যে, ইসলামে একমাত্র আল্লাহ এবং তার সিফত বা গুণাবলী ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি, বস্তু, গাছ, মাছ, পাথর, পীর, মাজার, মাটি, দানা, বাবা, মা, সন্তান ইত্যাদির কসম খাওয়া শিরক। তবে এটি বান্দার নিয়তের উপর নির্ভর করে কখনো শিরকে আসগর (ছোট শিরক) আবার কখনো শিরকে আকবার (বড় শিরক) হতে পারে।

◆ ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে কসম করল, সে কুফরি করল অথবা শিরক করল।” [আবু দাউদ: ৩২৫১, সহিহ]

◆ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لَا تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ، وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ، وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللَّهِ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ

“তোমরা তোমাদের পিতাদের নামে কসম করো না। যে আল্লাহর নামে কসম করে, সে যেন সত্য বলে; আর যার জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হয়, সে যেন সন্তুষ্ট হয়। আর যে সন্তুষ্ট হলো না, তার সাথে আল্লাহর কোনও সম্পর্ক নেই।” [সহিহ মুসলিম: ১৬৪৪]

◆ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন:

مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ لِيَصْمُتْ

“যে কসম করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে অথবা চুপ থাকে।” [সহিহ বুখারি: ২৬৭৯]

◆ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:

لَأَنْ أَحْلِفَ بِاللَّهِ كَاذِبًا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَحْلِفَ بِغَيْرِهِ صَادِقًا

“গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি বা বস্তুর নামে সত্য কসম করার চেয়ে, আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করা আমার কাছে অধিক প্রিয়।” [ইরওয়াউল গালিল, হা/২৫৬২]

❑ কেউ যদি পরিস্থিতি শিকার হয়ে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে বাধ্য হয়:

কুরআন হাতে কসম করা যেমন জায়েজ নয় তেমনি কাউকে কুরআন হাতে নিয়ে কসম করতে বা এ জন্য বাধ্য করা জায়েজ নয়। কিন্তু যদি কোনও ব্যক্তি নির্দোষ হওয়ার পরও তাকে কোনও গুরুতর অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয় এবং অভিযোগকারী ব্যক্তি তাকে অজ্ঞতা বশতঃ কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে বাধ্য করতে চায় অন্যথায় তাকে জেল-জরিমানা বা বিভিন্ন ধরণের শাস্তির সম্মুখীন করা হবে-এমন পরিস্থিতিতে নিরপরাধ ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে পারে। এতে তার গুনাহ হবে না বরং যে তাকে বাধ্য করেছে সে গুনাহগার হবে। তবে অন্তরে সে এ কাজকে হারাম বলে বিশ্বাস করবে।

হাদিসে এসেছে, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْه»

‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের অনিচ্ছা বশত: এবং ভুলে যাওয়ার কারণে ঘটে যাওয়া গুনাহ এবং জোর জবরদস্তি মূলক কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” [আবু দাউদ, হা/৭২১৯-সহিহ]
এ ক্ষেত্রে সে সে পবিত্র অবস্থায় কুরআন হাতে নিয়ে আল্লাহর নামে কসম করবে।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বারবার সিজার বা জরায়ু অপসারণ ও সন্তান গ্রহণের বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিকোণ

 প্রশ্ন: আমার দুইটি সন্তান রয়েছে। দুটোই সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে হয়েছে। আমি নরমাল ডেলিভারির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্ভব হয়নি। এখন তৃতীয় সন্তানের ব্যাপারে আমি আমার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, তৃতীয় সিজার করা যায় তবে এতে ঝুঁকি থাকে এবং জরায়ু কেটে ফেলতে হতে পারে। কারণ বারবার সিজার করানো জরায়ুর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

এক্ষেত্রে কী করা উচিত? সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করা কি ঠিক হবে যেহেতু ডাক্তার বলছেন জরায়ু কেটে ফেলতে হতে পারে? আবার ইসলামে বেশি বেশি সন্তান গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা না করলে কি গুনাহ হবে? পুরুষ ডাক্তারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্টের জন্য সিজার করার বিধান জানতে চাই।

উত্তর: নিম্নে অতিসংক্ষেপে পুরুষ ডাক্তারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্টের জন্য সিজার করা, জরায়ু অপসারণ এবং অধিক সন্তান গ্রহণ বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হলো: وبالله التوفيق

❑ ১. ইসলামের দৃষ্টিতে অভিজ্ঞ নারী চিকিৎসক থাকা অবস্থায় পুরুষ চিকিৎসকের নিকট সিজার করা জায়েজ নয়:

ইসলামি শরিয়তে নারীর সংবেদনশীল স্থান কেবলমাত্র স্বামী ব্যতীত অন্য কোনও নারী বা পুরুষের জন্য দেখা বা স্পর্শ করা জায়েজ নয় যদিও সে মাহরাম (যেমন: ছেলে, বাবা, ভাই) হয়ে থাকে। তবে যদি কোনও যোগ্য নারী চিকিৎসক পাওয়া না যায় এবং পরিস্থিতি একান্তই সংকটময় হয় তখন সিজারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুরুষ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া বৈধ হবে।

এক্ষেত্রে পুরুষ চিকিৎসককে অবশ্যই গ্লাভস পরিধান করতে হবে এবং রোগীর শরীর যথাসম্ভব আবৃত রাখতে হবে যাতে একান্ত প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতীত অন্য কোনও অংশ প্রকাশিত না হয়।

– শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা হলো:

الضرورة تبيح المحظورات

“প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে বৈধ করে দেয়।”

(এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া সহকারে আলাদা পোস্ট রয়েছে)
সিজার ছাড়াও জটিল নারী রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণের বিধান একই।

❑ ২. বারবার সিজার ও জরায়ু অপসারণের বিষয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি:

সন্তান জন্মদান ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে শরিয়তের মূলনীতি হলো, যদি এটি মাতার জীবন বা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়, তাহলে ইসলাম এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হলো:

❂ ক. নিজের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকলে সন্তান না নেওয়া বৈধ:

যদি তৃতীয় সিজার করার কারণে আপনার জীবন বা স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তাহলে শরিয়ত আপনাকে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেয়। কারণ ইসলাম জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।

প্রাণহানি বা মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কায় কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার দলিল:

আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَمَنِ ٱضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍۢ وَلَا عَادٍۢ فَلَآ إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ

“কিন্তু যদি কেউ নিরুপায় হয়ে পড়ে (হারাম কিছু খেতে), অথচ সে অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তবে তার জন্য কোনো পাপ নেই।” [সূরা বাকারা ২: ১৭৩]

সুতরাং যদি কোনো নারী বারবার সিজার করানোর ফলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে এবং ডাক্তাররা নিশ্চিত করেন যে, জরায়ু রেখে দিলে বিপদ হবে তাহলে এটি إضطرار (অপরিহার্য অবস্থা) হিসেবে গণ্য হবে এবং তখন শরিয়ত এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদান করে। অর্থাৎ এ পরিস্থিতি জরায়ু অপসারণ করা জায়েজ।

❂ খ. নিজের প্রাণহানি ঘটানো হারাম। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কিছু থেকে বেঁচে থাকা জরুরি:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ

“নিজেদের হাত দিয়ে নিজেদের ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]

সুতরাং যদি বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ ডাক্তার নিশ্চিত করেন যে তৃতীয়বার সিজার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তাহলে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ হবে। এতে গুনাহ হবে না। কারণ ইসলাম নিজেকে ধ্বংসের মুখে ফেলা নিষিদ্ধ করেছে।

❂ গ. জরায়ু অপসারণ (হিস্টেরেকটমি) কেবলমাত্র চূড়ান্ত প্রয়োজনেই করা উচিত:

যদি চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে বলেন যে, জরায়ু না কাটলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি বৈধ হবে। তবে শুধুমাত্র সম্ভাব্য সংক্রমণের আশঙ্কায় জরায়ু অপসারণ করা উচিত নয় বরং বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বস্ত চিকিৎসকের সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োজন।

❑ ৩. সন্তান গ্রহণ না করলে গুনাহ হবে কি?

অধিক সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে; আবশ্যক করা হয়নি।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

“তোমরা এমন নারীকে বিয়ে করো, যে বেশি ভালোবাসে এবং বেশি সন্তান প্রসব করে। কারণ, আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্যে গর্ব করব।” [সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২০৫০, সহিহ]

সুতরাং বিশেষ কারণে কেউ যদি অধিক সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকে তাহলে এতে কোনও গুনাহ নেই। কেননা ইসলামে বেশি সন্তান গ্রহণের বিষয়টি তখনই প্রযোজ্য যখন তা মায়ের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়। যদি এটি তার জন্য শারীরিক বড় ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি বিপদের কারণ হয় তবে তা জরুরি নয়। অর্থাৎ তা শারীরিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। যদি শরীরিক বা চিকিৎসাগত কারণে আপনি সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন তাহলে গুনাহ হবে না। বরং শরিয়ত আপনাকে নিজের স্বাস্থ্য ও জীবনের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুমতি দেয়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ

“নিজের ক্ষতি করো না এবং অন্যের ক্ষতিসাধন করো না।” [সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ২৩৪১, সহিহ]

সুতরাং যদি মা অতিরিক্ত সন্তান ধারণ করলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন তাহলে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকা জায়েজ। এতে কোনও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ।

❑ ৪. চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে শরিয়তের মূলনীতি:

ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞগণ বলেন:

الضرورات تبيح المحظورات

“প্রয়োজনীয়তা নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে তোলে।” [আল-কাওয়ায়িদ আল-ফিকহিয়া]

অতএব যদি শারীরিক সমস্যা বা চিকিৎসাগত কারণে জরায়ু অপসারণ করতে হয় এবং এটি না করলে জীবননাশের ঝুঁকি থাকে তাহলে শরিয়তে তা বৈধ।

❖ পরামর্শ:

প্রথমে একজন অভিজ্ঞ ইসলামি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি ঝুঁকি সত্যিই গুরুতর হয় তাহলে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ বা জরায়ু অপসারণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র সম্ভাব্য ভয় বা আশঙ্কার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন এবং দোয়া করুন যেন তিনি আপনার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করেন।

❖ সারাংশ:

✅ যদি চিকিৎসক বলেন যে, তৃতীয়বার সিজার করালে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে তাহলে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকা জায়েজ এবং এতে কোনো গুনাহ নেই।
✅ যদি জরায়ু অপসারণ ছাড়া বিকল্প না থাকে তাহলে তা বৈধ হবে তবে নিশ্চিত হতে একাধিক ইসলামি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
✅ সন্তান নেওয়া ইসলামে উৎসাহিত হলেও এটি বাধ্যতামূলক নয় বরং শারীরিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

পুরুষ ডাক্তার দ্বারা মহিলাদের সন্তান ডেলিভারির জন্য সিজার বা অস্ত্রোপচার করার বিধান

 পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক মহিলাদের সন্তান ডেলিভারির জন্য সিজার বা অস্ত্রোপচার করা: একটি আহ্বান

প্রশ্ন: মহিলা ডাক্তার না থাকলে তখন পুরুষ ডাক্তারের সামনে ডেলিভারির সময় মহিলাদের গোপন স্থান বের করা কি গুনাহ হবে?
উত্তর: মূলতঃ স্বামী ছাড়া নারীদের গোপনাঙ্গ দেখা কোন পুরুষদের জন্য (চাই মাহরাম হোক বা নন মাহরাম হোক) অথবা অন্য নারীদের জন্য দেখা বা স্পর্শ করা হারাম। তবে জরুরি চিকিৎসা, সিজারিয়ান সেকশন বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করণ ইত্যাদি অপরিহার্য পরিস্থিতি হলে ভিন্ন কথা।
এ ক্ষেত্রে নারী ডাক্তার দ্বারা তা সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু অভিজ্ঞ নারী ডাক্তার না পাওয়া যায় বা পাওয়া কষ্টসাধ্য হয় তখন পুরুষ ডাক্তার দ্বারা তা সম্পন্ন করা জায়েজ।

তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত রয়েছে। যেমন:

◈ ১. সিজারের রুমে তার স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ অথবা একাধিক বিশ্বস্ত নারী (যেমন: অন্যান্য মহিলা ডাক্তার, নার্স, অথবা তার নিকটাত্মীয় ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ) উপস্থিত থাকা আবশ্যক।
◈ ২. অত্যাবশ্যকীয় স্থান ছাড়া অসুস্থ নারীর শরীরের অন্য কোথাও স্পর্শ করা বা দেখা হারাম-ডাক্তার এবং তার সাথে অবস্থানকারী সকলের জন্য।
◈ ৩. স্বতন্ত্র রুমে পর্দার অন্তরালে তা সম্পন্ন করবে যেন কোনোভাবেই অসুস্থ নারীর গোপনাঙ্গ অন্যদের দৃষ্টিগোচর না হয়।
◈ ৪. পুরুষ ডাক্তার এ সময় হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করার চেষ্টা করবে যেন, নারীর শরীরে সরাসরি তার হাতের স্পর্শ না লাগে।

❑ বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া:

পুরুষ ডাক্তার দ্বারা সিজারিয়ান ডেলিভারির বিধান

প্রশ্ন: আমাদের দেশে নারী সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করার সময় পুরুষ ডাক্তাররা অপারেশন রুমে উপস্থিত থাকেন এবং তারা নারীর শরীরের গোপন অংশ দেখতে পান। এটা কি জরুরি প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত? কী করা উচিত? কারণ আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীই সিজার করেন। স্বাভাবিক প্রসব কঠিন। এবং অপারেশন রুমে নারী-পুরুষ মিশ্রিত পরিবেশ থাকে। এ বিষয়ে আপনাদের দিকনির্দেশনা কী? বারাকাল্লাহু ফীকুম।

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর।

খতিব শারবিনি [মিসরের বিখ্যাত ফকিহ, মুফাসসি ও নাহুবিদ মৃত্যু: ৯৭৭ হিজরি মোতাবেক ১৫৭০ খৃষ্টাব্দ]

(মুগনি আল-মুহতাজ) গ্রন্থে বলেন:

(وَ) اعْلَمْ أَنَّ مَا تَقَدَّمَ مِنْ حُرْمَةِ النَّظَرِ، وَالْمَسِّ هُوَ حَيْثُ لَا حَاجَةَ إلَيْهِمَا. وَأَمَّا عِنْدَ الْحَاجَةِ فَالنَّظَرُ وَالْمَسُّ (مُبَاحَانِ لِفَصْدٍ، وَحِجَامَةٍ، وَعِلَاجٍ) وَلَوْ فِي فَرْجٍ لِلْحَاجَةِ الْمُلْجِئَةِ إلَى ذَلِكَ؛ لِأَنَّ فِي التَّحْرِيمِ حِينَئِذٍ حَرَجًا، فَلِلرَّجُلِ مُدَاوَاةُ الْمَرْأَةِ وَعَكْسُهُ، وَلْيَكُنْ ذَلِكَ بِحَضْرَةِ مَحْرَمٍ أَوْ زَوْجٍ، أَوْ امْرَأَةٍ ثِقَةٍ إنْ جَوَّزْنَا خَلْوَةَ أَجْنَبِيٍّ بِامْرَأَتَيْنِ، وَهُوَ الرَّاجِحُ كَمَا سَيَأْتِي فِي الْعدَدِ إنْ شَاءَ اللَّهُ -تَعَالَى-. وَيُشْتَرَطُ عَدَمُ امْرَأَةٍ يُمْكِنُهَا تَعَاطِي ذَلِكَ مِنْ امْرَأَةٍ وَعَكْسُهُ، كَمَا صَحَّحَهُ فِي زِيَادَةِ الرَّوْضَةِ. انتهى

“প্রয়োজন ছাড়া নারীর শরীর দেখা এবং স্পর্শ করা হারাম। তবে প্রয়োজনে তা বৈধ, যেমন—শল্যচিকিৎসা, রক্ত নেওয়া, সিঙ্গা লাগানো বা অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এমনকি যদি প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি হয়, তাহলে লজ্জাস্থান পর্যন্ত দেখা ও চিকিৎসা করা বৈধ। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব যদি কেবল পুরুষের ওপর বর্তায়, তাহলে তা অনুমোদিত হব। তবে সম্ভব হলে স্বামী, মাহরাম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনও বিশ্বস্ত নারী উপস্থিত থাকা উচিত (যদি আমরা দু জন নারীর উপস্থিতিতে পরপুরুষের সাথে নির্জন ঘরে থাকাকে বৈধ বলি-সংখ্যা বিষয়ে এটাই অগ্রাধিকার যোগ্য কথা যেমনটি সামনে আলোচনা আসবে) । এবং যদি এমন কোনও নারী পাওয়া যায়, যিনি এই চিকিৎসা করতে পারেন, তবে তার কাছেই চিকিৎসা নেওয়া আবশ্যক।”

উপরোক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে, যদি অপারেশন রুমে উপস্থিত পুরুষ ডাক্তারদের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজনীয় হয় এবং কোনও নারী ডাক্তার সেই কাজ করার জন্য পাওয়া না যায়, তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তাদের জন্য নারীর শরীর দেখা বৈধ হবে। তবে, এটি কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।

কিন্তু যদি কোনও নারী ডাক্তার পাওয়া যায়, এমনকি সে অমুসলিম হলেও, তাহলে তার দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করাই বাধ্যতামূলক হবে এবং পুরুষ ডাক্তার দিয়ে করানো বৈধ হবে না।

এছাড়া, হাসপাতালে নারী-পুরুষের অবাধ মিশ্রণ ও অপ্রয়োজনীয় সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ, এটি ফিতনার অন্যতম বড় কারণ এবং বিপর্যয়ের দুয়ার খুলে দেয়। আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।”
[উৎস: islamweb]

আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই আল্লামা উসাইমীন রহ. মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরজে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।
সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে। তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দ্বীনী বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। সুতরাং এ সংকট থেকে আমাদের দ্বীনী বোনদেরকে রক্ষা করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের দেশের চিন্তাশীল ও দ্বীন দরদী ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। আল্লাহ সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন এবং দ্বীনের সেবায় কাজ করা তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকে টাকা রাখা এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা গ্রহণের বিধান

 প্রশ্ন: আমি প্রতিমাসে বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকে কিছু টাকা রাখি। ইসলামি ব্যাংক নাকি অন্য ব্যাংকগুলোর মতো লাভ দেয় না। যতটুকু শরিয়তসম্মত ততটুকুই দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, ইসলামি ব্যাংকে টাকা রাখলে কি গুনাহ হবে? এই ব্যাংকে যে লাভটা দিবে তা কি হালাল? আর ওই টাকা কি আমি আমার নিজের কাজে ব্যয় করতে পারবো?

উত্তর: নিম্নে কয়েকটি পয়েন্টে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

❂ ১. ইসলামি ব্যাংকিং কি সত্যিই সুদমুক্ত?

ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকিং থেকে ভিন্ন, কারণ এটি মুরাবাহা, মুদারাবা, ইজারা, মুশারাকা ইত্যাদি ইসলামি বিনিয়োগের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এর মূলনীতি হলো, ব্যাংক গ্রাহকের টাকাকে কোনো সুদভিত্তিক লেনদেনে ব্যবহার করবে না বরং ব্যবসা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করবে এবং সেই লাভ থেকে গ্রাহকদের অংশ প্রদান করবে।

তবে বাস্তবে ইসলামি ব্যাংকগুলো কতটা শরিয়াহসম্মতভাবে পরিচালিত হয়, তা নির্ভর করে তাদের শরিয়াহ বোর্ড, কার্যপ্রণালি এবং বিনিয়োগের বাস্তবায়নের ওপর। বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকের একটি শরিয়াহ বোর্ড রয়েছে, যারা ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে শরিয়াহ মোতাবেক বিনিয়োগ করে এবং মুনাফা প্রদান করে, তাহলে এটি বৈধ বলে গণ্য হবে।

❂ ২. ইসলামি ব্যাংকের লাভ কি সুদ (রিবা)?

ইসলামি ব্যাংকে রাখা সঞ্চয় হিসাব বা মুদারাবা হিসাবের ওপর প্রাপ্ত টাকা যদি ব্যবসার প্রকৃত লাভ থেকে আসে এবং আগেই নির্দিষ্ট সুদের মতো কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকে তাহলে এটি বৈধ।

কিন্তু যদি ব্যাংক প্রকৃত ব্যবসা না করে কেবল সুদের মতো নির্দিষ্ট হারে লাভ দেয় তাহলে এটি শরিয়াহ অনুযায়ী সুদ (রিবা) হিসেবে গণ্য হবে।

সুতরাং ইসলামি ব্যাংকের প্রকৃত কার্যপ্রণালি বোঝার জন্য তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন, শরিয়াহ বোর্ডের পর্যবেক্ষণ এবং ফতোয়া পর্যালোচনা করা উচিত।

❂ ৩. ইসলামি ব্যাংকের লাভ কি ব্যবহার করা বৈধ?

যদি ইসলামি ব্যাংকের কার্যক্রম সত্যিই শরিয়াহসম্মত হয় এবং ব্যবসার প্রকৃত লাভের ওপর ভিত্তি করে মুনাফা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ বৈধ এবং আপনি সেই টাকা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু যদি কোনো সন্দেহ থাকে যে, ব্যাংক আসলেই সুদভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাহলে সেখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া যে কোনো ইসলাম বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিতে হবে।

❑ আপনার করণীয় কী?

✅ ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের ফতোয়া এবং তাদের বিনিয়োগ পদ্ধতি যাচাই করুন।
✅ যদি নিশ্চিত হন যে, তারা প্রকৃত ব্যবসার মাধ্যমে লাভ করে তাহলে সেই টাকা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
✅ যদি সন্দেহ থাকে যে ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় চলে তাহলে সেই টাকা নিজের বা নিজের পরিবারের কাজে ব্যয় না করে এলাকার এতিমখানা, মাদরাসা, মসজিদ বা মসজিদের টয়লেট, ওজুখানা বা অন্য যে কোনো কাজে অথবা গরিব-অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে দিবেন কিন্তু সওয়াবের নিয়ত থেকে বিরত থাকবেন।
মোটকথা, ইসলামি ব্যাংকের কার্যপ্রণালি পুরোপুরি শরিয়াহভিত্তিক কি না সেটি ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি। আপনি ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন, তাদের শরিয়াহ বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং আলেমদের মতামত দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

যে দশটি শর্তসাপেক্ষে ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই বিজনেস বা জনশক্তি সরবরাহ ব্যবসা হালাল

 প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করে। যখন কাজের প্রচুর চাপ থাকে তখন তিনি কোম্পানির আদেশে কিছু দক্ষ-অদক্ষ লোক দিয়ে হাজিরা হিসেবে কাজ করান। তাদের সবাইকে তিনি কত টাকা করে করে হাজিরা দিবেন তা আগেই চুক্তি করে নেন কিন্তু কোম্পানি থেকে তিনি জন প্রতি ৫০ টাকা করে বেশি নেন এবং এই কমিশন টাকাটা তিনি নিজে রাখেন। তার এই টাকাটি কি হালাল না হারাম? (নোট: লোকটির মতে, তিনি যেহেতু হাজিরা লোকদের পিছনে পরিশ্রম করেন, তাদেরকে কাজ বুঝানো, পরিচালনা ইত্যাদি করেন সেহেতু তার এই কমিশন নেওয়াটা হালাল।)

উত্তর: এটিকে ‘ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই বিজনেস (Manpower supply business) বা জনশক্তি সরবরাহ ব্যবসাও বলা হয়।

❑ ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবসা কী?

ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই বা জনশক্তি সরবরাহ ব্যবসা হলো, এমন একটি ব্যবসা যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী কর্মী বা শ্রমিক সরবরাহ করা হয়। এটি মূলত একটি হিউম্যান রিসোর্স (HR) ও (লেবার সাপ্লাই) ভিত্তিক ব্যবসা, যেখানে কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী পেতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়। এই ব্যবসায় ম্যান পাওয়ার সাপ্লায়ার বা জনশক্তি সরবরাহকারী ব্যক্তি বা সংস্থা বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে এই মর্মে চুক্তি করে যে, সে তাদেরকে মাসিক, দৈনিক বা ঘণ্টা প্রতি এত টাকা হারে শ্রমিক দিবে। অতঃপর সে শ্রমিকের সাথে তার থেকে কম মূল্যে চুক্তি করে। অতঃপর চুক্তি মোতাবেক সে কোম্পানির নিকট শ্রমিক সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে জনশক্তি বা শ্রমিক সরবরাহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মধ্যস্বত্ব ভোগী হিসেবে কিছু মুনাফা অর্জন করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এ ব্যবসায় কোনও সমস্যা নাই। অর্থাৎ এ ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হালাল। কারণ তা কোম্পানি বা প্রকল্পের কাজের জন্য শ্রমিক সংগ্রহ করা, প্রয়োজন পথে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, কোম্পানি এবং শ্রমিকদের মাঝে মধ্যস্থতা করা, শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদেরকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া ও পরিচালনা ইত্যাদি পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জন।

তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত এবং বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা হলে তা হালাল; অন্যথায় তা হারামে পরিণত হবে।

নিচে এ মর্মে দশটি শর্ত উল্লেখ করা হলো:

❂ ১. হালাল বা বৈধ শ্রম:

শ্রমটা ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল এবং সরকারি আইনে বৈধ হওয়া। (যেমন— নির্মাণ, কৃষি, শিল্প ইত্যাদি)

সুতরাং কোনও হারাম বা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ বা আইন বহির্ভূত ভাবে কোন কাজ (দেহব্যবসা, মদ তৈরি বা পরিবেশন, সুদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, সরকারের অনুমোদন বিহীন ব্যবসা ইত্যাদি)-এর জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া, কোম্পানি ও শ্রমিকদের মাঝে মধ্যস্থতা করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা ইত্যাদি সবই হারাম।

❂ ২. স্বচ্ছ চুক্তি:

– শ্রমিক, সরবরাহকারী, এবং নিয়োগকর্তার মধ্যে স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত চুক্তি থাকা।
কাজ শুরু করার পূর্বে শ্রমিককে তার কাজের ধরণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানানো।
– কর্মঘন্টা তথা কাজের সময়-সীমা (প্রতিদিন কত ঘণ্টা এবং শুরু ও শেষ সময়) নির্ধারণ করা।
– শ্রমিকদের ওভার টাইম, ছুটি, কাজের মধ্যে খাবার, সালাত, বিশ্রাম ইত্যাদির জন্য বিরতি ইত্যাদি নীতিমালা আগেই নির্ধারণ করা।
– স্যালারি বা পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্ধারণ করা ইত্যাদি।

❂ ৩. চুক্তি বাস্তবায়ন:

শ্রমিকদের সাথে কৃত চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনও চুক্তি লঙ্ঘন করা যাবে না। ইসলামের চুক্তি রক্ষা করার ব্যাপারে অপরিসীম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এখনো চুক্তির লঙ্ঘনকে মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

তবে জরুরি প্রয়োজনে শ্রমিকের সাথে কথা বলে বা তার সম্মতিক্রমে চুক্তির বিশেষ কোনও ধারা পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে।

❂ ৪. চুক্তি মোতাবেক যথাসময়ে পারিশ্রমিক/বেতন পরিশোধ:

চুক্তিতে উল্লেখিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন ধরনের টালবাহানা বা ছলচাতুরি ব্যতিরেকে শ্রমিকের নিকট তার পারিশ্রমিক/বেতন পরিশোধ করতে হবে।

‘কোম্পানি থেকে স্যালারি আসেনি বা প্রকল্প থেকে লাভ হয়নি বা ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে এসব বলে সরবরাহকারী শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে বিলম্ব বা গড়িমসি করতে পারবে না। কোম্পানি থেকে স্যালারি পেতে দেরি হলে কিংবা কোম্পানি টাকা না দিলে অথবা কন্টাক্টর বা শ্রমিক সরবরাহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুক্তি মোতাবেক সে তার নিজস্ব পূঁজি থেকে বেতন পরিশোধ করবে। কারণ সে শ্রমিকের সাথে নির্দিষ্ট সময়ে বেতন সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ। শ্রমিকের সম্মতি ব্যতিরেকে সে তাকে এক পয়সাও কম দেওয়ার অধিকার রাখে না।

❂ ৫. শ্রমিকদের সাথে মিথ্যা কথা বলা,‌ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও ধোঁকাবাজি করা হারাম। যেমন: নির্ধারিত কাজের কথা বলে নিয়োগ দেওয়ার পরে অন্য কাজ করতে বাধ্য করা, নির্দিষ্ট বেতন থেকে কম দেওয়া, কাজ শেষে বোনাস দেওয়ার কথা বলে না দেওয়া ইত্যাদি।

❂ ৬. টাইম শীট (Timesheet বা কর্মঘন্টা) ক্রয়-বিক্রয়:

টাইম শীট ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়। উদাহরণ: শ্রমিকের নিকট তার কাজের টাইম শীট কম টাকায় ক্রয় করে পরবর্তীতে কোম্পানি থেকে এর মাধ্যমে বেশি টাকা উত্তোলন করা। এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত।

❂ ৭. জোরপূর্বক শ্রম:

শ্রমিকদের ইচ্ছার বাইরে জোরজবরদস্তি মূলক বা অমানবিক কাজে নিয়োগ দেওয়া বা সাধ্যাতীত কোনও কাজে বাধ্য করা জায়েজ নয়। কেননা তা জুলুম। আর ইসলামে জুলুম করা কবিরা গুনাহ।

অনুরূপভাবে যদি কাউকে বাধ্য করা হয় এমন চুক্তিতে যেখানে তারা স্বাধীনভাবে কাজ ছাড়তে পারে না তাহলে তা ইসলামি আইনে যেমন হারাম তেমনি দেশের আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ।

❂ ৮. শ্রমিকদেরকে তাদের প্রাপ্য দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করা বা বিলম্ব করা হারাম‌‌।

❂ ৯. ঘুষ, দুর্নীতি অথবা রাজনৈতিক বা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ ধরা। এটা অন্যায় এবং হারাম।

❂ ১০. কোম্পানি বা প্রকল্প পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত শ্রমিকের রিকোয়ারমেন্ট” (Requirement) তথা আবশ্যকীয় শর্ত ও যোগ্যতা পূরণের ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজের অনুমোদন পত্র, পরিচয় পত্র, সনদপত্র, সরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট ইত্যাদিতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া অথবা তাদেরকে এক্ষেত্রে সাহায্য করা হারাম।

মোটকথা, যদি ন্যায়সঙ্গত ও নৈতিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে ‘ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই’ ব্যবসা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ। কিন্তু যদি এতে অন্যায়, প্রতারণা, জুলুম বা হারাম উপার্জন জড়িত থাকে তবে এটি হারাম হবে।
আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহ আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate